আমাদের প্লাস্টিক প্রিয়তা এবং আরো অন্যান্য উপকরণ ব্যবহারের কারণে কপারের ব্যবহার কমে গেছে। কপারের তৈরি বিছানা, রেলিং বা কপারের তৈরি দরজার হাতল বাদ দিয়ে স্টেইনলেস স্টিল, প্লাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করি এখন।

নোরো ভাইরাস, এম.আর.এস.এ, ই. কোলাই ভাইরাসের আক্রমণসহ করোনা ভাইরাসকেও ধ্বংস করতে সক্ষম কপার । ১৮৫২ সালে ভিক্টর বার্ক নামের একজন চিকিৎসক প্যারিসের থার্ড অ্যারোনডিসমন্টে একটি কপার কারখানায় যান। সেখানে তাপ ও নানা কেমিক্যালের সাহায্যে এই লালচে-বাদামী ধাতুটিকে আলাদা করা হত। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর ও বিপদজনক একটি কাজ। বার্ক দেখেন কারখানার কর্মচারীদের আবাসন ও স্বাস্থ্যের অবস্থা শোচনীয়। বিশেষ করে তাদের মৃত্যুহার অত্যন্ত দুঃখজনক।

তা সত্ত্বেও সেখানকার ২০০ জন কর্মী ১৮৩২, ১৮৪৯ এবং ১৮৫২ সালের কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

বার্ক যখন জানতে পারেন ওই একই এলাকার আরো ৪০০ থেকে ৫০০ কপার কর্মী রহস্যজনকভাবে কলেরার আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছে, তিনি বুঝতে পারেন তাদের কর্মক্ষেত্র এবং কপারের সাথে এমন যোগ রয়েছে যা তাদের ইমিউনিটি বাড়িয়ে ওই সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করেছে। পরবর্তীতে তিনি প্যারিস ও বিশ্বের বিভিন্ন শহরে কপার নিয়ে কাজ করা মানুষদের ওপর বড় পরিসরে অনুসন্ধান চালান।

১৮৫৪ থেকে ১৮৫৫ সালের কলেরা মহামারীতে বার্ক মৃতদের মধ্যে কপার নিয়ে কাজ করেন এমন কোনো জহুরি, স্বর্ণকার বা বয়লার নির্মাতা পাননি। সেনাবাহিনীতে যারা পিতলের (আংশিক কপার) তৈরি বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন, তাদেরও কিছু হয়নি।

১৮৬৫ সালে প্যারিস মহামারীতে ১,৬৭৭,০০০ জনসংখ্যার ভেতর মোট ৬,১৭৬ জন মারা যায়, অর্থাৎ প্রতি ১০০০ জনে ৩.৭ জন। কিন্তু বিভন্ন কপারের কারখানায় কাজ করা ৩০,০০০ কর্মচারীর ভেতর মারা যায় মাত্র ৪৫ জন, যা প্রতি ১,০০০ জনে মাত্র ০.৫ জন।

বার্ক প্যারিসে কপার ব্যবহার করে এমন ৪০০টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। এছাড়াও ইংল্যান্ড, সুইডেন ও রাশিয়ার ২০০,০০০ এরও বেশী মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। ১৮৬৭ সালে বার্ক, ফ্রেঞ্চ অ্যাকাডেমিস অফ সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিনকে জানান, আক্ষরিক অর্থে যেকোনো কিছুর ওপরে ব্যবহৃত কপার ও এর সংকর, পিতল ও ব্রোঞ্জ কলেরা মহামারী প্রতিরোধে কাজ করে। এবং এটা কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত না।

যেভাবে কপার জীবাণু ধ্বংস করে

এসময়ে এসে আমরা জানি প্রতিদিন কপার নিয়ে কাজ করা মানুষেরা কেন ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষিত থাকে। কপার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে মিনিট খানেকের মধ্যেই মেরে ফেলে।

