ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে টু-ডু লিস্ট করাটা উপকারী। তবে একসঙ্গে একাধিক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার সময় টু-ডু লিস্ট জটিল হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার সময় আমরা তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারি।

বেশিরভাগ মানুষেরই একটা বড় সমস্যা হলো, আমাদের টু-ডু লিস্ট পরিকল্পিত, ফোকাসড এবং কাজ-ভিত্তিক হয় না। বরং সবকিছুই আমরা তালিকাভুক্ত করে ফেলি। যেমন, “সেলস ডিপার্টমেন্টের কাউকে ডাকা”র মতো সুনির্দিষ্ট কোনো কাজের সঙ্গে “মার্কেটিং পরিকল্পনা লেখা”র মতো কোনো অস্পষ্ট বিষয়ও তালিকায় ঢুকে পড়ে। অথচ প্রায়ই “যা করতে হবে,” তার বাস্তব কার্যকর বিবরণী বাদ পড়ে যায়।

আরেকটি সমস্যা হলো, তালিকায় কাজের সংখ্যা ২০টির বেশি হলেই সে অনুযায়ী কাজ করা কষ্টকর ও কঠিন হয়ে পড়ে। তখন আপনি প্রধান প্রধান কাজ এবং কমিটমেন্টগুলিই সম্পন্ন করতে পারবেন না।

অতিরিক্ত কাজের চাপের সময়ে অ্যাকশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে কোন কাজটি আগে করতে হবে তা বাছাই করতে পারবেন।

আর এখানেই আপনার দরকার অ্যাকশন প্রোগ্রাম। অ্যাকশন প্রোগ্রাম  হলো টু-ডু লিস্টের আরো কার্যকর সংস্করণ। যার মাধ্যমে স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করে গুছিয়ে কাজ করা হয়। অ্যাকশন প্রোগ্রাম আপনাকে আরো পরিকল্পিতভাবে সময় ব্যয় করতে সহায়তা করবে। ফলে আপনি কোনো কমিটমেন্ট ভুলে যাবেন না এবং আপনার কাজের শিডিউলেও কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে না। আর অ্যাকশন প্রোগ্রাম যেহেতু আপনাকে কোন কাজগুলি আগে করা দরকার, তা যথাযথভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে, আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ফোকাস করতে পারবেন। একই সঙ্গে  কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আপনার সময় নষ্ট করা এড়াতে পারবেন।

অ্যাকশন প্রোগ্রাম আপনাকে প্রয়োজনের সময় অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার ব্যাপারেও সহায়তা করবে। এই সবকিছুই আপনার সময় বাঁচাবে এবং সময়মতো কাজের চাপ থেকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি আপনার কার্যকারিতা এবং উৎপাদনশীলতা বা প্রোডাক্টিভিটিও বাড়াবে। অতিরিক্ত কাজের চাপের সময়ে অ্যাকশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে কোন কাজটি আগে করতে হবে তা বাছাই করতে পারবেন এবং নিজের জীবনের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আবারো ফিরে পেতে পারবেন।

টিপস:

অ্যাকশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাজ করা প্রথম প্রথম একটু জটিল এবং কঠিন মনে হতে পারে। টু-ডু লিস্টের তুলনায় তা একটু জটিলই বটে। তবে আপনি যদি বার বার চেষ্টা করেন এবং কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে অ্যাকশন প্রোগ্রাম কীভাবে ব্যবহার করতে হয় শিখে নেন, তাহলে দ্রুতই নিজের কাজের চাপের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন। এবং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

অ্যাকশন প্রোগ্রাম যেভাবে ব্যবহার করতে হয়

অ্যাকশন প্রোগ্রাম তৈরি করতে এই ৪টি ধাপ অনুসরণ করুন:

ধাপ ১: সংগ্রহ বা তালিকা তৈরি

প্রথমত, আপনার যা যা করা দরকার, তার সবকিছু নিয়ে একটি লম্বা তালিকা তৈরি করুন। জরুরি হোক বা না হোক, বড় বা ছোট, ব্যক্তিগত বা পেশাগত, এমন সব ধরনের কাজই তালিকায় রাখুন। যেসব কাজ আপনার কাছে মনে হবে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে এবং সম্পূর্ণ করার জন্য শুরু করা দরকার, সেসবও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।

