উত্তর-পূর্ব ভারতের নাম আগেই শুনেছি কিন্তু এত কিছু জানা ছিল না। অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ এই ৯ রাজ্য নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত। বাংলাদেশের সীমানা পেরুলে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যগুলি আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। অন্য দেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ায় এবং নানা রাজনৈতিক ও নৃ-তাত্ত্বিক কারণে এক সময় এই রাজ্যগুলিতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিলো। এখন সিকিম ছাড়া সবগুলি রাজ্যে ভ্রমণ করা যায়।

অরুণাচলের তিন পাশে ভুটান, মায়ানমার আর চীন। সবুজ বনরাজি নিয়ে উঁচু উঁচু পাহাড় ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। হাজার বছর ধরে এখানে বাস করছে অনেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী।

অরুণাচল
অরুণাচলের আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ। হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবি।

 

অরুণাচল সম্পর্কে চটজলদি কিছু তথ্য
বলা হয় ভারতে প্রথম সূর্য উদয় হয় অরুণাচল প্রদেশে। যেহেতু অরুণাচল ভারতের সবচেয়ে পুবের রাজ্য সেহেতু এটি একটি ভৌগলিক সত্য।

আয়তনে প্রায় ৮৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের অর্ধেকের চেয়ে কিছুটা বেশি। এর শতকরা ৮২ ভাগ এলাকা চিরহরিৎ বনে ঢাকা। অনেক বৃষ্টিপাত হয়। বছরে গড়ে তিন হাজার মিলিমিটারেরও বেশি। আবহাওয়া সমতলে মৌসুমি হলেও যত উত্তরের দিকে গেছে ততই আলপাইন হয়ে উঠেছে অর্থাৎ পাহাড়ি ঠাণ্ডা। পাহাড়ি এলাকাই বেশি। উঁচু উঁচু। সোজা মেঘের ওপর উঠে গেছে পাহাড়ের চূড়া।

তাওয়াং হেলিপ্যাডে লেখক। মাত্র পৌঁছেছেন। পেছনে রুশ হেলিকপ্টার-এমআই ৭৭।

শীত বাড়লে চূড়াগুলি ঢেকে যায় সাদা সাদা বরফের আস্তরে। বিশেষ করে সেলাপাস অঞ্চল। ১৭টি জেলা নিয়ে অরুণাচল। ২০১১ সালের জরিপে জনসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। ২৬টি প্রধান গোত্র আর শতাধিক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি। জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৩১ ভাগ এই সব বিবিধ ধর্মের মানুষ ছাড়াও অরুণাচলে বাসকারীদের প্রায় ৩৫ ভাগ হিন্দু, ১৯ ভাগ খ্রিষ্টান আর ১৩ ভাগ বৌদ্ধ। শিক্ষিতের হার শতকরা ৬৭ ভাগ।

রাজধানী ইটানগর। অবশ্য ভ্রমণের গল্প অরুণাচলের ১৭ জেলার সবচেয়ে সুন্দর জেলা-শহর, তাওয়াং নিয়ে। সমুদ্রসীমা থেকে যার উচ্চতা প্রায় ১৩ হাজার ফুট। মেঘের দেশের এক অনিন্দ্য সুন্দর শহর তাওয়াং।

যেভাবে ভ্রমণের শুরু
ভারত ভ্রমণের কথা মাথায় এলে বাংলাদেশী হিসেবে প্রথমেই কোলকাতা তারপর একে একে দার্জিলিং, দিল্লী, আগ্রা, আজমির শরিফ এই নামগুলি তালিকায় উঠে আসতে থাকে। ভারত সরকারের পর্যটন বিভাগের নিমন্ত্রণপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ‘তাওয়াং’ বলে যে কোন জায়গা আছে তা জানা ছিল না।

‘তাওয়াং’ অরুণাচল প্রদেশের একটি শহরের নাম। একদিন সকালে পর্যটন প্রতিষ্ঠান জার্নি প্লাস-এর প্রধান নির্বাহী তৌফিক ভাইয়ের ফোন পেলাম, “আখতার, আপনি কোথায়?”

‘বাংলাদেশ ডেলিগেট টিম। বা দিক থেকে, যুগান্তরের রবিউল ভাই, পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক মহিউদ্দিন হেলাল ভাই, বিশ্বভ্রমণকারী বাংলাদেশের সেরা সাইক্লিস্ট আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল ভাই, আমি, ফোর হুইলস্ ট্যুরিজমের প্রধান নির্বাহী কাজী জিয়াউদ্দীন বাপ্পী ভাই, এটিএস নিউজের বার্তা সম্পাদক প্রণবদা।’ – লেখক

বিছানায় শুয়ে ফোন ধরলাম। গায়ে ভীষণ জ্বর।

“বাসায়। আপনি কেমন আছেন?”

“শরীর খারাপ নাকি? কণ্ঠ যেন কেমন লাগছে?”

“না, সব ঠিকঠাক। বলেন।” অসুখের ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেলাম।

তৌফিক ভাইয়ের কণ্ঠে তাড়া, “শোনেন, দাওয়াত আসছে। তাওয়াং ঘুরতে যাবেন?”

“তাওয়াং? সেটা আবার কোথায়?” আমি অজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।

“অরুণাচলের একটি শহর, ভারতে। ৪ দিনের প্রোগ্রাম। সাথে আরো দিন তিনেকের ফ্যাম ট্রিপ। দিন সাতেক ম্যানেজ করতে পারবেন না? নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, আসাম যা খুশি বেছে নিতে পারেন। যাবেন?”

“অবশ্যই যাবো। তার আগে একটু পুরো বিষয়টা খুলে বলেন না!”