উনিশ শতকে, হাত জীবাণুমুক্ত করার প্রাথমিক সংস্করণ হিসেবে কপার ব্যবহার হত। সেই থেকে গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন জীবাণুগুলিকে কপার ধ্বংস করতে সক্ষম। নোরোভাইরাস, এম আর এস এ, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ গড়ে তোলা ব্যাকটেরিয়া, খাদ্যাজনিত অসুস্থতার জন্য দায়ী ই. কোলাই, করোনা ভাইরাস সহ অনেক জীবাণু ধ্বংস করে কপার। কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য দায়ী নোবেল করোনা ভাইরাসও হয়ত কপার দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব।

কপার
আমাদের প্লাস্টিক প্রিয়তা এবং আরো অন্যান্য উপকরণ ব্যবহারের কারণে কপারের ব্যবহার কমে গেছে। কপারের তৈরি বিছানা, রেলিং বা কপারের তৈরি দরজার হাতল বাদ দিয়ে স্টেইনলেস স্টিল, প্লাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করি এখন।

কপার নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত দক্ষিণ ক্যারোলিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনলজির অধ্যাপক মাইকেল স্মিট বলেন, হাসপাতালগুলিতে প্রতি ৩১ জনে ১ জন হেলথকেয়ার-অ্যাকয়ার্ড ইনফেকশনে (Healthcare-Acquired Infections) আক্রান্ত হন। হাসপাতালের পাশাপাশি যান চলাচল করে এমন এলাকায় বহু মানুষ জীবাণুযুক্ত বস্তু স্পর্শ করে। এসব জায়গায় কপারের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিরাট অবদান রাখতে পারে।

স্মিট বলেন, আমাদের প্লাস্টিক প্রিয়তা এবং আরো অন্যান্য উপকরণ ব্যবহারের কারণে কপারের ব্যবহার কমে গেছে। স্মিটের মতে সস্তা পণ্যগুলিই এখন বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা কপারের তৈরি বিছানা, রেলিং বা কপারের তৈরি দরজার হাতল বাদ দিয়ে স্টেইনলেস স্টিল, প্লাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করি এখন।

অনেক জীবাণুই কঠিন পৃষ্ঠে ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। সেগুলি স্পর্শ করলে নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে আমাদের সংক্রমিত করে।

কপারের পৃষ্ঠে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস মারা যায়। জীবাণু, পৃষ্ঠে এসে পড়লে কপার বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত তড়িৎ আয়ন নিঃসরণ করে। সেই আয়ন জীবাণুর বাইরের মেমব্রেন ভেদ করে ভেতরে থাকা ডিএনএ বা আরএনএ সহ পুরো কোষকেই ধ্বংস করে ফেলে। ফলে ভাইরাসগুলি আর বংশবিস্তার করতে পারে না।

খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ থেকে ২২০০ সালে রচিত পৃথিবীর প্রাচীনতম বই স্মিথ প্যাপিরাসে চিকিৎসাক্ষেত্রে কপার ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। এতে বলা আছে, বুকের ক্ষত ও খাবার পানি জীবাণু মুক্ত করতে ওইসময় কপার ব্যবহার করা হত। একইভাবে, মিশর ও ব্যাবিলনের সৈন্যরা ক্ষতের সংক্রমণ রোধে ব্রোঞ্জের (কপার ও টিনের তৈরি) তলোয়ার ব্যবহার করত।

“কপার দেখতে যেমনই লাগুক, জিনিসটা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। যদি দেখতে সবুজও হয়ে যায় তারপরও তা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক ধ্বংস ক্ষমতা হারায় না।”

কপারের আরো ব্যবহারের কথা বলতে গেলে নিউইয়র্ক শহরের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনের কথা উল্লেখ করা যায়। সেখানকার বিশাল সিঁড়িটির দুইপাশের হাতল কপার দ্বারা আবৃত। স্মিট বলেন, এসব আসলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল।

সম্ভবত কপার কারখানার কর্মীদের চারপাশে অনেক বেশি কপার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সেখানে বেঁচে থাকতে পারত না, তাই তারা কলেরা ব্যকটেরিয়ায় আক্রান্ত কম হতেন। ধাতুবিজ্ঞানের কল্যাণে বর্তমানে কপারের তৈরী হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিজ্ঞাপন দেখা যায়, তবে সেগুলি তখনই কাজ করে যখন আপনি পুরো এক মিনিট সময় নিয়ে হাতের প্রতিটি অংশ ভালো করে পরিষ্কার করেন। হাতের প্রতিটি অংশে কপার ব্যবহার করা কঠিন হতে পারে, তাই হাত ধোয়ার পাশাপাশি কপারের তৈরি জিনিসের ব্যবহার করেও সমন্বয় করা যেতে পারে।

