যারা বইটা পড়েন নাই, আগেই বলে রাখি, কিছু স্পয়লার আছে। বই পড়ে না থাকলে লেখা অ্যাভয়েড করাই ভাল হবে।
‘লেডি চ্যাটার্লি’স লাভার’ যেই সংস্করণ আমি কিনছি সেটা সিগনেট প্রেস এর ২০১৪-র সংস্করণ। বাঁধাই প্রচ্ছদ পাতা সব মিলায়া এত ভাল লাগছিল যে বাংলা অনুবাদই কিনছি। অনুবাদক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত। অনুবাদ ভালই লাগছে, তবে কিছু পশ্চিমবঙ্গীয় এক্সপ্রেশন আছে, সেগুলি না থাকলে আরো ভাল লাগত।
এই উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে। ইন্টারনেট থেকে জানলাম এটা লেখকের শেষ উপন্যাস, বিতর্কিতও বটে। ডি. এইচ. লরেন্স ১৯৩০ সালে ৪৪ বছর বয়সে মারা যান। এটা লেখেন ১৯২৬ থেকে ’২৮ এর মধ্যে। মৃত্যুর আগে অনেকটা সময় তিনি যক্ষ্মায় ভুগছেন। সেখান থেকে সন্দেহ হয়, লেখকের কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বইয়ে কাজে লাগছে কিনা।
তো ডি. এইচ. লরেন্স এই বই ৩টা ভিন্ন সংস্করণে লিখছিলেন, চূড়ান্তটাই ১৯২৮ সালে ইতালিতে প্রকাশিত হয়, ব্রিটেনে না। কারণ অশ্লীলতার অভিযোগে বইটা আমেরিকা, জাপান, ভারত, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতে ব্যান করা হইছিল। ১৯৬০ সালে গিয়া প্রকাশিত হয় ব্রিটেনে, সেটাও অনেক কাহিনির পর, যখন পেঙ্গুইন বইটার আনকাট সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়।
পেঙ্গুইন কেন এমন একটা বই বের করল সেটার জন্য আবার একটা বিখ্যাত মামলা হয় “আর বনাম পেঙ্গুইন বুকস লিমিটিডে” নামে। পেঙ্গুইন কেসটা জিতে আর উপন্যাসও ফাইনালি ব্রিটেনে মুক্তি পায়।
বইটা নিষিদ্ধ করতে চাওয়ার এত এত উদ্যোগের কারণ হিসাবে শুধু যৌনতার ব্যাপারে লেখকের এক্সপ্লিসিটি’র বাইরেও আরো কিছু বিষয়কে দায়ী করা যায়। সব মিলায়া বললে, প্রথমত উচ্চবর্গের সাথে নিম্নবর্গের প্রেম, দ্বিতীয়ত পরকীয়া, তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে বড় “অপরাধ” সম্ভবত নারী চরিত্রের যৌনতার সিদ্ধান্তে সাবমিসিভ না হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার ট্যাবুকে আঘাত করা। মৃত্যু আসন্ন বইলাই কিনা কে জানে, রক্ষণশীল সমাজে এমন বই পাবলিশ করতে চাওয়াটাও দুঃসাহসী চিন্তা!