তৌফিক ভাই ভারতীয় হাইকমিশন থেকে আসা এই নিমন্ত্রণের ব্যাপারে বিস্তারিত জানালেন। নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার নেশায় অসুখের কথা যদিও চেপে গেলাম, তবুও দুশ্চিন্তা একটু রয়েই গেলো।

অরুণাচল
তাওয়াং মনাস্ট্রির ঠিক সামনে স্থানীয় অলংকার বিক্রি করছেন একজন মনপা।

মনে মনে ভাবলাম, দিন তারিখ হিসাবে রওয়ানা হতে তখনো দিন সাতেক বাকি। সুতরাং আশা রাখি, এর মধ্যে সুস্থ্য হয়ে যাবো। কিন্তু আমার কপাল খারাপ। ডাক্তারি অনুসন্ধানে টাইফয়েড, সাথে ডেঙ্গু ধরা পড়ল। মরার ওপর খাড়ার ঘা। ডাক্তার ঠাণ্ডা চোখে বললেন, আপনার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।

আমি রাজি হলাম না। আমার হাসপাতালে ভর্তির খবর জানাজানি হলে ভ্রমণ বাতিল হয়ে যাবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা বাসায় নেয়ার ব্যবস্থা করলাম। দিনে দুটো করে ১৪টি অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন নিতে হবে। লোক ঠিক করলাম, যে বাসায় এসে ইনজেকশন দিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ থেকে দুজন সাংবাদিকসহ আমরা পর্যটন-সংশ্লিষ্ট চার জন। মোট ছয় জনের বাংলাদেশ টিম ভ্রমণের জন্য তৈরি। তাদের বিবরণ একটু পরে দিচ্ছি।

কিছু জটিলতা সত্ত্বেও ভিসা শেষ পর্যন্ত ঠিক মতোই পেয়ে গেলাম। ৬ মাসের মাল্টিপল ভিসা, তার ওপর বাস, ট্রেন, আকাশ তিন পথেই যাতায়াত করতে পারবো। খুবই ব্যাতিক্রমী ঘটনা। কিন্তু অসুস্থতার ক্ষেত্রে আমার শেষরক্ষা হলো না। আমি চিকিৎসা সম্পূর্ণ করতে পারলাম না। রওনা হওয়ার তারিখ এসে গেল।

১৭ অক্টোবর (২০১৩) দশম ইনজেকশনটা নেয়ার আধা ঘণ্টা পরেই এয়ারপোর্টে রওনা হতে হলো। টুনি গাড়ি ড্রাইভ করলো। টুনি আমার স্ত্রী। যানজটের কোন বিড়ম্বনা ছাড়াই সবার আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম। আমরা সঙ্গীরা তখনও অন দ্য ওয়ে। তবে বেশি দেরি হলো না। একে একে সবাই এসে গেলো। সঙ্গীদের হাতে আমাকে সঁপে দিয়ে টুনি বিদায় নিলো।

দলের মধ্যে একটা ছোট্ট ইনফর্মাল মিটিং হয়ে গেলো। প্রথমে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে কোলকাতা যাওয়া। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন সংস্থা কর্তৃপক্ষ আমাদের স্বাগত জানাবেন। তারপর ভোর পাঁচটার কানেক্টিং ফ্লাইটে গৌহাটি পৌঁছব। মোট সাত দিনের সফর।

১৭ অক্টোবর, ২০১৩
সিকিউরিটি চেকিং, ইমিগ্রেশন সব শেষ হয়ে গেলো নির্বিঘ্নে। আমরা সবাই যে যার মতো চুপচাপ বসে রইলাম এয়ার ইন্ডিয়ার বোর্ডিং লাউঞ্জে। যাত্রী খুব বেশি মনে হলো না।

ঢাকা থেকে রাত সোয়া নয়টায় বিমান আকাশে উড়লো। আপাত গন্তব্য কোলকাতা হলেও আমরা চলেছি অরুণাচলের জেলা শহর তাওয়াং-এর উদ্দেশ্যে।

বিমান, সড়ক বা রেল যে পথেই হোক না কেন তাওয়াং যেতে হলে আপনাকে আসামের রাজধানী গৌহাটি আসতেই হবে। গৌহাটিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে বলা হয়। কারণ উত্তর-ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে যেতে হলে গৌহাটি হয়ে যেতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা এভাবেই সাজানো। ঢাকা থেকে সড়ক পথে তামাবিল বা আখাউড়া সীমান্ত থেকে শিলং হয়ে গৌহাটি যাওয়া যায়। কিন্তু হয়ত সময়, শ্রম আর সম্মান এই তিনের বিবেচনায় ভারত সরকার আমাদের কোলকাতা হয়ে প্লেনে গৌহাটি পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঢাকা থেকে কোলকাতা এয়ার ইন্ডিয়ায় এবং কোলকাতা থেকে গৌহাটি স্পাইস জেট-এ।

অরুণাচল
তাওয়াং মনাস্ট্রির প্রধান ফটক পেরিয়ে মন্দিরের চত্বরে পৌঁছার সিঁড়িপথ

পয়ত্রিশ মিনিট পর আমরা কোলকাতায় ল্যান্ড করলাম। এয়ারপোর্টের ফরমালিটিজ আর লাগেজ কালেকশন করতে করতে আরো চল্লিশ মিনিটের মতো সময় লেগে গেলো। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন সংস্থার কর্মকর্তারা যারপরনাই আতিথেয়তায় আমাদের গ্রহণ করলেন। রাত তখন প্রায় ১১টা। আমাদের রাতের থাকা ও ডিনারের ব্যবস্থা হলো মনোটেল হোটেলে। হোটেলে থাকা বলতে ঘণ্টা দুয়েকের বিশ্রাম। কারণ রাত সাড়ে তিনটায় আবার ছুটতে হবে কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে। স্পাইস জেট-এর এক ঘণ্টা দশ মিনিটের ফ্লাইট আমাদের পৌঁছে দেবে গৌহাটি এয়ারপোর্টে।

সকালের উদ্ভাসিত সোনালি আলোয় সমস্ত চরাচর মোহময় হয়ে উঠেছিলো। সকাল সাতটা নাগাদ আমরা গৌহাটি এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলাম। আমাদের উত্তরীয় পরিয়ে, মালা পরিয়ে বরণ করা হলো। সৌজন্য বিনিময় হলো। সবাই একসাথে ছবি তুললাম।

ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম এয়ারপোর্টে। এবার তাওয়াং-এ পৌঁছার জন্য হেলিকপ্টারে সোয়া এক ঘণ্টার যাত্রা। নটা নাগাদ হেলিকপ্টার উড়বে। এই প্রথম হেলিকপ্টারে চড়ব। গতরাতে কোন ঘুম হয়নি। শরীর পুরোপুরি সুস্থ নয়। ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে আছি। সবাই নিজেদের মধ্যেও কম কথা বলছি। সবাই-ই বেশ ক্লান্ত মনে হলো।

