গত ৫ জুন (২০২৩) অ্যাপল উন্মোচিত করেছে তাদের নতুন প্রডাক্ট ‘অ্যাপল ভিশন প্রো’। এটি মূলত একটি মিক্সড রিয়্যালিটি হেডসেট। তবে অ্যাপল এর দাবি, অন্য যেকোনো হেডসেট এর তুলনায় এতে অনেক বেশি ফিচার রয়েছে। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই গ্যাজেটকে বোঝাতে ‘হেডসেট’ নয়, বরং ‘স্পেশিয়াল কম্পিউটার’ (Spatial Computer) কথাটা ব্যবহার করছে অ্যাপল।

একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, এই ডিভাইসের মাধ্যমেই সূচনা হতে যাচ্ছে কম্পিউটিং এর নতুন যুগ ‘স্পেশিয়াল কম্পিউটিং’ (Spatial Computing) এর।


ফারহান মাসউদ


মূলত যেকোনো স্থানকেই কম্পিউটারে রূপান্তরিত করতে পারবে অ্যাপল ভিশন প্রো। এবং এ কারণেই ডিভাইসটির বর্ণনায় ‘স্পেশিয়াল’ শব্দটা বার বার ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ স্থান বা মাত্রা।

অ্যাপল ভিশন প্রো

অ্যাপল এর মতে, এতদিন কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মত ডিভাইস প্রয়োজন হত যেসব কাজ করার জন্যে, এখন তা হেডসেট দিয়েই করা যাবে। পাশাপাশি এই হেডসেট দিয়ে আরো অনেক কিছুই করা যাবে, যার কথা কেউ ভাবেনি আগে।

গবেষণা ও উন্নয়নের ইতিহাস
“হেডফোন হল অসাধারণ এক জিনিস। দুর্দান্ত এক জোড়া স্পিকার দিয়ে শোনার অভিজ্ঞতা আপনি হেডফোন কানে লাগিয়েই পাবেন। [তবে এখন] বড় একটা সমস্যা হল, ভিডিও দেখার জন্য হেডফোন [এর মত কোনো ডিভাইস] নেই। এমন কিছু নেই যা আমি নিজের সাথে রাখতে পারি, আর যেটা [চোখে] পরলেই আমি নিজের বাসায় থাকা ৫০ ইঞ্চি প্লাজমা ডিসপ্লে স্ক্রিনে দেখার মত একই অভিজ্ঞতা পাব। যতক্ষণ না কেউ [এই ডিভাইস] উদ্ভাবন করছে, ততক্ষণ পরস্পরবিরোধী এক ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকবে।”

২০০৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে অ্যাপল এর প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন সিইও স্টিভ জবস এই কথাগুলি বলেন। প্রায় ১৮ বছর পরে এসে অ্যাপল এমন একটি ডিভাইস বাজারে আনছে, যেটা স্টিভ জবস এর কল্পনার সেই ডিভাইসের মতই কাজ করবে।

কিন্তু ঠিক কতদিন ধরে অ্যাপল তাদের হেডসেট ডিভাইস উদ্ভাবনের পরিকল্পনা করছে, সে ব্যাপারে সঠিক অনুমান করা কঠিন। ‘ভিশন প্রো’ এর মত একটি ডিভাইস নিয়ে অ্যাপল এর দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা থাকলেও এ ব্যাপারে অ্যাপল কাজ শুরু করে অন্তত ৮ বছর আগে।

২০১৫ সালে অ্যাপল বাজারে আনে তাদের স্মার্টওয়াচ ‘অ্যাপল ওয়াচ’। এরপর থেকে আইফোন বা ম্যাক এর মত অ্যাপল এর বিভিন্ন প্রডাক্ট এর নতুন সব ভার্শন বের হলেও নতুন কোনো প্রডাক্ট বাজারে আনেনি প্রতিষ্ঠানটি। অনেকের ধারণা, এর কারণ হল অ্যাপল এতদিন তাদের হেডসেট উন্নয়নের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছিল। আর এ কারণে ‘অ্যাপল ওয়াচ’ এর পর প্রতিষ্ঠানটির নতুন ধরনের কোনো পণ্য প্রথম উন্মোচিত হল ভিশন প্রো এর মধ্য দিয়ে।

