ডেনমার্কের একজন মেটাল ডিটেক্টরিস্ট বা ধাতু অনুসন্ধানী মাটির নিচ থেকে ১১ শতকের কানের দুল উদঘাটন করেছেন। এর আগে স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় কেউ এরকম স্বর্ণের অলঙ্কার দেখেনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বর্ণের তৈরি এই আশ্চর্যজনক কানের দুলটি বভলিং (Bøvling) এর কাছে একটি মাঠে পাওয়া গেছে। বভলিং জায়গাটির অবস্থান হচ্ছে ডেনমার্কের ওয়েস্ট জুটল্যান্ডে। এক হাজার বছর আগে বাইজেন্টাইন সম্রাট এখানকার কোনো ভাইকিং চিফ বা জলদস্যু সর্দারকে এই অলঙ্কারটি হয়ত উপহার দিয়েছিলেন।
কানের দুলের নকশা
অর্ধচন্দ্রাকৃতি এ কানের দুলটি খুঁজে পেয়েছিলেন একজন মেটাল ডিটেক্টরিস্ট। এতে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে একটা গাছের ওপর দুটি পাখির চিত্র। স্বর্ণের পাতের ওপর এনামেল দিয়ে সাজানো হয়েছিল অলঙ্কারটি। এখন পর্যন্ত বিশ্বে এরকম অলঙ্কারের নমুনা সব মিলিয়ে ১০-১২টি পাওয়া গেছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় এর আগে এই ধরনের কোনো অলঙ্কার আবিষ্কৃত হয়নি।
আরো পড়ুন: মিশরের হারানো স্বর্ণ নগরীতে ৫ বিস্ময়কর আবিষ্কার
এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ক্লোইসন এনামেলের বেগুনি, সবুজ ও নীল আবরণ (‘Cloisonné’ ফরাসি শব্দ। এর অর্থ পার্টিশন বা বিভাজন। অলঙ্কার শিল্পে এনামেল করার একটি রীতি এটি)। অলঙ্কারটিতে স্বর্ণের সুতা দিয়ে আলাদা করা হয়েছে এই তিন রঙের আবরণকে। দারুণ শৈলী ও নকশায় চিত্রিত করা হয়েছে একটি গাছের দুই প্রান্তে থাকা পাখি পাখিকে। বিশেষজ্ঞদের মতে চিত্রিত গাছটি এখানে ‘ট্রি অফ লাইফ’ বা ‘জীবন বৃক্ষ’। ইসলাম ও খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যে ‘জীবন বৃক্ষ’ ধারণাটি বহুল প্রচলিত। কানের দুলের এই নকশা মূলত ইজিপ্ট, সিরিয়া, বাইজেন্টিয়াম ও রাশিয়ায় দেখা যায়। এর সাথে মিল পাওয়া যায় আরব্য অলঙ্কার নকশার। তবে এর উদ্ভব ইজিপ্টে।
কেন কানের দুলটি ভাইকিংদের নয়
ডেনমার্ক জাতীয় জাদুঘরের পরিদর্শক পিটার প্যানেজ এর মতে, “এই আবিষ্কারটি খুবই সুন্দর। এটি ১১ শতকে স্বর্ণের তৈরি একটি অসাধারণ কানের দুল।”
তিনি আরো বলেন, “ভাইকিংরা হাজার হাজার রুপার মুদ্রা নিয়ে এলেও অলঙ্কার কখনোই নিয়ে আসেনি। দুলটি সম্ভবত কায়রো থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। জাদুঘরে সংরক্ষিত অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি কানের দুলগুলির সাথে ইজিপ্টের অলঙ্কারগুলির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।”
আরো পড়ুন: বিষাক্ত বই
‘ড্যাগমার্ক ক্রস’-এর সাথে কানের দুলটির সাদৃশ্য
১ থেকে ১০-এর মানদণ্ডে প্যানেজ এই আবিষ্কারটিকে ৮-এর মর্যাদা দিয়েছেন। এই রেটিংয়ের ক্ষেত্রে ১০ হচ্ছে সর্বোচ্চ মাত্রা। এর আগে বাইজেন্টাইনে ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে ‘ড্যাগমার্ক ক্রস’ নামে এনামেলের কাজ করা একটা রিলিফ আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি পাওয়া যায় রিংস্টেড-এ অবস্থিত সেইন্ট ব্যান্ডিট নামের রাজকীয় সমাধি ক্ষেত্রে। ‘ড্যাগমার্ক ক্রস’-র সাথে আবিষ্কৃত কানের দুলটির বেশ মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।
প্যানেজ বলেন, “মানের দিক থেকে বিবেচনা করলে কানের দুলটির এনামেলের নকশা ‘ড্যাগমার্ক ক্রস’ এর মতো নয়। ‘ড্যাগমার্ক ক্রস’ আবিষ্কার করা হয়েছিল একজন রানির সমাধিক্ষেত্রে। একারণেই সেটির শৈল্পিক মূল্যও ছিল বেশি। কিন্তু কানের দুলটি পাওয়া গেছে পশ্চিম জুটল্যান্ডের অখ্যাত মাঠে। কানের দুল-এর ব্যাপারটি চমৎকার এজন্য যে এটাকে নিয়ে আপনি যা খুশি কল্পনা করতে পারেন।”
প্যানেজ আরো বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম এরকম একটি সুন্দর ও দামি অলঙ্কার খুঁজে পাওয়া যাবে কোনো রাজকীয় সমাধিতে। কানের দুলের সাথে পাওয়া যাবে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ। কিন্তু সাধারণ কোনো মাঠে এটা আবিষ্কৃত হবে এটা ভাবতেই পারিনি।”
এই আবিষ্কারটি করেছেন ফ্রানৎস ফুগাল ভেস্টারগার্ড নামের একজন মেটাল ডিটেক্টরিস্ট।। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন। এই মাঠটিতে এর আগেও বেশ কয়েকবার অনুসন্ধান চালান তিনি।
দুর্লভ দুলটি যেভাবে সংরক্ষিত হবে
এই কানের দুলটি ন্যাশনাল মিউজিয়ামের একটা নিরাপদ জায়গায় প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। ভাইকিংদের লুঠ করা সম্পদ প্রদর্শনের স্থানে রাখা হবে এই দুলটি। মিউজিয়ামের এই ভাগটির নাম ‘The Cruise’। ‘ক্রুজ’ শব্দ দিয়ে এখানে ভাইকিং জলদস্যুদের মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্র যাত্রাকে বোঝানো হচ্ছে। ।
সূত্র. ডেইলিমেইল, ১০ ডিসেম্বর ২০২১
অনুবাদ. মাহতাবুল আলম