যাহা হাদিদ স্থাপত্য জগতে প্রথম মেয়ে সুপারস্টার। তার ডিজাইন করা ভবনগুলি ফিউচারিস্টিক বা ভবিষ্যৎ উপযোগী। ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যে যখন দুই দিনের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখন আরেক সুপার স্টার মডেল নাওমি ক্যাম্পবেল তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন যাহা হাদিদের লন্ডন অফিসে।
সাক্ষাৎকারে যাহা তাঁর শৈশব, তাঁর কাজ, ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর স্থাপত্যের ধরন, ব্যস্ততা ইত্যাদি অনেক বিষয়ে কথা বলেছেন।
যাহা হাদিদ প্রথম নারী হিসেবে ২০০৪ সালে প্রিজকার আর্কিটেকচার প্রাইজ জিতেন।
স্থাপত্য জগতে প্রিজকারকে নোবেল পুরষ্কারের সমকক্ষ বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া যাহা হাদিদ আরো অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
যাহা হাদিদ (Zaha Hadid) এর জন্ম ইরাকের বাগদাদে, অক্টোবর ৩১, ১৯৫০ সালে।
সাক্ষাৎকার: নাওমি ক্যাম্পবেল
যাহা হাদিদের সঙ্গে নাওমি ক্যাম্পবেল
নাওমি ক্যাম্পবেল
হ্যালো যাহা। আমাদের হাতে সময় অনেক কম কিন্তু আমার অনেক প্রশ্ন আছে। তাহলে চলুন শুরু করি। আপনার ইন্টারভিউতে প্রথম দিকের আঁভাগার্দ পরীক্ষামূলক ধরন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। আপনার বইটি কি এই বিষয় সম্পর্কেই?
যাহা হাদিদ
আমরা দুই বছর আগে জুরিখের গমারজিনস্কা গ্যালারিতে রাশিয়ান সুপারম্যাটিজম* বিষয়ে যে শো করেছি বইটি তার উপর। গ্যালারিতে রাশিয়ান সুপারম্যাটিস্টদের কালেকশনের মধ্যে আমরা সুপারম্যাটিজম অনুকরণে আমার করা কাজগুলি স্থাপন করেছি। রাশিয়ানরা পুরো বিংশ শতাব্দীর জিনিসগুলি নিয়ে আচ্ছন্ন ছিল–অনেক রকেট, মহাকাশে কুকুর, জাতীয় অর্থনৈতিক অর্জন প্রদর্শন করার পার্কের পাশের স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি। প্রদর্শনী কেন্দ্র এমন জিনিসে ভর্তি ছিল যে দেখে মনে হত গ্রহ ভাসছে প্রদর্শনী কেন্দ্রে। সবকিছু যেন উড়ছিল, সমস্ত কিছু। এমনকি তাদের বোতল খোলার যন্ত্রও রকেটের মত দেখতে। আমার সেগুলি অনেক ছিল, জানি না এখন সেগুলি কোথায়।
নাওমি
আমি যদি ভুল না করে থাকি আপনার স্কুল প্রজেক্টের নামও ছিল ম্যালেভিচ’স টেকটোনিক।
যাহা
হ্যাঁ, সেটা ছিল আমার ফোর্থ ইয়ারের প্রজেক্ট। আমি রেম কুলহাসের ছাত্রী ছিলাম। আমাদের একবার কাজ দেওয়া হয়েছিল জিনিস কোনো জায়গায় রেখে তাদের জন্য নতুন ধরনের এক স্কেল বুঝতে পারা। আমি আমারটা রেখেছিলাম টেমসের ব্রীজে। এর মানে ছিল এটা দেখানো যে, ম্যালেভিচ এবং লিসিজকির মত সুপারম্যাটিস্টদের কাজ শুধুমাত্র শিল্পকর্ম হিসাবে দেখা হয় কারণ সেগুলিকে তূুলনা করার কোনো স্কেল নেই। কিন্তু যখনই কোনো স্কেল রাখা হয় সেগুলি স্থাপত্য কর্ম হয়ে যায়।
নাওমি
আপনি অনেক এঁকেছেন, কিন্তু অনেক প্রজেক্টই বাস্তবায়ন হয়নি। প্রায় তিরিশ বছর আপনি একজন পেপার আর্কিটেক্ট ছিলেন। এই সময়টা কেন এত দীর্ঘ হল?
যাহা
আসলে তিরিশ বছর না। আমি পয়ত্রিশ বছর আগে স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছি। বলা উচিৎ বিশ বছর। হয়তো বা পনেরো। কেউ তখন এরকম ক্যারিয়ার গড়ার আশা করত না–একটা সাধারণ বাক্সের ভিতর কিছু একটা রাখার মত সবাই সংক্ষেপ করার চিন্তা করত। আমি খুব বড় বড় ভবনের প্রজেক্টগুলি দেখেছি এবং সেগুলি আমার কাছে বিশাল ও স্থূল মনে হয়েছে। সুতরাং আমার মনে হয়েছে যে সেগুলি যদি মাঝারি পাহাড়ের আকৃতির বা সেরকম কিছুর মতন হত তাহলে সেগুলি এত বেশি স্থূল হতনা। তখন আমি ফ্লুইড লাইন প্রয়োগ করে দৃশ্যমান পরিবেশ ও প্রচুর ভূমির উপরে কাজ করা শুরু করি। চেষ্টা ছিল এভাবে বিল্ডিং বানানোর দেখে যেন ‘লিকুইড’ মনে হয়। ‘লিকুইড’ স্পেস শব্দটাকে একটি আইডিয়ায় নিয়ে আসতে কয়েক বছর লেগেছে, যে আইডিয়া পরে আবার বিল্ডিং এ পরিণত হবে। বলতে গেলে এ কারণেই আমি বেশি এঁকেছি এবং পেইন্ট করেছি, গবেষণা এবং ব্যক্তিগত আগ্রহের অর্থে।
নাওমি
এবং এর থেকে বিপ্লব শুরু হয়েছে, পূর্বের সুপারম্যাটিজম ধারণার মত! আপনার কি এরকম কিছু মনে হয় এখন?
