বাসাবাড়ির সোলার সিস্টেমে ব্যবহার করা যাবে এমন হাইড্রোজেন স্টোরেজ সিস্টেম বা ব্যাটারি তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘লাভো’ (LAVO)। বিশ্বে এটা প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ হাইব্রিড হাইড্রোজেন ব্যাটারি। বাড়ির ছাদে থাকা সোলারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এর মাধ্যমে অফিসে কিংবা বাসাবাড়িতে নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও নবায়নযোগ্য পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

এই হাইড্রোজেন ব্যাটারি সিস্টেমের নকশা, পরিকল্পনা এবং উৎপাদন ‘লাভো’ করলেও সিডনিতে অবস্থিত ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস’ (UNSW) এই প্রজেক্টের পার্টনারশিপে ছিল। সম্পূর্ণ ব্যাটারির মধ্যে অন্যতম প্রধান ৩টি অংশ হলো তড়িৎ বিশ্লেষণ বা ইলেক্ট্রোলাইসিস সিস্টেম, বিন্যস্ত হাইড্রোজেন স্টোরেজ এবং ফুয়েল সেল পাওয়ার সিস্টেম। ছাদের সোলার প্যানেল থেকে আসা বিদ্যুৎ যখন ব্যবহৃত হয় না, তখন সেই বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে হাইড্রোজেন আকারে সংরক্ষিত থাকে। আবার রাতে বা মেঘলা দিনে যখন সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ আসে না, তখন সংরক্ষিত হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

ব্যাটারি সিস্টেমটির উচ্চতা প্রায় ১.৬৮ মিটার এবং প্রস্থ ১.২০ মিটার। তবে ওজন ৩২৪ কেজি হওয়ায় এই ব্যাটারি স্থানান্তর কিছুটা ঝামেলার। এতে ৩০ বার (Bar) প্রেশার বা ৪৩৫ পিএসআই (PSI) প্রেশারে বিশেষ একধরনের মেটাল হাইড্রাইড স্পঞ্জে ব্যাটারিতে হাইড্রোজেন সংরক্ষিত থাকে।

এই স্টোরেজ ডিভাইস অনেকটা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো। ইতিমধ্যেই বাজারে এমন কিছু ব্যাটারি পাওয়া যাচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে জার্মান কোম্পানি ‘সোনেন’ এর তৈরি ১০ এবং ৫০ কিলোওয়াট/ঘণ্টার সোলার ব্যাটারি বা ১৩.৫ কিলোওয়াট/ঘণ্টার ‘পাওয়ারওয়াল’ নামের টেসলা’র হাউজ ব্যাটারি।

তবে ‘লাভো’র এই হাইড্রোজেন হাইব্রিড ব্যাটারি নিরবচ্ছিন্নভাবে ৫ কিলোওয়াট আউটপুট দিতে পারে। আর এতে ৪০ কিলোওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ সঞ্চিত থাকে। অর্থাৎ এতে একবার চার্জ দিলেই সঞ্চিত বিদ্যুৎ দিয়ে গড়পড়তা যেকোনো অস্ট্রেলিয়ান বাড়ি দুই দিন চলতে পারবে। এই ব্যাটারি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে বিদ্যমান সব সোলার প্যানেলের সঙ্গে সহজেই সেটআপ করা যায়। ফলে ‘লাভো’র এই ব্যাটারি অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা পেতে পারে।

এছাড়াও সিস্টেমে থাকা ওয়াইফাই সংযোগের মাধ্যমে একটা মোবাইল অ্যাপ দিয়ে ব্যাটারিটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আবার, যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনেক বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজন হয়, সেখানে একাধিক ব্যাটারি স্থাপন করলে তা একধরনের ইন্টেলিজেন্ট ভার্চুয়াল পাওয়ার প্ল্যান্ট হিসেবে কাজ করবে।

১৯৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হিন্ডেনবার্গ এয়ারশিপ দুর্ঘটনার পর থেকে অনেকেই ভুলভাবে হাইড্রোজেনকে অনিরাপদ জ্বালানি হিসেবে দেখেন। তবে এই ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মতে, সিস্টেমে কোনো ছিদ্র বা লিক হলে তা বিস্ফোরিত না হয়ে দ্রুতই লিক হওয়া হাইড্রোজেন পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে। এমনিতে, জ্বালানি হিসেবে গ্যাসোলিন বা প্রাকৃতিক গ্যাসের চেয়ে হাইড্রোজেন বেশি বিপজ্জনক না।

প্রচলিত ব্যাটারির মতো রাসায়নিক পদার্থের বদলে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করায় এই ব্যাটারির আয়ুষ্কাল ৩০ বছরের কাছাকাছি। অর্থাৎ লিথিয়াম ব্যাটারির তুলনায় এর মেয়াদ প্রায় ৩ গুণ বেশি।

প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘লাভো’র মতে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই এই হাইড্রোজেন স্টোরেজ সিস্টেম বাসাবাড়িতে স্থাপন করা যাবে। এর প্রথম ২,৫০০ ইউনিটের প্রতিটার মূল্য ধরা হয়েছে ৩৪,৭৫০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ২৬,৯০০ মার্কিন ডলার। আবার, প্রি-অর্ডার নিশ্চিত করার জন্যে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ফেরতযোগ্য। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বছরে এর দাম কমে ২৯,৪৫০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ২২,৮০০ মার্কিন ডলারে নেমে আসবে।