এদিকে স্মার্টওয়াচ বাজারে আনার বছরই অগমেন্টেড রিয়্যালিটি নিয়ে গবেষণা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। সে বছর (২০১৫) জার্মান অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (বা ‘এআর’) কোম্পানি ‘মেটায়ও’ (Metaio) অধিগ্রহণ করে অ্যাপল।

এরপর মেটায়ও’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিটার মায়ার এবং ডলবি ল্যাবরেটরিজ এর মাইক রকওয়েলকে নিয়োগ দেয়া হয় অ্যাপল-এ। তাদের দুজনের সঙ্গে ‘অ্যাপল ওয়াচ’ এর ম্যানেজার ফ্লেচার রথকফকে নিয়ে একটি টিম গঠিত হয় ‘টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ’ নামে। মূলত অগমেন্টেড রিয়্যালিটি নিয়ে গবেষণা করাই ছিল এই টিমের কাজ, যা পরবর্তীতে ভিশন প্রো বাজারে আনতে সাহায্য করে।

এই তিনজন ছাড়াও জনি আইভ এবং ইভান্স হ্যাংকি নামের অ্যাপল এর সাবেক দুজন চিফ ডিজাইন অফিসার ও সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার জেফ স্ট্যাল এই হেডসেট নির্মাণে অবদান রাখেন।

তবে অ্যাপল এর এই হেডসেট নির্মাণের কার্যক্রম বেশ কয়েকবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। কেননা এই হেডসেট নির্মাণ নিয়ে গবেষণার সময় দেখা যায় প্রয়োজনীয় অনেক প্রযুক্তি তখনো উদ্ভাবিত হয়নি কিংবা সেসব প্রযুক্তি ছিল অনেক ব্যয়বহুল।

ফলে নতুন অনেক কিছু নিজেদেরকেই উদ্ভাবন করতে হয় অ্যাপল এর। প্রতিষ্ঠানটির মতে, শুধুমাত্র ভিশন প্রো নিয়ে গবেষণা কাজের জন্যেই ৫,০০০ নতুন উদ্ভাবনের প্যাটেন্ট করতে হয়েছে তাদের।

২০১৭ সালের নভেম্বরে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কানাডিয়ান অগমেন্টেড রিয়েলিটি কোম্পানি ‘ভিআরভানা’ (VRVana) অধিগ্রহণ করে অ্যাপল। এবং ‘ভিআরভানা’ উদ্ভাবিত অনেক ধারণাই কাজে লাগানো হয়েছে ভিশন প্রো ডিভাইসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি ফিচার হচ্ছে স্বচ্ছ স্ক্রিন এবং ইনফ্রারেড ক্যামেরার মাধ্যমে ইউজারের হ্যান্ড জেশ্চার বা হাতের অঙ্গভঙ্গি নির্ণয়ের পদ্ধতি।

আরো পড়ুন: কমপিউটারে ব্রেইন আপলোড ও ডিজিটাল অমরত্ব বিষয়ে পদার্থবিদ ব্রায়ান কক্স 

গত বছর ভিশন প্রো উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসে। সিইও টিম কুক সহ অ্যাপল এর অন্যান্য নির্বাহী কর্মকর্তারা ডিভাইসটি নিয়ে সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন বলে খবর প্রকাশিত হয় ২০২২ সালের মে মাসে।

অবশেষে গত ৫ জুনে (২০২৩) ডিভাইসটি বাজারে আনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার্স কনফারেন্স’ নামের একটি সম্মেলন প্রতিবছর আয়োজন করে অ্যাপল। এবং এ বছরের সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় ২০২৪ সালের প্রথম দিকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদের জন্য ডিভাইসটি বাজারে আসবে, শুরুতে যার মূল্য হবে ৩,৪৯৯ ডলার।

প্রাথমিকভাবে ১০ লক্ষ ‘অ্যাপল ভিশন প্রো’ ডিভাইস বাজারে আসবে বলে জানা গেছে।

তবে ভিশন প্রো বাজারে আনার মধ্য দিয়েই এর উন্নয়ন শেষ হয়ে যাবে না। বরং ভবিষ্যতে নতুন সব ভার্শন দেখা যাবে এই গ্যাজেট এর। এমনকি, যেন এই ধারণা নিশ্চিত করতেই ভিশন প্রো উন্মোচনের পরের দিন, অর্থাৎ ৬ জুন ‘মিরা’ (Mira) নামের আরেকটি স্টার্টআপ অধিগ্রহণ করে অ্যাপল। লস অ্যাঞ্জেলেস-ভিত্তিক এই স্টার্টআপ অগমেন্টেড রিয়্যালিটি নির্ভর হেডসেট নিয়ে কাজ করত।