যাহা
আপনি জানেন, যখন আমি শুরু করেছি আমার তখন মনে হয়েছে যে প্রযুক্তিগত বিপ্লব আসছে, কিন্তু আমি জানতাম না কোথা থেকে শুরু হবে। শেষপর্যন্ত কম্পিউটার প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি সবকিছু বদলে দিয়েছে। এমনকি স্থাপত্যে–বিশেষ করে সাধারণ নির্মাণকাজে, যেটা পুরাপুরি জোড়া দেওয়ার চিহ্ন ছাড়াই হয়েছে। এটা শুধু গ্রাউন্ডের সাথে বিল্ডিংকে সংযুক্ত করে সেই জোড়া দেওয়ার চিহ্ন ছাড়া হওয়ার ব্যাপার না, তাছাড়াও সত্যিকার অর্থে আইডিয়ার সাথে এবং এর বাস্তবায়ন ও নির্মাণকাজের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। যেমন আমরা এখন বাকুতে দারুণ একটা প্রজেক্টের মাঝামাঝি আছি। সেখানে আমরা সম্পূর্ণতা আনার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করি। প্রক্রিয়াটি অনেক সাধারণতর হয়ে গেছে। লন্ডনে চেয়ার বানিয়ে আমেরিকায় রপ্তানি করার চেয়ে আপনি সেখানে মেশিনটি নিয়ে যেতে পারেন এবং সেখানেই বানাতে পারেন।
নাওমি
আপনি কি এই বিস্ময়কর থ্রি-ডি মেশিনগুলিকে বোঝাচ্ছেন?
যাহা
হ্যাঁ, তাই। থ্রি-ডি মডেলিং দিয়ে আমরা জিনিস বানাতে পারি, সত্যিকার অর্থে প্রতিটাই অনেক কম খরচে। বিল্ডিংগুলির দরকার হয় ইঞ্জিনিয়ারিং। সেখানে আপনি এটা ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। ড্রয়িংগুলি প্রিন্ট করে ইঞ্জিনিয়ারের কাছে পাঠানোর আর দরকার নেই। এটা ই-মেইলের মাধ্যমে করা যেতে পারে। এবং যথাযথভাবে বললে, হাত দিয়ে করলে যে ভুল এড়ানো অসম্ভব, আপনি কোনো ভুলই করতে পারবেন না। এখানে মডেল বানানোর আর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি ই-মেইল করে দেই এবং তারা যেখানেই থাকে এটার উপরে কাজ শুরু করতে পারে। প্র্যাকটিকালি এটা গাড়ির প্রযুক্তির মতই, বা বিমানের।
নাওমি
স্থাপত্যে আমাদের কি নতুন বৈপ্লবিক ধরন আশা করা উচিৎ?
যাহা
আমাদের করা উচিৎ। গত দশকগুলিতে স্থাপত্যে অল্প কিছু জোরালো পরিবর্তন হয়েছে। এটা শুরু হয়েছে মানুষকে ‘নর্মস’ এর ধারণা সংজ্ঞায়িত করে। ‘নর্মস’ এর শুধু একটাই যৌক্তিক অর্থ আছে। কিন্তু তখন মানুষ এটাকে প্রশ্ন করত। ‘টপোলজি’র উপরে ধারণা পরিবর্তন করা হয়েছিল। তারা ভাবত স্থাপত্যকে ভূমিতে থাকতে হবে। যেহেতু বিল্ডিং এর সাথে গ্র্যাভিটির সম্পর্ক আছে তাই বিল্ডিংগুলিকে খুব গ্রাউন্ডেড হতে হবে। এই ধারণা ছিল আগে যা বানানো হয়েছে তার উপরে–এটাকে সমতল এবং পুনরাবৃত্তিমূলক হতে হত। একই জিনিস অন্তহীনভাবে বানানোর মত। সেটার পরিবর্তন হয়েছে।
নাওমি
আপনি শুধু রাশিয়ান সুপারম্যাটিজমের ভক্তই না, মস্কোতে আপনার কয়েকটা প্রজেক্টও রয়েছে। মস্কো সিটিতে একটা অফিস কমপ্লেক্স এবং একটা আবাসিক টাওয়ার।
যাহা
সত্যি কথা বলতে, আমি জানি না প্রজেক্টগুলি এখন কোন অবস্থায় রয়েছে। রাশিয়ার সাথে আমার গভীর সংযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের সেখানে তেমন কাজ নেই। কিন্তু আমি সেন্ট পিটার্সবার্গে কিছু করার কথা ভাবতে ভালোবাসি, এটা অসাধারণ একটা শহর। মস্কোর কথা বলতে–আমি এটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ জায়গাগুলির একটা মনে করি।
নাওমি
আমিও একই কথা বলি। মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, কীভাবে আপনি সেখানে থাকেন? কিন্তু এটা প্রায় নিউ-ইয়র্কে থাকার মতই: অসাধারণ রেস্টুরেন্ট, অসাধারণ শিল্প, প্রদর্শনী, ব্যালে। সবসময়ই এর একটা শিক্ষণীয় চাহিদা রয়েছে।
যাহা
সুন্দর এবং খুব প্রশস্ত। আমার বন্ধুদের সাথে থাকার কথা মনে পড়ে। ওরা আমার হোটেলেই থাকত। আমি হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এইবার এবং ৪০ মিনিট লেগেছিল। প্রত্যেকটা রাস্তাই স্বাভাবিক রাস্তার চেয়ে তিন গুণ প্রশস্ত এবং বিল্ডিংগুলি আটগুণ বড়।
নাওমি
ওগুলির আরো পার্কিং লট এবং গ্যারেজ দরকার।
যাহা
এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। যদিও তাদের সাবওয়ে ট্রেন অনেক সুন্দর। আপনার তা মনে হয় না?