নামের বিষয়টাও মজার, “লেডি চ্যাটার্লি’স লাভার” শুনলে সব মনোযোগ যায় লেডি চ্যাটার্লির দিকে, কিন্তু বলা হচ্ছে আসলে তার লাভার বা প্রেমিকের কথা। সেটা চ্যাটার্লি সাহেবের স্ত্রী লেডি চ্যাটার্লির প্রেমিক। যদিও প্রেমিকের চেয়ে লেডি চ্যাটার্লি বেশি গুরুত্ব পাইছে উপন্যাসে।
গল্পের মূল চরিত্র উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে কনস্ট্যান্স চ্যাটার্লি বা কনি। ১৯১৭ সালে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চরম পরিস্থিতির মধ্যে বিয়ে করে জমিদার পরিবারের ছেলে স্যার ক্লিফোর্ড চ্যাটার্লি’কে। সেখান থেকে কনি হয় “লেডি চ্যাটার্লি”। তাদের বিয়ের শুরুটা বেশ সুখকর ছিল। একধরনের মানসিক বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে তাদের ভালবাসাময় সম্পর্ক ছিল। ক্লিফোর্ডের বুদ্ধিমত্তা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে কনি মুগ্ধ ছিল, ক্লিফোর্ডও কনিকে মুগ্ধতার চোখেই দেখত।
শিল্প, সাহিত্য, সমাজ নানা বিষয় নিয়ে তারা আলাপ করত। বিয়ের অল্প দিনের মাথায় ক্লিফ্লোর্ড যুদ্ধে যায়, যেটা সেসময় কনি ক্লিফোর্ডের সাহসিকতা হিসাবে দেখে। কিন্তু ক্লিফোর্ড যুদ্ধ থেকে ফেরত আসে করুণ দশায়। চিকিৎসায় প্রাণে বাঁচলেও তার শরীরের নিচের অংশ পুরোটাই অবশ হয়ে যায়। ক্লিফোর্ডের এই অবস্থাই কনি ও তার সম্পর্কে একটা বিভাজন তৈরি করে।
যে সময় কনির বয়স ২৩, ক্লিফোর্ডের ২৯। অ্যাডাল্টহুডের প্রারম্ভে এমন কঠিন চয়েসের সামনে কনি পড়ে, যেটা মেনে নিলেও ক্ষতি হবে, না মেনে নিলেও ক্ষতি হবে। না মানলে সে সমাজচ্যুত হবে।
স্বামীর অপারগতা কনির মধ্যে শূন্যতা ও একাকীত্ব তৈরি। এটা ক্লিফোর্ডের দিক থেকে তত নাই, সে তার স্ত্রী’র প্রতি একইরকম ভালবাসা বোধ করে। তবে দাম্পত্যের সম্পর্ক বন্ধুত্বে আটকে যাওয়া ও মা হইতে না পারার গভীর বেদনা কনির মধ্যে দিন দিন হতাশা আরো বাড়ায়। এমনই সময় তার দেখা হয় অলিভার মেলরস এর সাথে।
স্বল্পভাষী দরিদ্র মেলরস তাদের বনরক্ষক। মৃদু দেখা, কথা হওয়া ধীরে ধীরে কনির মধ্যে ভাললাগার অনুভূতি তৈরি করে। শুরুটা শারীরিক সম্পর্ক দিয়ে হইলেও দুইজনই দুইজনের প্রেমে পড়ে একসময়। সেটা ক্লিফোর্ড পরে জানতে পারে। নানারকম ঘটনা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়া উপন্যাস আগায়। প্রধান চরিত্রদের ভবিষ্যৎ ঠিক কী হবে সেটা লেখক বলেন না উপন্যাসের শেষে, তবে নতুন প্রেম কিছুটা আশা জাগায়, হয়ত কনি তার কাঙ্ক্ষিত জীবন পাইতে যাচ্ছে।
ব্যক্তিগত সুখ আর সমাজের মধ্যে কোনো একটা বাছাইয়ের প্রক্রিয়া ও গ্লানিকে যথেষ্ট স্পেস দিছেন লেখক। ধীরে ধীরে বাস্তবতার সাথে পরিচিত হতে হতে কনির আত্ম-উন্মোচন ঘটে, স্বাধীনতা ও নিজস্ব পছন্দের ব্যাপারে ধারণা তৈরি হয়। সে বুঝতে পারে স্থবিরতা ও মেনে নেওয়াই একমাত্র পন্থা না জীবনের।