যেসব হার্ডওয়্যার রয়েছে এই ডিভাইসে
এই হেডসেট-এর সামনের অংশে ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ‘লেমিনেটেড গ্লাস’। বিশেষ ধরনের এই গ্লাস ভাঙলেও সহজে টুকরো টুকরো হয় না। ফলে কোনো দুর্ঘটনায় ডিভাইসটির সামনে থাকা কাচ ভাঙলেও তা ইউজারের জন্যে ঝুঁকি তৈরি করবে না।

হেডসেট এর যে অংশ মুখাবয়বের সঙ্গে লেগে থাকবে, সেটা নমনীয় কুশন দিয়ে তৈরি। ইউজারকে স্বস্তি দেয়া ছাড়াও বাইরের আলো ঠেকানো এর কাজ। এছাড়াও ‘হেডব্যান্ড’ নামে ডিভাইসটির পেছনের যে অংশ ইউজারের মাথার সঙ্গে লেগে থাকবে, সেটা থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে তৈরি।

অ্যাপল ভিশন প্রো

সম্পূর্ণ ডিভাইসটি তৈরি করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম এর মধ্যে। এবং সম্পূর্ণ ফ্রেমে ৫টি সেন্সর, ৬টি মাইক্রোফোন এবং ১২টি ক্যামেরা রয়েছে। মোট ২৩ মেগাপিক্সেলের দুটি মাইক্রো-ওএলইডি (OLED) ডিসপ্লে রয়েছে ইউজারের প্রতি চোখের জন্যে। আর প্রতিটা ডিসপ্লের আকার খুবই ছোট, সাধারণ একটা ডাকটিকিটের সমান।

ইউজাররা এই ডিভাইস পরার পরে তাদের চোখের সামনে থাকা অনেক কিছু চোখের ইশারাতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এজন্য ডিভাইসটিতে এলইডি এবং ইনফ্রারেড ক্যামেরা সংযুক্ত বিশেষ এক সিস্টেম রয়েছে, যার মাধ্যমে চোখের নড়াচড়া ট্র্যাক করা হয়।

এছাড়াও চোখের মনি বা আইরিস এর মাধ্যমেই ইউজারের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে এই ডিভাইসে। অ্যাপল এর দাবি, ইউজারের চোখের মনি বা আইরিস এর ব্যাপারে সংগ্রহ করা সব তথ্য ডিভাইসের মধ্যেই থাকবে।

এছাড়াও যেসব ইউজার চশমা পরেন, অর্ডার করার মাধ্যমে তাদের চোখের জন্য বিশেষায়িত লেন্স সরবরাহ করবে অ্যাপল। এজন্য জার্মান অপটিক্যাল সিস্টেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘কার্ল জাইস’ (Carl Zeiss) এর সঙ্গে চুক্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ডিভাইসটির স্পিকার রয়েছে এর হেডব্যান্ডের ভেতরে। এবং পরার পরে ইউজারের কানের ঠিক ওপরেই থাকবে এই স্পিকার। আশেপাশের পরিবেশ অনুসারে ইউজারের শব্দ শোনার অভিজ্ঞতা পাল্টে দেবে ভিশন প্রো’র সাউন্ড সিস্টেম।

‘অ্যাপল এম টু’ এবং ‘অ্যাপল আর ওয়ান’ নামের দুটি প্রসেসর রয়েছে ভিশন প্রো’তে। ফলে বর্তমান যেকোনো মডেলের ম্যাক বা আইফোন দিয়ে যা কিছু করা সম্ভব, তার সবকিছুই করা যাবে এই হেডসেট দিয়ে।

ইউএসবি সি পোর্ট দিয়ে ডিভাইসটি চার্জ দেয়া যাবে এবং এজন্য এর সাথে রয়েছে আলাদা একটি বহনযোগ্য ব্যাটারি। অ্যাপল এর মতে, এই ব্যাটারিতে দুই ঘণ্টা চার্জ থাকবে এবং চাইলে সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমেও সারাদিন কাজ করা যাবে ভিশন প্রো দিয়ে।