নাওমি
ট্রেনগুলি! আপনি কি সাবওয়েতে আলেক্সান্ডার ম্যাককুইনের শো দেখেছেন?
যাহা
সিরিয়াসলি? আমি এ ব্যাপারে জানতাম না। আমরা সাবওয়েতে যেতাম এবং প্রতি স্টেশনেই ট্রেন থেকে নামতাম। কারণ সবগুলিই আলাদা এবং সবগুলিই সুন্দর। এবং এই প্রাসাদগুলি মানুষকে দেওয়ার আইডিয়া একদম অন্যরকম। স্টালিনের সময়ের স্থাপত্য একটু উদ্ভট ধরনের কিন্তু বেশ আগ্রহোদ্দীপক।
নাওমি
হ্যাঁ, আমি একমত। যাহা, আপনার কাজে কখনোই কোনো বিশেষ জাতীয়তার ইঙ্গিত নেই। যেসব আর্কিটেক্ট দৃঢ়ভাবে জাতীয়তার চিহ্ন রাখে তাদের সম্পর্কে আপনার কী ভাবনা?
যাহা
আমি মনে করি পৃথিবীর মানুষজন যত বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ হবে তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং লক্ষ্যও একইরকম হবে। কিন্তু পরিচয় বজায় রাখা কোনো অলংকরণ নয়। মানুষের এখনো আলাদা অভ্যাস আছে: তারা অন্যরকমভাবে স্পেস ব্যবহার করে, আলাদা আবহাওয়ায় বসবাস করে… যখন আপনি বড় স্কেলে কোনো কিছু বানাবেন, কোনো ছোট বিল্ডিং বা কোনো সিঙ্গেল বাড়ি না, সব ঐতিহাসিক মূল্যবোধগুলি একইভাবে নিয়ে আসা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু কখনো কখনো কেউ পারে, প্রকৃতপক্ষে স্থানীয়দের কাছ থেকে শেখে।
কিছুদিন আগে আমি মেক্সিকো গিয়েছিলাম, ওখানে আর্কিটেক্ট লুইস ব্যারাগন কাজ করতেন। তিনি উত্তর আফ্রিকা ভ্রমণ করেছিলেন, তাঁর বিল্ডিংগুলি খুবই আধুনিকপন্থী দেখায়, আবার আফ্রিকান স্থাপত্যের সাথেও মিল আছে–বড় দেয়াল, উজ্জ্বল রঙ–অথবা বলা যায় ব্রাজিলে মর্ডানিজম–আলো প্রবেশের জন্য সুবিধাজনক সিলিং, আবহাওয়ার ধরন অনুযায়ী আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা (ভেন্টিলেশন) এবং সোলার স্ক্রিন। আমি মনে করি বিভিন্ন জায়গার লোকজনের প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী আজকের দিনে আপনিও একইভাবে কাজ করতে পারেন।
নাওমি
আমরা যেহেতু জাতীয় বিষয়ে ইতোমধ্যে চলে এসেছি, ইরাকে যা ঘটছে তা দেখে কি আপনি বিচলিত বোধ করেন?
যাহা
বিচলিত এবং আতঙ্কিত। এটা পৃথিবীর দারুণ একটা অংশ। মানুষজন খুব উদার এবং অতিথিপরায়ণ, কিন্তু তাদের ব্যাপকভাবে ভুল বোঝা হয়েছে। তারা যদি হিজাব অথবা সাদা বোরকা পরে তো কী?
