বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বেশ কিছু মিথ বা ধারণা আছে যেগুলির বেশিরভাগই মানুষ এখনো মেনে চলেন। যদিও বেশ আগেই এসব ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।  তা থেকে ১০টি:

১. আমরা মস্তিষ্কের ১০ ভাগের এক ভাগ ব্যবহার করি মাত্র

আমরা মস্তিষ্কের অনেক রহস্যই এখনো উদঘাটন করতে পারি নাই। তবে এটাও সত্য যে আমরা আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় সবটাই ব্যবহার করে থাকি।

এটি অবশ্য ঠিক যে মাথা স্ক্যান করে প্রমাণ করা সম্ভব নয় মস্তিষ্কের ১০ শতাংশ ব্যবহার সম্পর্কিত গুজবটি মিথ্যা। তবু সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেই বোঝা যায়, ধারণাটি অবান্তর। গবেষণায় দেখা গেছে মানব মস্তিষ্কের ওজন ২ পাউন্ডের বেশি না হলেও এর জ্বালানি চাহিদা অবিশ্বাস্য। মানবশরীরে যে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ ঢোকে তার ২০ ভাগই মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবে খরচ হয়ে যায়।

আর কোনো অংশ যদি সত্যিই অব্যবহৃত থাকত তবে বিবর্তিত হয়ে মানবমস্তিষ্ক আজ যে অবস্থায় এসেছে তা সম্ভব হতো না।

 

তাছাড়া ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে কখনোই ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বলতে শোনা যায় নি যে, ‘সুখবর! আপনার মস্তিষ্কের অব্যবহৃত অঞ্চলেই আপনার টিউমারটি ধরা পড়েছে!’

মস্তিষ্কের বেশিরভাগই যদি অব্যবহৃত থাকতো তাহলে মাথায় গুলি খেয়েও কারো মস্তিষ্ক খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হত না। অথচ মাথায় গুলি খাওয়ার পর খুব কম সংখ্যক লোকেরই বেঁচে থাকার নজির আছে। এমন কেউ বেঁচে থাকলেও মারাত্মক সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েই তাকে বেঁচে থাকতে হয়েছে বা হচ্ছে।

তবে এমনটি ভাবাও ঠিক হবে না যে আপনি সারাক্ষণই আপনার মস্তিষ্কের সবটা ব্যবহার করছেন। বরং আপনার সারা দিনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই আপনার মস্তিষ্কের পুরোটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

তবে অনেককে দেখে মনে হতে পারে যে তারা তাদের মস্তিষ্কের সম্ভাবনার পুরাপুরি সদ্ব্যবহার করছে না বা করতে পারছে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে প্রতিদিনই তারা তাদের পুরো মস্তিষ্ক ব্যবহার করছে না। বরং সাধারণত তার উল্টাটাই ঘটে থাকে। আমরা প্রতিদিনই আমাদের পুরো মগজটাই অন্তত একবারের জন্যে হলেও ব্যবহার করে থাকি।

২. চাঁদের একটা অন্ধকার দিক আছে

পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের মাত্র ৫৯ শতাংশ দেখতে পাই। তাও সব সময় নয়। ভরা পূর্ণিমায়ই তা সম্ভব। বাকি ৪১ শতাংশ আমাদের দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে যায়। আমরা হয়ত ভেবে থাকতে পারি ওই অংশটুকু বুঝি সব সময়ই হিমশীতল অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে এবং সেখানে সূর্যের আলোও বুঝি পড়ে না। কিন্তু না, এই ধারণা ঠিক নয়।

 

আসলে এই ভুল বোঝাবুঝিটা তৈরি হয় মূলত চাঁদের ঘুর্ণন সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কোনো পরিষ্কার ধারণা না থাকার কারণে। চাঁদ আসলে এর নিজ অক্ষে খুবই ধীর গতিতে ঘুরছে। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে আসতে চাঁদের যতটুকু সময় লাগে নিজ অক্ষে একদফা ঘুর্ণন শেষ করতেও ঠিক ততটুকু সময়ই লাগে চাঁদের।

ফলে চাঁদের একটা অংশ কখনোই পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। এতে ওই অংশে সূর্যের আলো পড়ল কি পড়ল না তাতে কিছুই যায় আসে না। তা সবসময়ই আমাদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়।