খবর এলো তাওয়াং-এর আবহাওয়া খুব স্থিতিশীল নয়। সুতরাং দেরি হবে। দশটা নাগাদ রওনা হওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বুঝে নিলাম হেলিকপ্টারকে প্রতিনিয়ত বাতাসের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয়। গন্তব্য থেকে সবুজ সংকেত না পেলে তার উড়ান নাই।

পবন হান্স হেলিকপ্টার সার্ভিস সংস্থা গৌহাটি থেকে নানা গন্তব্যে এই হেলিকপ্টার সার্ভিস দিয়ে থাকে। খরচও খুব বেশি নয়। গৌহাটি থেকে তাওয়াং জনপ্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার রুপি মাত্র। দুই তিন রকমের হেলিকপ্টার আছে। ৩ আসনের হেলিকপ্টারের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া ১৬ এবং ২৩ আসনের হেলিকপ্টারও আছে। আমার উচ্চতাভীতি আছে। আকাশে উঠলেই মনে হয় সবকিছু নিয়ে এই বুঝি ভেঙে পড়ল। আর ভ্রমণে ঠাসাঠাসি পছন্দ করি না। তিন আসনের ফড়িং-এর মতো হেলিকপ্টার দেখেই ভয় হলো, তাই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে আমাকে একটা বড়সর রাশান এমআই ৭৭ হেলিকপ্টারে চড়ানোর ব্যবস্থা করা হলো। ২৩ আসন বিশিষ্ট হেলিকপ্টার হলেও যেহেতু এটি তাওয়াং যাবে এবং বারো হাজার ফুট উপর থেকে উড়বে তাই এতে ১৬ জনের বেশি উঠতে পারবে না। ভালোই হলো। ভেতরে অনেক সিট খালি ছিলো, ফাঁকা ফাঁকা। সমস্যা শুধু একটাই হলো আমি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।

অরুণাচল
সকালের তাওয়াং শহর। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মাত্র সূর্য উঠেছে।

হেলিকপ্টার আকাশে উঠলো। প্লেনের মতো কোন দৌড়াদৌড়ির বালাই নেই। সোজা উপরে ওঠা, তারপর নাকটা নিচের দিকে রেখে সোজা চলতে থাকা। সারাটা পথ জুড়ে নিচে তাকিয়ে দেখলাম শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা। বাড়ি-ঘর, স্কুল, মন্দির, বাজার-ঘাট আরো কত কী! বিস্তর মেঘ ছোটাছুটি করছে। ঘড়ির কাঁটার সাথে মিল রেখে ঠিক সোয়া এক ঘণ্টা পর হেলিকপ্টার তাওয়াং-এর মাটি স্পর্শ করলো।

পাহাড়ের ওপর খোলা চত্বরে আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার জন্য তৈরি করা অস্থায়ী অডিটোরিয়াম। হেলিকপ্টারের দরজা খোলামাত্র বাতাস এসে সোজা হাড়ের মধ্যে ঢুকে গেলো। ভাবতেই পারিনি এই একটু আগের গরম আবহাওয়ার পর এত ঠাণ্ডা সইতে হবে। হাতের কাছে জ্যাকেট ছিলো। কিন্তু জ্যাকেট-মাফলার কোন কিছুকেই তখন আর যথেষ্ট মনে হচ্ছিল না। ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছিলাম। তাপমাত্রা মনে হল শূন্যে নেমে গেছে।

অরুণাচল পর্যটন কর্তৃপক্ষ আমাকে স্বাগত জানালেন। এগিয়ে এসে পরিচয় দিয়ে হাত মেলালেন, গাইড লবসং টাসি। আবার সেই উত্তরীয় গলায় জড়িয়ে দিলেন। আসামের উত্তরীয় আর অরুণাচলের উত্তরীয়ের তফাত নজরে এলো। সাথে পরিবেশন করলেন উত্তপ্ত এক কাপ রাইস ওয়াইন। এক চুমুক রাইস ওয়াইন গলা দিয়ে নামিয়ে দিতেই পানীয় পানের রহস্য চোখের সামনে পানির মতো সরল হয়ে গেল। শরীরের প্রতিটি শিরায় কে যেন আগুনের শিখা প্রবাহিত করে দিলো। ভেল্কিবাজির মতো নিমেষে শীত উধাও। সারা শরীরে নেমে এলো ওমের উত্তাপ। বুঝলাম, কতটা জরুরী ছিলো এই পানীয়টুকু।

“অভিনেতা বিবেক ওবেরয়কে নিয়ে মঞ্চে এন্তার মাতামাতি। আদিবাসী নৃত্যশিল্পী, সরকারি কর্মকর্তা, বিদেশী অতিথি সব এক মঞ্চে।” – লেখক

বলে রাখা ভালো, আমার ছবি তোলার বাতিক আছে। ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলা আমার পেশার একটা বড় অংশ। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য যে অংশটুকু দখল করেছে তার পরিমাণ মামুলি। সুতরাং তাওয়াং নেমেই ক্যানন সিক্সটি ডি ক্যামেরার ৫০ মিলিমিটার প্রাইম লেন্স পাল্টে ১৮-১৩৫ মিলিমিটার জুম লেন্স লাগিয়ে নিলাম। বেশ কিছু ল্যান্ডস্কেপ তুললাম। হেলিকপ্টার আর মানুষের মুখ বাদ গেল না। একটা ফোর হুইলার স্করপিয়ন গাড়ি তৈরি ছিলো। দ্রুত গাড়িতে উঠলাম। আমার একার জন্যেই অপেক্ষা। অন্যদের গাড়ি আলাদা। গাড়ি রওয়ানা হলো হোটেলের উদ্দেশ্যে। মনের মধ্যে হাজার হাজার প্রশ্নের মাছ ভেসে উঠছে, সাঁতার কাটছে, ডুব দিচ্ছে আবার ভেসে উঠছে।

টাসির কাছে জানতে চাইলাম, আজকের তাপমাত্রা কতো?