নাওমি
মানুষের কাপড় দিয়ে আপনি মানুষকে বিচার করতে পারেন না।
যাহা
ষাটের দশকে যখন আমি ইরাকে থাকতাম, শিক্ষার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হত। প্রত্যেকটা মেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত। আমি সবসময় একটা ছেলের গল্প বলি, সে আমাদের বাসায় কাজ করতে আসত, তার বয়স ছিল ১৩ বছর। আমার মা সবসময় নিজের সন্তানের মত দেখত। সে একটি নিচু-গরীব পরিবারের ছিল, কিন্তু সে আমাদের সাথে ভাইয়ের মত ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। এবং সে পড়তে-লিখতে পারত না। বড় হয়ে সে বিয়ে করল এবং নিজের একটি বাড়িও কিনেছিল। এক প্রজন্মের মধ্যেই তার সব সন্তান কলেজে গিয়েছিল। এটা ছিল একটা বিস্ময়কর পরিবর্তন।
কিন্তু আমি এখন এই অগ্রসর চিন্তা আর দেখতে পাই না, এমনকি এলিটদের মধ্যেও না। সেখানে অনেক সমস্যা আছে। পুরা ইরাক ব্যাপারটা বিব্রতকর। এখন সেখানে যা ঘটছে তার সাথে অসাম্যের এবং ধনী-গরীবের মধ্যকার সংঘর্ষের সম্পর্ক আছে। সিস্টেম পুনরায় গড়ে তোলার জন্য তাদের শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রয়োজন।
নাওমি
আপনি একজন মুসলিম?
যাহা
হ্যাঁ, কিন্তু আমি প্র্যাকটিস করি না। আমি একটি ক্যাথলিক নান স্কুলে গিয়েছি ছোটবেলায়।
নাওমি
আপনি কি এই দুটি প্রভাবের মধ্যে বিরোধ খুঁজে পান?
যাহা হাদিদ ও নাওমি ক্যাম্পবেল
যাহা
না। আমরা যখন শিশু ছিলাম, তখন জানতাম না আমরা কী। আমরা মুসলিম ছিলাম: ইহুদি এবং খ্রিস্টান মেয়েরাও ছিল। আমি বুকের উপর ক্রস আঁকতাম, এবং পরে উপলব্ধি করলাম আমার বাবা-মা তা করে না। এবং আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমরা যদি খ্রিস্টান না হয়ে থাকি তাহলে আমি কেন ওই স্কুলে যাই? আমার বাবা বলেছিল, তুমি যদি না চাও তো যেতে হবে না। স্কুলটা একটা চ্যাপেলে অবস্থিত ছিল। আমার বয়স মাত্র চার ছিল তখন, আমরা বাচ্চা ছিলাম এবং এথনিক পার্থক্যগুলি বুঝতাম না। সেখানে কুর্দ, আর্মেনিয়ান এবং অন্য অনেক জাতীয়তার বাচ্চা ছিল। ‘উত্তপ্ত পাত্র’ অবশ্যই আরেকটি নাম হিসাবে ইরাকের জন্য উপযুক্ত হয়েছে, এটি একটি বহু-জাতীয়তার দেশ।
নাওমি
আমার মা সবসময় বলত যে বাগদাদ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের প্যারিস। বাকি অন্য শহরগুলি দেখতে কেমন? আপনি কি অনেক ভ্রমণ করেছেন?
যাহা
অনেক বছর আগে। দক্ষিণ ইরাক জলাভূমি অঞ্চল। আমার বাবা-মা আমাকে সেখানে বন্ধুদের সাথে যেতে দেওয়ার ব্যাপারে পাগলের মত আচরণ করেছিল। এটা ছিল জীবন পরিবর্তন করে দেওয়ার মত একটা অভিজ্ঞতা। পোকার কামড়ে আমি ছাড়া সবার প্রায় মারা যাওয়ার মত অবস্থা, কারণ পায়ের তালু থেকে মাথা পর্যন্ত আমি অ্যান্টি বাগ স্প্রে ব্যবহার করেছিলাম। একবার কল্পনা করতে চেষ্টা করুন আমরা একটি ডিঙি নৌকায় জলাভূমি পার হওয়ার চেষ্টা করছিলাম এবং সেখানে আমাদের পাশেই একটা মহিষ সাঁতার কাটছিল। কিন্তু যারা ওখানে থাকে তারা আসলেই সুন্দর, তামাটে রঙের। বাইরে থাকার কারণে তামাটে রঙ হয়েছে। আর মহিলারা দেখতে বিস্ময়কর রকমের যৌনাবেদনময়ী, সত্যিকার মডেলদের মত। এবং তারা মাথায় এমন সব জিনিস বহন করে যে তারা নৌকায় থাকলে মনে হয় পাল তোলা।
নাওমি
ওয়াও
যাহা
আমরা গাড়িতে ভ্রমণ করতাম এবং কখনো কখনো এমন জায়গায় গিয়েছি যে সেখানকার বাচ্চারা আগে কখনো গাড়ি দেখেনি। তারা আশ্চর্য হয়ে বলত এটা কী? তারা স্পষ্টতই ভাবত আমরা উন্মাদ! এটা তিরিশ বছর আগে ছিল।
নাওমি
আমার পঞ্চাশের দশকের ইরাকের একটা বই আছে। নারী এবং পুরুষেরা এত অভিজাত ছিল! যার কথা বলছি, আমি জানি যে আপনার প্রিয় ডিজাইনার হচ্ছেন ইয়োহজি ইয়ামামাতো এবং ইসে মিয়াকে। তাদের কি আপনি পছন্দ করেন? তাদের কাজের স্পষ্টতা?
