বছর পাঁচ হয় অস্ট্রেলিয়ার উত্তরের এলাকা থেকে আমেরিকান এক পর্যটক হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে বোট ছিল একটা ছোট। সেটা পাওয়া গেল সৈকতের কাছে। ডুবন্ত।
এবার এই পাঁচ বছরে পরে একটা চুরির মামলা ঘাটতে গিয়ে আমেরিকান পর্যটককে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। জীবন্ত।
নিখোঁজ হওয়ার টাইমটায় পত্রপত্রিকা টিভিতে ভদ্রলোকের নাম বলা হচ্ছিল কেনেথ রডম্যান। ২০১০ সালে বিদেশীদের আগ্রহের শহর কেয়ার্নস থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরের পোর্ট ডগলাসে তাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। তার এক বন্ধু তাকে নৌকা নিয়ে সৈকতের দিকে আগাতে দেখেছিল।
এর মাস খানেক পরে যেখানে তাকে দেখা গিয়েছিল তার কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে তার কায়াকটিকে ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর ২০১০ সালের সেই ৫৫ বছর বয়সী কেনেথ রডম্যানের দেখা আর পাওয়া যায় নি বা তার সম্পর্কে কিছু শোনাও যায় নি, তিনি স্রেফ নিখোঁজ হয়ে যান।
২০১৫ সালের জুলাই মাসের ২৯ তারিখে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের পুলিশ জানায়, ২০১০ সাল থেকে কেনেথের পরিবার, বন্ধু বা পুলিশ কেউ তার সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় নি। দুই দিন আগে এ বছরের ২৭ জুলাই রাতে পুলিশ চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ৬০ বছর বয়সী কেনেথ রডম্যানের সন্ধান পায়। নিখোঁজ পর্যটক কেনেথ পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনি নিখোঁজ ব্যক্তি হিসেবে পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত আছেন।
দি কেয়ার্নস পোস্ট এর খবরে জানা যায়, কেয়ার্নসে অফিসাররা একটা ছিচকে চুরির ঘটনা তদন্তে যখন ব্যস্ত তখন পুলিশের সঙ্গে থাকা কুকুর তাকে ধাওয়া করে গ্রেফতার করে।
আগ্রহীদের ধারণা, তিনি হয়তো কুইন্সল্যান্ডের একদম উত্তরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো জানা যায় নাই তাকে কেউ সাহায্য করেছিল কিনা বা কেন তিনি নিখোঁজ হওয়ার এই ড্রামা সাজিয়েছিলেন।
ইন্সপেক্টর গ্লেন হোরান বলেছেন, নিখোঁজ ব্যক্তি হিসেবে তার ঘটনাটা কেস হিসেবে কখনোই ডিসমিস হয় নাই, কিন্তু তদন্তে পুলিশ দেখতে পাচ্ছে তিনি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ এড়িয়ে চলেছেন।
পুলিশ নিখোঁজ পর্যটককে ইমিগ্রেশন কর্তাদের কাছে তুলে দিয়েছে এবং তারা আশা করছে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
কিছুদিন আগে একই এলাকায় আরেক আমেরিকান ভদ্রলোক নিজের যে পরিচয় দেন দেখা যায় তিনি সে ব্যক্তি নন, তারই কয়েক সপ্তাহ পরে এই কেনেথ রডম্যানকে খুঁজে পাওয়ার ঘটনা ঘটলো।
উত্তর কুইন্সল্যান্ডে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ডেনিস লি লেফারটি ছিলেন পথিকৃৎ। ২০১৫ সালের মে মাসে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার আগে তিনি ২৮ বছর একটা ক্রোকোডাইল ক্রুজ কোম্পানি চালিয়েছেন।
তার মৃত্যুতে তার এলাকায় বন্ধুদের মধ্যে শোক নেমে আসে। অন্যদিকে টাম্পা বে টাইমস পত্রিকা এই ঘটনায় যে সংবাদ প্রকাশ করে তার শিরোনাম ছিল—’অস্ট্রেলিয়ায় রোড এক্সিডেন্টে ফ্লোরিডার ৪০ বছরের রহস্য শেষ’।
পত্রিকার দাবি লেফারটি আসলে ছিলেন রেমন্ড গ্রেডি স্ট্যানসেল জুনিয়র, যুক্তরাষ্ট্রে মনে করা হয় ৪০ বছর আগে তিনি মারা গেছেন।
পত্রিকার বক্তব্য অনুসারে স্ট্যানসেলকে ১৯৭৪ সালে ফ্লোরিডায় ১২ টনেরও বেশি মারিজুয়ানা স্মাগলিংয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি জামিন আবেদন করেন এবং তার যুক্তরাষ্ট্রীয় পাসপোর্ট বিচার না হওয়া পর্যন্ত জামানত রাখেন।
কিন্তু সেই বিচার কাজ আর আগায় নি। কারণ ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকে তার উকিল জানায় তার মক্কেল অর্থাৎ স্ট্যানসেল স্কুবা ড্রাইভিংয়ের সময় নিখোঁজ হয়েছেন, তাকে আর দেখা যায় নাই।
২.
