মাইকেল পোলান অডানবন ম্যাগাজিনকে সম্প্রতি দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে বলেন, একটা কাঁটা চামচও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। মাইকেল পোলান একজন লেখক, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্র্যাকটিস অব নন-ফিকশন এবং ইউএস বার্কেলি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অভ জার্নালিজমে জার্নালিজমের প্রফেসর।
তার মতে, পরিবেশে প্রতিনিয়ত যে ক্ষতিকর গ্রিন হাউজ গ্যাস তৈরি হচ্ছে তার জন্য অনেকাংশে দায়ী আমাদের ফুড সিস্টেম। এই ব্যাপারে আমরা একটু সচেতন হলেই পানি, বাতাস এবং মাটি দূষণ কমে আসবে। তার পরিবর্তে প্রকৃতির এই উপাদানগুলিই পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখবে, এখান থেকেই আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদন করতে পারব।
মাইকেল পোলান বলেন, বাজার করা, সবজি চাষ করা এবং বাজার করতে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা জলবায়ুর পরিবর্তনের দ্রুত প্রক্রিয়াকে আটকানোর সব থেকে ভাল উপায়। তিনি আরো কিছু সহজ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন যেগুলি আমরা সচরাচর এড়িয়ে যাই। কিন্তু, এগুলি থেকেই আমরা অনেক উপকার পেতে পারি।
এ বিষয়ে তিনি ৪টি পরামর্শ দেন:
১. হিমায়িত খাবার কিনুন
প্রক্রিয়াজাত খাবার সাধারণত অতটা সস্তা না। তবে কাঁচা উপাদান ব্যবহার করে রান্না করলে খুব অল্প খরচেই খাবার পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, হিমায়িত ভেজিটেবল খারাপ না। তা দামেও সস্তা। আপনি যদি চাষীর কাছ থেকে টাটকা পালং শাক নাও কিনতে পারেন, এক বাক্স হিমায়িত পালং শাক কিনে নিন। জিনিসটা পণ্য হিসেবে যেমন ভাল, তেমনি প্যাকেট করার আগে ধুয়ে নেওয়া হয় বলে ব্যবহারও সুবিধাজনক আর রান্না হতেও বেশি সময় লাগে না।
আমার মনে হয় মানুষের প্রবণতা হচ্ছে, সবসময় ফাস্ট ফুড অথবা চাষীদের কাছ থেকে কিছু একটা বাছাই করে কিনতে চায়। কিন্তু বিষয়টা হওয়া উচিত আসল আর প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে কোনটা খাবে সেইটা। আসল খাবার প্রক্রিয়াজাত খাবারের তুলনায় সস্তা। খাবার শুধু চাষীদের কাছ থেকে কিনতে পারলেই সেটা ভাল, এমন না। খাবার বাছাইয়ে ওই ছোট্ট পরিবর্তন এনেও আপনি ভাল খাবার পেতে পারেন।
২. কুকিং শোতে আছেন এমন ভঙ্গিতে রান্না করবেন না
টাটকা খাবার বানানো আর যতটা সম্ভব প্রসেসড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া যায়—তা’ই খাওয়ার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। পোলান বলেন, কিন্তু অনেকেই এই সামান্য কাজটা করতে হিমশিম খান। হয় তারা রান্না করতে পারে না, নইলে টিভিতে এক্সপার্টদের রান্না করতে দেখে রান্না বিষয়ে ভয় ঢুকে গেছে তাদের মধ্যে। বা হাতে সময় নেই হয়ত, অথবা টিভির ওই কুকিং শোগুলি দেখে তারা ধরেই নিয়েছে রান্না অনেক সময়সাপেক্ষ জিনিস।
কিন্তু প্রত্যেক দিন রাতের জন্য রান্না করার অর্থ তো একটা পুরো বিয়ে বাড়ির খাবারের আয়োজন করা না। এর পিছনে আধা ঘণ্টার বেশি সময় দেওয়ার প্রয়োজন নাই। ভাল খাবার রান্না করার বদলে অনলাইনে বসে থাকা বা কুকিং শো উপভোগ করাটা স্মার্ট ডিসিশন না। আমাদের দেখতে হবে আমরা আসলে কোথায় সময় ব্যয় করছি, কোন জিনিসটা আমাদের জন্য বেশি জরুরি।
৩. ফ্রিজে কী আছে দেখুন
কুকিং শো দেখে এক হাজারটা উপকরণ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রান্নাঘরে ব্যয় না করে সেখানে যা যা আছে তা দিয়ে ঝটপট কিছু একটা বানিয়ে ফেলুন। পোলান বলেন, যেমন আমার ফ্রিজে সবসময় আমি ফ্রোজেন পালং শাক রাখি। সঙ্গে ক্যান করা ওয়াইল্ড স্যামন মাছ আর পাস্তা থাকে। ওই তিনটা উপকরণ দিয়ে আর সাথে হয়ত একটু অলিভ অয়েল, রসুন সঙ্গে বাগানে যদি ওইসময় পুদিনা পাতা পাই তা দিয়েই মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে আমি আমার পছন্দের রেসিপি বানিয়ে ফেলি।
পালং শাকগুলি ফ্রিজ থেকে বের করে ডিফ্রস্ট হতে রেখে দেই, পাস্তাটা রান্না করি, পালং শাকগুলি পাস্তায় দিয়ে তার সঙ্গে ভেজে নেই, স্যামন মাছের ক্যান খুলে তার উপর দিয়ে দেই। এরপরে হয়ত একটু পুদিনা পাতা দেই বা একটু বাড়তি অলিভ অয়েল ছিটিয়ে দেই, ব্যস আমার খাবার রেডি। এইটা স্বাদেও অসাধারণ।
আসলে রান্নার অভ্যাস থাকলে, ঘরে সবসময়ই কিছু না কিছু থাকবে আপনার। একটু কৌশলী হলেই ব্যাপারটায় অভ্যাস হয়ে যায়, এর পিছনে সারা জীবন ব্যয় করতে হবে না।
৪. কাজ ভাগ করে নিন
রান্না নিয়ে মূল সমস্যাগুলির একটা হল, কাজটাকে সম্পূর্ণই মহিলাদের দায়িত্ব বলে ধরা হয়। এই কারণেই জিনিসটা করা এত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তার উপর যিনি করছেন তিনি যদি হন কর্মজীবী। তাই, আমার মনে হয় পরিবারের পুরুষ আর বাচ্চাদেরকেও এতে অংশগ্রহণ করানো উচিত। ভাগাভাগি করে করলে কোনো কাজই আর অত কঠিন থাকে না।
রান্না নিয়ে এই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে এটাকে যখন আমরা একজন নির্দিষ্ট মানুষের কাজ হিসাবে আলাদা করে দিয়েছি। কিন্তু, আপনি যদি একবার আপনার বাচ্চাদের নিয়ে কাজটা করে দেখেন, তাহলে দেখবেন রান্নাটা বরং একটা আনন্দদায়ক কাজ।