যাহা
আমি ইসেকে পছন্দ করতাম যখন সে ডিজাইনের দায়িত্বে ছিল। প্রথম দৃষ্টিতে লাইনগুলি খুব সাধারণ মনে হত। কিন্তু যখনই আপনি সেখানে জিনিস রাখবেন, এটা অন্যরকম কিছু হয়ে যায়। কিন্তু আমি এটাতে আর ফ্যাশন খুঁজে পাই না। আমি বিশ্বাস করি ডিজাইন আরো মডার্ন হওয়া উচিৎ, তাছাড়া ইতোমধ্যেই আমার যে কাপড়গুলি আছে সেগুলি আমি পরতে পারি। আসলে আমি এখন কমে দেস গারসন, মেইসন মার্টিন মারগেইলা এবং অ্যান দেমিউলেমিসতার পরি। আমি মনে করতে পারি যে আশির দশকে সব আর্ট স্কুলগুলি আপনাকে ফ্যাশন প্যারেডের অনুভূতি দিত। সত্যিকার অর্থে একটা পোশাকের লক্ষ ছিল একেকজনের নিজস্বতা প্রকাশ করা। আমি যখন বাচ্চা ছিলাম তখন থেকেই ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহী ছিলাম। ফ্যাশন যেভাবে স্থাপত্যের সাথে প্রতিযোগীতা করে মনে হয় তা দারুণ। এটা একইসাথে সময়কেও তাড়াতাড়ি প্রতিফলিত করে। অবশ্যই তাদেরকে আগেই প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন, এবং টাইমিংটা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। একজন অবশ্যই বছরে চার থেকে আটটি সংগ্রহ তৈরি করে।
নাওমি
আমার এখনো আরো একটি নাম যোগ করার আছে… আপনি কার্ল লেজারফেল্ডের সাথে কাজ করতেন। তিনি আমাকে সম্প্রতি বলেছেন, “ যাহা যদি প্যারিসে থাকে তাহলে তাঁকে আমাকে টেক্সট করতে এবং একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে বলবেন।”
যাহা
আমরা মোবাইল আর্ট প্রজেক্ট শেয়ার করেছিলাম। কার্ল এটা অন্য কারো সাথে শুরু করেছিল, কিন্তু তারপর ঘোষণা দিল আমি না যোগ দিলে সে আর এটা চালাবে না। তারপর ল্যাকস্তে লিমিটেড এডিশনের জুতা কালেকশনের আইডিয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের অনুসরণ করে ব্রাজিলের মেলিসা এবং নাদজা সয়ারস্কি–এখানে আমরা অলঙ্কার এবং প্রদীপের উপর কাজ করেছিলাম। বর্তমানে আমরা রেম কুলহাসের জন্য জুতা বানাচ্ছি। এই প্রজেক্টগুলি সবসময় এমন কিছু নিয়ে আসে যা আমি জানতাম না, এমন কিছু যা আমার ম্যাপে আগে ছিল না।
নাওমি
একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার… আপনাকে বলা হয় ক্যারিয়ারিস্ট। মনে হয় কি আপনার উপর বেশি চাপ হতে পারে?
যাহা
একেবারেই না। এটা একটা অপশন। আমি দ্বিমত করি না, অনুতাপও করি না ক্যারিয়ারিস্ট হওয়ার কারণে। অবশ্যই এটা একটা স্বাভাবিক জীবন, একজন পার্টনার থাকা বা সন্তান থাকার ইচ্ছাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। কিন্তু, সত্য কথা বলতে, আমি যদি সন্তান চাইতাম, তাহলে আমার সন্তান থাকত। যদিও মুসলিম ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে একজনকে স্বামী ছাড়া সন্তান থাকার জন্য বিবেচনা করে দেখতে হবে। হয়ত আমি এর জন্য একদিন অনুতাপ করব, কিন্তু এখনো অনুতাপ হয় নি।
নাওমি
আপনি কি একজন নারীবাদী মনে করেন?
যাহা
আমি নারীবাদী পতাকা বহন করি না, যদি সে অর্থে আপনি বলে থাকেন। আমি বরং নারীদের সামর্থ্যে এবং ক্ষমতায় এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমাকে মহিলা আর্কিটেক্ট বলা আমি অনুমোদন করি না, কারণ গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি আর্কিটেক্ট, মহিলা হলো পিছনের তথ্য। কিন্তু, সম্ভবত এটা অন্য নারীদের সাহায্য করেছে, পেশা হিসেবে এটা নিয়ে প্রফেশনাল স্কেলে কিছু করে দেখাতে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। বিশেষ করে যে ক্ষেত্রটা নারীদের জন্য উপযোগী না। যখন আমি প্রথম শুরু করি, আমার ক্যারিয়ার পছন্দ করাটা অধিকাংশ মানুষের কাছেই অস্বাভাবিক মনে হত, কিন্তু আজ কদাচিৎ কেউ এটা লক্ষ করে। কিন্তু আমি মনে করি নারীদের ব্যাপারে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে এখনো সংস্কারগুলি কঠিন রয়ে গেছে।
নাওমি
আসলেই (হেসে)।
যাহা
ওয়েলশরা বেশি খারাপ, তারা মহিলাদের দাঁড়াতে দেয় না। তাদের সীমাবদ্ধ স্বীকৃতিসহ এক ধরনের ভ্রাতৃত্ববোধ আছে। সুতরাং হ্যাঁ, আমি নারীবাদী, কারণ আমি সব নারীদেরকেই দেখি স্মার্ট, গিফটেড এবং কঠিন।
নাওমি
এবং শক্তিশালী!
