CRISPR বা জিন এডিটিং মানুষকে জিনগত স্তরে “ঠিক” করে ফেলার একটি সম্ভাব্য ক্ষমতা—যা সমাজ যাদেরকে বায়োলজিক্যালি নিকৃষ্ট বিবেচনা করে তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ
আমেরিকানরা এতে উৎফুল্ল যে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর বিজ্ঞানকে গ্রহণ করেছে এবং দেশকে প্রমাণ ভিত্তিক নীতি নির্ধারণে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরাও মনে করি বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা কাজে লাগিয়ে একটা দেশের নীতি প্রণয়ন করা উচিত। তবে আবশ্যই কিছু ক্ষেত্র বাদ দিয়ে, যেখানে বিজ্ঞান জীবন সহজ করার বদলে মানুষকে বরং বাতিল করে দিতে পারে।
জিন পরিবর্তন করার প্রযুক্তি CRISPR -Cas9 তেমনটি করার ক্ষমতা রাখে—যে আবিষ্কারের জন্য জৈব রসায়নবিদ জেনিফার এ ডাউডনা ও ইমানুয়েল শারপঁসিয়ের নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। আরও অনেক বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়েই এমন ঝুঁকি আছে। এই প্রযুক্তিগুলি যেসব নৈতিক সিদ্ধান্তের সামনে আমাদের দাঁড় করাতে পারে সে বিষয়ে আমাদের সব সময় সচেতন থাকা উচিত।
CRISPR এর বিষয়টি অবশ্য বেশ জটিল। এই প্রযুক্তির ব্যবহারের অনেক ক্ষেত্র আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোগ নিরাময়ে এর ব্যবহার। কিন্ত গবেষকেরা CRISPR-এর এই ব্যবহার নিয়ে ততটা উৎসাহী নন। তারা আগ্রহী CRISPR-এর এমন একটি ব্যবহার নিয়ে যেটা নিয়ে এখনও বিস্তর গবেষণা বাকি, যেটার ঝুঁকিও অনেক বেশি। CRISPR-এর সেই বিতর্কিত ব্যবহার হচ্ছে এর সাহায্যে মানুষের জিন পুল থেকে ওই সকল জেনেটিক বৈশিষ্ট্য ছেঁটে ফেলা যেগুলির কারণে মানুষে মানুষে পার্থক্য হয়ে থাকে, যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞান মনে করে জিনগুলি ত্রুটিপূর্ণ ও অস্বাভাবিক। গবেষকদের কাছে CRISPR ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভয়ঙ্কর রোগ থেকে বাঁচানো একটি যৌক্তিক উদ্যোগ মনে হয় যে ভয়ংকর রোগগুলো অনেক মৃত্যু, অনেক দুর্দশা ও অনেক সম্পদের অপচয় ডেকে আনে।
স্যান্ডি সুফিয়ান, রোজম্যারি গারল্যান্ড-থম্পসন
সায়েন্টিফিক আমেরিকান, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
অবশ্য ডাউডনা নিজেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন এর ব্যবহারে “মারাত্মক ঝুঁকি” আছে। ২০২০ সালের অক্টোবরের ২২ তারিখে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি CRISPR ব্যবহার করে ভ্রূণ পরিবর্তনের বিষয়ে গবেষকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এর ফলাফল অনিশ্চিত, গবেষকদের উচিত হবে আরো অপেক্ষা করা।
আমরা অক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করা এমন দুইজন বিশেষজ্ঞ যারা জেনেটিক ভিন্নতা নিয়ে জন্মেছি—আমরা যখন চিন্তা করি ভবিষ্যতে CRISPR-এর ব্যবহারের ফলাফল কী হবে তখন আমাদের আশঙ্কা হয় এই “জেনেটিক কাঁচি” দিয়ে আমাদের মতো মানুষদের এমনভাবে বাদ দেয়া হবে তা কেউ জানতেও পারবে না। CRISPR নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের কাছে জিন এডিটিং করে আমাদেরকে জিনপুল থেকে বাদ দিয়ে দেয়া এমন একটি কাজ যাতে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।
তাদের এই মনোভাব মিলে যায় বৃহত্তর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথেও। যাদেরকে ত্রুটিপূর্ণ বা অসুস্থ ধরা হয়, সমাজ থেকে জিনগত সেসব ভিন্ন মানুষদের ছেঁটে ফেলার বুদ্ধিটা নিঃসন্দেহে ভাল, সমাজে এমন বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত আছে। সাধারণ আমেরিকানদের জিন পরিবর্তন নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কারণ তাদের অনেকেই মনে করে, জিন পরিবর্তন করা বলতে তো মানুষের পরিবর্তন করা বোঝায় না। আর এ থেকে যদি রোগ নিরাময় করা যায় তবে তা অবশ্যই ভাল বিষয়।