তালিকা করার সময় দেখবেন, প্রচুর কাজ একা একাই হাজির হবে। যেমন আপনার ই-মেইলের ইনবক্সে হয়তো অনেক রিকোয়েস্ট জমা হয়ে আছে।

এছাড়াও আরো আছে। যেসব আইডিয়া আপনার মাথার ভেতর অলসভাবে পড়ে আছে, যেসব প্রকল্প আপনি চালাতে চান, ড্রয়ারের তলানিতে পড়ে থাকা যেসব বিষয়ে আপনি ডিল করতে চান, ছড়ানো-ছিটানো কাগজের টুকরায় লিখে রাখা বিভিন্ন পরিকল্পনা, এমন যা কিছু আছে, তার সবকিছুই সংগ্রহ করুন এবং এক জায়গায় রাখুন। পরে সবকিছু তালিকাভুক্ত করুন।

আরো পড়ুন: ১৫টি ক্যারিয়ার ধ্বংসকারী কাজ

আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলিও এই তালিকায় রাখুন, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।

টিপস ১:
আপনাকে যেসব কাজ করতে হবে, সেসব যদি না লিখে মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তাহলে প্রচণ্ড মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন। এমন অবস্থায় বুঝতেই পারবেন না, আপনি কোনো কিছু ভুলে গেছেন কিনা এবং যা অর্জন করতে চান, তা করতে না পারার ভয়ঙ্কর অনুভূতি সারাক্ষণ আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে।

অ্যাকশন প্রোগ্রামে সবকিছু লিখে রেখে মাথা খালি করার মাধ্যমে আপনি এই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হতে পারেন। তালিকা তৈরি করার সময় সুসঙ্গত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজগুলি বাছাই করুন। এভাবে সব লিখে রাখলে কাজে মনোযোগ বাড়াতে পারবেন। কারণ এখন আর করণীয় কাজগুলি সারাক্ষণ আপনার মাথায় ঘুর ঘুর করবে না।

টিপস ২:
প্রথমবার অ্যাকশন প্রোগ্রাম তৈরি করতে আপনার সম্ভবত দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় হবে। শুধু এই দুই ঘণ্টা সময়ই আপনার জীবনকে সুশৃঙ্খলভাবে গোছানোর মূল খরচ। অ্যাকশন প্রোগ্রাম তৈরি করে ফেলার পর জীবনের ওপর আপনি কতটা নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছেন, তা দেখে অবাক হবেন। এরপর থেকে অ্যাকশন প্রোগ্রাম আপ-টু-ডেট রাখতেও তুলনামূলকভাবে কম কষ্ট করা লাগবে।

টিপস ৩:
অ্যাকশন প্রোগ্রামটি কম্পিউটারে একটি ওয়ার্ড প্রসেসর ডকুমেন্ট হিসাবে রাখলেই তা আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ হবে। এতে কাগজে বার বার নতুন করে তালিকা তৈরির কাজটা করতে হবে না। তালিকাটি কম্পিউটারে সহজেই একসাথে রাখা, আপডেট এবং মেনটেইন করা যাবে। অথবা Chaos Control বা 2Do’র মতো কোনো পার্সোনাল প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারেন। এই দুটি অ্যাপই আপনাকে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ গোছাতে এবং গুরুত্ব অনুযায়ী তা বাছাই করতে সাহায্য করবে।

ধাপ ২: ছাটাই

এবার, প্রথম ধাপে যে তালিকাটি তৈরি করেছেন, তার প্রতিটি আইটেম মনোযোগ দিয়ে রিভিউ করুন। কোন কাজটি আপনার সত্যিই করা দরকার, তা ভালোভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন। এমন অনেক কাজের কথাই আমাদের মাথায় আসবে, যা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ ধরনের কাজগুলি আপনার তালিকা থেকে ছাটাই করে ফেলে দিন।

