পৃথিবীতে সম্ভবত নভোচারীরাই এক জায়গায় বন্দি অবস্থায় সময় কাটানোতে সবচেয়ে বেশি অভ্যস্ত। দীর্ঘ সময় পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে থাকতে হয় তাদের। করোনা মহামারীতে সতর্ক থাকার জন্য আমরা যারা নিজেদেরকে ঘরে বন্দি রেখেছি, তারা চাইলে এই মহাকাশচারীদের পরামর্শগুলি কাজে লাগাতে পারি।
যেমন নভোচারী স্কট কেলি ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে একটানা প্রায় এক বছর সময় কাটিয়ে এসেছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি আর্টিকেলে তিনি বলেন, “ওখানে আমি যখন ঘুমাতে যাচ্ছিলাম, তখনো আমি কাজে ছিলাম। ঘুম থেকে ওঠার পরও আমি কাজেই ছিলাম। মহাকাশে থাকা হয়তো পৃথিবীর একমাত্র চাকরি যেটা আপনি কখনোই পুরাপুরি ছাড়তে পারবেন না।”
“এরকম পরিস্থিতিতে উপভোগ করা যায় এমন সব কাজ করার জন্য আলাদা সময় রাখুন। মুভি দেখার জন্য অন্য সহকর্মীদের সাথে আলাদা সময় ঠিক করে রাখতাম আমি। মুভি দেখার সময় আমাদের কাছে স্ন্যাকস থাকত। এসময় আমি গেম অফ থ্রোনসের গোটা সিরিজ একটানা দেখেছি, তাও দুইবার করে।”
স্কট কেলি মনে করেন, এসময়ে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে রাখা অনেক দরকারী। তাছাড়া বাইরে গিয়ে প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ থাকা উচিত আমাদের সবারই। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে বাসার ভেতরেই প্রাকৃতিক কিছু শব্দ যেমন বৃষ্টির পানির আওয়াজ, পাখির কাকলী, গাছের পাতায় ঘষা লাগার শব্দ এসবের রেকর্ডিং শোনা যেতে পারে।
তাছাড়া আমাদের যত ধরনের হবি আছে—বই পড়া, লেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, গান গাওয়া ইত্যাদি সেগুলির চর্চা করার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। নভোচারীরা মহাকাশে থাকার সময় নিয়মিত এসব করে থাকেন।
ডায়েরি লেখা শুরু করতে পারেন, যেখানে প্রয়োজনীয় সব কথা লিখে রাখলেন। কর্মহীন অবস্থায় পড়ে থাকলে বা রুটিনের বাইরে গেলে আমরা অনেক সময়ই গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পরে মনে রাখতে পারি না—এজন্য জার্নাল অনেক ইউজফুল। আর ভিডিও কনফারেন্স বা ফোন কলের সুযোগ থাকলে আত্মীয়দের সাথে কানেক্টেড থাকাও এই সময়ে আপনার মানসিক অবস্থা ফ্রেশ রাখবে।
অন্যদিকে, কানাডিয়ান মহাকাশচারী ও আইএসএস কমান্ডার ক্রিস হ্যাডফিল্ড তার একটি ইউটিউব ভিডিওতে আইসোলেশনে থাকার জন্য আরো চারটি পরামর্শ দেন।
১. কী রকম ঝুঁকি
সবকিছু নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে থাকলে হবে না। বর্তমান পরিস্থতি সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য কোনও সূত্রের কাছ থেকে সব রকমের তথ্য নিয়ে রাখুন। এতে করে আপনি ও আপনার পরিবার কী ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছেন সেটা সম্বন্ধে সঠিক ধারণা তৈরি হবে আপনার।
২. গোল সেট করুন
দরকার হলে দিনের প্রতিটি ভাগের জন্য আলাদা আলাদা গোল সেট করে নিন। এভাবে চিন্তা করুন—যদি আরো সাত দিন আপনাকে কোয়ায়রেন্টিনে থাকতে হয়, তাহলে এই সাত দিন পর কী কী গোল পূরণ করতে চান আপনি? তারপর সেই অনুযায়ী একটা স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে নিন।
৩. প্রতিবন্ধক কী কী
তারপরে খুঁজে বের করেন, আপনার সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোন প্রতিবন্ধকতাগুলি আছে? মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা, টাকা-পয়সার সমস্যা নাকি পারিবারিক বোঝাপড়ার অভাব?
৪. কাজ সেরে ফেলুন
আগের তিনটা পয়েন্টের সবগুলির জবাব পাওয়া গেলে এরপর কাজে নেমে পড়েন। আপনার সেট করা গোল মোতাবেক কাজ করুন। হয় পরিবারের দেখাশোনা করেন বা অনেক দিনের পড়ে থাকা কাজগুলি করে ফেলেন কিংবা নতুন কোনো বই পড়েন, নতুন একটা ভাষা শেখা শুরু করেন—যেটাই আপনার লক্ষ্য হোক না কেন।
এদিকে পৃথিবীর প্রথম চাঁদে যাওয়ার অভিযানে অংশ নেওয়া অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী বাজ অলড্রিনকে কোয়ারেন্টিনের সময় কী করবেন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “দরজা লক করে শুয়ে থাকব।”
সূত্র. হাফিংটন পোস্ট