টাসির বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। সুঠাম দেহ, হাস্যোজ্জ্বল। কিছুক্ষণ পরপর ঘড়ি দেখছে টাসি। “৭/৮ ডিগ্রী হবে। ডিসেম্বরে মাইনাসে নেমে যাবে।” বলেই পাহাড়ের চূড়ায় জমাট বাঁধা মেঘের কুণ্ডলীর দিকে চোখ ফেরালো।

“তাওয়াং পৌঁছতে দেরি করে ফেললাম। সরি। ছোট হেলিকপ্টারে চড়তে ভয় করে। আর ঠাসাঠাসি হলে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।” নিজের সমস্যাগুলির কথা গাইডকে জানিয়ে রাখা ভাল। আর আমার কারণে আসলেই দেরি হয়ে গেছে।

টাসি শব্দ করে হেসে উঠলো, “নো, ইউ আর অন টাইম। তবে বিশ্রামের জন্য সময় পাবে না। হোটেলে চেক ইন করেই লাঞ্চের জন্য বেরুতে হবে। তোমার বন্ধুরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা ধরে নিয়েছিলো, তুমি হয়ত আসতে পারবে না।”

আমি আগের প্রসঙ্গেই রয়ে গেলাম, “এখানে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা হয়?”

“নাহ! কখনো হয়নি। আবহাওয়া খারাপ থাকলে হেলিকপ্টার সার্ভিস বন্ধ থাকে। নো রিস্ক! তোমার কি কোন রকম শরীর খারাপ লাগছে?”

“কই না তো? কেন?” একটু বিস্মিত হলাম।

অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আর বিবেক ওবেরয়।

“উচ্চতাজনিত কারণে হয়ত একটু খারাপ লাগতে পারে। বাট ডোন্ট ওরি। ঠিক হয়ে যাবে। হাঁটার সময় আস্তে আস্তে হাঁটবে। মাঝে মাঝে সুযোগ পেলেই একটু একটু করে গরম পানি খেয়ে নেবে। বড় বড় করে নিঃশ্বাস নেবে। বমি আসলে চেপে রাখার দরকার নেই। আমাকে বলবে।” কথাগুলো মুখস্ত। গড়গড় করে বলে গেল টাসি।

জানতে চাইলাম, তাওয়াং কত ফুট উঁচুতে?

“তাওয়াং-এ সব জায়গা এক রকম নয়।” টাসির চোখেমুখে রহস্যের হাসি। “মূল শহরের উচ্চতা সাড়ে দশ থেকে এগারো হাজার ফুট হবে। তবে ওই যে পাহাড়গুলি দেখতে পাচ্ছো, সেগুলি তের হাজার ফুট উপরে চলে গেছে। জাং ফলস্ দেখতে যাওয়ার সময় আমরা ওখানে উঠবো।”

টাসির কথায় আমি ক্লান্তির ভেতরেও ভ্রমণের আনন্দে উত্তেজিত বোধ করতে লাগলাম। দলের অন্যরা আগেই পৌঁছে গেছে। হোটেলে পৌঁছতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগলো। রাস্তার দুপাশে বিশালাকৃতির সারি সারি গগনচুম্বী সবুজ পাইন গাছের নিস্তব্ধ বনানী চোখে পড়লো।

জ্যাক্স হোটেলে চেক ইন করে লাগেজগুলি রুমে রেখে সবার সাথে বেরিয়ে পড়লাম।

স্থানীয় এক রেস্টেুরেন্টে লাঞ্চ করবো সবাই। বাইরে তাপমাত্রা ৬/৭ ডিগ্রীর বেশি মনে হলো না। পথের দিকে তাকিয়ে মনে হলো তাওয়াং-এ কোন উৎসবের আয়োজন হয়েছে আর সেজেগুঁজে সবাই সেই উৎসবে যোগ দিতে রওয়ানা হয়েছে। আসলেই তো উৎসব। ভারতের এই অঞ্চলের ট্যুরিজম সম্ভাবনাকে তুলে ধরার জন্য পৃথিবীর বহু দেশের অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ট্রাভেল মার্ট, আইটিমএম ২০১৩।

অরুণাচল
স্থানীয় অধিবাসী তরুণীদল

অনেক বিদেশীর আনাগোনা চোখে পড়লো। তবে স্থানীয়রা পোশাকের কারণে আলাদা করে নজরে পড়ছিল। সকলের গায়ে শীতপোশাক। কিছুটা তিব্বতি স্টাইল। পরে অবশ্য জেনেছিলাম তাওয়াংয়ের কাছেই তিব্বত বর্ডার। এক সময় তাওয়াং তিব্বতেরই অংশ ছিল। আর নজড়ে পড়ল প্রচুর আর্মি অফিসার ও সৈন্য। ভারতীয় উপমহাদেশের সব পাহাড়ি এলাকার মতো পাহাড় আর সমতলের দ্বন্দ্ব এখানেও আছে অনুমান করলাম। এই ধরনের আন্তর্জাতিক আয়োজনে নিরাপত্তা সব সময়ই একটা বড় বিষয়।

পর্যটন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে প্রত্যেক গাড়ির সাথে একজন করে অফিসার দেয়া হলো। যারা ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক ছিলেন। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাতের ডিনার শেষ করা পর্যন্ত, হেলিপ্যাডে গ্রহণ করা থেকে শুরু করে ৪ দিন পর আবার বিদায় জানানো পর্যন্ত তারা আমাদের সাথে সাথেই ছিলেন।

আমাদের গাড়ির সাথে যে অফিসার ছিলেন তার নাম আগেই বলেছি লবসং টাসি। পরবর্তীতে তাওয়াং-এ এই একই নামে আরো জনাপাঁচেকের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। ‘টাসি’ হয়ত তাওয়াং-এর কমন নাম। ইন্দোনেশিয়ায় এই রকম আরেকটা কমন নাম পেয়েছিলাম – আদে। জাকার্তা, বালি, লম্বক যেখানেই যাই, নাম জিজ্ঞেস করলেই বলে, আদে। ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে শুরু করে প্লেনের ক্রু, সবার নাম আদে। অদ্ভুত ব্যাপার!