ধাপ ৩: প্রজেক্ট গোছানো এবং অগ্রাধিকার নির্ধারণ

এই ধাপের ৩টি অংশ আছে।

প্রথমত, আপনার প্রজেক্ট এবং কাজের তালিকা রিভিউ করুন। বড় প্রজেক্টের অংশ, এমন আলাদা আলাদা ছোট কাজ একসাথে তালিকাবদ্ধ করুন। যেমন, আপনি হয়তো বাসার বাথরুমটি ঠিকঠাক করতে চান এবং আপনার বসার ঘরটি পুনরায় রঙ করাতে চান। এই দুটি কাজ “বাড়ি সংস্কার” শিরোনামে একটি প্রজেক্টের অধীনে রাখতে পারেন। অথবা, কর্মক্ষেত্রে আপনি একটি নতুন কম্পিউটার সিস্টেম স্থাপনের কাজ করতে চান। এই সিস্টেমে আপনার টিমকে পরীক্ষা করা এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার কথাও ভাবছেন। এই কাজগুলি “কম্পিউটার সিস্টেম আপগ্রেড” শিরোনামে একটি প্রজেক্টের অধীনে তালিকাভুক্ত করতে পারেন।

এভাবে সাজানো হলে তালিকায় থাকা আইটেমগুলি সঠিক প্রজেক্টের সাথে সঙ্গতি রেখে করা যাবে। (তবে, আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলিকে আলাদা প্রজেক্ট হিসাবেই রাখতে হবে।)

দ্বিতীয়ত, প্রজেক্টগুলি রিভিউ করুন এবং তাদের গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে ক্রমানুযায়ী (যেমন, A থেকে F পর্যন্ত ক্রমানুসারে) সাজান। (আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য অবশ্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট হিসেবেই বিবেচিত হবে।)

তৃতীয়ত, অ্যাকশন প্রোগ্রামে প্রজেক্টগুলি নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতিতে সাজান। অ্যাকশন প্রোগ্রামকে এই ৩ ভাগে ভাগ করুন:

  • নেক্সট অ্যাকশন লিস্ট – আপনার প্রজেক্টগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথমেই কোন কোন প্রজেক্টের ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করতে চান, তার তালিকা এখানে থাকবে।
  • ডেলিগেটেড অ্যাকশন লিস্ট যেসব প্রজেক্ট এবং কাজ অন্যদের দিয়ে করাচ্ছেন, এখানে থাকবে তার তালিকা।
  • প্রজেক্ট ক্যাটালগ আপনি যেসব প্রজেক্টের মধ্যে আছেন তার সবগুলি এবং সেসব প্রজেক্টের অধীনে ছোট ছোট আলাদা সব কাজের তালিকা থাকবে এই অংশ।

এতক্ষণে অ্যাকশন প্রোগ্রামের সবচেয়ে বড় অংশ প্রজেক্ট ক্যাটালগ তৈরি করে ফেলেছেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ যেসব প্রজেক্টের কাজ শেষ করেছেন, তার তালিকা থাকবে।

সাধারণত, প্রজেক্ট ক্যাটালগ অ্যাকশন প্রোগ্রামের শেষের দিকে থাকে, যেহেতু শুধু সাপ্তাহিক রিভিউয়ের সময়ই এর দরকার হয়।

যে কাজগুলি আপনি অন্যদের দিয়ে করাচ্ছেন, প্রজেক্ট ক্যাটালগ থেকে সেগুলি বাছাই করে নিয়ে ডেলিগেটেড অ্যাকশন লিস্ট তৈরি করুন। যে কাজের দায়িত্ব যার ওপর দিয়েছেন, তার নামেই সেই কাজ রেকর্ড করুন। পাশাপাশি কাজ শেষ করার সময়সীমার ব্যাপারে আপনি একমত হয়েছেন, তাও লিখে রাখুন।

টিপস:
আপনি যদি কোনো কাজ অন্যদের দিয়ে না করান বা অন্যদের দিয়ে কাজ করানোর শর্তগুলির ব্যাপারে একমত না হন, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। আমরা এখানে যা করছি তা হলো, কাজের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা। এই ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করার জন্য আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকবে!