যেখানে যৌনতা থেকে বহু দূরে থাকা তার স্বামী ক্লিফোর্ড শূন্যতার একটা প্রতীক হয়ে থাকে। তবে চরিত্রের গুরুত্ব বিবেচনা করতে বললে, ক্লিফোর্ডই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র এই উপন্যাসের। তার ওপর ভার যতটুকু মনে হয় তারচেয়ে অনেক বেশি। ক্লিফোর্ডের নিজস্ব বোঝাপড়াও ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এই জটিল অভিজ্ঞতাগুলির মধ্য দিয়া যাওয়ার কারণে। সে রিয়েলাইজ করে তার শারীরিক অক্ষমতা শুধু তাকে না, তার কাছের মানুষদের জীবনকেও সীমিত করে দিচ্ছে, কিন্তু ঠিক সাথে সাথেই এটা মানতে পারে না।
একটা বিষয় মজার যে, কনির দুঃখ হতাশার সাথে অ্যাট্যাচড হয়ে যাওয়ার কারণে হঠাৎ করে ক্লিফোর্ডের প্রতিক্রিয়াগুলিকে ইভিল’ই মনে হয়। সে যেন নিতান্তই রক্ষণশীল, স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক একজন। কিন্তু তার দিকের চিন্তাটা যখন করবেন, দেখবেন যে একজন সাধারণ মানুষ নিজের স্ত্রী’কে দেখতেছে অন্য কারও প্রেমে পড়তে, যে কিনা কিছুদিন আগেও তাকে ভালবাসত, এখন আর বাসে না। এই বঞ্চিত হওয়ার অনুভূতির সাথেও ক্লিফোর্ডের বোঝাপড়া করতে হয়।
কনির স্বাধীনতার প্রতি তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া মূলত এই ভয় থেকে আসে যে, সে বোধহয় নিজের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। প্রতিক্রিয়ায় রক্ষণশীলতা ছাপ থাকলেও, তার মনের মধ্যে থাকা নিরাপত্তাহীনতাকে ঠিক বাদ দিয়ে আগানো যায় না। ক্লিফোর্ড এও জানে, যেটা বদলে গেছে, সেটা আর কখনোই আগের অবস্থায় ফিরবে না।
তাছাড়া একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসাবে, তার স্ত্রী যদি দরিদ্র কারো সাথে চইলা যায়, সমাজে তার মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ মনে হয়, কনির যেমন আর প্রয়োজন নাই ধনী সমাজকে, ক্লিফোর্ডের ক্ষেত্রেও তাই হওয়া উচিত, এই আশা তৈরি হওয়া একটু অস্বস্তিই তৈরি করে পড়ার সময়।
কিন্তু একগামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে ত্যাগ করতে না চাওয়াকে কি শুধু “রক্ষণশীলতা” বা “স্বার্থপরতা” দিয়ে বোঝা যাবে? বহুগামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটা সহজেই সমাধান করা যায়, যেটা এই ক্ষেত্রে জটিল হয়ে দাঁড়ায়।
প্রেমকে শরীরের উর্ধ্বে তোলার ঐশ্বরিকতা দানের যে সামাজিক রোমান্টিসিজম সেটাকে অর্থহীন মনে হয় এই উপন্যাস পড়লে। কারণ সত্যিই কি, ভালবাসা কেবল মনের বিষয়? যাকে মন দিয়ে ভালবাসে, তাকে শারীরিক ভাবেও কি ভালবাসে না মানুষ? সেটার কি মূল্য নাই? প্রেমকে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাওয়া কেন?
