বিকেলেই বেশি মিথ্যা বলে মানুষ। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এমনটাই দেখা যাচ্ছে।
কারো কাছ থেকে কি আপনি সঠিক উত্তর পেতে চান? সকালে জিজ্ঞেস করলে সঠিক উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। নৈতিকতা হচ্ছে ডায়েট কন্ট্রোলের মতো। সকালে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যত সহজ, রাতে ততটা সহজ নয়।
২০১৩ সালে নীতিশাস্ত্র গবেষক মারইয়াম কোউচাকি (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়) এবং আইজাক স্মিথ (উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়) “প্রতিদিনকার স্বাভাবিক এবং তুচ্ছ ঘটনাও কারো নৈতিক প্রলোভন ঠেকানোর ক্ষমতা কমাতে পারে” বিষয়ক একটি তত্ত্ব পরীক্ষা করে দেখেন।
মর্নিং মোরালিটি ইফেক্ট
২৭৪ জন প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে তারা দিনের ৪টি সময়ে পরীক্ষা চালান। দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা বিকেলের দিকে অনৈতিক আচরণে যতটা যুক্ত থাকে ও মিথ্যা বলে সকালে তাদের নৈতিক আচরণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ তারচেয়ে অনেক বেশি থাকে।
গবেষকরা তাদের এই ফলাফলের নাম দিয়েছেন ‘মর্নিং মোরালিটি ইফেক্ট’।
‘দি আনডিফিটেড মাইন্ড: অন দ্য সায়েন্স অফ কন্সট্রাক্টিং অ্যান্ড ইনডিস্ট্রাকটিভ সেলফ’ বইয়ের লেখক অ্যালেক্স লিকারম্যান বলেছেন, “নৈতিক ব্যবহারের জন্য ইচ্ছাশক্তিই প্রধান।”
লিকারম্যান আরো বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত ইচ্ছাশক্তি হলো এক ধরনের দুর্বল মানসিক চাপ, যা আস্তে আস্তে কমে যায়। এবং যত আপনি এটা ব্যবহার করবেন ততই কমতে থাকবে।”
প্রলুব্ধ না হলে সঠিক কাজ করা সহজ
লিকারম্যানের মতে, যতক্ষণ আপনি ভুল কিছু করার জন্যে প্রলুব্ধ না হচ্ছেন ততক্ষণ সঠিক কাজ করা সহজ। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত লাভের প্রলোভন আসে তখন তা জয় করা কঠিন।
আপনার ইচ্ছাশক্তি যখন অন্যান্য কারণে কমে যেতে থাকে তখন অনৈতিক কিছু করা ও সে ব্যাপারকে যুক্তিসঙ্গত করে দেখা আর কঠিন থাকে না আপনার কাছে।
উদাহরণ হিসাবে, গবেষণার একটা পর্বে অংশগ্রহণকারীদের মাঝখানে ভাগ করা বর্গক্ষেত্রের সামনে আনা হয়। বর্গক্ষেত্রের ভিতরে দু পাশেই অগোছালো ভাবে অনেকগুলি বিন্দু চিহ্নিত ছিল। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ভাগ করা বর্গক্ষেত্রের ডানে বা বামে কোথায় বেশি বিন্দু রয়েছে।
সঠিক বা ভুল বিবেচনা ছাড়াই প্রতিটি উত্তরের জন্যে একটি করে নিকেল দেয়া হয় তাদেরকে। বিন্দু গণনা মানসিক ক্লান্তির কারণ। কিন্তু দেখা গেছে সকালের অংশগ্রহণকারীরা বিকেলের’দের তুলনায় বেশি মনোযোগ ও সময় নিয়ে বিন্দু গণনা করে এবং অপেক্ষাকৃত সঠিক উত্তর দেয়।
বেশি মিথ্যা বলা হয় বিকেল বেলায়
আরেকটি পরীক্ষায়, অংশগ্রহণকারীদেরকে সহযোগী আরেকজন অংশগ্রহণকারীকে মেসেজ পাঠাতে বলা হয়। যে মেসেজটা সত্য কিংবা মিথ্যাও হতে পারবে। যদি তারা সত্য মেসেজ পাঠায় তবে পাবে ২৫ সেন্ট। আর যদি মিথ্যা মেসেজ পাঠায় তবে পাবে ৫০ সেন্ট করে। দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীরা বিকেলেই বেশি মিথ্যা মেসেজ পাঠিয়েছে।
যে কোনো কিছুর মুখোমুখি হওয়ার জন্যে দিনের সঠিক সময়টি বেছে নিন। যদি আপনার কর্মক্ষেত্রে কোনো সুবিধার দরকার হয় সকালের দিকেই বসকে বলুন। সকালের দিকে অবশ্য একটি অসুবিধা আছে। তা হলো, তিনি হয়তো আপনার চাহিদার প্রয়োজনীয়তা সঠিক ভাবে যাচাই করতে চাইবেন। কিন্তু বিকেলের ক্লান্তি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনাকে সুবিধাও দিতে পারে। যেমন গবেষণায় দেখা গেছে, বিচারকরা বিকেলের চাইতে সকালে কঠিন রায় দিয়ে থাকেন। লিকারম্যানের মতে, আপনি যতই মানসিক ভাবে ক্লান্ত হতে থাকবেন ততই আপনি কম সঠিক ও কম নৈতিক হতে থাকবেন।
আপনার দিনের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নিন। কারণ যখন আপনি ফ্রেশ আছেন তখনই আপনার পক্ষে আত্মবিশ্বাসী হওয়া ও সঠিক কাজ বা সিদ্ধান্ত খুঁজে বের করা সহজ।