‘ডেলিগেটেড অ্যাকশন লিস্ট’কে আপনার অ্যাকশন প্রোগ্রামের প্রজেক্ট ক্যাটালগের আগে রাখলে ভালো। কারণ প্রায়ই এই লিস্টের দরকার হতে পারে।

সবশেষে, যে প্রজেক্টগুলিকে আপনি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছেন, সেগুলি নিয়ে নেক্সট অ্যাকশন লিস্ট তৈরি করুন। যে প্রজেক্টগুলি আপনি করতে চান এবং যেগুলি এখনই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এই অংশে সেগুলির তালিকা থাকবে। এই প্রজেক্টগুলির জন্য পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপও বের করুন।

‘নেক্সট অ্যাকশন লিস্ট’ আপনার অ্যাকশন প্রোগ্রামের প্রথম পাতায় থাকতে হবে, যেহেতু আপনাকে দিনে অনেকবার এর উল্লেখ করতে হবে।

টিপস ১:
‘নেক্সট অ্যাকশন লিস্ট’ যদি কয়েক মিনিটের মধ্যেই করা যায়, তাহলে আগেই সেটা করে ফেলুন। কিন্তু এরপর পুরো অ্যাকশন প্রোগ্রামের কাজ শেষ করতে ভুলবেন না।

টিপস ২:
যথাযথভাবে পরবর্তী কাজ নির্বাচন করার জন্য ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করুন। কোনো প্রজেক্ট যদি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে ‘নেক্সট অ্যাকশন’ তালিকায় ওই প্রজেক্টের বেশ কয়েকটি কাজ রাখুন এবং অন্যান্য প্রকল্প থেকে কম কাজ রাখুন। তবে একসঙ্গে যদি অনেকগুলি প্রজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে ‘নেক্সট অ্যাকশন’ তালিকায় সমানভাবে প্রতিটি প্রজেক্ট থেকেই কাজ রাখুন।

টিপস ৩:
নেক্সট অ্যাকশন তালিকার কাজগুলি ছোট ও সহজ রাখুন, যাতে সেগুলি শেষ করতে কয়েক ঘণ্টার বেশি সময় না লাগে। এর ফলে আপনার প্রকল্পে গতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আপনার দিন অনেক প্রোডাক্টিভ যাবে।

নেক্সট অ্যাকশনের কোনো কাজ যদি দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগতে পারে বলে মনে হয়, তাহলে সেটিকে আরো ছোট ছোট অংশে ভেঙে ফেলুন। যেমন, যদি আপনার নেক্সট অ্যাকশন হয় কোনো রিপোর্ট লেখা, তাহলে সেটিকে গবেষণা, পরিকল্পনা, লেখা, ফ্যাক্ট-চেকিং এবং এডিটিং, এভাবে কয়েকটা অংশে ভাগ করুন। এরপর ‘গবেষণা’কে আপনার নেক্সট অ্যাকশন হিসেবে বাছাই করুন। আর বাকি ধাপগুলিকে প্রজেক্ট ক্যাটালগে একটি সম্পূর্ণ প্রজেক্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত করুন।

টিপস ৪:
প্রজেক্ট ক্যাটালগে ক্রমানুসারে প্রজেক্টগুলিতে নম্বর দিলে তা আপনার জন্য সহজ হতে পারে (১০, ২০, ৩০ এভাবে নম্বর দিলে তা আপনার জন্য বেশি সহজ হবে)। যখন পরবর্তী কাজগুলিকে নেক্সট অ্যাকশন তালিকায় নিয়ে আসবেন, প্রকল্পের নম্বরটিও নিয়ে আসতে পারেন, যাতে বোঝা যায় কাজটি কোন প্রকল্পের অন্তর্গত।

টিপস ৫:
নেক্সট অ্যাকশনগুলিকে গুরুত্ব, মূল্য, প্রয়োজনীয়তা ও লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে A থেকে F, এভাবে ক্রম অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিক ক্যাটাগরিতে ভাগ করুন।

তারপরে এই কাজগুলি করার ক্ষেত্রে আপনার সাফল্য পর্যবেক্ষণ করুন। কোনো কাজ যদি আপনার তালিকায় “স্থির” হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন, তাহলে সেই প্রকল্প বাতিল করার কথা ভেবে দেখুন। অথবা সেই কাজ করার অগ্রাধিকার বাড়ান, যাতে দ্রুতই শেষ করতে পারেন।