ধনী ও গরিবের মধ্যে বিয়ের স্টেটাস ক্যুও’কে উপন্যাসটা আরেক ভাবে চ্যালেঞ্জ করে। এটা তো ঠিকই বিয়ে শুধু ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির প্রেমের বন্ধন না, বিয়ে দুইটা পরিবারের অর্থনৈতিক মর্যাদা ও ক্ষমতাও সমাজ নির্ধারণ করে। সেজন্য বিয়ে সচরাচর হয় সম স্টেটাসের মধ্যে। অনেকটা জোট বাঁধার মত, সমশক্তির জোট।
সেটা করার সময় অনেক বিবাহেই ব্যক্তির নিজস্ব চাহিদা সামাজিক প্রদর্শন ও চুক্তির তলে চাপা পড়ে। দিনের পর দিন অসুখী বিয়ের মধ্যে থাকে মানুষ, অসুখী বাড়ির মধ্যে পরিবারতন্ত্র চর্চা কইরা সন্তান প্রসব করে, তাদেরকে বড় করে, বিয়ে দেয়, সম্পত্তি লিখে দেয়ার মাধ্যমে পরিবারের নাম ইতিহাসে টিকায়া রাখতে চেষ্টা করে।
কিন্তু একজন ব্যক্তি, যিনি মানুষ সবার আগে, যার বাঁচার ও সুখী হওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে, কেন তাকে সবসময় বৃহৎ স্বার্থে ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হইতে হবে? যখন সে কখনোই নিজের জীবনের মালিকানা পাচ্ছে না, সেই মালিকানা পাচ্ছে তার সমাজ ও পরিবার, সমাজ ও পরিবারকে কেন স্বার্থপর বলা হবে না?
সেখান থেকেই বোধহয় কনি মেলরসকে খুঁজে পাওয়ার পর বুঝতে পারে এখানেই তার মুক্তির সূত্র আছে। মেলরসও ভালবাসতে চায় কনিকে, কিন্তু নিম্নবিত্ত সমাজের একজন হিসাবে সে সাবধান থাকে উচ্চবিত্ত নারীর সঙ্গে সম্পর্কের ফলাফল কী হইতে পারে বিবেচনা করে। এটা তাকে ভোগায়, সংশয়ে ফেলে।
শারীরিক সম্পর্কের বাইরেও মেলরস কনিকে আরো অনেক কিছু দেয়। সে এমন একজন ব্যক্তি যে প্রকৃতির মধ্যে শান্তি খুঁজে পায়, আধুনিকতা প্রসূত সকল প্রকার আন্তঃসারশূন্যতাকে রিজেক্ট করে। কনির ব্যক্তিত্বে যে পরিবর্তন আসে এবং শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়, সেটার ওপর আসলে মেলরসের কাছ থেকে পাওয়া জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব আছে। মেলরসের মধ্যে উচ্চশ্রেণীর ভদ্রতাগুলি না থাকলেও কনি তার সংবেদনশীলতা এবং আবেগপ্রবণতা দিয়ে মুগ্ধ হয়।
তো যেটা বলতেছিলাম, প্রেমের ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কের গুরুত্বকে যে খর্ব করে দেখতে চাওয়া, সেটাকে প্রশ্নের মধ্যেই ফেলে উপন্যাসটা। এইটা আমাদের আরেকটা টেন্ডেন্সি দেখায়, প্রেমে পড়া মানুষের প্রতি আমরা যতটা সংবেদনশীল, প্রেম থেকে বের হয়ে যাওয়া মানুষের প্রতি ততটাই নিষ্ঠুর, ও অসহিষ্ণু। তাকে আমরা বাধ্য করতে চাই সঙ্গীর প্রতি প্রেম বোধ না করা একটা সম্পর্কে থাইকা যাইতে।
উপন্যাসের প্রশ্নগুলি এই সময়ের জন্য আবারো জরুরি হয়ে উঠছে আমি মনে করি। বিশেষত যখন পৃথিবীব্যাপী একগামিতাকে সম্পর্কের একমাত্র শর্ত হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কীভাবে একটা সমাজ “ইনক্লুসিভিটি”র কথা বলে নারী পুরুষের সম্পর্কের নানা রূপের ক্ষেত্রে, কিন্তু আবার সম্পর্ক শেষ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছা ও স্বাধীনতাকে স্পেস দেয় না।
আমি মনে করি, ব্যক্তির প্রেম ও যৌনতার ওপর সমাজের ‘নৈতিকতা’ আরোপের হিপোক্রিটিকাল এই অবস্থানকে, ঠিক ভুলের সরল হিসাবের বাইরে গিয়া একটা ফিলোসফিকাল স্পেস থেকে দেখার সুযোগ দেয় ‘লেডি চ্যাটার্লি’স লাভার’।
একগামী সম্পর্কের “ন্যায়বিচার” নিয়া আমার আরেকটা থট আছে।
তা হচ্ছে, এই ন্যায়বিচার আসলে কতটা ন্যায়বিচার। বায়াসনেস থাকলে তা কি ন্যায়বিচার হবে? আমাদের বায়াসনেস আসে যাকে ছেড়ে যাওয়া হচ্ছে তার প্রতি।
একজন ব্যক্তি নতুন কারো প্রেমে পড়ছে, এটা নিঃসন্দেহে তার পার্টনারের জন্য আকাশ ভেঙে পড়া মুহূর্ত। কিন্তু পার্টনারের মুখের দিকে তাকায়া, ইচ্ছার বিরুদ্ধে, প্রেম বোধ না করা সত্ত্বেও যদি সে সম্পর্কে থাকতে বাধ্য হয়, সেটা কি ন্যায়বিচার হবে?