মি. রডম্যানের সাবেক স্ত্রী জানিয়েছেন রডম্যান ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়ার সময় তার স্ত্রী এবং বন্ধুদের বলেছিলেন তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।
কিন্তু রডম্যানের সাবেক স্ত্রী করে হলমার্ক বলেছেন তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন রডম্যান সবসময়ই তার স্পেশাল এফেক্ট ডিজাইনার এবং কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কারের জীবন থেকে অন্য কোথাও সরার পরিকল্পনা করছিলেন।
রডম্যানকে পুলিশ আবিষ্কার করেছে এই খবর শুনে কোরে হলমার্ক শকড হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, রডম্যান নিখোঁজ হওয়ার পরে তার পরিবার ও তার বন্ধুদের খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা নিজেদের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, যাওয়ার আগে সে আমাকে বলেছিল তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ, তাই সে বিকল্প চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে। কিন্তু তার কম্পিউটারে আমি অনেক প্রমাণ পেয়েছি যে সে যাওয়ার আগে নিখোঁজ হওয়ার পরিকল্পনা করছিল। আমি সবকিছু একসাথে জোড়া দিয়ে না দেখে সে যা বলেছিল তাই বিশ্বাস করেছিলাম। সমুদ্রতীরে কীভাবে টাকা লুকাতে হয়, কীভাবে নিখোঁজ হতে হয় এইসব বিষয়ে অনেক ওয়েবসাইটে সে ভিজিট করেছিল আমি দেখেছি। এবং সে কিছু অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছিল, যেগুলির মানে সে নিখোঁজ হওয়ার পরে আমি বুঝতে পেরেছি।
হলমার্ক জানিয়েছেন, রডম্যানের কাছে তিনি সন্তান ভরণপোষণের জন্য ৫০ হাজার ডলার পাবেন। তিনি জানিয়েছেন তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। তিনি কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করতে চান যে রডম্যান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলে সন্তানের ভরণপোষণ না দেয়ার ফৌজদারী অপরাধের আওতাভুক্ত হবেন।
তিনি বলেন, একটু ভয়ের ব্যাপার আছে। তা হলো সে হয়ত আমাকে এবং আমার মেয়েকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে এবং আমি জানি না তার মাথায় কী পরিকল্পনা আছে। আমি আশা করি কেউ একজন যুক্তরাষ্ট্রে সে ল্যান্ড করার সাথে সাথেই গেটে তার সাথে দেখা করবে এবং তাকে ফিরে না এসে আবার নিখোঁজ হয়ে যেতে বলবে।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন মি. রডম্যান তাকে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত বিষয়ে আপিল করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু এখন তাকে কোথায় রাখা হয়েছে বা তার বিষয়ে পরবর্তীতে কি অ্যাকশন নেওয়া হবে এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট কিছু জানায় নি।