চন্দ্রগ্রহণের সময়টুকু ছাড়া সূর্যের আলো সব সময়ই এর অর্ধেক অংশকে আলোকিত করে থাকে। যেমন করে পৃথিবীর অর্ধেক অংশও সবসময়ই সূর্যের আলোয় আলোকিত থাকে। পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকা চাঁদের অর্ধাংশ যখন সূর্যের আলোয় পুরোপুরি আলোকিত হয় তখনই আমরা একে পূর্নিমা বলে আখ্যায়িত করি। আর যখন চাঁদের বেশিরভাগ অংশ বা পুরা চাঁদটাই অদৃশ্য থাকে তখন আসলে সূর্যের বেশিরভাগ বা সবটুক আলো চাঁদের ওই উল্টা দিকটাতে পড়ে। যা আমাদের পৃথিবী থেকে দেখা সম্ভব হয় না।

আসল কথা হল, চাঁদের যে অংশ কখনোই পৃথিবী থেকে দেখা সম্ভব হয় না সে অংশটুকু পৃথিবী থেকে দেখা যাওয়া অংশ থেকে কোনো মতেই কম বা বেশি অন্ধকার নয়।

৩. পূর্ণিমার চাঁদ মানুষের আচরণ প্রভাবিত করে

অনেকের বিশ্বাস, পূর্ণিমার চাঁদ মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে যারা বৃদ্ধ ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের সাথে কাজ করেন তাদের অনেকেরই ধারণা পূর্ণিমার চাঁদের প্রভাবে মানুষের আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা দেয়।

এর পেছনে বেশকিছু আপাত যৌক্তিক কারণও দেখতে পান অনেকে। ধারণা করা হয়, চাঁদের প্রভাবে সমুদ্রের পানিতে যেমন জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয় তেমনি এর প্রভাবে মানব মস্তিষ্কেও রাসায়নিক পরিবর্তন বা ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে। আর এর ফলেই মানুষ পূর্ণিমার সময় অদ্ভুত আচরণ করে থাকে।

অনেকের দাবি, পূর্ণিমার সময় সহিংস অপরাধের ঘটনা বেড়ে যায়। এমনকি যুক্তরাজ্যের পুলিশ স্টেশনগুলিও এক সময় পূর্ণিমা উপলক্ষে তাদের জনবল বাড়িয়ে রাখত। তাদের মতে এ সময় অপরাধ ও সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়ে যায়।

এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে মানুষের অস্থিরমতিত্বের যোগ তেমন নাই। মানুষের অস্বাভাবিক আচরণের পেছনে পূর্ণিমার চাঁদের কার্যকারণগত কোনো সম্পর্ক আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় নাই।

তবে বেশকিছু গবেষণায় পূর্ণিমার সময়ে অপরাধের হার বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু সেসময় আবার সাপ্তাহিক ছুটিও ছিল। ফলে এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে পূর্নিমার চাঁদের সঙ্গে মানুষের অস্বাভাবিক আচরণের কোনো সম্পর্ক আছে।

৪. চিনি বাচ্চাদের অস্বাভাবিক সক্রিয় ও তৎপর করে তোলে

বেশি বেশি কেক, আইসক্রিম ও মিষ্টি পানীয় পান করলে বাচ্চাদের মাঝে অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা দেয় বলে বহুল প্রচলিত একটা ধারণা আছে। ইংরাজিতে একে বলা হয় ‘সুগার বাজ’। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রায় কিছুটা হেরফের ও মানসিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

 

আসলে জন্মদিন ও হ্যালোউইন উৎসব ঘিরে বাচ্চাদের হই চই দেখে এই ধারণা গড়ে উঠেছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হল, জন্মদিন বা হ্যালোউইন উৎসবে বাচ্চারা অন্য বাচ্চাদের সংস্পর্শে এসে স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তবে ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য উপাদানের উপরও এর কিছুটা দোষ চাপানো যেতে পারে। বাচ্চারা হ্যালোউইন উৎসবে নিজেদের মাঝে যে চকোলেট বিনিময় করে তাতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যাফেইন। ক্যাফেইন মানুষের নিদ্রাভাব ও ক্লান্তি দূর করে মস্তিষ্ককে বেশিক্ষণ ধরে সক্রিয় থাকতে সহায়তা করে।

