সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মেজাজ-মর্জি, রোগ… বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করছেন যে, আমাদের অন্ত্রে থাকা নিউরণের নেটওয়ার্ক শুধু আমাদের খাবার হজম করার কাজই নয় বরং আরো অনেক কিছুর সাথেই জড়িত
আপনার হয়তো বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা হতে পারে কোনো বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসার পার্টনারশিপে যাওয়া বা নতুন কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করা।
কিন্তু বাস্তব তথ্য-উপাত্ত বা অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ কঠিন কাজ। সুতরাং আপনার দ্বিতীয় মস্তিষ্ক ব্যবহার করার সময় এসেছে। চিন্তা করবেন না, আপনি সম্ভবত এর আগেও অসংখ্য বার আপনার দ্বিতীয় মস্তিষ্ককে ব্যবহার করেছেন। আপনি যখন আপনার দ্বিতীয় মস্তিষ্ককে ব্যবহার করেছেন, তখন আপনি সম্ভবত একে ‘গাট ইনসটিংকট’ বা ‘অন্ত্র প্রবৃত্তি’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এখন নতুন গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছে যে, বহু পুরোনো এই বাক্যটি আশ্চর্যজনকভাবে সঠিক।
আমাদের সত্যিই একটি দ্বিতীয় মস্তিষ্ক রয়েছে যা আমাদের বিচার-বুদ্ধিকে প্রভাবিত করে এবং আরো অনেক কিছু করে। এটি এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম (ইএনএস) নামে পরিচিত। এন্টেরিক অর্থ ‘অন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট’। এর রয়েছে মস্তিষ্কের মতোই অসংখ্য নিউরন বা স্নায়ুকোষ ও তার শাখা-প্রশাখা এবং নিউরো ট্রান্সমিটার। যেগুলি আমাদের অন্ত্র এবং তার চারপাশ ঘিরে মোড়ানো রয়েছে।
বেশিরভাগ সময়ই আমরা এর অস্তিত্ব সম্পর্কে অসচেতন থাকি। কারণ আমরা মনে করি এর প্রধান কাজ হল আমাদের খাবারের হজম প্রক্রিয়া পরিচালনা করা। তথাপি এরও মস্তিষ্কের মতো জটিল একটি কাঠামো থাকাটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়।
রবার্ট ম্যাথিউ
সায়েন্স ফোকাস, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
আমাদের দেহের তথ্য চলাচলের সুপারহাইওয়ে তথা ভাসু স্নায়ুর মধ্য দিয়ে ইএনএস আমাদের করোটিতে অবস্থিত মস্তিষ্কের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। এবং এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি যে, অন্ত্রের স্নায়ুতন্ত্র থেকে আসা সিগনালগুলি আমাদের সিদ্ধান্ত-গ্রহণ, মেজাজ-মর্জি এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলস-এর ইএনএস বিশেষজ্ঞ ড. এমেরান মেয়ার বলেন, “আপনার দেহের সব অঙ্গকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে আপনার অন্ত্রের, এমনকি তা আপনার মস্তিষ্কেরও প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার যোগ্য।”
ইএনএস বিজ্ঞান নিয়ে লেখা বই ‘দ্য মাইন্ড-গাট কানেকশন’-এর লেখক এমেরান মেয়ার আরো বলেন, “আমাদের এই দ্বিতীয় মস্তিষ্কে ৫-১০ কোটি স্নায়ুকোষ আছে, যা আমাদের মেরুদণ্ডে থাকা স্নায়ুকোষের সংখ্যার সমান প্রায়।”
বিশ্বজুড়ে গবেষকরা এখন এর প্রভাব অনুসন্ধান করতে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। গবেষণাগুলিতে নিত্যদিনের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ইএনএস-এর মূল ভূমিকাটি কী তা আবিষ্কার করা হচ্ছে। এবং যখন এটি বিকল হয়ে পড়ে তখন কী ঘটে তাও উদঘাটন করা হচ্ছে। গবেষণায় ইএনএস-এর সঙ্গে স্থূলতা এবং অবসাদ থেকে শুরু করে গাঁটফোলানো বাত এবং এমনকি পার্কিনসন’স-এর মতো নানা রোগেরও সংযোগ রয়েছে বলে প্রমাণিত হচ্ছে।
যার ফলে, এই রোগগুলির চিকিৎসা করার জন্যও নতুন পদ্ধতি উন্মোচিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব রোগের চিকিৎসায় বেশ আশার আলো দেখা দিয়েছে।