যাহা
পুরুষদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী!
নাওমি
আপনাকে সিস্টেম, ক্লায়েন্ট, ম্যাটেরিয়াল, স্পেস এগুলির সাথে লড়াই করতে হয়েছে। আপনি কীভাবে সামলিয়েছেন?
যাহা
একজন নারী এবং একজন প্রবাসী হয়ে স্থাপত্য করা চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে যখন আপনি ‘অস্বাভাবিক’ কিছু করেন। আমি এটার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছি কারণ মানুষজন জানত না আমার সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমাকে উন্মাদ মনে হত, অসুস্থ রকমের মাথা গরম এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাগ উঠে যায় সময়ে সময়ে, কিন্তু আমিও কাজ নিয়ে খুব নাছোড়বান্দা, অবিচল এবং আসক্ত ছিলাম। আপনি আমার কার্ডিফ বে অপেরা হাউজের উপর কাজের ইতিহাসের সাথে পরিচিত। আমরা প্রতিযোগীতার তিনটি রাউন্ড জিতেছিলাম, কিন্তু ক্লায়েন্ট তারপরও প্রজেক্টটা নিতে অনিচ্ছুক ছিল। এটা অনেক বড় একটা স্ক্যান্ডাল ছিল। শুরু থেকেই আমি জানতাম তারা প্রজেক্ট এবং আমার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করবে। তারা আমাকে বলেছিল: ছেড়ে দিন, ব্রিটিশদের আসল সৌন্দর্যের রুচি আছে। এবং আমি শুধু উত্তর দিয়েছিলাম: দেখা যাবে। এবং আমি ঠিক ছিলাম। স্থানীয়রা ছয় বছর ধরে প্রজেক্টটার সাথে লড়াই করছিল। কিন্তু আজও এয়ারপোর্টে আমার কাছে মানুষ এসে বলে: “আমি ওয়েলশ, এবং যা ঘটেছে তার জন্যে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
নাওমি
ওয়াও!
যাহা
আমি তখন অপরিচিত ছিলাম, কিন্তু এই প্রজেক্ট নিয়ে এত বেশি কথা হয়েছে যে আমি একজন পাবলিক ফিগার হয়ে গেছি। প্রজেক্টটার প্রতি সারা ব্রিটেন জুড়ে মানুষের আগ্রহ আর্কিটেকচারের প্রতি বিপুল আগ্রহ তৈরি করে। তাই, আমার সহকর্মীরা নিশ্চিত ছিল যে আমি ছেড়ে দেব। আমরা লটারি ফান্ডিংয়ের জন্যে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কখনোই ফান্ড দেওয়া হয়নি। এটা একটা দুর্যোগ ছিল। আমাদের নিজেদেরকে কুষ্ঠরোগী মনে হয়েছিল, এবং কেউ আমাদের কখনো কাজ দিবে না। কিন্তু আমরা শুধু উদ্যম দুই গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। এক দিকে আমরা চেয়েছিলাম আমাদের স্মৃতি থেকে এই ঘটনা মুছে ফেলতে, আরেকদিকে চেয়েছিলাম প্রমাণ করতে যে আমরা এটার যোগ্য ছিলাম।
নাওমি
এরপরে আপনি দারুণ কিছু অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। এর মধ্যে আছে প্রিজকার আর্কিটেকচার প্রাইজ, সিবিই অ্যাওয়ার্ড, বৈরুতে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অনারারি ডিগ্রী গ্রহণ করেছেন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোস্ট এক্সেলেন্ট অর্ডারের নারী কমান্ডার নির্বাচিত হয়েছেন। এইগুলির মধ্যে কোন অ্যাওয়ার্ড আপনার বেশি প্রিয় এবং আপনার কাছে অর্থবহ?
যাহা
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ডেম কমান্ডার অব দি অর্ডার নির্বাচিত হওয়া অনেক বড় একটি সম্মান। বিশেষ করে যে দেশটিকে আমি আমার বাড়ি হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। আমার ক্যারিয়ারের উপর প্রিজকারের বড় একটি প্রভাব আছে। আমি সময়োপযোগী ছিলাম, একইভাবে বলতে গেলে, আমার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলাম। মানুষ একসময় অবসরে যায়, বিশ্রাম গ্রহণ করে। কিন্তু আমি তখন কী করব? প্রতিদিন ম্যানিকিউর করব?
নাওমি
আপনি ক্রমাগত প্রথা ভেঙেছেন। ভবিষ্যতে আপনার কাছ থেকে আমরা কী আশা করব? কোনো প্রজেক্ট আছে কি যেটা আপনি আলাদা কোনো একটি দেশে বাস্তবায়ন করতে চান?
যাহা
নিশ্চিতভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে। ওই অঞ্চলে আমার কাজের চিহ্ন রাখা একজন আরব হিসেবে আমাকে খুশি করবে। শহরের প্রতিটি অংশসহ শহরের সমস্ত স্পেস নিয়ে একটা প্রজেক্ট করতে পারলে আমি খুশী হবো। একটা সাধারণ আইডিয়া অনুসারে একটি পুরো অংশকে অর্গানাইজ করার চেষ্টা করা, ম্যাগালোম্যানিয়াক চিন্তা বাদ দিয়ে। এটা এমন কিছু যা আমি আগে করি নি। এরকম অনেক সুযোগ আছে, আপনাকে শুধু সেগুলির জন্য চোখ খোলা রাখতে হবে। উদাহারণ হিসাবে বলা যায়, লন্ডনে অলিম্পিক পার্ক খুব বাজে হয়েছে। কিন্তু এটা–একটি সম্পূর্ণ নতুন টাউন, অসাধারণ একটি প্রজন্ম–অতীত প্রোগ্রাম–এবং প্রজেক্টটিকে মৌলিক এবং দুর্দান্ত হতে হবে।
নাওমি
লন্ডন অ্যাকুয়াটিকস সেন্টার নিয়ে কী বলবেন?