তার মানে এই নয় যে বাচ্চাদেরকে লাগামাহীন ভাবে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ও পানীয় খেতে দেয়া যাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বর্তমানে মার্কিনিদের বছরে মাথাপিছু ১৫৬ পাউন্ড করে চিনি লাগে। অথচ ২০০ বছর আগে মার্কিনিদের বছরে মাথাপিছু চিনি লাগত মাত্র ৩ থেকে ৫ পাউন্ড। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া, রক্তে ইনসুলিনের মাত্রার গড়বড়, উচ্চ রক্তচাপ এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৫. একই জায়গায় দুইবার বজ্রপাত হয় না

‘একই জায়গায় বারবার বজ্রপাত হয় না’—এটা একটা বহুল প্রচলিত প্রবাদ। এ প্রবাদের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, খারাপ কোনো কিছু একবারের বেশি ঘটে না। অর্থাৎ খারাপ কোনো কিছু একইভাবে বার বার ঘটে না।

দুর্ভাগ্যবশতঃ প্রবাদটা বজ্রপাতের বেলায় সত্য না। কারণ একই জায়গায় অসংখ্যবার বজ্রপাতের নজির রয়েছে।

লম্বা গাছ ও উঁচু ভবনের উপর ঝড়-বাদল হলেই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে থাকে। মেঘমালার সংঘর্ষে সৃষ্ট বিদ্যুৎতরঙ্গ মাটিতে নেমে আসার সময় সবচেয়ে উঁচু ও কাছের বাহনটি ধরেই নেমে আসে। দেখা যায়, বনের সবচেয়ে লম্বা গাছ বা শহরের সবচেয়ে উঁচু ভবন ঝড়-বাদলের সময় সবার আগে ও বার বার বজ্রপাতের শিকার হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের উপর বছরে অন্তত একশবার বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

২০০৩ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ৩৮৬টি বজ্রপাতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পায়, এক তৃতীয়াংশ বজ্রপাতের বিদ্যুৎ তরঙ্গই মাটিতে নেমে আসার সময় একাধিকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং একাধিক জায়গায় আঘাত হানে। এমনকি ঠিক একই সঙ্গে ও একই সময়ে একাধিক জায়গায় আঘাত হানে!

৬. উঁচু ভবন থেকে ছুড়ে ফেলা কয়েন মাথায় পড়লে মৃত্যু

কিন্তু সত্য হল আপনি যদি আমেরিকার অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে নিচের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়া বা দাঁড়িয়ে থাকা কারো মাথায় এক পেনির একটি কয়েন নিক্ষেপ করেন তাতে তার মৃত্যু হবে না।

কারণ এক পেনির একটি কয়েনের ওজন এক গ্রামের বেশি নয়। আর সমতল গোলাকার হওয়ার কারণে তা বায়ুশক্তির চাপও খুব বেশি একটা ধারণ করতে সক্ষম না। কারণ নিচে পড়ার পুরাটা সময় জুড়েই সেটা ডানা ঝাপটানোর মতো করে গড়িয়ে পড়বে। এছাড়া এর ক্ষুদ্র আকার ও নিচু প্রান্তীয় গতি (১০৫ কি.মি./ঘণ্টায়) নিচে দাঁড়িয়ে থাকা বা হেঁটে যাওয়া কারো মাথার উপর পড়লেও খুব বেশি একটা ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। এতে মাথায় শুধু একটি আঘাত করার অনুভূতি হবে। যা হয়তো বিরক্তিকর কিন্তু মরণঘাতি নয় একদমই।

৭. মরার পরও বড় হতে থাকে মানুষের চুল আর নখ

মৃত্যুর পরও কারো নখ এবং চুল বড় হওয়ার জন্য খাদ্যগ্রহণ, হজমপ্রক্রিয়া সচল থাকা এবং দেহকোষ উৎপাদন প্রক্রিয়া জারি থাকতে হবে। কিন্তু মৃত্যুর পর এসব একদমই সম্ভব নয়। সুতরাং দেহের পক্ষে নখ ও চুলের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন কেরাটিনও আর উৎপাদন সম্ভব নয়।