আমরা প্রথম দিনের লাঞ্চে স্থানীয় খাবারের দিকে গেলাম না। স্যুপ, সালাদ, ফ্রাইড রাইস, এসব খেয়েই তৃপ্ত থাকলাম। খাওয়া শেষে রওয়ানা হলাম তাওয়াংয়ের বিখ্যাত বুড্ডিস্ট মনাস্ট্রি দেখতে। গাড়ি থেকে নেমে আর গাড়িতে ওঠার আগে অল্প কিছু পথ হাঁটতে হচ্ছিল আর এতেই আমরা ভীষণ হাঁপিয়ে উঠছিলাম। এত উচ্চতায় অক্সিজেনের স্তর তুলনামূলক পাতলা বলে হঠাৎ করে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। মাঝে মাঝে বমি পাচ্ছিল, মাথা ঝিম ঝিম করছিল। টাসির নির্দেশনা মনে রেখে চলার চেষ্টা করছিলাম। সাধারণ পানি অর্থাৎ রেস্টেুরেন্টের পানি বা মিনারাল ওয়াটারের বোতলের পানি এতই ঠাণ্ডা যে প্রাণভরে তৃষ্ণা মেটানো যাচ্ছিল না। শুধু চুমুক দেয়া আর দু’এক ঢোক গেলা।

অক্সিজেনজনিত এই সমস্যা কাটানোর একটা বড় উপায় ঘন ঘন পানি খাওয়া আর আরো একটু বেশি উচ্চতায় উঠে কিছুক্ষণ থেকে আবার নেমে আসা। পর্বতারোহীদের ভাষায় ‘এক্লাইমেটাইজেশন’।

কোথাও কোথাও আমাদের জন্য গরম পানির ব্যবস্থা ছিল। এসব ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলাম। গৌহাটি থেকে হেলিকপ্টারে ওঠার আগে পবন হান্সের কর্মকর্তারাও সতর্ক করে দিয়েছিলেন, তাওয়াং পৌঁছার পরে একটু শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বমি বমি বা মাথা ঝিমঝিম করতে পারে। খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগবে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই তাওয়াং মনাস্ট্রি এলাকায় পৌঁছে গেলাম। সেখানে আমাদের জন্য যে ভিআইপি আয়োজন অপেক্ষা করছিলো কে জানত! কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই টাসি মুখ খুললো, “তাওয়াং মনাস্ট্রি ৪০০ বছরের পুরানো। আর এই তাওয়াং মনাস্ট্রি ভারতের সবচেয়ে বড় এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বুড্ডিস্ট মনাস্ট্রি । যেহেতু এটি ভারতের সবচেয়ে বড়, তাই ভারতে বসবাসকারী বৌদ্ধদের কাছে এই মনাস্ট্রি তীর্থস্থান হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।”

“অন্যান্য দেশের বৌদ্ধরা এখানে আসে?” জানতে চাইলাম।

“পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল আর ভুটান থেকেও প্রচুর বৌদ্ধরা এখানে আসেন। তবে ২০০৯ সালে যখন দালাই লামা এখানে পরিদর্শনে এলেন তখন তার ধর্মীয় প্রার্থনায় প্রায় ৩০ হাজার বৌদ্ধ অংশ নিয়েছিল। তাই এই মনাস্ট্রি কী করে, কবে, কে তৈরি করলো সে কাহিনি বেশ পরিচিত এবং ভক্তদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

অরুণাচল
বিশাল আকৃতির শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে, কাশার বাদ্যযন্ত্রে ঝংকার তুলে মন্দিরে চলছে প্রার্থনা।

নানা আলোচলনার প্রসঙ্গে এক সময় টাসি বলল, বৌদ্ধদের প্রধান পুরোহিতকে দালাই লামা বলা হয়। ততক্ষণে আমাদের গল্পে আরো কয়েকজন গাইড জড়ো হয়েছে। কেউ শুনছে, কেউ দু’এক লাইন যোগ করছে। আমি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি টুকে নিচ্ছি। একজন বললেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দালাই লামা একজনই, যিনি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন চেহারায় পুনর্জন্ম নেন। তাই প্রধান পুরোহিতের নাম সব সময় দালাই লামা। আর সময় হিসেব অনুসারে তাদেরকে দালাই লামা ১, ২, ৩ এভাবে সম্বোধন করা হয়। বর্তমানে দালাই লামা ১৪-এর সময় চলছে।

এই মনাস্ট্রি তৈরির ইতিহাস বলতে গিয়ে একজন গাইড বললেন, দালাই লামা পঞ্চম ‘নাগওয়াং লোবসাং গায়াতসো’-এর ইচ্ছা অনুযায়ী ১৬৮০-৮১ সালে তাওয়াং মনাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করেন ‘মেরাগ লামা লোতে গায়াতসো’।

প্রচলিত আছে, এই মনাস্ট্রি প্রতিষ্ঠার জন্য স্থান নির্বাচন করতে গিয়ে মেরাগ লামা তার ঘোড়া ছেড়ে দেন। ঘোড়া যে স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সে স্থান মনাস্ট্রি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচিত হয়। হয়ত সে কারণেই এই স্থানের নামকরণও করা হয়েছে ‘তাওয়াং’ – যার অর্থ হচ্ছে ‘চুজেন হর্স বা পছন্দের ঘোড়া’।

অরুণাচল
“নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।” – লেখক

প্রধান গেট দিয়ে ঢোকার পর কিছুটা পাহাড়ি রাস্তা হেঁটে আমরা মনাস্ট্রি চত্ত্বরে প্রবেশ করতেই আমাদের অভ্যর্থনা জানানো হলো। নিয়ে যাওয়া হলো মন্দিরের ভেতরে। মন্দিরের ভেতরে তখন প্রায় শ’তিনেক সন্ন্যাসী একসাথে মন্ত্র পাঠ করে প্রার্থনা শুরু করলেন। আমরা বিদেশী দর্শনার্থীও প্রায় শ দেড়েক উপস্থিত ছিলাম। মন্দিরের ফ্লোর মজবুত কাঠের তৈরি। সবাই কাঠের পাটাতনের ওপর আসন গেড়ে সারিবদ্ধ হয়ে বসলাম। প্রায় ঘণ্টাখানেক প্রার্থনা চলল। তারপর মন্দিরের ভেতর থেকে সবাই বেরিয়ে এলাম মন্দির চত্বরে।

চত্বর বলতে বিশাল উঠানের মতো খোলা জায়গা। চারপাশ দিয়ে সব দর্শনার্থীরা গোল হয়ে দাঁড়ালো আর মাঝখানের খোলা জায়গায় শুরু হলো একে একে নৃত্য পরিবেশন।

