অন্য ব্যবসাগুলি কী করছে তা নিয়ে ভাবা বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়।
—সারা পেন্ড্রিক
সিইও, টিভি শো হোস্ট, এবং আন্তর্জাতিক বক্তা
“ওদের ব্যবসা এত দ্রুত বড় হলো কীভাবে? ওরা ভাগ্যবান?”, “ওরা সবসময় সুখী”―এই ভাবনাগুলির একটাও কি সম্প্রতি আপনার মনে বিরক্তি তৈরি করেছে?
উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, ‘কম্পেরিজনাইটিস’-এর কারণে আপনাকে এমন মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।
‘কম্পেরিজনাইটিস’ এমন এক ধরনের পীড়াদায়ক মানসিক অবস্থা, যখন কেউ চক্রাকারে অন্যের সফলতার সঙ্গে নিজের অর্জন ও ব্যর্থতাকে পাশাপাশি রেখে বিচার করে।
এসব তুলনা আপনাকে মানসিকভাবে অসুখী ও অসন্তুষ্ট রাখে। এগুলি আপনার মধ্যে জীবন সম্পর্কে শোচনীয় অনুভূতির তৈরি করে। কিন্তু নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য, অথবা কোনো অবাস্তব আদর্শ দিয়ে জীবন পরিচালনার জন্য অবিরত চেষ্টা করতে থাকলে তা আপনাকে ক্লান্ত করে তুলতে পারে।
কোনো ব্যবসা দাঁড় করানোর সময় আপনি যদি নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করেন, তাহলে আপনার মানসিক শক্তি থমকে যাবে বা হোঁচট খাবে একটা সময় গিয়ে। আপনাকে ঈর্ষান্বিত থাকতে হবে সবসময়। এটা ঠিক যে, প্রতিযোগীদের সাফল্য, ব্যর্থতা, ও বাজারে তাদের অবস্থান বুঝতে তাদের দিকে সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখা দরকার। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে গিয়ে তাদের সঙ্গে নিজের তুলনা করা যাবে না। অন্যের যা আছে তা আপনার নেই কেন, এমন অবান্তর চিন্তায় বিশ্বাস করতে শুরু করলে আপনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন, এমনকি সাফল্যও আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারে।
ভাল খবর হচ্ছে, এই ধ্বংসাত্মক চক্র থেকে প্রতিদিনই কিছু ছোট্ট পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে আপনি বের হয়ে আসতে পারেন। নেগেটিভ জিনিসের প্রতি কম এবং পজেটিভ জিনিসের প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে।
অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করার হাত থেকে বাঁচতে এবং প্রশান্তির জীবন যাপন করতে নিচের ৪টি পদক্ষেপ আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
১. সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে সচেতন হন
এই অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসার জন্য সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তুলনা করার একটা বড় ক্ষেত্র হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। যা আপনি সম্ভবত ব্যবহার করে থাকেন নিজেকে বাস্তবিক তুলনার জায়গা থেকে দূরে রাখার জন্য।
ভেবে দেখুন, আপনি কেন ফোন হাতে নিচ্ছেন? একাকীত্ব ও বিরক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য? নাকি প্রিয়জনের সাথে বিবাদ এড়িয়ে চলার জন্য? সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকার ব্যাপারটি আপনার জন্য ভাল হতে পারে যদি এটা আপনার ব্যবসায়িক সফলতার কাজে অথবা কোনো কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ রক্ষার কাজে ব্যবহার করেন। কোনো কারণ না থাকলে এটি আপনার জন্য সমস্যার হয়ে উঠতে পারে।
এজন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটানোর জন্য একটা সময় নির্ধারণ করুন। কোথাও লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বা ট্রাফিক জ্যামে বসে আছেন, তখন বার বার সোশ্যাল মিডিয়ায় চেক ইন করা বন্ধ করুন। এটা একটা ছোট অনুশীলন।
মনে রাখুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখছেন তা একটি অপূর্ণ মুহূর্তের পূর্ণ ছবি। ছবিটার পেছনে একটা দীর্ঘ গল্প এবং জার্নি থাকে সবসময়। সেটা ছবিতে কখনো আসে না।