কপার নিয়ে নানা গবেষণা

স্মিট বলেন, স্ট্যান্ডার্ড হাইজিন প্রোটোকল অনুযায়ী কপার ব্যবহার করে হেলথ কেয়ার সেটিংসে প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে দেখা গেছে। ১৯৮৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালের দরজার হাতল পিতলের (কপারের অংশ) হলে সেখানে কোনো ই. কোলাই ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে পারে না। অথচ এর তুলনায় স্টেইনলেস স্টিলে ব্যাপকভাবে ই. কোলাই ব্যাক্টেরিয়া বসবাস করে।

আমেরিকায় শুধুমাত্র হেলথকেয়ার-অ্যাকয়ার্ড ইনফেকশন (HAI) এর কারণে প্রতি বছর প্রায় ১,৭০০,০০০ সংক্রমণ এবং ৯৯,০০০ মৃত্যু ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা অতিরিক্ত চিকিৎসার জন্য ৩৫.৭ ডলার এবং বছরে ৪৫,০০০,০০০,০০০ ডলার খরচ করে থাকেন।

যেসব জায়গায় মাইক্রোবস জন্মায়

এর মাধ্যমে হেলথকেয়ার-অ্যাকয়ার্ড ইনফেকশন (HAI) ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সংক্রামণ কমাতে কপার সাহায্য করতে পারে। মহামারির সময়, যেহেতু দূষিত মেঝের মাধ্যমে নভেল করোভাইরাস ছড়াতো, তাই একটি ভাইরাস-ধ্বংসকারী পদার্থ থাকা নিঃসন্দেহে স্বস্তির কারণ হতে পারত।

২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে একটি ভিন্ন করোনা ভাইরাস, মানব করোনা ভাইরাস ২২৯ই, যা শ্বাসনালীতে সংক্রমণে ঘটায়। এটা টেফন, সিরামিক, কাচ, সিলিকন রাবার এবং স্টেইনলেস স্টিলের মত উপকরণের সংস্পর্শে থেকে ৫ দিন পরও মানব ফুসফুসের কোষে সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু কপার সংকরের ওপর এই করোনা ভাইরাস দ্রুত নিস্ক্রিয় হয়ে যায়।

এমআইটির একটি রিপোর্টে সারস-কভ-২ এর ওপর নতুন প্রিপ্রিন্টে দেখা গেছে, যে ভাইরাসটি কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী সেটিকে সাতটি ভিন্ন সাধারণ উপকরণের উপর স্প্রে করেছেন মন্টানা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির গবেষকগণ। তারা দেখতে পান, কোভিড-১৯ প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলের উপর তিন দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। হাসপাতালের যে যে জায়গাগুলিতে মানুষ অনেক বেশি স্পর্শ করে সেখান থেকে ছড়িয়ে এই ভাইরাস মানুষকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। কাশি বা হাঁচির একটি ড্রপলেট থেকেই এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

যেসব জায়গায় কপার ব্যবহার করা যেতে পারে

ইংল্যান্ডের সাউদি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল হেলথকেয়ারের অধ্যাপক বিল কিভিল যিনি এর আগে কপার ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পেয়েছিলেন, তিনি বলেন, “যদি অধিক জনসমাগমের এলাকায় কপার ব্যবহার করা হয় তাহলে তা শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যেমন, করোনা ভাইরাস ২২৯ই এবং সারস-কভ-২ এর সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করবে।”

তিনি মনে করেন, হাসপাতাল ছাড়াও কপার ব্যবহারের আদর্শ জায়গা হল বাস, বিমানবন্দর, সাবওয়ের মতো জায়গা যেখানে অনেক লোক সমাগম আছে । তিনি কপারের ব্যবহার খেলার উপকরণ যেমন জিমের ওয়েইট লিফট থেকে শুরু করে অফিসের ও অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহারিক জিনিসপত্রেও দেখতে চান ।