বিচিত্র পোশাক পরা নৃত্যশিল্পীদের থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। বারান্দার এক পাশে লম্বা শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে চলেছেন দুই সন্ন্যাসী। বাজছে ঢাক। ঘুঙুর পায়ে শিল্পীরা তালে তালে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে লাফিয়ে লাফিয়ে নানা ভঙ্গিমায় নেচে চলেছেন। পাহাড়ের চূড়ায় শেষ সূর্যের আলো চোখে পড়ল। দ্রুত অন্ধকার নেমে এলো। নৃত্যের উদ্দাম ছন্দ যেন রক্তে ছড়িয়ে পড়ছে। মনে হল তিন লক্ষ বছর আগের কোন বিলুপ্ত সভ্যতার পূর্ণিমা-বরণ আসরে এসে পড়েছি। আকাশের গায়ে লটকে থাকা ভয়ঙ্কর পাহাড়গুলোর অন্ধকার পাইন জঙ্গলের ভেতর আরো লুকিয়ে আছে কতো ইতিহাস! কত অন্ধকার গুহার গায়ে কত সুখ, কত দুখ আর কত কত শিকারের গল্প! কত শিশুর হাতের আঙুল গাছের শেকড়ের মতো মাটি আকড়ে আকড়ে বেড়ে উঠেছে মেঘের দেশে, এই উপত্যকার গাঢ় সবুজ ছায়ায়। কত অজানা জাতি গোষ্ঠির কত অব্যক্ত গল্প ঐসব ঝর্ণার ¯্রােতে ¯œাত সাদা সাদা পাথরের গায়ে খোদাই হয়ে আছে। সে এক অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা! আমার কী সাধ্য যে ভাষায় প্রকাশ করি! এক সময় আসর ভাঙলো। অন্ধকার পুরোপুরি আমাদের ঢেকে ফেলেছে। আমরা নৈশভোজের জন্য তৈরি হতে হোটেলে চলে এলাম।

হোটেলে এসে দ্রুত পোশাক পাল্টে তৈরি হয়ে নিলাম। পাহাড়ি রাস্তায় আলো অন্ধকারের এক অদ্ভুত পরিবেশ। রাস্তার ওপর জমে থাকা ঘন মেঘের ভেতর থেকে হেডলাইটের আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চলল সরকারি নৈশভোজের আয়োজনে। সাথে আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাহাড়ি সংস্কৃতির প্রদর্শন হবে বিশ্বের কাছে।

গাড়ি থেকে নামলাম পাহাড়ের ওপরের এক খোলা চাতালে। ডানে তাকাতেই বিশাল আকারের অস্থায়ী অডিটোরিয়াম চোখে পড়ল। স্টিলের ফ্রেম জোড়া লাগিয়ে আর সাদা সামিয়ানা দিয়ে ঢেকে বানানো হয়েছে বিশালাকৃতির অডিটোরিয়াম। সামনে দাঁড় করানো সারি সারি পতাকা। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে পত্পত্ করে উড়ছে।

ঢোকার মুখে লম্বা রেড কার্পেট। গেটের কাছে আসতেই অপূর্ব সাজে সজ্জিত তরুণী দল স্থানীয় পানীয় সহযোগে স্বাগত জানালো। রাজকীয় অভ্যর্থনা! এক তাঁবুর মধ্যে সব মিলিয়ে অন্তত পাঁচশ লোকের আয়োজন। এক হাজারেরও বেশি নৃত্যশিল্পী আর কলাকুশলী এসেছেন পুরো উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে। চার দিনের প্রত্যেক রাতে চলবে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য, সংগীত। উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্যটনের নানা দিক বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। পৃথিবীর ৬০টি দেশ থেকে এসেছেন অতিথিরা। মুম্বাই থেকে এসেছেন বিবেক ওবেরয়। রাতে দারুণ পার্টি হলো। কৃষ থ্রি মুক্তি পাওয়ার পর বিবেকের ক্রেজ আরো এক ধাপ বেড়ে গেছে বলেই মনে হলো।

মঞ্চে পাহাড়ি শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা চলছে। বাংলাদেশ থেকে আসা আমাদের ৬ জনের জন্য আলাদা একটা টেবিল দেয়া হলো। আমরা আসন গ্রহণ করতেই নানা রকম খাবার আর পানীয় আসতে লাগলো।
নৈশভোজে পরিচয় হলো নানা দেশের মানুষের সাথে। গল্প হলো ঢের। রাত বেড়ে চলল। বাইরে বেরিয়ে দেখি আকাশে বিশাল একটা চাঁদ। থমকে দাঁড়িয়ে আছে সাদা সাদা মেঘ। অডিটোরিয়ামের ভেতর থেকে অনুষ্ঠানের আওয়াজ ভেসে আসছে। দরাজ গলার গান আর বাদ্যযন্ত্রের মূর্ছণায় সবকিছু অপার্থিব লাগতে শুরু করলো।

মাথা ঝিমঝিম করাটা কমে গেছে। স্থানীয় পানীয়ের নামটা জানা হলো না। মারাত্মক তার ক্ষমতা। টাসি সবাইকে হোটেলে ফেরার সময় স্মরণ করিয়ে দিলো। ফুরফুরে মেজাজে সবাই হোটেলে ফিরে এলাম। যে যার রুমে ঢুকে গেলাম। পরদিন সকালে সেমিনার আছে। এই অঞ্চলের পর্যটনের নানা দিক তুলে ধরা হবে সে সেমিনারে।

অরুণাচল
তাওয়াং শহর।

আমার তখনই শুতে ইচ্ছে হলো না। আমি ক্যামেরা নিয়ে উঠে আসলাম হোটেলের ছাদে। হু হু করা বাতাস আর হিম শীতল ঠাণ্ডায় লং এক্সপোযারে অপূর্ব তাওয়াং শহরের রাতের ছবি তুলতে থাকি। ঘণ্টা খানেক পর রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

তাওয়াং সম্পর্কে চট করে কিছু তথ্য জানিয়ে রাখি। ২ হাজার বর্গকিলোমিটারের তাওয়াং জেলায় জনসংখ্যা হাজার পঞ্চাশেকের মতো। মনপা জনগোষ্ঠির মানুষরাই এখানকার প্রধান অধিবাসী। এই মনপাদের মধ্যেও আছে ৬টি শ্রেনী – তাওয়াং মনপা, দিরাং মনপা, লীশ মনপা, ভাট মনপা, কালাকতাং মনপা এবং পানচেন মনপা। শিক্ষিতের হার শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য তাওয়াং ভ্রমণবিলাসীদের কাছে খুবই প্রিয়।