যাহা
এটা ছিল অলিম্পিক পার্কের জন্য প্রথম প্রজেক্ট। ওখানে একটা শর্ত ছিল যে অলিম্পিকের সময় বিল্ডিংটি প্রসারিত হবে এবং পরে সংকুচিত হয়ে যাবে। পুলের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাড়াতে হয়েছিল, কিন্তু যখন সাইড-বিল্ডিংগুলি যোগ করতে হল, এটা সম্পূর্ণ অন্যরকম দেখাত। বাতাসের মধ্যে একটি ব্রীজ বানানো বড় একটি চ্যালেন্জ্। দারুণ অভিজ্ঞতা। আমি একটা ব্যাপারেই শুধু হতভম্ব হয়ে যাই– অলিম্পিকের সময় তারা আমাকে কেন আমন্ত্রণ জানায় নি?
নাওমি
অবিশ্বাস্য! আপনি চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে থাকতে কী করেন? টিভি দেখেন আপনি?
যাহা
বেশ, আমি টেলিভিশন পছন্দ করি, কিন্তু সাধারণত মাঝরাতের পরে দেখি। সত্যি কথা বলতে, আমি ‘ম্যাড ম্যানের’ মত নতুন সিরিজগুলি পছন্দ করি। এটা ব্রিলিয়ান্ট। আমি এটা দ্বারা মুগ্ধ, এটাতে বেশ বিস্তারিতভাবে গবেষণা করা হয়েছে। আপনি যদি তিরিশ বছর পরে এটা দেখেন আপনি ভাবতে পারবেন না এটা এখন বানানো হয়েছিল।
নাওমি
হেয়ার-স্টাইল, কাপড়, সেট-ডিজাইন!
যাহা
হ্যাঁ, এই কারণেই আমি টেলিভিশন পছন্দ করি। আমি ছবি পছন্দ করি।
নাওমি
এসবের জন্য আপনি টাইম ম্যানেজ করেন কীভাবে? আপনাকে অবশ্যই অনেক ভ্রমণ করতে হয়।
যাহা
এটা আসলে সবচেয়ে ক্লান্তিকর অংশ। কিন্তু আমি আসলেই কোনো অভিযোগ করতে পারি না এ ব্যাপারে, কাজ এখন গ্লোবাল হয়ে গেছে। আপনি আগে এটা করতে পারতেন না। লুই কানকে লোকেশনে ঢাকায় থাকতে হয়েছিল, বাংলাদেশে। আপনি কল্পনা করতে পারেন তিনি ফিলাডেলফিয়া থেকে নিউইয়র্ক গেছেন, তারপর ইউরোপ, তারপর আরো। অবশ্যই কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় লেগেছিল। অর লে কর্বুসিয়ের, তিনি যখন চণ্ডীগড়ে কাজ করছিলেন! থ্যাংকস গড তারা জেট প্লেন আবিষ্কার করেছে! এই গ্রীষ্মে আমাকে ভেনিসের বিয়েনেল যেতে হবে, তারপর মাদ্রিদে এক্সিবিশন, মন্টপেলিয়ার ওপেনিং, এন্টার্প, বাকু, চীন… এবং এই দৌড়ঝাপ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। কোনো ছুটি ছাড়া আমি একটা ভেজিটেবল হয়ে যাব।
[/caption]
নাওমি
আমি আপনাকে কিছু মাস্ক পাঠাব। ওগুলি দেখতে খুব সুন্দর না হলেও কাজের। আপনি আপনার নাক আর কানে লাগিয়ে নিবেন, ভালো কাজ করে। বিমানে লোকজন হাঁচি-কাশি দেয়, এবং আমার কিছুই হয় না। যখন আমি নামি সুস্থ বোধ করি।
যাহা
দারুণ! ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের নতুন ফার্স্টক্লাস সিটগুলি খুব বাজে…
নাওমি
স্যরি, এ ব্যাপারে কথা বলতে পারব না। শুধু যখন রেকর্ডার অফ করব…
অনুবাদ: আশরাফুল আলম শাওন
—-
*সুপারম্যাটিজম
সুপারম্যাটিজম একটি আর্ট-ফর্ম। সুপারম্যাটিজমে জ্যামিতির মৌলিক বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করা হয়। যেমন, বৃত্ত, ত্রিভূজ, চতুর্ভূজ, বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্র ইত্যাদি। নির্দিষ্ট আওতায় রঙের ব্যবহার নিয়ে সুপারম্যাটিজমে কাজ করা হয়। ১৯১৩ সালে রাশিয়ায় কাজিমির ম্যালেভিচ সুপারম্যাটিজম শুরু করেন।
যাহা হাদিদ
যাহা হাদিদের জন্ম ১৯৫০ সালের ৩১ অক্টোবর ইরাকের বাগদাদে। তাঁর ভালো নাম যাহা মোহাম্মদ হাদিদ। তিনি ইরাকি-ব্রিটিশ নাগরিক।
যাহা লন্ডনের আর্কিটেকচারাল অ্যাসোসিয়েশন স্কুল অব আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে রেম কুলহাস, এলিয়া জেঙ্ঘেলিস এবং বার্নার্ড সুমির সাথে তাঁর দেখা হয়। যাহা তাঁর সাবেক দুই শিক্ষক কুলহাস ও জেঙ্ঘেলিসের জন্য নেদারল্যান্ডসের রটারডামের অফিস ফর মেট্রোপলিটান আর্কিটেকচারে কাজ করেছেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কুলহাসের সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেন।