ইএনএস এবং জীবাণুতন্ত্র
২১ শতকের চিকিৎসা বিদ্যায় ইতিমধ্যেই প্রধান ফোকাস হয়ে উঠেছে ইএনএস এবং মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের সংযোগের বিষয়টি। তথাপি এর গুরুত্বের প্রথম ইঙ্গিতগুলি প্রকৃতপক্ষে এক শতাব্দী আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। যখন গবেষকরা আমাদের পাঁচনতন্ত্র সম্পর্কে অদ্ভুত কিছু আবিষ্কার শুরু করেছিলেন।
প্রাণীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে ব্রিটিশ ডাক্তারদের চালানো পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয়েছিল যে, পাকস্থলী এবং অন্ত্রের স্বায়ত্বশাসিতভাবে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। পাকস্থলী এবং অন্ত্রকে শরীরের বাকি অংশ থেকে আলাদা করে ফেলার পরও তারা হজমের জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করছিল! ইএনএসকে দেখে মনে হচ্ছিল, এটি সাধারণ কোনো অঙ্গের চারদিকে জড়িয়ে থাকা একগুচ্ছ স্নায়ুর থেকেও উন্নত এবং জটিল কিছু একটা। তবে এর জটিলতার কারণ সম্পর্কে তখনও কোনো ধারণাই করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
এরপর ১৯৮০-র দশকে গবেষকরা আরেকটি চমকপ্রদ আবিষ্কার করেন। ইএনএস-এ রয়েছে প্রচুর নিউরোট্রান্সমিটার তথা মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য জৈবরাসায়নিক উপাদান। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে, গবেষকরা ইএনএস-কে শরীরের দ্বিতীয় মস্তিষ্ক হিসাবে আখ্যায়িত করা শুরু করেন।
এর ফলে কিছু ভুল ধারণাও তৈরি হয়েছিল, যেমন, মেয়ার বলেন, “ইএনএস আমাদের অবচেতন মনের আবাস হতে পারে এমন একটি ধারণা ঘিরে প্রচুর হইচই শুরু হয়।”
কিন্তু বাস্তবতা আরো ভিন্ন এবং জটিল ছিল। বর্তমানে চিকিৎসাবিদ্যায় গবেষণার মূল বিষয়গুলির একটি জীবাণুতন্ত্রও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য অণুজীবের বিশাল এই বিন্যাসটি সারা দেহেই পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় সমষ্টিটি রয়েছে অন্ত্রে।
ইএনএস এর মতোই এই অণুজীবগুলিরও প্রধান কাজ হজম প্রক্রিয়ার মতো জটিল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা। কিন্তু অন্ত্রে তাদের আচরণ ইএনএস নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করে, এবং সেই তথ্য ভাসু স্নায়ুর মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়।
আমাদের অন্ত্রের অবস্থা আমাদেরকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে যে মূল ভূমিকাটি পালন করে তার একটি যোগসূত্র আমরা পাই এই সত্য থেকে যে, প্রায় ৮০% ভাসু স্নায়ু মস্তিষ্কে তথ্য সরবরাহের জন্য নিবেদিত। ফলে এখন ‘গাট ইনসটিংকট’ বা ‘অন্ত্র প্রবৃত্তি’ থাকার ধারণাটি আর এত হাস্যকর বলে মনে হয় না।
কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সময় আমদের সকলেরই পেটের ভেতর মোচড়ানো এবং প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মতো অনুভূতি হয়। বা খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আমরা ‘পেটে অসুস্থ’ বোধ করি। মেয়ারের মতে, এমনটা ঘটার কারণ হল চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক যে চাপের মুখোমুখি হয় তার প্রভাব আমাদের অন্ত্রের ওপর গিয়েও পড়ে, যেহেতু তারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। যার ফলে মস্তিষ্ক তাৎক্ষণিকভাবে সচেতন, যুক্তিবাদী চিন্তার চেয়ে বরং তার স্মৃতিতে জমা থাকা অন্ত্রের অনুভূতিগুলির ওপর ভিত্তি করে নতুন চ্যালেঞ্জের মূল্যায়ন করে।