যৌথ পরিচয়ের বাইরেও একজন মানুষের পরিচয় থাকে, জীবনের শুরু থেকেই থাকে, যতদিন না সে যৌথতায় যুক্ত হয় এবং নিজের আইডেন্টিটিকে ছাপায়া যৌথ আইডেন্টিটি দিয়া সমাজে নিজের সাফল্যের কোটা পূরণ করে।
একজন মানুষ হিসাবে, আমি যার সাথে প্রেম করতে চাই, তার সাথেই প্রেম করার অধিকার কি আমার থাকার কথা না? নাকি পার্টনারকে সুখী রাখাটাই একমাত্র শর্ত জীবনে? আমার নিজের জীবন কোথায় থাকল তাহলে?
এটা ঠিক একগামী সম্পর্কেরও বৈশিষ্ট্য না, একগামী সম্পর্কের সাথে তরুণরা এখন যেই “লয়্যাল্টি”র ধারণাকে যুক্ত করতেছে সেটার বিষয়। তো অপরের প্রতি লয়্যাল থাকার চেষ্টা করতে গিয়া নিজের সুখ বা প্রাপ্তি’কে কখনো জায়গা দেয়া যাবে না, কেবল লয়্যাল থাকাই জীবন হয়ে উঠবে, তাই তো?
এই প্রশ্নগুলা একটা সমাজ যখন এড়ায়া শুধুমাত্র সম্পর্কের মধুচন্দ্রিমাকালীন সময়কে “পরম” হিসাবে আরোপ করতে চায়, সে শ্যালো ও অসহিষ্ণু হইতে থাকে। সম্পর্ক বদলায় সময়ের সাথে সাথে, এবং মধুচন্দ্রিমাই সবটা না কোনো সম্পর্কে। তখন যার প্রেম থাকে না, সে থাইকা যায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এইটাও কি অত্যাচার না?
আর ধরেন কেউ আপনার প্রতি ভালবাসাই বোধ করতেছে না, যা করতেছে বন্ধুত্ব বা ভদ্রতার খাতিরে, এসব আপনি কেন গ্রহণ করবেন? আপনি আসছেন ভালবাসা পাইতে, সেখানে বন্ধুত্ব নিয়া সন্তুষ্ট থাকতে চাওয়া তো কম্প্রোমাইজ করা। আপনি কি সচেতন এই ব্যাপারে? এখন কেউ নিজের কম পাওয়া নিয়া সন্তুষ্ট থাকতে চাইতেই পারে, আমি শুধু বললাম উপন্যাস থেকে কী কী চিন্তা আসল।
হা হা, পড়াটা তত জটিল ছিল না, যতটা এই লেখা পড়ে মনে হচ্ছে। উপন্যাসটাকে গ্রেট বলব না, তবে এটা অনেকগুলি বাস্তবতাকে সামনে নিয়া আসে। যেগুলি এড়াইলে নিজেকে ফাঁকি দেওয়া হবে।
লেডি চ্যাটার্লি'স লাভার পড়ার পর