যাই করেন না কেন, নেক্সট অ্যাকশন লিস্টে খুব বেশি কাজ রাখবেন না। নেক্সট অ্যাকশন তালিকায় যদি ১৫ থেকে ২০টির বেশি কাজ থাকে, তাহলে ফের পিছিয়ে পড়বেন। তালিকাটি বেশি ভারি হয়ে গেলে, কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রজেক্ট ক্যাটালগে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তালিকাটি যদি ছোট এবং কম চ্যালেঞ্জিং হয়, তাহলে প্রজেক্ট ক্যাটালগ থেকে আরো কিছু কাজ সেখানে নিয়ে আসুন।

টিপস ৬:
এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাজ করার সময়, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন এমন কোনো কাজ আছে কিনা, যা আপনি অন্যদের দিয়ে করাতে পারেন বা অন্যদের সাহায্য নিয়ে করতে পারেন। এমন কাজগুলি শনাক্ত করার পর সেগুলিকে নেক্সট অ্যাকশন লিস্টে রাখুন। অন্যদেরকে এগুলির দায়িত্ব দেওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানেই থাকবে।

এরপর যখন অন্যদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে যাবে, সেগুলিকে ‘ডেলিগেটেড অ্যাকশন লিস্ট’-এ স্থানান্তর করুন। এবং কাজগুলি শেষ করার জন্য বেধে দেয়া সময়সীমা ও তারিখ লিখে রাখুন।

ধাপ ৪: অ্যাকশন প্রোগ্রামকে কাজে লাগান

অ্যাকশন প্রোগ্রাম সাধারণত লম্বা হয়। তবে আপনাকে প্রতিদিন পুরো অ্যাকশন প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না!

প্রতিদিন শুধুমাত্র প্রথম পৃষ্ঠা বা প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা নিয়ে কাজ করতে হবে। যেখানে নেক্সট অ্যাকশন লিস্ট এবং ডেলিগেটেড অ্যাকশন লিস্ট থাকবে। কিছু কাজ বিশেষ কোনো দিন বা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতে পারেন। এই দিন বা সময় আপনি আপনার সুবিধা মতো হয়তো অ্যাকশন প্রোগ্রামের প্রথমদিকে রাখতে পারেন, আর নয়তো ক্যালেন্ডারে সেগুলি চিহ্নিত করে রাখতে পারেন।

মূলত, অ্যাকশন প্রোগ্রামের এই প্রথম পৃষ্ঠাগুলি আপনার পুরোনো টু-ডু লিস্টের একটি নতুন রূপ। এখানে শুধু বিভিন্ন প্রজেক্টের ছোট ছোট কাজের আউটলাইন করা হয়েছে। আর এই কাজগুলি যেসব মূল প্রজেক্টের অংশ, সেগুলি প্রজেক্ট ক্যাটালগে আছে।

আপনাকে অবশ্যই অ্যাকশন প্রোগ্রামটি প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত রিভিউ এবং আপডেট করতে হবে। (আপনার সাপ্তাহিক কাজের শিডিউলে এর জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করে রাখুন)। সম্পন্ন হয়ে যাওয়া আইটেমগুলি ডিলিট বা আর্কাইভ করুন। কাজের অগ্রগতির সাথে সাথে প্রজেক্ট ক্যাটালগ থেকে নতুন নতুন আইটেম সামনের পৃষ্ঠায় নিয়ে আসুন এবং নতুন কোনো কাজ এলে তাও তালিকায় যুক্ত করুন।

আরো পড়ুন: জন ডি স্পুনার মনে করেন, ধনী হতে চাইলে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের চিন্তা বাদ দিতে হবে

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট

অ্যাকশন প্রোগ্রাম হলো টু-ডু লিস্টের কার্যকর সংস্করণ। আপনি যেসব প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে চান, সেগুলিকে বাস্তবায়ন যোগ্য কাজে রূপান্তরিত করতে অ্যাকশন প্রোগ্রাম আপনাকে সহায়তা করবে। এরপর সেগুলিকে তিন স্তরের কাঠামোর মধ্যে পরিচালনা করবে।