২. নিজের প্রতিভার জায়গাতেই থাকুন
আপনি আপনার ডে-ওয়ান কে অন্য কারো সাথে তুলনা করতে পারেন না। কারণ প্রতিটি মানুষই ভিন্ন। ঠিক তেমনি নিজের দুর্বলতাকে অন্য কারো শক্তির জায়গার সাথে তুলনা করলে ভুল করবেন।
আপনি নিজের রান্নার দক্ষতা যেমন কোনো ওয়ার্ল্ড ক্লাস শেফের রান্নার সঙ্গে তুলনা করেন না, তেমনি অন্যের সবচেয়ে বড় দক্ষতার সঙ্গেও নিজেরটার তুলনা করবেন না।
আপনারও আলাদা ও স্বকীয় কিছু দক্ষতার জায়গা আছে। কাজ দিয়ে ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজের ওই দিকগুলি খুঁজে বের করুন। তারপর সেগুলিকে আরো উন্নত করাতে মনোযোগ দিন। প্রতিদিন একটু একটু করে আগের দিনের চেয়ে আরো ভালো করুন।
নিজের প্রতিভার দিকটা যদি এখনো না ধরতে পারেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “এমন কোনো কাজ কি আমি করি যেটাকে কাজ মনে হয় না?” এই প্রশ্নটার পেছনে যুক্তি হচ্ছে, যে কাজে আমরা পারদর্শী বা করে আনন্দ পাই, সেটা আমাদের কাছে সহজ মনে হয়। এতটাই সহজ যে, আমরা বুঝতেও পারি না এটাই আমাদের সেই গিফট। এজন্য বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও সহকর্মীদের কাছে যান। তারা আপনাকে বলে দিতে পারবে, কোন কাজটা আপনি সবচেয়ে ভালো পারেন।
৩. নির্ভুল না হলেও কাজ করুন
তুলনা করা হচ্ছে থেমে যাওয়ার সহজ পথ। আপনি এই সত্যটা টের পাওয়ার আগে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাকিদের কাজকে সহজ ভাবতে গিয়ে তুলনাকারীরা নিজেদের কাজের সময় নষ্ট করে ফেলে।
যখনই দেখবেন, আপনিও এই শ্রেণিতে পড়ে যাচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে উঠে হাঁটা শুরু করুন। চলাফেরা ওই চিন্তা থেকে আপনার মনোযোগ সরাবে। রাতারাতি কোনো ব্যবসা অনেক বড় হয় না। এতে অনেক সময় দিতে হয়, খাটতে হয় ও আবেগের প্রয়োজন হয়। তখনই সেই বড় লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। একারণেই আপনার প্রয়োজন প্রথমে ছোট কাজ দিয়ে শুরু করা। আস্তে আস্তে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে আগাতে থাকলে একসময় গিয়ে বুঝতে পারবেন আপনি অনেক দূল চলে এসেছেন।
৪. প্রযুক্তি যেন শেকল না হয়ে ওঠে আপনার জন্য
বর্তমান মুহূর্তে বাঁচতে শিখুন, কারণ এই সময়টাতেই সমস্ত আনন্দ লুকিয়ে আছে। সেজন্য আপনার নানা রকম মনোযোগ নষ্টকারী জিনিস থেকে দূরে থাকুন। প্রতি মাসে একটা দিন নির্ধারণ করুন, যেদিন ফোন বন্ধ রাখবেন এবং নিজেকে এর থেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখতে পারবেন।
এর মাধ্যমে আপনি নিজেকে বোঝার এবং নিজেকে সময় দেয়াও শিখবেন। যখন নিজের যত্ন নেওয়া শিখবেন, তখনি অন্যদেরও দেখভাল করতে পারবেন। কাদেরকে বা কোন জিনিসগুলি ভালবাসেন তার একটা লিস্ট করতে পারেন। সঙ্গে নিজের ভেতরেও যেসব গুণাবলি দেখতে পান তারও একটা লিস্ট করুন। চাইলে যে জিনিসগুলি পছন্দ করেন সেগুলি নিয়ে ভয়েস রেকর্ড করুন এবং মাসে কয়েকবার সেটা শুনুন।
তুলনা করা একটি স্বাভাবিক মানবীয় প্রবণতা। এটা তখনই সমস্যার বিষয় হয়ে ওঠে যখন তা আপনাকে ভোগায়। আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করে। নিজেকে এমন চিন্তা করতে দেখলে তা শনাক্ত করুন, নিজেকে বলুন আপনি ঠিক কী করছেন। কেন এই তুলনাটা করাটা অপ্রয়োজনীয়।
অন্যদেরকে ভালো কিছু করতে দেখলে মন থেকে স্বীকৃতি দিন। কেন তা সুন্দর, কেন সেই কাজটি ভালো তা নিজেকে বোঝান। আপনার মনের ভেতর কী ঘটছে তা আপনিই সবচেয়ে ভালো জানেন, তাই এধরনের পরিস্থিতিতে নিজের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। নিজের বন্ধু হয়ে উঠুন।
এন্টারপ্রেনার ডটকম থেকে অনুবাদ: মাহতাবুল আলম