কিন্ত সমস্যা হচ্ছে আমাদের মানুষের জিনের কোডিং কোনো সাধারণ বিষয় না, এটা কোনো ডকুমেন্টের একটা ভুল বানান বা অপ্রয়োজনীয় বাক্য না যে চাইলেই একে বাদ দেয়া যাবে। মানব জাতির জেনেটিক পুল আমরা সবাই মিলে তৈরি করেছি। এরপরেও অনেক চিকিৎসক এবং জেনেটিক পার্থক্য নিয়ে জন্মানো কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের জীবনকে কোনো জীবন বলে মনে করে না। বরং সমাজ থেকে ভিন্নতা আর রোগবালাই ছাটাই করলে যে ভালো হয়, মানুষের মধ্যে প্রচলিত এই বিশ্বাস একসময় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তখন মনে করা হবে, এই ভাবে আমরা এমন জাতি তৈরি করতে পারব যারা আরও উন্নত, শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। কিন্ত CRISPR ব্যবহার করে “শ্রেষ্ঠ” মানব জাতি তৈরি করার এই লোভনীয় প্রস্তাব আমাদের মতো মানুষ যাদেরকে “বায়োলজিক্যালি ইনফেরিওর” গণ্য করা হয় তাদের জন্য অস্বস্তিকর সংকেত। আমরা যারা সারাজীবন জেনেটিক সমস্যা নিয়ে বেঁচে, তাদেরকেই ছেঁটে ফেলা হবে সবার আগে।
আমরা দুইজনই এমন কিছু জেনেটিক সমস্যা নিয়ে জন্মেছি যেগুলিকে অনেক গবেষক এতটাই মারাত্মক সমস্যা হিসেবে মনে করেন যে তাদের মতে জেনেটিক পুল থেকে আমাদের বাদ দেয়া উচিত। আমাদের একজনের আছে সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic Fibrosis), আরেক জনের এক ধরনের সিকটাক্টিলি (Syndactyly)। এই সমস্যাগুলি আমাদের শরীর ও জীবনের গঠন তৈরি করেছে। স্যান্ডির ফুসফুসের জন্য প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হয়। রোজেমেরি তার আক্রান্ত হাত দিয়ে স্বাভাবিক মানুষের মত কাজ করতে পারে না। আমরা বিশ্বের এক বিলিয়ন (জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ) আর যুক্তরাষ্ট্রের ৬১ মিলিয়ন মানুষের (প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ) মধ্যে পড়ি যারা প্রতিবন্ধী বলে বিবেচিত। আমরা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেদের সেই ১০ শতাংশ যাদের একটি জেনেটিক অবস্থা আছে।
আমরা যেহেতু জন্ম থেকেই সমস্যাগুলি নিয়ে বড় হয়েছি, শিশুকালেই আমরা বুঝতে পেরেছি কীভাবে আমাদের এই জেনেটিক বিশিষ্টতা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। আমাদের সাপোর্টিভ পরিবার আমাদের জন্য ভালো খাবার, ভালো পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে, যাতে আমাদের আগ্রহ ও প্রতিভা বিকশিত হতে পারে। স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার উন্নতি, সামাজিক অগ্রগতি, রাজনৈতিক সমতা এসবের কারণে আমাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে, যা আমাদের আগের প্রজন্ম ভাবতেও পারতো না।
১৯৬৭ সালে স্যান্ডি যখন জন্ম নেয়, তখন সিএফ (cystic fibrosis) আক্রান্ত রোগীদের গড় আয়ু ছিল মাত্র ১৫ বছর। ১৯৭০-৯০ নতুন মেডিক্যাল থেরাপি আসার পরে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়। বর্তমানে আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ বছর। তবে নতুন একটি ওষুধ cystic fibrosis transmembrane conductance regulator (CFTR) আসার পরে এখন এই রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও আরও বেশি দিন বাঁচতে পারে। আরোগ্য সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত মানুষের সম্ভাব্য আয়ু বৃদ্ধির এই পরিবর্তনগুলি CRISPR জিন এডিটিং-এর হিসাবের মধ্যে পড়ে না।