‘নেক্সট অ্যাকশন লিস্ট’ হলো আপনার প্রজেক্টগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট এবং আশু যেই কাজগুলি করতে হবে, সেসবের তালিকা।

‘ডেলিগেটেড অ্যাকশন লিস্ট’ হলো যেসব প্রজেক্ট এবং কাজ আপনি অন্যদের দিয়ে করাচ্ছেন, সেসবের তালিকা।

‘প্রজেক্ট ক্যাটালগ’ হলো আপনি যে প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে চান, সেগুলি এবং প্রকল্পগুলির সংশ্লিষ্ট সব কাজের তালিকা।

এই পদ্ধতি আপনাকে একই সঙ্গে দৈনন্দিন কাজ ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করবে। এর মানে হলো, যেকোনো মুহূর্তেই “পরবর্তী কাজ” করার জন্য আপনার কাছে পরিকল্পনা আছে। ফলে আপনার উপর মানসিক চাপ অনেক কমে আসবে, নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ আপনার নিজের হাতেই থাকবে এবং সাফল্য অর্জনের বাস্তব অনুভূতি পাবেন।

তার ওপর, একটি অ্যাকশন প্রোগ্রাম আপনাকে একসাথে অনেক প্রকল্প পরিচালনা এবং এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। এটি আপনার ক্যারিয়ারের অগ্রগতিতে ও পেশাগতভাবে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে সাহায্য করবে।

অ্যাকশন প্রোগ্রামের উদাহরণ

অ্যাকশন প্রোগ্রাম কীভাবে তৈরি হতে পারে, তার একটি সহজ উদাহরণ দেখা যাক।

রেবেকা তার চাকরির কারণে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি বড় টিমকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু তার কাজে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। বরং প্রতিদিনই তিনি আরো পিছিয়ে পড়ছেন।

সুতরাং করণীয় কাজকে সুশৃঙ্খলভাবে গুছিয়ে ও গুরুত্ব অনুসারে করার জন্য একটি অ্যাকশন প্রোগ্রাম তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ধাপ ১ – সংগ্রহ বা তালিকা তৈরি

১ ঘণ্টা ধরে ব্রেইনস্টর্মিং করার পর রেবেকা তার বর্তমান করণীয় কাজের একটি তালিকা তৈরি করে:

  • টার্গেট মার্কেট নিয়ে গবেষণা করা, যাতে বিজ্ঞাপন বিভাগ প্রোডাক্ট বাজারজাত করার সময় সঠিকভাবে প্রচারণা চালাতে পারে।
  • বিভিন্ন পণ্য ও সার্ভিসের মূল্যের বা খরচের তুলনামূলক প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করা।
  • এমবিএ-তে ভর্তি হওয়ার জন্য স্থানীয় এমবিএ প্রোগ্রামগুলির খোঁজখবর নেয়া।
  • এমবিএ-র জন্য আর্থিক সাহায্য বিষয়ে নিয়োগকর্তার সাথে কথা বলা।
  • অফিস ম্যানেজার পদের জন্য বিজ্ঞাপনের রেট সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞাপন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা।
  • অফিস ম্যানেজার পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি লেখা।
  • নতুন অফিস ম্যানেজারের জন্য নতুন ডেস্ক ও টেলিফোনের অর্ডার করা।
  • নতুন সদস্য অ্যান্থনি, টিমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে তার সাথে কথা বলা। তিনি তার প্রজেক্টের কমিটমেন্টগুলি সময়মতো শেষ করতে পারছেন কিনা, তার খোঁজ নেয়া।
  • সামনের বছর কোম্পানির বড় অর্ডারগুলি সম্পর্কে চুক্তি নবায়ন করা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান সাপ্লায়ারের সাথে যোগাযোগ করা।
  • প্রজেক্ট ফোল্ডার গোছানো।

ধাপ ২- ছাঁটাই

রেবেকা তার করণীয় সকল কাজের তালিকা করার পর সেখান থেকে কোনো আইটেম ছাঁটাই করা যায় কিনা, তা দেখার জন্য তালিকাটি ভালোভাবে রিভিউ করেন।