তার মানে এই নয় যে, আপনাকে সব সময়ই আপনার গাট ফিলিং বা অন্ত্রের অনুভূতি অনুসরণ করতে হবে। মেয়ার বলেন “এই অন্ত্র-মস্তিষ্ক সংলাপের গুণগত মান, নির্ভুলতা এবং অন্তর্নিহিত প্রবণতাগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়।”
দ্রুততার সময় অন্ত্রের প্রতিক্রিয়া জীবনের অন্যান্য ঘটনা এবং এমনকি আপনি যা খান তার প্রভাব দিয়েও মোড়ানো থাকতে পারে। এবং কখনও কখনও এটি একেবারেই ভুল অনুভূতি দিতে পারে। বড় কোনো আর্থিক সিদ্ধান্তের সময়, ঠাণ্ডা মাথার বিশ্লেষণ অন্ত্রের অনুভূতি অনুসরণের চেয়ে ভাল ফল দেয়।
ইএনএস এবং মানসিক স্বাস্থ্য
একটা বিষয় ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, ইএনএস আমাদের মস্তিষ্ককে আরো গভীর, আরো সূক্ষ্ম স্তরে প্রভাবিত করে। প্রমাণ মিলছে যে, ইএনএস আমাদের মেজাজ-মর্জিকে প্রভাবিত করে, এবং এমনকি অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও একটি বড় ভূমিকা রাখে।
তবে ইএনএস ঠিক কীভাবে এটা করে সেটা এখনও অস্পষ্ট। অবশ্য গবেষকরা বর্তমানে ইএনএস-এ থাকা নিউরোট্রান্সমিটারগুলির একটি সেরোটোনিন নিয়ে গবেষণায় মনোনিবেশ করছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই সেরোটোনিনের মাত্রায় ভারসাম্যহীনতাকে অবসাদের কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়ে আসছে। এ কারণেই অবসাদের চিকিৎসার জন্য প্রোজাকের মতো অনেকগুলি ওষুধই সেরোটোনিনকে টার্গেট করে তৈরি করা হয়।
দেহের প্রায় ৯৫% শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নয় বরং ইএনএস-এ উৎপাদিত হয়। এবং আমরা যা খাই তা, আমাদের জীবাণুতন্ত্রের অবস্থা এবং ভাসু স্নায়ুর মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে প্রেরিত সংকেতগুলিও এর ওপর প্রভাব ফেলে।
মন ও মস্তিষ্কের এই সংযোগ এখন অবসাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভাসু স্নায়ুর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ব্যবহারকে প্রভাবিত করতে পারে, যা মারাত্মক অবসাদ দূর করতে সহায়তা করে।
কিছুদিন আগেও রোগীদের দেহে প্রয়োজনীয় পালস-জেনারেটিং ইমপ্লান্ট লাগানোর জন্য বেদনাদায়ক সার্জারি করা লাগত।
কিন্তু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং চায়না একাডেমি অফ চাইনিজ মেডিকেল সায়েন্সেস-এর গবেষকরা এখন এমন একটি ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা ভাসু স্নায়ুকে এমন এক বিন্দুতে বাহ্যিকভাবে উদ্দীপ্ত করে যেখানে এটি সবচেয়ে সহজে প্রবেশযোগ্য। যেমন, কান।
ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ৩৪ জন রোগীর ওপর ক্লিপ-অন ডিভাইসটি নিয়ে চালানো একাধিক পরীক্ষায় ইতিমধ্যেই আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে। গবেষণা দলের সদস্য ডা. পেইজিং রং বলেছেন, “চিকিৎসার এই অ-আক্রমণাত্মক, নিরাপদ এবং স্বল্প ব্যয়ের পদ্ধতিটি রোগীদের মধ্যে অবসাদের তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।”
অন্ত্র-মস্তিষ্কের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাসু স্নায়ুকে মূল ভূমিকা পালনকারী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে স্থূলতা সহ অন্যান্য সমস্যারও একইভাবে চিকিৎসা করা যাবে।
২০১৬ সালে প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালে গাঁট ফোলানো বাতের রোগে (রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস) আক্রান্তদের মধ্যে ভাসু স্নায়ুর উদ্দীপনা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এই রোগ কেবল যুক্তরাজ্যেই ৫০ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করে।
আরো পড়ুন: মানুষের আয়ুর সীমা—১৫০ বছর?
