হুমকির মুখে অস্ট্রেলিয়ার পাখি প্রজাতি। পাখি হত্যার ঘাতক শুধু বন্য বিড়ালই না—পোষা বিড়ালও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পাখি হত্যা করছে।
নতুন গবেষণা থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর বন্য বিড়াল ৩১৬ মিলিয়ন এবং পোষা বিড়াল ৬১ মিলিয়ন পাখি হত্যা করে চলেছে। প্রতি দিন মারা যাচ্ছে ১ মিলিয়নেরও বেশি পাখি। প্রায় ৯৯ শতাংশ স্থানীয় পাখি এই হত্যার শিকার।
জাতীয় পরিবেশ বিজ্ঞান কর্মসূচির আওতায় থ্রেটেন্ড স্পিসিস রিকভারি হাব থেকে গবেষণাটি করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একটা দল এই বিশেষ গবেষণায় নিযুক্ত থেকে প্রায় ২০০ আলাদা আলাদা পরীক্ষা থেকে এর প্রমাণ দাখিল করেন। সম্প্রতি বিজ্ঞান ভিত্তিক জার্নাল বায়োলজিক্যাল কনসারভেশনে তা প্রকাশ পায়।
অস্ট্রেলিয়ার থ্রেটেন্ড স্পিসিসের কার্যনির্বাহী কমিশনার সেবাস্টিয়ান ল্যাং বলেন, প্রমাণগুলি “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবংভীষণ উদ্বেগের।”
ল্যাং জানান, জাতীয় থ্রেটেন্ড স্পিসিস স্ট্রাটেজির জন্য হুমকির মুখে থাকা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওপর বিড়ালের এই ভয়ঙ্কর প্রভাব ভীষণ উদ্বেগের বিষয় ছিল। এই উদ্বেগ বন্য বিড়াল নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব নির্দেশ করে।
২০১৫ এর শেষের দিকে এবং ২০১৬ এর শুরুর দিকে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পিল এলাকায় এই বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: বছরে ১০০ কোটি পাখিমৃত্যু—জানালার কাচের কারণে
জনাব ল্যাং মন্তব্য করেন, পোষা বিড়ালের মালিকেরা নিজেদের বিড়ালদের মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়ার বদলে ধরে রাখা সত্ত্বেও পোষা বিড়ালের কারণে পাখিমৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশিই ছিল।
গবেষণা থেকে আরো জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপ এবং বিচ্ছিন্ন জনবিরল অঞ্চলে পাখি শিকারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এসব জায়গায় প্রতি বছর প্রতি বর্গকিলোমিটারে পাখিমৃত্যুর সংখ্যা গড়ে প্রায় ৩৩০ ছাড়িয়ে যায়।
চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপক উইনারস্কি বলেন, পূর্ববর্তী গবেষণা অস্ট্রেলিয়ার স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওপর বিড়ালের প্রভাব প্রকাশ করেছিল। দেশজুড়ে অস্ট্রেলিয়ার পাখিদের ওপর বিড়ালের প্রভাবের এটাই প্রথম মূল্যায়ন।
জনাব উইনারস্কি বলেন, “সবাই জানে যে বিড়াল পাখি হত্যা করে। কিন্তু এই গবেষণা দেশজুড়ে পাখি শিকারের এক বিস্ময়কর নজির তুলে ধরে এবং এই নজির অন্যান্য বিভিন্ন প্রজাতির নিঃশেষ হবার চিহ্ন বহন করে।”
দ্বিতীয় একটি গবেষণায় গবেষকরা লক্ষ্য করেন কোন প্রজাতির পাখি সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন। তারা ৩৩৮টি প্রজাতির দেশীয় পাখি হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন। এই সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার সমগ্র দেশীয় প্রজাতির পাখির প্রায় অর্ধেক।
গবেষণাটি হুমকির সম্মুখীন আরো ৭১ প্রজাতির পাখিকে চিহ্নিত করেছে।
আরো পড়ুন: দাঁড়কাকের সামাজিকতা
এই বিড়ালগুলি মাঝারি আকারের পাখিই বেশি শিকার করে। যে পাখিগুলি পাখির বাসায় থাকে এবং খাবার সংগ্রহে মাটিতে নামে, সেগুলিকে শিকার করে এরা। এছাড়া যে পাখিগুলি দ্বীপে, জঙ্গলে, তৃণভূমিতে বা বনভূমিতে বিচরণ করে নিহত পাখির মধ্যে তাদের সংখ্যাই বেশি।
অস্ট্রেলিয়ার পাখিদের জন্য বিড়াল একটি দীর্ঘস্থায়ী, ব্যাপক ও গভীর সমস্যা। এই সমস্যা কার্যকর উপায়ে মোকাবেলা করা প্রয়োজন।