কপার
কপারের নানারকম হ্যান্ডেল ও ডোর নব

প্রিপ্রিন্টে এমআইটি টেকনোলজি রিভিউতে এন্টোনিও রেজিলাডো লিখেছেন, সার্স-কভ-২ একদমই কপার পছন্দ করে না। কপারের ওপর মাত্র চার ঘণ্টা থাকার পরই ধ্বংস হয়ে যায়।

২০১২ সালে স্মিট ও তার সহকর্মীরা তিনটি হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করেন। নিউ ইয়র্ক সিটির মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটারিং ক্যান্সার সেন্টার, চার্লসটনের সাউথ ক্যারোলাইনার মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ও র‍্যালফ এইচ. জনসন ভেটারেন্স এডমিনিস্ট্রেশন মেডিকেল সেন্টারে।

প্রথমে তারা বুঝতে চেষ্টা করেন রোগীর ব্যবহৃত কোন জিনিসগুলি মাইক্রোবস দ্বারা সবচেয়ে বেশী দূষিত থাকে। যেমন: বিছানার রেলিং, নার্সের কল বাটন, ভিজিটর্স চেয়ারের হাতল, ট্রে টেবিল এবং আইভি পোল। এই জিনিসগুলির ওপর কপারের প্রলেপ দিলে জীবাণুর উপস্থিতি ৮৩ শতাংশ কমে যাবে। ফলে, হেলথকেয়ার-অ্যাকয়ার্ড ইনফেকশন (HAI) ৫৮ শতাংশ কমার সম্ভাবনা থাকলেও গবেষকরা ঘরের ভূপৃষ্ঠের ১০ শতাংশেরও কম কপার ব্যবহার করেন।

হেলথকেয়ার-অ্যাকয়ার্ড ইনফেকশনস (HAI) প্রতিরোধে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংস করতে অতিবেগুনী রশ্মি বা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড গ্যাসের মত বিকল্পও রয়েছে। কিন্তু উভয়ক্ষেত্রেই হাসপাতালকে পুরোপুরি জনশূন্য করে নিতে হবে। কোনো অসুস্থ রোগী সেখানে প্রবেশ করলে পুনরায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে। স্মিট বলেন, কপার কোনো প্রকার পর্যবেক্ষণ ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন অবিরত কাজ করে যায়। এটা কখনোই ফুরিয়ে যায় না। ধাতুটা যতক্ষণ আছে, সে তার কাজ করে যাবে।

আরো পড়ুন: কীভাবে বয়স কমাতে হবে সে গবেষণায় বড় ধরনের সাফল্য অর্জন বিজ্ঞানীদের

হাসপাতালে সংক্রমণরোধে এবং স্বাস্থ্যের জন্য এর উপকারিতা জানার পরও কেন সর্বত্র কপার ব্যবহৃত হয় না? কেন প্রতিটি দরজার হাতল, সাবওয়ে বা পাতাল রেল বা প্রতিটি আইসিইউ রুম কপারের তৈরি না? কেন আমরা সহজেই স্টেইনলেস স্টিলের পানির বোতল কিনতে পারলেও কপারের বোতল কিনতে পারি না? কপারের তৈরি আইফোন কেসই বা নেই কেন?

কপার ব্যবহারে কমবে খরচ

এমন না যে ভবিষ্যতে সব কপার শেষ হয়ে যাবে। ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড কপার ফ্যাক্টবুক অনুসারে কপার সর্বাধিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য ধাতু। এমনকি ভবিষ্যতে কপারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্যই পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব।

চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা কপারের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এখনো জানেন না। যেমনটা কেভিল লিখেছেন, যখন চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ধাতুর নাম বলতে বলা হয় তখন বেশীরভাগই রূপার কথা বলেন। কিন্তু তারা জানেন না যে রূপা শুষ্ক অবস্থায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করে না, বরং তাতে আর্দ্রতার প্রয়োজন হয়।