ইউজার যেভাবে ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণ করবেন
হেডসেটটি পরলে ইউজার তার চোখের সামনে বাস্তব দুনিয়া যেমন দেখতে পাবেন, তেমনি দেখতে পারবেন স্ক্রিনে থাকা ভার্চুয়াল দুনিয়াও। তবে কোনো মুহূর্তে ইউজার কোনটা কতটুকু দেখতে চান, সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ডিভাইসের ওপরে থাকা একটা ডায়াল এর সাহায্যে।

এছাড়াও তৎক্ষণাৎ ইউজারের আশেপাশে থাকা বাস্তব বিশ্বের থ্রিডি ছবি তুলতে বা ভিডিও করার জন্য একটা বাটনও রয়েছে হেডসেটে। এই বাটনে ক্লিক করলেই ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাবে।

আরো পড়ুন: থ্রি-ডি প্রিন্টার কী এবং কীভাবে তা কাজ করে

অনেকের মতে, ভিশন প্রো’র মাধ্যমে একই ডিভাইস দিয়ে থ্রিডি ছবি তোলা এবং দেখার যুগে প্রবেশ করলাম আমরা। এখনো পর্যন্ত টু-ডি ছবি বা ভিডিওই দেখা যায় বেশিরভাগ ডিভাইসে এবং কোনো কিছু থ্রিডিতে দেখার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ডিভাইস। ভিশন প্রো এই চিত্র একেবারেই বদলে দেবে বলে ভাবছেন কেউ কেউ।

ইউজারের চোখ এবং আঙুলের ইশারাতে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ভিশন প্রো। সেজন্য নির্ধারিত সেন্সর এবং ক্যামেরা রয়েছে এতে। ইউজারের চোখ, হাত বা আঙুলের অঙ্গভঙ্গি সবসময়ই ট্র্যাক করা হয় এই ডিভাইস অন থাকার সময়।

ইউজার তার কথা বা কণ্ঠের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন ডিভাইসটি। এর বাইরে আলাদা ম্যাজিক কীবোর্ড, ম্যাজিক ট্র্যাকপ্যাড বা মাউসের মত বিভিন্ন ডিভাইস সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে এতে। এছাড়াও রয়েছে ভার্চুয়াল কীবোর্ড ব্যবহারের সুবিধা।

এই ডিভাইসের সম্পূর্ণ ইন্টারফেস নিয়ন্ত্রিত হবে ‘ভিশন ওএস’ নামের একটি অপারেটিং সিস্টেম এর সাহায্যে, যেটা দেখতে অনেকটাই অ্যাপলের পরিচিত আইওএস অপারেটিং সিস্টেম এর মত।

যা কিছু করা সম্ভব এই গ্যাজেট দিয়ে
অ্যাপল এর দাবি, মাত্র ১২ মিলিসেকেন্ডের মধ্যেই ডিভাইসটির ডিসপ্লেতে থাকা ছবি পরিবর্তিত হবে। এই গতি আমাদের চোখের পলকের স্বাভাবিক গতির চেয়েও ৮ গুণ দ্রুত। অর্থাৎ, সাধারণত কম্পিউটার বা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আমরা যেমন অভিজ্ঞতা পাই, তার চেয়েও ভাল দেখা যাবে এই হেডসেট দিয়ে।

ভিশন প্রো দিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গাতেই মুভি থিয়েটারের মত বড় স্ক্রিন চোখের সামনে নিয়ে আসতে পারবেন ইউজাররা। এবং সুবিধা অনুসারে সেই স্ক্রিন ছোট বা বড় করা যাবে। একাধিক স্ক্রিন বা ডিসপ্লে উইন্ডোও চোখের সামনে রাখা যাবে এবং সুবিধা অনুসারে যেকোনো উইন্ডোতে কাজ করা যাবে।

এছাড়া ইউজার তার চারপাশের পরিবেশই পাল্টে ফেলতে পারবেন এই হেডসেট চোখে দিয়ে। যেমন ধরা যাক বিমানের মধ্যে থাকা কেউ এই হেডসেট চোখে লাগিয়ে নিজেকে নদীর ধারে নিয়ে যেতে পারবে। তখন ইউজার বিমানে বসে থাকলেও আশেপাশে তাকিয়ে সে নদীর বয়ে যাওয়া দেখতে পারবে, কানেও শুনতে পাবে পানির শব্দ। অথবা চাইলে সে বাতাসের শব্দ শুনতে শুনতে দেখতে পাবে খোলা আকাশ।

