নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা প্রথমবারের মতো একটি কাইটন (Chiton) এর দাঁতের ভেতর বিরল এক ধাতুর সন্ধান পেয়েছেন। শামুক জাতীয় এই প্রাণীটি সাধারণত পাথুরে উপকূলেই পাওয়া যায়। ‘স্যান্টাবার্বারাইট’ (Santabarbaraite) নামের এই খনিজ লোহা এর আগে শুধুমাত্র পাথরেই পাওয়া গিয়েছিল।
এই আবিষ্কারে কাইটন-এর দাঁতের ব্যাপারে নতুন কিছু তথ্য জানা গিয়েছে। যেমন, প্রাণীটির দাঁত দিয়ে পাথর কামড়ানোর সহ্যক্ষমতা। কাইটন এর দাঁতে পাওয়া ধাতুর ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা জৈবজগৎ থেকে অনুপ্রাণিত একধরনের থ্রিডি-প্রিন্টিং ইংক বা কালি তৈরি করেছেন। শক্ত এবং টেকসই ম্যাটারিয়াল থ্রিডি-প্রিন্টিং-এর জন্যে এই কালি ব্যবহার করা যাবে।
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ডের্ক জোসটার জানিয়েছেন, প্রকৃতিতে এই ধাতু খুব কমই পাওয়া যায়। আর এর আগে কখনো জৈব নমুনায় এই ধাতু পাওয়া যায়নি। এই ধাতুতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় কম ঘনত্বেও এটা দৃঢ় থাকে। ফলে নতুন করে ভার যোগ না করেই প্রাণীটির দাঁত শক্ত থাকে।
প্রকৃতিতে পাওয়া বিরল এই ধাতু সমৃদ্ধ কাইটনের দাঁত অনেক শক্ত। প্রাণীটির দাঁত র্যাডুলা নামে একটি নরম জিহ্বার মতো অঙ্গের সাথে আটকানো থাকে, যা দিয়ে সেটা পাথরের ওপর হাঁটে আর সেখানে থাকা শ্যাওলা এবং অন্যান্য খাবার খায়। কাইটন এর দাঁত অনেকদিন ধরে গবেষণা করার পর জোসটার আর তার সহকর্মীরা ‘ক্রিপ্টোকাইটন স্টেলেরি’ নামক বড় আকারের একটি বাদামি কাইটনের প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করছে। এই কাইটনকে তারা ‘দ্যা ওয়ান্ডারিং মিটলোফ’ নামে ডাকে।
জোসটার এবং তার গবেষক দল নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছে যে, তারা থ্রিডি প্রিন্টিং এর জন্যে এই ধাতু দিয়ে তৈরি এক ধরনের কালি তৈরি করবে। জোসটার বিশ্বাস করেন যে, তারা এই কৌশল খাটিয়ে অনেক কিছু শিখতে পারবেন এবং কাইটন এর দাঁত থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে অনেক কিছুই বানাতে পারবেন।
তিনি বলেছেন, তারা অনেকদিন ধরেই কাইটন নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। যান্ত্রিক কাঠামোর গোঁড়া শক্ত থাকলেই পুরোটা শক্ত থাকে। অর্থাৎ কাইটন-এর এই অতি শক্ত দাঁত কীভাবে একটি নরম স্ট্রাকচার এর ওপর থাকে, তা নিয়ে তাদের কৌতূহল অনেক। আধুনিক উৎপাদনশিল্পে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্যেই বিজ্ঞানীরা কাইটন-এর মতো জীবকে বোঝার চেষ্টা করছেন যে, তারা প্রকৃতিতে কীভাবে এটি কাজে লাগায়। যেহেতু তারা এর বিকাশের জন্যে আমাদের চাইতে শত মিলিয়ন বছর বেশি পেয়েছে।