রোজমেরি যখন ১৯৪০ সালে জন্ম নেন, সেই সময় তার মত শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পরিবার থেকে দূরে একটা প্রতিষ্ঠানে রাখা হত। তখন ৫ জন প্রতিবন্ধী শিশুর মধ্যে কেবল ১ জন স্বাভাবিক শিশুদের সাথে একই ক্লাসে পড়াশোনার সুযোগ পেত। শারীরিক অক্ষমতার শিকার শিশুদের আলাদা স্কুলে পাঠানো হত যেখানে তাদের দেয়া হত নিম্নমানের শিক্ষা। ১৯৭৫ সালে যখন এডুকেশন ফর অল অ্যাক্ট (যেটা এখন ইন্ডিভিজুয়াল উইথ ডিসাবিলিটিস এডুকেশন অ্যাক্ট নামে পরিচিত) এর মাধ্যমে সকল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ফেডারেল সরকার পাবলিক এডুকেশনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করে। আর এতে তাদের জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
আমরা আমাদের শরীরের এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে শিখেছি, নিজের পরিচয় গড়ে তুলে প্রতিবন্ধকতার সীমা অতিক্রম করেছি। তবুও “ভাল” জিন এবং “খারাপ” জিন সম্পর্কে মানুষের একগুঁয়ে বিশ্বাস তাদের বৈষম্যমূলক আচরণের মধ্যে প্রকাশ পায়, যা আমাদের দুইজনের জীবনকেই প্রভাবিত করেছে। রোজমেরির প্রথম সন্তান যখন গর্ভে ছিল, তার চিকিৎসকের ধারণা ছিল রোজমেরির একমাত্র চিন্তা তার বাচ্চার হাত পা যদি তার মত বিকলাঙ্গ হয়। অথচ রোজমেরির তখন চিন্তা ছিল এই বাচ্চার জন্য এমন একটা শিশুকেয়ার খুঁজে পাওয়া যা তার চাকরির দায়িত্বে সাথে পরিপূরক হবে।
স্যান্ডি যখন তার সন্তান নেয়ার ইচ্ছার কথা বাকিদের জানাল তখন তার বন্ধু এবং চিকিৎসকেরা তাকে আরো একবার ভেবে দেখতে বলেছিল যে এভাবে স্যান্ডি কি তার সিস্টিক ফাইব্রোসিসের জিন সন্তানকে দিয়ে ফেলতে যাচ্ছে কিনা। এই কাল্পনিক সন্তানের হয়ত এই রোগ হত না যেহেতু তার স্বামী সিস্টিক ফাইব্রোসিসের বাহক না। (সিস্টিক ফাইব্রোসিস একটি অটোসোমাল রিসিসিভ ডিজিস।) কিন্ত স্যান্ডির পরিচিতজনরা তাকে গর্ভধারণের পরামর্শ দেয়া ঠিক মনে করেনি, যেমনভাবে তারা মনে করে অসুখ বহনকারী জিন নিয়ে কোনো শিশুর জন্মগ্রহণ করা ঠিক না। স্যান্ডি তাদের এই অনুমান মেনে নেয় যে আসলেই তার জিন নিকৃষ্ট। যদিও এই বিশ্বাস তারা সকলেই স্বতঃসিদ্ধ বলে মেনে নিয়েছে, কিন্ত প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর আনুমানিক ২৪% মানুষ কোনো না কোনো জেনেটিক অসঙ্গতি বহন করে।
এই গল্পগুলি প্রকাশ করে যে প্রতিবন্ধীদের জীবন, প্রজনন ও দুর্দশার সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক চিন্তার একটা অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ আছে। সমাজে একটা ধারণা সূক্ষ্মভাবে বিরাজ করে যে খারাপ জিনের মানুষের সন্তান প্রজনন করার অধিকার নেই কারণ তাদের থেকে জেনেটিক পুলে খারাপ জিন আসবে এবং তাদের সন্তানেরাও এই জিনের বাহক হবে। মানুষের এমন বিশ্বাস থেকে আমরা আরও একটা গভীর সত্য বুঝতে পারি যে সমাজে সক্ষমদের প্রাধান্য প্রতিবন্ধীদের চেয়ে বেশি এবং সমাজ মনে করে খারাপ জিনের প্রতিবন্ধী মানুষরা কষ্ট পাবে এটাই স্বাভাবিক।
আমরা বলছি না প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে কষ্ট নেই। তারাও অন্যদের মত কষ্ট পায়। কিন্ত আমরা সব সব সময় কষ্টে থাকি না, এমনকি অন্য মানুষদের চেয়ে আমাদের জীবন বেশি অসুখী, সেটাও ঠিক না। কিন্ত মানুষ ভাবে আমাদের জীবন কষ্টের বোঝা ছাড়া কিছু না। এই ধারণা সমাজে এতটাই ছড়িয়ে আছে যে অনেক প্রতিবন্ধীরাও এমনটা ভাবতে বাধ্য হয়।
একসময় ইউজেনিক ধারণার যে প্রচলন ছিল তারই নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে এখন। যোগাযোগ বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ জেমস এল চেরনি যার নাম দিয়েছেন কমন সেন্স এবলিজম (ableism বা এবলিজম হচ্ছে সমাজে সুস্থ মানুষের অসুস্থ মানুষের ওপর কর্তৃত্ব)। এই কমন সেন্স এবলিজম সরাসরি না বললেও প্রকৃত পক্ষে ইউজেনিক ধারণাকেই সমর্থন করে।