থ্রিডি গেমস খেলা ছাড়াও অ্যাপল ভিশন প্রো দিয়ে থ্রিডি সিনেমা বা অনুষ্ঠান দেখা যাবে যেকোনো জায়গায়।

এছাড়াও ইউজার এই হেডসেট চোখে পরে নিজের ম্যাকবুক এর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই ম্যাকবুক এর স্ক্রিন দেখা যাবে ভিশন প্রো’র পর্দায়। এবং অন্যান্য উইন্ডোর মত ম্যাকবুক এর স্ক্রিনও ইউজার নিজের প্রয়োজনমত পরিবর্তন করতে পারবে।

অ্যাপল আশা করছে আগামী বছর ডিভাইসটি বাজারে আসার আগেই ডেভেলপাররা এতে ব্যবহারের জন্য নতুন ধরনের বিভিন্ন অ্যাপ এবং গেমস তৈরি করবেন। আর এমনটা হলে গ্যাজেটটি ব্যবহারের নতুন আর অভাবনীয় সব সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

ভবিষ্যৎ
অ্যাপল যখন প্রথম আইফোন উন্মোচন করে, তখন প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বিখ্যাত পণ্য ছিল আইপড। পরবর্তীতে এই আইফোনের প্রভাবেই আস্তে আস্তে আইপড এর প্রয়োজন আর প্রচলন ফুরিয়ে আসে।

এখন অনেক প্রযুক্তিবিদ ধারণা করছেন, ভিশন প্রো হয়তো ভবিষ্যতে আইফোন বা ম্যাককেই বাজার থেকে সরিয়ে দিতে পারে। যত যাই হোক, এসব ডিভাইস দিয়ে যেসব কাজ করা সম্ভব, তার সবই ভিশন প্রো দিয়ে করা যাবে।

আরো পড়ুন: হাইপারলুপ কী? কবে নাগাদ এর যাত্রা শুরু হতে পারে?

তবে এটা নিশ্চিত যে, এখনই এমনটা হচ্ছে না। আমাদের স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের বদলে ভিশন প্রো’র মত হেডসেট এর প্রচলন শুরুর জন্যে একে আরো উন্নত হতে হবে।

অনেকের মতে, এর উন্নত সংস্করণ হতে পারে ‘অ্যাপল গ্লাস’ নামের কোনো গ্যাজেট, যেটা হবে চশমার মতই হালকা এবং যা দিয়ে ভিশন প্রো’র মত সব কাজই করা যাবে। তবে ব্যাপারটা এখনো সম্ভাবনার পর্যায়েই রয়েছে।

এদিকে, অন্তত এখন যা নিশ্চিত করে বলা যায়, তা হল ভিশন প্রো এখনকার বাজারের অন্যান্য হেডসেট এর তুলনায় অনেক উন্নত। বর্তমান বাজারে যেসব হেডসেট রয়েছে, তার মধ্যে ভিশন প্রো’কে টেক্কা দিতে পারে একমাত্র ‘মেটা কোয়েস্ট প্রো’, যেটা মার্ক জাকারবার্গ এর প্রতিষ্ঠান মেটা তৈরি করেছে।

মেটা কোয়েস্ট প্রো’র দামও অ্যাপল ভিশন প্রো’র চেয়ে অনেক কম, মাত্র ৯৯৯ ডলার। তবে এটাও ঠিক যে ‘মেটা কোয়েস্ট প্রো’র তুলনায় বহুদিক থেকেই ভিশন প্রো অনেক উন্নত। শুধুমাত্র আঙুল বা চোখের ইশারায় যেভাবে ভিশন প্রো নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমন সুবিধা এখনকার অন্য কোনো হেডসেটে নেই। এবং এ ধরনের অনেক ফিচার শুধুমাত্র ভিশন প্রো’তেই রয়েছে।

এদিকে মেটা ছাড়াও গুগল, মাইক্রোসফট, লেনোভো, স্যামসাং এবং এইচটিসি’র মত ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠানই ভার্চুয়াল, অগমেন্টেড বা মিক্সড রিয়্যালিটি হেডসেট তৈরি করছে। অদূর ভবিষ্যতে ভিশন প্রো’র সঙ্গে সত্যিকার অর্থে পাল্লা দেয়ার মত কোনো ডিভাইস তারা আনতে পারে কিনা, সেটাই দেখার বিষয় এখন।