যাহা হাদিদ হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ডিজাইন, শিকাগোর ইলিনয়েস স্কুল অব আর্কিটেকচার, অহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিসহ আরো অনেক বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন।
যাহা হাদিদ প্রথম নারী হিসেবে ২০০৪ সালে প্রিজকার আর্কিটেকচার প্রাইজ জিতেন। স্থাপত্য জগতে প্রিজকারকে নোবেল পুরষ্কারের সমকক্ষ বিবেচনা করা হয়। এছাড়া যাহা হাদিদ আরো অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
স্পেনের মাদ্রিদে হোটেল পুয়ের্তা আমেরিকা, জার্মানির লিপজিগে বিএমডব্লিউ সেন্ট্রাল বিল্ডিং, ২০১২ সামার অলিম্পিকের লন্ডন অ্যাকুয়াটিকস সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের এলি অ্যান্ড এডিথ বোর্ড আর্ট মিউজিয়ামসহ যাহা হাদিদের বিখ্যাত কাজ অসংখ্য।
স্থাপত্য এবং ডিজাইন নিয়ে যাহা হাদিদের প্রদর্শনীর সংখ্যাও অনেক।
নাওমি ক্যাম্পবেল
নাওমি ক্যাম্পবেল একজন ব্রিটিশ মডেল, অভিনেত্রী এবং গায়িকা। নাওমি ক্যাম্পবেলের জন্ম ১৯৭০ সালের ২২ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের লন্ডনের স্ট্রেথামে। তিনি আফ্রো-জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত। ১৫ বছর বয়সে তিনি মডেলিং শুরু করেন। আশির দশকের শেষ দিকে এবং নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে পরিচিত এবং কাঙ্ক্ষিত তিনজন মডেলের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর প্রজন্মের ছয়জন সুপার মডেলের একজন ছিলেন নাওমি ক্যাম্পবেল।
নাওমি ক্যাম্পবেলের বাবা ছিলেন জ্যামাইকান ড্যান্সার ভ্যালেরি মরিস। নাওমি ক্যাম্পবেলের মা যখন চার মাসের অন্ত্বঃসত্তা তখন তাঁর বাবা তাঁর মাকে ছেড়ে চলে যায়। মায়ের ইচ্ছার কারণে নাওমি কখনো তাঁর বাবার সাথে দেখা করেন নি। নাওমি তাঁর মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে থেকে ‘ক্যাম্পবেল’ পদবী গ্রহণ করেন।
নাওমি ক্যাম্পবেল প্রথম কাজ করেন ১৯৭৮ সালে সাত বছর বয়সে। সেটা ছিল বব মার্লের ‘ইজ দিস লাভ’ গানের মিউজিক ভিডিও। ১৫ বছর বয়সে তাঁকে ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ‘এলে’র কভারে দেখা যায়।
এরপর নাওমি ক্যাম্পবেল গিয়ানি ভার্সেস, আজেদিন আলাইয়া এবং আইজাক মিজরাহির মত ডিজাইনারদের সাথে কাজ করেন। পিটার লিন্ডবার্গ, হার্ব রিটস এবং ব্রুস ওয়েবার এর মত ফটোগাফারের ছবির মডেল হন।
১৯৯০-এর পরে নাওমি ক্যাম্পবেল ক্রিস্টি টারলিংটন, সিন্ডি ক্রফর্ড, লিন্ডা ইভাঞ্জেলিসতা এবং ক্লডিয়া শেফার-এর সাথে মিলে সুপারমডেল নামের একটি গ্রুপ গঠন করেন। পরে কেট মস এতে যোগ দেন। তারা ছয়জন ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে একত্রে ‘বিগ সিক্স’ নামে পরিচিত ছিলেন।
নাওমি ক্যাম্পবেল বিয়ে করেননি। আশির দশকের শেষ দিকে তাঁর সাথে বক্সার মাইক টাইসনের সম্পর্ক ছিল। নব্বই দশকের শুরুর দিকে অভিনেতা রবার্ট ডি নিরোর সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল। ১৯৯৩ সালে তিনি ইউটু’র বেজ গিটারিস্ট অ্যাডাম ক্লেটনের সাথে এনগেজড হন। ১৯৯৪ সালে তাঁরা আলাদা হয়ে যান। ১৯৯৪ সালে নাওমি ক্যাম্পবেলের নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে দেখা হয় এবং ম্যান্ডেলা তাঁকে ‘অনারারি গ্র্যান্ডডটার’ বলে ঘোষণা করেন।