১৯ অক্টোবর, ২০১৩
আগেই বলেছি, তাওয়াং-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য। তের হাজার ফুট উচুঁতে এই শহর। রাস্তায় রাস্তায় মেঘ ঘুরে বেড়ায়। যে দিকে তাকাবেন চিরহরিৎ বনাঞ্চল ঢাকা পাহাড়ের সারি। সকালের সোনারঙা সূর্যের আলো পাহাড়ের চূড়ায় পড়েছে। বেশ কিছু ছবি তুললাম। ম্যাজিক লাইটের বদৌলতে সকাল আর সন্ধ্যায় ল্যান্ডস্কেপ ছবি দারুণ হয়। আমাদের দলের সবাই তৈরি। একসাথে চললাম নাস্তা করতে। হোটেলের তিন তলায় রেস্টুরেন্টে। গাড়ি এসে গেছে আগেই।

বিকেল পর্যন্ত সভা সেমিনার চলল। সন্ধ্যা নামার ঘণ্টা তিনেক আগে আমরা তাওয়াং শহরটা ঘুরতে বেরুলাম। কেউ কেউ কিছু শীতবস্ত্র কিনলো। আমি কিছু ওষুধ কিনলাম, তাওয়াং-এর স্থানীয় গানের একটা সিডি কিনলাম। সবাই মিলে নাম না জানা কিছু স্ট্রিট ফুড কিনে খেলাম। পাহাড়ের ওপারে সূর্য হারিয়ে যেতেই শহরে ঝুপ করে নেমে এলো অন্ধকার।

শহর ছড়িয়ে আছে পাহাড়ের ঢালে। আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে। কোন পাহাড়ের চূড়ায় স্কুল, কোন পাহাড়ের চূড়ায় মন্দির, কোথায় ঢালের গা কেটে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক মার্কেট, শপিংমল, কুটিরশিল্পের প্রদর্শনী কেন্দ্র।

অন্ধকার পাহাড়ের গায়ে সন্ধ্যা হতেই নক্ষত্রের মতো জ্বলে ওঠে বৈদ্যুতিক বাতি। শহরের হোটেলগুলি পর্যটকে ভরা। রাত বাড়তে থাকে শীতেরও প্রকোপ বাড়ে। রাতে আবার সেই নৈশভোজ। আমরা ডিনার সেরে হোটেলে ফিরে এলাম। সবাই একরুমে জড়ো হয়ে অনেক গল্প হলো। মাঝরাত পেরিয়ে যাওয়ার পর যে যার রুমে ফিরে এলাম। আজকে অনেক ক্লান্ত লাগছে। রুম হিটার জ্বলছে। বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। হোটেলের জানালার গায়ে অস্বচ্ছ জমাট কুয়াশা।

২০ অক্টোবর, ২০১৩
আজকে তাওয়াং-এ দুইদিনব্যাপী এক দারুণ উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। সকালে অফিসিয়াল কিছু কাজকর্ম সেরে দুপুরের পরপর আমরা মেলা প্রাঙ্গনে পৌঁছে গেলাম।

সব মিলিয়ে হাজার খানেক মানুষের আয়োজন। উৎসবে প্রায় অর্ধশতাধিক স্টল আছে। এই স্টলগুলিতে তাওয়াং-এর শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষি, কুটির শিল্প, জীবন-যাপনের বৈচিত্র্য তুলে ধরা হলো। কিছু কিছু কটেজ ছিলো যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষরা কীভাবে বসবাস করে তা তুলে ধরা হয়েছে।

তাদের পোশাক, রান্নাঘর, অতিথিশালা, ব্যবহার্য নানা দ্রব্যাদি সাজানো, তৈরি করা হচ্ছে নানা খাবার। মাঝখানে গনগনে আগুনের চুল্লী, চারপাশে উৎসুক দর্শনার্থীরা বসে গরম গরম তৈরি করা খাবার কিনে খাচ্ছে। ছবি তুলছে, ফেসবুকে আপডেট করছে।

মেলা প্রাঙ্গণের চারপাশ উঁচু উঁচু পাহাড় ঘেরা। বিকাল হতেই পাহাড়ের চূড়া থেকে শুরু হলো প্যারাগ্লাইডিং। একে একে প্যারাগ্লাইডাররা নেমে আসছিলো মেলার খোলা চত্ত্বরে। এক সময় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। চারপাশে আলোর মশাল জ্বলে উঠলো। মনে হচ্ছিল হাজার বছর আগের কোন জনপদের বাসিন্দা হয়ে আছি।

চাঁদের ভৌতিক আলোয় তাদেরই একজন হয়ে এই উপত্যকার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছি। অধিবাসীদের রঙবেরঙের নানা ডিজাইনের বিচিত্র পোশাক। তাদের ঘিরে ছবি তোলার হিড়িক। আকাশে বিশাল চাঁদ উঠেছে। চারপাশের স্টলের মাঝখানের খোলা জায়গায় স্টেজ বানানো হয়েছে। সেখানে চলছে নাচ-গান, উপস্থাপকের মজার মজার উপস্থাপনা আর দর্শকদের হৈ-হল্লা। রাত বেড়ে চলল। আমরা বিদেশী ডেলিগেটরা এক ফাঁকে নৈশভোজ সেরে নিলাম। তারপর আরো গান, আরো নৃত্য, আরো পানাহার, আরো ছবি তোলা, আরো হারিয়ে যাওয়ার গল্প। হোটেলে ফিরে এসেও এই আনন্দ শেষ হয় না।

আমাদের হোটেলে আরো অনেক দেশের ডেলিগেটরা থাকছেন। গত দুদিনে তাদের সাথেও একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অনেক রাত পর্যন্ত তাদের সাথেও আড্ডা দেয়া হলো। হলো অনেক মত বিনিময়। তাদের পর্যটন, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফি কিছুই বাদ গেল না। আমাদের আসরে সবচেয়ে বেশি হলো জোকস। পরিব্রাজক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বলের ভাণ্ডার যেন অফুরন্ত। পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক মহিউদ্দিন হেলালেরও গল্পের রসদ সমৃদ্ধ। এটিএন নিউজের প্রণবদা প্রসঙ্গক্রমে রাজনীতি আর ইতিহাস তুলে ধরে আমাদের সমৃদ্ধ করে চলেছেন। ফোর হুইলস ট্যুরিজম-এর বাপ্পী ভাই নিপাট ভদ্রলোক। সাতেপাঁচে নাই। আমার ভালোমন্দে তার কড়া নজর, যেন অভিভাবক। দৈনিক যুগান্তর-এর রাকিব ভাই চুপচাপ মানুষ। আমি সব সময়ই ভালো শ্রোতা। ছবি তুলেই সময় কাটাই বেশি।

