শরীরের জন্য পটাসিয়াম কী কাজে লাগে
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমিজ’ ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ডের মতে, একজন মানুষের প্রতিদিন ৪.৭ গ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণ করা উচিৎ।  কিন্তু দেখা গেছে নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষদের মধ্যে পুরুষেরা প্রতিদিন গড়ে ৩ গ্রাম এবং নারীরা ২.৫ গ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণ করে। কিন্তু শরীরের জন্য যথাযথ পরিমাণ পটাসিয়াম খুবই দরকার।

হাতের নাগালের বিভিন্ন খাবার থেকে সহজেই পটাসিয়াম পাওয়া যায়।  যেমন, কলা, লেবু জাতীয় ফল, অ্যাভোকাডো, টমেটো, আলু, সামুদ্রিক মাছ, মুরগী এবং বিশেষ করে মাংসে প্রচুর পটাসিয়াম আছে। পটাসিয়াম শরীরের কী কাজে লাগে তা এখানে থাকছে।

ইলেক্ট্রোলাইট
শরীরে ইলেক্ট্রিসিটি পরিবহনের কাজে লাগে ইলেক্ট্রোলাইট ধরনের উপাদান। মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইটগুলির মধ্যে পটাসিয়াম অন্যতম। অন্য ইলেক্ট্রোলাইটগুলি হল ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম। ইলেক্ট্রোলাইট হিসাবে পটাসিয়াম শরীরের কোষ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, টিস্যুর যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য জরুরি উপাদান।

শরীরে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও pH এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পটাসিয়াম। ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যায়,  তাই শারীরিক পরিশ্রমের পরে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিৎ।

রক্তচাপ
শরীরে সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের ব্যালেন্স থাকা আপনার শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ফাংশনের জন্য খুবই দরকার। তবে এই ব্যালেন্স রাখা শরীরের জন্য বেশ কঠিন। বেশি পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করলে, বেশি পটাসিয়াম গ্রহণ করে তা কমানো যায়।

বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করলে তা শরীরের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার বাড়ায়। ফলে, প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ পটাসিয়াম গ্রহণ করে উচ্চ রক্তচাপ কমানো যায় বা রক্ত চাপ স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা যায়। তবে রক্তচাপের জন্য শূধু সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের ব্যালেন্সের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। প্রতিদিন পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার, লবণ, কোলেস্টেরল, আঁশ জাতীয় খাবার, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামেরও প্রভাব আছে রক্তচাপের ওপর।

পেশীর কার্যক্ষমতা
মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্র ও পেশীর ভারসাম্যের জন্য পটাসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শরীরের হজম ক্ষমতা ও পেশীর কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন যথাযথ পরিমাণে পটাসিয়াম গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন। হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের জন্যও পটাসিয়াম বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। কারণ, মাসলের কার্যকারিতা যথাযথ থাকলে হৃৎপিণ্ডের গতিও স্বাভাবিক থাকে।

শরীরে পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকলে বা কম থাকলে হার্টবিট অনিয়মিত হতে পারে। আর অনিয়মিত হার্টবিট যেহেতু মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে, তাই অবশ্যই আপনার উচিৎ কম বা বেশি নয়, সঠিক পরিমাণে পটাসিয়াম গ্রহণ করা।

কী পরিমাণ পটাসিয়াম গ্রহণ করবেন?
ইউরিন বা প্রস্রাবের সাথে আপনার শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম বের হয়ে যায়। এই জন্য, আগে উল্লেখিত ৪.৭ গ্রাম পটাসিয়াম সুস্থ অবস্থায় আপনার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনার যদি কিডনির সমস্যা থাকে, কিডনি যদি তার কাজ ঠিকভাবে করতে না পারে তবে আপনার জন্য ৪.৭ গ্রাম পটাসিয়ামই ঠিক আছে। এর বেশি গ্রহণ করবেন না। এর বেশি করলে আপনার হার্টবিট অনিয়মিত হতে পারে।

আবার আপনি যদি স্বাভাবিক সুস্থ থাকেন, তাহলে একেবারে কম পটাসিয়াম গ্রহণ করবেন না। শরীরে পটাসিয়াম কম থাকলে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যেতে পারে, শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যেতে পারে, হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।

আবার অতিরিক্ত পটাসিয়াম গ্রহণ করলে বা শরীরে পটাসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে অনিয়মিত হার্টবিট ছাড়াও ‘হাইপোক্যালেমিয়া’ নামক সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাইপোক্যালেমিয়া হলে শরীর গ্লুকোজ সহ্য করতে পারে না, দুর্বল হয়ে যায়, অবসাদ দেখা দেয়, পাকস্থলীর সমস্যা দেখা দেয়।