কপার খুব ব্যয়বহুল এমন ধারনাও মানুষের থেকে থাকতে পারে। স্মিট বলেন, সংখ্যার বিবেচনায় কপার বরং অর্থের সাশ্রয় করবে। ২০১৫ সালে কেভিল এবং শ্মিট এর একটা গবেষণায় হিসাব করা হয়, হেলথকেয়ার অ্যাকয়ার্ড ইনফেকশন (HAI) প্রতিরোধে রোগীপ্রতি ব্যয় ২৮,৪০০ ডলার থেকে ৩৩,৮০০ ডলার। মাত্র ১০% পৃষ্ঠে কপার ব্যবহার করতে খরচ হয় ৫২,০০০ ডলার যা ৩৩৮ দিনের গবেষণায় ১৪টি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। হেলথকেয়ার অ্যাকয়ার্ড ইনফেকশন (HAI) প্রতিরোধে সর্বনিম্ন খরচ (২৮,৪০০ ডলার) বিবেচনা করলেও ১৪টি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে কপার মোট ৩৯৭,৬০০ ডলার বা প্রতিদিন ১,১৭৬ ডলার সাশ্রয় করে।

এমনকি প্রাথমি ভাবে কপারর পেছনে খরচ হলেও দুই মাসের মধ্যেই টাকা ফেরত চলে আসবে স্মিট বলেন। যেহেতু কপার কখনও তার জীবাণুর ধ্বংসের ক্ষমতা হারায় না — হাসপাতালগুলো দ্রুত অর্থ সাশ্রয় করবে এবং জীবন বাঁচাবে।

আরো পড়ুন: গবেষণা: যত বেশি বসে থাকছেন, তত আয়ু কমছে

তিনি বলেন, আপনার টাকা আক্ষরিক অর্থেই সংক্রমণের চিকিৎসার খরচের চেয়ে ২ গুণ কম খরচ হবে। সত্যিই এর জন্য ঝামেলা পোহাতে হয়। ২০১৩ সাল থেকে আমি বলতে গেলে মিনতি করছি শুধুমাত্র একটা কপার আস্তরণ দেওয়া বিছানার (হাসপিটাল বেড) জন্য।

উপসংহার

সম্প্রতি তিনি একটি কোম্পানিকে বিনিয়োগ করার ব্যপারে বোঝান। তিনি বলেন, এটা আসলেই ৫৮ শতাংশের থেকেও বেশি সংক্রমণ কমাতে পারে কিনা তা বুঝতে তারা একটি পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন।

কপার না ব্যবহারের আরেকটা কারণ এটা ইস্পাত, প্লাস্টিক বা কাচের চেয়ে সহজেই মলিন হয়ে যায় এবং পুনরায় চকচকে করতে পরিষ্কার করতে হয়। তিনি বলেন, কিন্তু কপার দেখতে যেমনই লাগুক, জিনিসটা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। যদি দেখতে সবুজও হয়ে যায় তারপরও তা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক ধ্বংস ক্ষমতা হারায় না।

বিশ্বের কিছু কিছু জায়গায় কপার ব্যবহার শুরু হয়েছে । চিলিতে ফ্যান্টাসিনাডিয়া নামের একটা থিম পার্কে অনেক বেশী স্পর্শ করা হয় এমন জায়গাগুলিতে কপারের ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যাটল্যান্টা বিমানবন্দরে ৫০টি পানির বোতল ফিলিং স্টেশন এখন কপার দিয়ে তৈরি। কিন্তু স্মিট বিশ্বাস করেন এর ব্যবহার আরো ব্যাপকভাবে শুরু হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা করোনা নিয়ে চিন্তিত। করোনা ছড়ানোর প্রধান কারণ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের বার বার স্পর্শ করা। তিনি মনে করেন মহামারির কারণে কেউ কপারের ব্যবহার শুরু করলে হয়তো এই ব্যপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়তো। তিনি বলেন, ভাবুন, আমাদের হাসপাতাল এবং পাবলিক স্পেসে যদি আগে থেকেই কপার থাকত তাহলে হয়তো সংক্রমণ এত বৃদ্ধি পেত না।

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস এটা কাজ করবে। কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায়। যদি কপারের ব্যবহারে তাদের সংখ্যা কমে যায়, সংক্রমণও কমে যাবে।

সূত্র. ভাইস
অনুবাদ. রেজওয়ানা সামি