বড় ধরনের যানজট না হলে পিঁপড়াদের অভ্যাস সিঙ্গেল সংঘর্ষকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। এক পদার্থবিজ্ঞানী পিঁপড়াদের এই আচরণকে গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করার উপায় বের করেছেন।
পিঁপড়াদের চলাচল করার পদ্ধতি গবেষণা করে কি রাস্তার ট্রাফিক জ্যাম কাটানো সম্ভব? ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির পদার্থবিজ্ঞানী অপূর্ব নাগার মনে করেন, হ্যাঁ, সম্ভব।
নাগার বলেন, পথে প্রচুর পিঁপড়া থাকলে বা পিঁপড়ারা পথ দিয়ে চলতে থাকলেও দ্রুতবেগ বজায় রাখতে পারে, এই ব্যাপারটি নিয়ে জার্মান এবং ইন্ডিয়ান গবেষকদের একটি গবেষণা দেখার পরে তিনি এই ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন।
তার মতে, তিনটি কারণে পিঁপড়াদের যানজট হয় না। প্রথম কারণ, পিঁপড়াদের কোনো ইগো নেই, তারা আরেকজনকে পার হওয়ার শো-অফ করে না।
নাগার বলেন, দ্বিতীয় কারণটি হল, মামুলি দুর্ঘটনা বা সংঘর্ষ নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। যদি বড় ধরনের যানজট না হয় তাহলে পিঁপড়াদের অভ্যাস সিঙ্গেল একটি সংঘর্ষকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন, তৃতীয় কারণটি হল, পথে যদি ভিড় বেশি থাকে তাহলে পিঁপড়ারা আরো বেশি সুশৃঙ্খল হয়ে যায়। তারা সোজা লাইন ধরে আগাতে থাকে এবং গতি কমিয়ে দেয়। বেশি ভিড় হওয়ার কারণে তারা অপ্রত্যাশিত নড়াচড়া কম করে। মানুষের পরিবর্তে কম্পিউটার কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করলে যেমন হয় এটি অনেকটা তার মত। একেবারে দরকার না হলে কোনো ধরনের পরিবর্তন সেখানে ঘটে না।
নাগার মনে করেন, এই ধরনের আচরণকে ল্যানগেভিন সমীকরণ নামের একটি সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব। এই সমীকরণের মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানীরা তরল পদার্থের চলাচল বা কোনো বস্তুতে একটি একক পরমাণু যে আচরণ করে তা প্রকাশ করে থাকেন।
নাগার বলেন, যদি জিজ্ঞাসা করেন যে ল্যানগেভিন সমীকরণ কী? আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম না, তাই আমি হার্ভে মাড কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক থমাস ডি. ডনেলির সাহায্য নিয়েছি। ডনেলি আমাকে বলেছেন, এটি মূলত নিউটনের বিখ্যাত সূত্র, F=MA, বল সমান সমান ভর গুণ ত্বরণ এর অন্য একটি রূপ।
ডনেলি বলেন, এটি পুরোটাই নিউটনের সূত্র। কিন্তু এক্ষেত্রে বলের মান অগোছালোভাবে নিয়ে এর একটি বিশেষ রূপ ব্যবহার করা হয়। তিনি আরো বলেন, আমি এ সম্পর্কে আর বেশি কিছু বলব না। তবে যারা আগ্রহী তারা ল্যানগেভিনের সমীকরণের একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা এখানে পাবে। মূল কথা হলো, নাগার ল্যানগেভিন সমীকরণ ব্যবহার করে পিঁপড়াদের চলাচলের একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন এবং মডেল অনুযায়ী যা হওয়ার কথা ও পিঁপড়াদের সারিবদ্ধ চলাচল তুলনা করে নাগার বলেছেন, গবেষণাটি বেশ যথাযথভাবে মিলেছে।
নাগার তার গবেষণার ফলাফল লিখেছেন, সেটি ফিজিক্যাল রিভিউ ই জার্নালের সামনের সংখ্যায় প্রকাশিত হবে। নাগার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি হায়দারাবাদের ড. দেবাশিষ রায় চৌধুরীকে তার গবেষণায় যুক্ত করেছেন।
নাগার নিশ্চিত নন তার এই মডেলটি মানুষের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কতটা কাজে লাগবে। তিনি মনে করেন, ঘণ্টায় ৬০ মেইল বেগে গাড়ি চালাতে দেওয়ার মাধ্যমেই যানজট সমস্যা কমা শুরু হবে না, চালকরা আরো সুশৃংখল হলে ও তাদের মধ্যে ইগো কম থাকলে সারি সারি যানবাহন মসৃণভাবে চলতে পারবে।
আরো পড়ুন: ‘আর্জেন্টাইন অ্যান্ট’―শত কোটি পিঁপড়ার আগ্রাসী মেগা কলোনি
তবে এখানে একটি ছোট সমস্যা রয়েছে। নাগার একজন পদার্থবিজ্ঞানী, তিনি কোনো পিঁপড়া-বিশেষজ্ঞ নন। একজন পিঁপড়া গবেষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে পিঁপড়াদের অন্তত কিছু প্রজাতির মধ্যে এই ওভারটেক করার অভ্যাস রয়েছে। এবং পিঁপড়াদের আয়তন বড় হলে তারা জ্যাম সৃষ্টি করে।