বর্তমানে যার জন্য একটি ইমপ্লান্ট প্রয়োজন হয় সেই কৌশলটি শরীরে প্রদাহ কমিয়ে কিছু রোগীদের উপকার করছে বলে মনে হচ্ছে। এই প্রদাহ অ্যালসারজনিত মলাশয় প্রদাহ এবং ক্যান্সার সহ আরো অনেক সমস্যার সাথেই যুক্ত।
ওদিকে ইতিমধ্যে, অন্ত্র এবং পার্কিনসন’স-এর মতো কিছু রোগের মধ্যে বিস্ময়কর যোগসূত্রের প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত এসব রোগ অন্য কোথাও শুরু হয় বলে বিশ্বাস করা হত।
ডেনমার্কের আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এলিজাবেথ সিভেনসনের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি জানিয়েছে যে, যেসব রোগীর ভাসু স্নায়ুগুলি অন্য কোনো রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দুর্ঘটনাক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল তাদের পারকিনসন’স রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে গেছে।
এই সংযোগটি বোঝা এবং একে ডিজেনারেটিভ বা অবক্ষয়জনিত স্নায়ু রোগের চিকিৎসা বা প্রতিরোধে ব্যবহার করার জন্য এখন কাজ চলছে। সিভেনসন বলেন, “এটা করতে পারলে তা স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় যুগান্তকারী আবিষ্কার হবে।”
জটিল সংযোগগুলি
ইএনএস নিয়ে গবেষণায় আগ্রহের বিস্ফোরণ বেশ চিত্তাকর্ষক ঘটনা বটে। তবে কীভাবে এটি কাজ করে তা সুনির্দিষ্টভাবে বোঝার জন্য যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে তা এখনও প্রথম পর্যায় অতিক্রম করতে পারেনি। ভাসু স্নায়ুর উদ্দীপনা নিয়ে চালানো বেশিরভাগ ট্রায়াল ছিল পাইলট গবেষণা যার ইতিবাচক ফলাফল বড় গবেষণায় ম্লান হয়ে যেতে পারে।
অন্ত্র-মস্তিষ্ক সংযোগের সূক্ষ্ম জটিলতা হতাশাজনক উল্লেখ করে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. জিলিং শেন বলেন, “বিরক্তিকর আন্ত্রিক পেটের পীড়ার মতো ব্যাধিগুলি কেবল লক্ষণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তাদের কারণ এবং প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ অজানা।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের নিয়ে ডা. জিলিং শেন মানব দেহের দ্বিতীয় মস্তিষ্কের রহস্যগুলি উদঘটান করার জন্য একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। তিনি এমন একটি যন্ত্র উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন যা দিয়ে রিয়েল টাইমে তথা সার্বক্ষণিকভাবে ইএনএস-এর ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
এমন যন্ত্রের একটি প্রোটোটাইপ বর্তমানে প্রাণীদের ওপর গবেষণায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে এমন একটি বৈদ্যুতিক ইমপ্লান্ট রয়েছে যার মাধ্যমে বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার, ওষুধ এবং রোগের প্রতি ইএনএস কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় তা সরাসারি দেখা যায়।
এটি আমাদের দ্বিতীয় মস্তিষ্ক কীভাবে আমাদের করোটিতে থাকা প্রথম মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগ করে তার ওপর ইতিমধ্যেই নতুন আলো ফেলেছে। শেনের মতে, অন্ত্রকে সেরোটোনিন উৎপাদনের জন্য উদ্দীপিত করে খাবার খাওয়ার আচরণকে প্রভাবিত করা এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমানো এবং এমনকি বাড়ানোও সম্ভব।
আরো পড়ুন: আপনার দেহে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলবেন কীভাবে
এটা কেবলমাত্র শুরু, উল্লেখ করে শেন বলেন, “আমরা বর্তমানে অ-আক্রমণাত্মক ইএনএস কর্মযজ্ঞ রেকর্ড করার প্রযুক্তি তৈরি করছি, যা ব্যক্তিগতকৃত এবং নির্ভুল চিকিৎসায় সহায়ক হবে।”
এবং এতে যে হারে অগ্রগতি হচ্ছে তাতে আমরা এমন দিনের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করে রাখতে পারি যেদিন আমাদের পরিবারিক চিকিৎসক আমাদের কানে একটি ডিভাইস ক্লিপ করে বলবেন, “আমি কেবল আপনার দ্বিতীয় মস্তিষ্কের অবস্থাটা একটু দেখতে চাই।”
অনুবাদ: মাহবুবুল আলম তারেক