মৃত্যুর পর আর্দ্রতার অভাবে চুল ও নখ কুঁচকে যায় না। যা দেখে অনেকে মনে করতে পারেন যে মৃত্যুর পরও বুঝি চুল ও নখ বেড়ে চলেছে। এতে কাউকে ক্লিন সেভড অবস্থায় কবর দেয়ার কয়েকদিন পর তার মুখে খোঁচা-খোঁচা দাঁড়ি গোফ গজিয়েছে বলেও মনে হতে পারে। আসলে কবর দেয়ার আগে আন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নকারী হাউজগুলি পুনরায় স্মারক সেবা দেয়ার আগেই যেন মৃতদেহটি শুকিয়ে না যায় সেজন্য মৃতদেহ ধোয়ার পর তাতে যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা রক্ষাকারী রাসায়নিক প্রয়োগ করে। যার ফলে চুল ও নখ তাজা থাকে।

৮. শরীরের গিঁট ফুটালে আর্থরাইটিস হয়

শরীরের গ্রন্থি বা গিঁটগুলিতে বার বার চাপাচাপি ও টানাটানির ফলে সেগুলোতে চিড় বা ফাটল দেখা দিলে অস্টিওআর্থরাইটিস রোগের সৃষ্টি হতে পারে। যার ফলে দেহের গিঁটগুলোতে বেদনাদায়ক ক্ষয়ও দেখা দিতে পারে। কিন্তু গবেষণায় এ দুটির মধ্যে কোনো যোগসাজশ আছে বলে প্রমাণিত হয় নি।

১৯৯৮ সালে ডোনাল্ড উংগার একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি দেখান, বিগত ৬০ বছর ধরে তিনি প্রতিদিন তার দেহের বাম দিকের গিঁটগুলি টেনে টেনে ফোটাতেন। কিন্তু একবারের জন্যও ডানদিকের গিঁটগুলোতে হাত দেন নি। এতে তার দুই হাতের মাঝামাঝি থাকা গিঁটগুলির কোনোই ক্ষতি হয় নি। উংগার তার ওই গবেষণার জন্য ২০০৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইগনোবেল (Ig Nobel Prize) পুরস্কার পান। উল্লেখ্য প্রতি বছর অক্টোবরের শুরুতে বিজ্ঞানের নানা শাখায় অস্বাভাবিক ও খুচরা অবদানের জন্যে ১০টি ইগ নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

আঙুলের গিঁট, কনুই, হাঁটু এবং হিপের জয়েন্টগুলিতে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামের এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে যা জয়েন্টগুলির কুশন হিসেবে কাজ করে এবং সেগুলিতে থাকা হাড়গুলির মাঝে যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে সহায়তা করে। যখন জয়েন্টগুলি ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং জয়েন্ট ক্যাপসুলগুলি আলাদা হয়ে যায় তখন জয়েন্ট ক্যাপসুলগুলিতে চাপ কমে যাওয়ার ফলে এক ধরনের গ্যাসের নির্গমণ ঘটে। ওই গ্যাস খালি জায়গাটুকু পুরণ করার জন্য বুদবুদ সৃষ্টি করে। কিন্তু জয়েন্টগুলি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য পুনরায় চাপ প্রয়োগ করলে ওই বুদবুদগুলি ফেটে গিয়ে যথেষ্ট শ্রবণযোগ্য শব্দের সৃষ্টি হয়। এতেই হয়তো অনেক সময় মনে হতে পারে যে জয়েন্টে বুঝি ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল যার ফলে পরে বেদনাদায়ক ক্ষয় দেখা দিয়েছে। তবে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত গিঁট ফোটালে সেখানে ব্যথা ও ক্ষয় দেখা দিতে পারে। আর ওই আওয়াজ হাড় ও মাংসপেশীকে এক করে রাখা কোলাজেন টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়ার ফলেও সৃষ্টি হতে পারে। এতে আস্তে আস্তে জয়েন্টগুলি দুর্বল হয়ে আসতে পারে।