জিন পরিবর্তনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত মানব জাতি প্রতিষ্ঠা করার এই ধারণার নাম রোজেমেরি দিয়েছিল “ভেলভেট ইউজেনিকস”। লেইসেজ ফেইরিতে (laissez-faire) যে বাণিজ্যবাদের কথা বলা হয় সেই ধারণা থেকে পরিচালিত ইউজেনিকস-এর পেছনে যে বর্বরতা, অন্যায্যতা লুকিয়ে আছে তা চিকিৎসা সেবা আর মানব কল্যাণের নাম দিয়ে আড়াল করা হয়। বাজারচালিত ইউজেনিক মতবাদের উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে যাতে কোনো অগ্রহণযোগ্য বৈচিত্র্য না থাকে যেটা তাদের ভাষায় পূর্বের কোনো জিনগত ত্রুটির ফল। তারা চায় এমন জনমত তৈরি করতে যাতে পৃথিবীর বুকে প্রতিবন্ধী মানুষের আসা বন্ধ করা যায়।
কিন্ত ভবিষ্যতের কোনো ইউটোপিয়া তৈরির জন্য আপনি আমাদের মত মানুষদের অস্তিত্ব কেড়ে নিতে পারেন না। আমরা যখন এমন ভয়ঙ্কর আগামীর চিন্তা করি, তখন বর্তমানে এই বেঁচে থাকাও আমাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে যায়। একজন মানুষের জীবনের মূল্য কী, তা নির্ণয় করা খুবই জটিল, খুবই সাবজেকটিভ একটি বিষয় এবং অনেক কিছু বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যে সমাজে আমরা সকল মানুষকে সমান বলি, সেখানে একজন মানুষের জীবনের মূল্য নির্ণয় করার ধারণাটাই প্রশ্নবিদ্ধ। আরেকজনের জীবন সম্বন্ধে এমন মূল্যায়ন করতে চাওয়া মানুষ হিসেবে শুধু অনৈতিক নয়, এটা আমাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা।
মানুষের মধ্যে বৈচিত্র্য আছে বলে মানুষ মূল্যবোধের দিক দিয়ে, জৈবিক দিক দিয়ে ভিন্নতার সাথে যুক্ত হতে পেরেছে। এতে ব্যক্তি এবং পাবলিক জীবনে দৃষ্টিভঙ্গির বিনিময় হয়েছে, জীবনের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে, চিন্তার পরিধি বেড়েছে। পরস্পরের সাথে মানিয়ে চলতে গিয়ে যে সমস্যায় আমরা পড়ি সেগুলির সমাধান পাওয়ার মাধ্যমে আমাদের বিকাশ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা যে বিশ্বাস করি সমাজে আমরা সবাই সমান, সেই বিশ্বাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কে কতটুকু দিতে পারছে তা দিয়ে সমাজে তার অবস্থান নির্ণয় করা যাবে না। সমাজে প্রতিটি মানুষই তার স্বাতন্ত্র্য দিয়ে সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুন: CRISPR কী এবং কেন তা এত গুরুত্বপূর্ণ
জিনোম এডিটিং একটি শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি যা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও অসংখ্য মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। কিন্ত একই সাথে এই প্রযুক্তি মানব জাতির বৈচিত্র্য কমিয়ে দেয়ার মতো ক্ষতিকর কাজ করতে পারে, যখন মেডিক্যাল সায়েন্স আর সমাজ, খারাপ জিন থাকার কারণে আমাদের মতো মানুষকে জেনেটিক ত্রুটিপূর্ণ সাব্যস্ত করে বাদ দিয়ে দেবে। কিন্ত আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, কারো শরীরে খারাপ জিন থাকা মানেই তার জীবন খারাপ না। একইভাবে কারও শরীরে ভালো জিন থাকলেই তার জীবন ভালো হবে এমনও কথা নেই। যদি CRISPR-এর প্রয়োগ শুরু হয় জেনেটিক সমস্যাগুলির চিকিৎসার পরিবর্তে জেনেটিক পার্থক্য নির্মুল করার কাজে, তাহলে আমরা সমাজ হিসাবে এমন নৈতিকতাবাদী এবং সংকোচনবাদী ধ্যানধারণা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে শুরু করব।
অনুবাদ: আমিন আল রাজী
লেখক পরিচিতি
স্যান্ডি সুফিয়ান ইউআইসি স্কুল অফ মেডিসিনে চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগে স্বাস্থ্য, মানবিকতা ও ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক এবং ইউআইসি ডিজ্যাবিলিটি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলাপমেন্ট বিভাগে ডিজ্যাবিলিটি স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক।