শুনে মনে হতে পারে এটি সর্বশেষ কোনো ব্লকবাস্টার সায়েন্স ফিকশনের প্লট, কিন্তু অমরত্ব অর্জনের জন্য কম্পিউটারে মানুষের মস্তিষ্ক আপলোড করাটা খুব দ্রুতই বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে।

একটি নতুন সাক্ষাৎকারে পদার্থবিদ ব্রায়ান কক্স জানিয়েছেন, ‘টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটি’ নামে পরিচিত এই পদ্ধতি খুব দ্রুতই সহজলভ্য হয়ে উঠবে।

তিনি জানান, কম্পিউটারের মাধ্যমে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে সিমুলেট করা সম্ভব।

দ্য সান অনলাইন-এর সাথে সাক্ষাৎকারে প্রফেসর কক্স মেশিনের সাথে মানুষের মিশ্রণের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে সিমুলেট করতে না পারার মত কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই নি।’

তিনি আরো বলেন, কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনুসারে (তিনি নিজে এই বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ), সত্যিকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবশ্যই সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটি হলো এমন একটি পদ্ধতি যা ভবিষ্যতে কারো চিন্তাভাবনাকে ডিজিটাল ডাটায় রূপান্তর করার কাজে ব্যবহৃত হবে। এর মাধ্যমে অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পিউটারে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ‘আপলোড’ করা সম্ভব হবে।

এটি মানুষকে ভার্চুয়াল জগতে বসবাস করতে সাহায্য করবে যার মাধ্যমে মানুষ অমরত্বও অর্জন করতে পারে। প্রফেসর কক্স মনে করেন, মানুষের মস্তিষ্ক কম্পিউটারের থেকে আলাদা কিছু নয়। তাই মানুষের বুদ্ধিমত্তাও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যেতে পারে।

প্রফেসর কক্সের মত আরো অনেকেই এটি বিশ্বাস করেন।

গত বছর গুগল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিরেক্টর রে কার্জওয়েল ভবিষ্যৎবাণী করেন যে ত্রিশ বছরের মধ্যেই মানুষ তাদের পুরো বুদ্ধিমত্তাকে আপলোড করতে সক্ষম হবে এবং ডিজিটালি অমর হয়ে উঠবে।

কার্জওয়েল আরো বলেন, আমাদের শরীরের বায়োলজিক্যাল উপাদান প্রতিস্থাপিত হবে মেকানিক্যাল বা যান্ত্রিক উপাদানের মাধ্যমে এবং ২১০০ সালের আগেই এটি ঘটবে।

তিনি বলেন, কার্যকরভাবে একটি মানব মস্তিষ্ককে অনুকরণ করতে হলে এর সমস্ত উপাদানকে সূক্ষ্মভাবে হিসেব করতে হবে। এই হিসেবের উপর ভিত্তি করেই কাজটি করতে হবে। এভাবে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে এক বিলিয়ন গুণ বেশি প্রসারিত করা যাবে।

টেসলা এবং স্পেইসএক্স-এর সিইও এলন মাস্কও টেকনলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেন, আমরা হয়ত ইতিমধ্যেই কোনো কম্পিউটার সিমুলেশনের মধ্যে বসবাস করছি। আমরা যে একটা কম্পিউটার সিমুলেশনের মধ্যে বসবাস করছি না এটা প্রমাণ করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

তবে সবাই তার এই আইডিয়া দিয়ে খুব একটা কিনভিন্সড হয় নাই।

দ্য কনভার্সেশন-এ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে ইউনিভার্সিটি অব শেফল্ড-এর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর রিচার্ড জোনস এই আইডিয়ার কিছু গুরুতর সমস্যা তুলে ধরেছেন।

তার মতে, চিন্তা বা বুদ্ধিমত্তাকে ডিজিটালি প্রতিস্থাপিত করতে গেলে এর সবগুলি কানেকশনের ম্যাপ তৈরি করতে হবে। বর্তমানে আমাদের কাছে যে প্রযুক্তি আছে তার মাধ্যমে এ কাজ সম্ভব নয়।

আমরা জীবিত মস্তিষ্কের জন্য এ রকম একটি ‘ওয়ারিং ডায়াগ্রাম’ তৈরি করলেও সেটি বুঝতে পারবে না আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে। আমরা এমনকি এটাও জানি না যে মস্তিষ্কে কতটি অণু আছে এবং এর মধ্যে কতগুলি এর ক্রিয়াকলাপের জন্যে অত্যাবশ্যক। তবে সেগুলির সংখ্যা এত বেশি যে একটি কম্পিউটার দিয়ে এর প্রতিরূপ করা যাবে না।

প্রফেসর জোনসের মতে, কম্পিউটার পাওয়ারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উন্নয়নই আমাদেরকে মস্তিষ্কের প্রতিলিপি তৈরি করার সামর্থ্য এনে দিবে না।