২১ অক্টোবর, ২০১৩
আজকে আমরা তাওয়াং শহর থেকে বাইরে বেড়াতে যাব। দুটি জায়গা দেখার আছে। একটি হচ্ছে মাধুরী লেক। যার আসল নাম শাংগেতসার লেক। রাকেশ রোশন পরিচালিত কোয়েলা ছায়াছবির ‘তানহাই তানহাই তানহাই… দোনোকো পাস লে আই…’ গানটির শুটিং এই লেকে হয়েছিলো। এরপর থেকেই লেকটির আসল নাম হারিয়ে ধীরে ধীরে মাধুরী লেক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

ভূমি জরিপ অনুসারে ১৯৫০ সালে এক ভূমিকম্পের ফলে উদ্ভূত বন্যা থেকে এই লেকের উৎপত্তি। এই লেক দেখার জন্য আপনার তাওয়াং আসার দরকার নেই হয়ত কিন্তু আপনি তাওয়াং এলে শাংগেতসার লেকটিকে এক নজর দেখে যাবেন।

তাওয়াং শহর থেকে ঘণ্টা দুয়েকের পথ। লেকটি যেমন সুন্দর দেখতে যাওয়ার পথটিও তেমন সুন্দর। আমরা চললাম আরো দূরের পথে। জাং ফলস দেখতে। জাং জলপ্রপাতের আসল নাম ছিলো নুরানাং ফলস। এখন জাং ফলস নামেই পরিচিত। অপূর্ব সুন্দর এই জলপ্রপাত। পাহাড়ের গা বেয়ে, এঁকেবেঁকে চলা পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা যখন জাং ফলসের কাছে পৌঁছলাম তখন যেন ভাষা হারিয়ে ফেললাম। এত সুন্দর ঝর্না এর আগে কোথায় দেখেছি মনে পড়ে না। প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় কাটালাম সেখানে।

কত রকম ছবিই না তুললাম। এই ঝর্নার কাছেই একটি রিসোর্ট আছে। পাহাড়ের চূড়ায়। সে রিসোর্টের বারান্দা থেকে পুরো ঝর্না আর খরস্রোতা ঝিরি নজরে আসে। অপূর্ব! এই বারান্দায় বসে আমরা সবাই কফি খেলাম। কিছুটা সময় জিরিয়ে ভ্রমণের ক্লান্তি একটু দূর হতেই ফেরার পথ ধরলাম।

পথে স্থানীয় এক রেস্টেুরেন্ট থেকে ভর্তা, সবজি, পাহাড়ি মুরগীর মাংস দিয়ে দুপুরের আহার করে নিলাম। আহা কী তার স্বাদ! তাওয়াং-এ ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। তবুও কিছুটা সময় চাইলে তখনও বেড়ানো যায়।

সবাই হোটেলে ঢুকে গেলো। টাসি বলল, চলুন আপনাকে তাওয়াং-এর ওয়ার মেমোরিয়ালটা দেখিয়ে আনি। বেশ, তাই চলুন। গিয়ে বুঝলাম, এই ওয়ার মেমোরিয়াল না দেখলে আমার একটা বড় অতৃপ্তি থেকে যেত। সুবেদার জুগেন্দার সিং-এর নাম যারা জানেন তারা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন আমার বক্তব্য। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে সুবেদার জুগেন্দার সিং এক পাহাড়ের উপত্যকায় মাত্র ১৩ জন সৈন্য নিয়ে প্রায় ৬০০ জন চীনা সৈন্যকে আটকে রেখেছিলেন। জুগেন্দার সিং প্রথম দিনেই গুলিবিদ্ধ হন। এবং সেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় যুদ্ধ পরিচালনা করেন। টানা তিনদিন যুদ্ধ চলার পর পুরো ১৩ জনের দলটিই শহীদ হন এবং তারপর চীনা সৈন্যরা সেই উপত্যকা অতিক্রম করে ভারতের আরো ভেতরে প্রবেশ করে।

অরুণাচল
পাহাড়ের ওপর খোলা চত্বরে আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার জন্য তৈরি করা অস্থায়ী অডিটোরিয়াম।

এই যুদ্ধকাহিনী দেশের জন্য আত্মত্যাগের নিদর্শন হিসেবে ভারতের ইতিহাসে খোদাই হয়ে গেছে। সুবেদার জুগিন্দার সিংকে ইন্ডিয়ান আর্মির সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পরম বীরচক্র’ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। এই ওয়ার মেমোরিয়ালে যুদ্ধে শহীদ হওয়া আরো সকল সৈন্যদের নাম লেখা আছে। স্থাপত্য শৈলীর বিবেচনায়ও ওয়ার মেমোরিয়ালটি অন্যন্য। একজন আর্মি অফিসার পরম যত্নে আর শ্রদ্ধায় মেমোরিয়ালটি ঘুরিয়ে দেখালেন।

অনেক রাত পর্যন্ত জেগে রইলাম। হোটেলে ছাদে দাঁড়িয়ে শেষ বারের মতো রাতের তাওয়াং শহর দেখে নিলাম। পরদিন সকালেই আমরা তাওয়াং ছেড়ে যাচ্ছি। ৪টি দিন স্বপ্নের মতো কেটে গেল। সকাল ৯টায় আমাদের হেলিকপ্টার। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই লাগেজ গুছিয়ে নিলাম।

২২ অক্টোবর, ২০১৩
ঘুম ভাঙলো দরজায় লবসং টাসির টোকা শুনে। দ্রুত নাস্তা সেরে নিলাম। গাড়ি তৈরি। সবাই অন্যান্যদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। হেলিপ্যাডে পৌঁছে গেলাম নির্ধারিত সময়ের আগেই। বিদায় ভারাক্রান্ত চোখে আরো অনেকের সাথে হেলিপ্যাডে দেখা হলো। তারপর একসময় বিশাল হেলিকপটারটি আমাদের নিয়ে উড়াল দিলো। তাওয়াং শহরের ছোট ছোট বাড়িগুলি আরো ছোট হতে থাকলো। বিখ্যাত সেলা পাসের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ে চললো গৌহাটি এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। পেছনে পরে রইলো হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার এক অজানা উপাখ্যান।