৯. চু্ইংগাম হজম করতে ৭ বছর লাগে

চুইংগাম হজম করতে ৭ বছর সময় লাগে না। এমনকি আপনাকে আসলে তা হজম করতেও হবে না। কারণ চুইংগামে সামান্য মিষ্টিজাতীয় খাদ্য উপাদান এবং সুগন্ধি মসলা ছাড়া আর বেশি কিছুই থাকে না যা মানবদেহ ভাঙতে ও ব্যবহার করতে পারে। চুইংগামের বেশিরভাগই ইলাস্টোমারস নামের রাবার জাতীয় পলিমার থেকে তৈরি হয়ে থাকে। আর গামটাকে নরম ও আর্দ্র রাখার জন্য গ্লিসারিন ও ভেষজ তেল থেকে তৈরি কিছু উপাদান যোগ করা হয়। ফলে মানবদেহ চুইংগাম থেকে যতটুক গ্রহণ সম্ভব ততটুকুই গ্রহণ করে। বাকিটা বর্জ্য হিসেবে মলের সঙ্গে বের করে দেয়।

 

তার মানে এই নয় যে চুইংগাম গিলে ফেললে কোনো সমস্যা নেই। বেশি পরিমাণ চুইংগাম গিলে ফেললে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে এবং পাকস্থলিতে অবরোধের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে তা সরানোর জন্য অপারেশন করারও প্রয়োজন পড়তে পারে।

এছাড়া কয়েন, ছোট খেলনা এবং সূর্যমুখী ফুলের বিচির তীক্ষ্ণ চামড়ার সঙ্গে মিশে গিয়েও চুইংগাম পাকস্থলিতে মারাত্মক ব্লক সৃষ্টি ও ক্ষত তৈরি করতে পারে। সুতরাং গিলে ফেলা চুইংগাম আপনার পেটে ৭ বছর ধরে অবস্থান করার আশঙ্কা না থাকলেও চিবিয়ে রসটুকু খেয়ে নেয়ার পর বাকি গামটুকু ফেলে দেয়াই ভাল। আর বাচ্চারা যতদিন পর্যন্ত এর গিলে ফেলার বিপদ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার মতো বড় না হচ্ছে ততদিন তাদের চুইংগাম খেতে না দেয়াই ভালো।

১০. অ্যান্টিবায়োটিকে ভাইরাস মরে

ঠাণ্ডা ও জ্বর-সর্দি-কাশির মৌসুম এলেই এই গুজবটি বাতাসে ভাসতে থাকে। অথচ সত্য হল, অ্যান্টিবায়োটিক মূলত ব্যাকটেরিয়া হত্যা করতে পারে। কিন্তু সাধারণ ঠাণ্ডা এবং ইনফ্লুয়েন্জা ভাইরাসের কিছুই করতে পারে না অ্যান্টিবায়োটিক।

তবে অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন ঠাণ্ডা ও জ্বরের মতো ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও বুঝি অ্যান্টিবায়োটিক একটা পর্যায় পর্যন্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এই ধারণা মারাত্মক ভুল।

বরং ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি এবং সমস্যা আরো জটিল রূপ ধারণ করতে পারে।

আর সঠিক পদ্ধতি অনুসরন না করে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে দেহে নতুন নতুন ব্যাকটেরিয়ারও জন্ম হতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এমনকি শরীরে ওষুধের কার্যকারিতাও নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে আরো শক্তিশালী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হতে পারে যার ফলে অসুখ প্রাথমিক পর্যায়ের চেয়ে গাঢ় রূপ ধারণ করতে পারে।

অথচ জরিপে দেখা গেছে ডাক্তাররা প্রতিবছর ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য কোটি কোটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তারা এটা করেন অনেকটা রোগী ও তার অভিভাবকদের জ্বালাতনের কারণে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসায় ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে রোগের কারণ নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করানো ছাড়া তাড়াহুড়ো করে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেয়ার কোনো ন্যায্যতা নেই ডাক্তারদের। তবে রোগীদেরও বুঝতে হবে কেন অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে কোনো কাজে আসে না এবং কেন ডাক্তারদের কাছে এমন কোনো ওষুধ চাওয়া যাবে না যা শরীরের আরো বেশি ক্ষতি করবে।