প্রতিটি কাজের গুরুত্ব পুনর্বিবেচনা করে দেখার পর তিনি বুঝতে পারেন, টিমের নতুন সদস্য অ্যান্থনির সাথে তার আর দেখা করার দরকার নেই। গতকাল দুপুরে লাঞ্চের সময়ই তিনি তার সাথে কথা বলেছিলেন এবং অ্যান্থনি তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তিনি নিজের নতুন ভূমিকায় ভালোভাবেই মানিয়ে নিচ্ছেন। আর তার সমস্ত প্রজেক্ট সময়সীমার মধ্যেই শেষ করার পথে আছে।

রেবেকা আরো সিদ্ধান্ত নেন, তার প্রকল্পের ফোল্ডারগুলি গোছানোই আছে। সুতরাং তা নিয়ে আর কোনো কাজ করার দরকার নেই।

ধাপ ৩- প্রজেক্ট গোছানো এবং অগ্রাধিকার নির্ধারণ

রেবেকা এবার তার আইটেমগুলিকে চুড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত করতে প্রস্তুত। তিনি বুঝতে পারেন যে, তার করণীয় কাজগুলিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করতে পারেন। কাজগুলি গ্রুপ করার সময় তিনি প্রতিটি কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী A থেকে D পর্যন্ত ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দেন। এর মধ্যে A শীর্ষ অগ্রাধিকার পাবে এরপর B থেকে D ক্যাটাগরির কাজগুলি ক্রমানুসারে গুরুত্ব পাবে। আসুন বিষয়টি একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নেয়া যাক:


এরপর রেবেকা তিন ভাগে বিভক্ত করে তার পুরো অ্যাকশন প্রোগ্রামটি তৈরি করেন:

১. নেক্সট অ্যাকশন লিস্ট

২. ডেলিগেটেড অ্যাকশন

৩. প্রজেক্ট ক্যাটালগ

অ্যাকশন প্রোগ্রামটি তিনি ওয়ার্ড প্রসেসর ডকুমেন্টে তৈরি করেন এবং প্রতিটি প্রজেক্টে ১০, ২০, ৩০ এভাবে সিরিয়াল নম্বর যোগ করেন।

রেবেকার অ্যাকশন প্রোগ্রাম

নেক্সট অ্যাকশন লিস্ট

১০ টার্গেট মার্কেট নিয়ে গবেষণা।
২০ স্থানীয় এমবিএ প্রোগ্রাম নিয়ে গবেষণা।
৩০ নতুন অফিস ম্যানেজার পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।

ডেলিগেটেড অ্যাকশন

১০ পণ্য ও সেবার মূল্য বা খরচের তুলনামূলক প্রতিবেদন: ডেভিডকে দিয়ে করানো হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
৩০ বিজ্ঞাপনের রেট জানার জন্য বিজ্ঞাপন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ: লিন্ডাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে।

প্রজেক্ট ক্যাটালগ

১০ নতুন প্রডাক্ট লঞ্চ
টার্গেট মার্কেট নিয়ে গবেষণা করা, যাতে বিজ্ঞাপন বিভাগ প্রডাক্ট বাজারজাত করার সময় ঠিকঠাকভাবে প্রচারণা চালাতে পারে।
বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্য বা খরচের তুলনামূলক প্রতিবেদন তৈরি।
চুক্তি নবায়নের জন্য প্রধান সাপ্লায়ারের সাথে যোগাযোগ করা।

২০ এমবিএ-তে ভর্তি
স্থানীয় এমবিএ প্রোগ্রাম নিয়ে খোঁজখবর করা।
পড়ার খরচ যোগাতে আর্থিক সহায়তার জন্য নিয়োগকর্তার সাথে কথা বলা।

৩০ নতুন অফিস ম্যানেজার নিয়োগ
বিজ্ঞপনের ব্যাপারে এজেন্সির সাথে যোগাযোগ।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি লেখা।
নতুন ডেস্ক ও টেলিফোনের অর্ডার।

মাইন্ডফুল ডটকম  থেকে অনুবাদ: মাহবুবুল আলম তারেক