এই শহরটার নাম প্রেসকট। যেখানে মানুষ কম থাকে বইলা শহরটা বড় মনে হয়। মানে এতদূর গেলাম, মানুষ দেখলাম না আর কি! আদতে শহরটা ছোট।

এই শহরটা সেন্ট লরেন্স নদীর পারে বড় দেশ আমেরিকার এই পারে ছোট ক্যানেডিয়ান শহর। ওই পারে আমেরিকার শহরটা ছোটই হবে কিন্তু আমি যেহেতু এই পার থেকে দেখতাম তাই ওই পারটা আমার কাছে শুধুই বড় দেশ আমেরিকাই ছিল।

মানুষের থাকা না থাকাতে কিছু আসে যাইত না আমার। আরো অনেক মানুষ থাকলেও হয়ত আমি একাই থাকতাম। আমি কথা বলতাম অনেকের সাথে কিন্তু আমি একাই থাকতাম।

প্রেসকটে, সেন্ট লরেন্স নদীর পাশে ছোট্ট পার্কটাতে আমি প্রতিদিনই আসতাম লাঞ্চ করতে।

অমন বরফ আর মেঘের দিন আরো থাকলেও, এমন একটা লাল গাড়ি উজাড় হয়ে যাওয়া হোয়াইট ওক গাছের পাশে আর কখনো দাঁড়াই নাই ওই দিন ছাড়া ।

আমার তো তারে নজরবন্দি করতেই হইত।


ছবির গল্প
দ্রাবিড় হাসান খান


অন্যান্য দিন যখন অনেক অনেক গাড়ি আইসা ওক গাছটার পাশে দাঁড়াইত তখন ওক গাছটা আপনি দেখতে পাইতেন না।

সেই গাড়িগুলো থেকে সুস্থ সুস্থ সংকল্পবদ্ধ বৃদ্ধ মানুষেরা তাদের অধিক তাগড়া তাগড়া কুকুর নিয়া পার্কে হাঁটতে আসত। কুকুর মানুষের তুলনায় কম বাঁচে ফলে তাদের মানুষের তুলনায় দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং তারা মানুষের চাইতে দ্রুত মানুষের সাথে অর্থময় যোগাযোগ তৈরি করে। আমার মনে হয় পশ্চিম এইটা ভালবাসে।

এই সুস্থ সুস্থ বৃদ্ধদেরকে আমার ভাল লাগত, তাদেরকে দেখলে আমার মনে হইত বৃদ্ধরা কোনোদিনই তাড়াতাড়ি মারা যান না।

সেই দিন অনেক ঠাণ্ডা ছিল, ঠাণ্ডা বলতে -২০ বা -২৫ সেলসিয়াস। যেহেতু গাড়ির ভিতরে হিটার চলত, গাড়ির জানালায় জমে থাকা বরফগুলা শিশির হইয়া গাড়ির জানালায় জমে থাকত। আপনি ছবিতে লক্ষ্য করলে দেখবেন এই জলকণাগুলোর প্রত্যেকটার একটা একটা করে ব্যক্তিত্ব আছে। মনে হবে তারা আপনার সাথে আলাপ করতে চাইতেছে!

আমি প্রায়শই তাদের ছবি তুলতাম।

আমি পার্কটাতে সবসময়ই যাইতাম। মন ভাল, দেহ ভাল, দেহ খারাপ, মন খারাপ সব সময়ই আসতাম। আমি না চাইলেও আসতাম, আমার হয়ত যাওয়ার আর কোনো জায়গা ছিল না। আসলে মনে হয়, এই জায়গাটা আমারে শাসনই করত।

প্রেসকট
“এই জলকণাগুলোর প্রত্যেকটার একটা একটা করে ব্যক্তিত্ব আছে।”

এই পার্কটা দুই দখলদারের যুদ্ধের বিখ্যাত ব্যাটল ফিল্ড (ব্রিটিশ ও আমেরিকান)। যারা ওই যুদ্ধে মারা গেছে তাদের জন্য আমি মন খারাপ করতে চাইতাম, কিন্তু পারতাম না।

আমি তখন নদী নিয়ে ভাবতাম। কারণ পার্কের থেকে নদীর গুরুত্ব বেশি। আমরা তো বলি, অমুক নদীর পারে পার্ক বা উদ্যান।

আরো পড়ুন: দাবিড় হাসান খানের ব্লগ—নেটফ্লিক্সের ফেসবুক ও গুগল বিরুদ্ধতার ‘মার্কেট’

ভাবতাম নদী কাকে বলে। আমার যেহেতু বিজ্ঞান ভাল লাগে না তাই গুগল করতাম না।

একদিন মেরিন রোডে আমার লাল গাড়িটা চালাইতে চালাইতে দেখলাম ‘দা গ্রেট লেক অন্টারিও’ যেখান থেকে সরু হইয়া দিব্যি প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে রওনা দিছে তারে আমরা নদী বলি।

ছবি. দ্রাবিড় হাসান খান, প্রেসকট, সেন্ট লরেন্স নদী, ৪/১২/২০১৯