কোনো ম্যানেজারই সহজে নিজেকে মাইক্রোম্যানেজার বলে দাবি করতে চাইবেন না। একজন মাইক্রোম্যানেজার তার অধীনে থাকা কর্মীদের প্রতিটা কাজে নাক গলাতে পছন্দ করেন।

নিজের সন্তুষ্টির জন্য অন্যদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়াই তার স্বভাব।

অথচ একটা চাকরি ছেড়ে চলে আসার পেছনে চাকরিজীবীরা সবচাইতে বেশিবার যে কারণটির কথা উল্লেখ করেন সেটি হল— “মাইক্রোম্যানেজার বসের অধীনে কাজ করা।”

হতে পারে আপনিও একজন মাইক্রোম্যানেজার। কিন্তু এখনও সেটা বুঝতে পারেননি। হয়ত আপনার অজান্তেই কলিগরা আপনার অ্যাপ্রোচে অখুশি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন, ফলে তাদের প্রডাক্টিভিটি কমে যাচ্ছে।

আপনি মাইক্রোম্যানেজার কিনা সেটা বোঝার জন্য নিচের প্রশ্ন ও পয়েন্টগুলি খেয়াল করুন। যদি আপনার সাথে মিলে যায় তবে নিজেকে এক মার্ক দিন। সবশেষে, নাম্বার যোগ করে দেখুন আপনার অবস্থান কী দাঁড়ালো।

১. শুধু আপনার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে—অফিসের এমন সব কাজের লিস্ট কি দিন দিন শুধু লম্বাই হচ্ছে? এটা বোঝায় যে আপনার সহকর্মীরা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন যে প্রতিটা ছোটখাটো সিদ্ধান্তের জন্যেও আপনার অ্যাপ্রুভাল লাগে তাদের।

২. আপনার অফিস রুমে আসা প্রতিটা ডকুমেন্টেই আপনার হাতে লেখা নোট থাকে? তার মানে, আপনার কাছে কোনো কিছুই পারফেক্ট মনে হয় না। নিজের মতামত জানিয়ে প্রতিটা জায়গাতে কীভাবে আরো ইম্প্রুভ করতে হবে সেটা জানিয়ে দিতে চান আপনি।

৩. আপনার কলিগরা অন্য কোনো অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে মিটিংয়ে গেলে আপনিও প্রতিবার তাদের সাথে যেতে চান।

৪. আপনার অধীনে থাকা কর্মীরা যেন তাদের বেশিরভাগ অফিশিয়াল ইমেইল আপনাকে ফরোয়ার্ড করে অথবা সেখানে আপনাকে সিসি হিসাবে রাখে, এরকম নির্দেশনা দেওয়া থাকে আপনার। আপনার ইমেইল ইনবক্সে অফিসের মেইলের কারণে প্রায়ই জায়গা ভরে যায়।

৫. প্রায় দিনই আপনাকে অনেক সময় ধরে অফিসে থাকা লাগে, এমনকি ছুটির দিনেও। এছাড়া আপনি ছুটি নেন না বললেই চলে। তার মানে আপনি বিশ্বাস করেন না যে আপনার কাজগুলি আপনার মত ভাল করে আর কেউ করতে পারবে।

৬. কলিগদেরকে করতে দেওয়া প্রতিটি কাজ প্রায়ই আপনাকে নতুন করে করতে হয়। কারণ তাদের কাজ আপনার পছন্দ হয় না।

৭. নতুন স্ট্র‍্যাটেজি ডেভেলপ করার কোনো সময়ই পান না আপনি। কারণ প্রতিদিনকার ছোট ছোট কাজের পেছনে প্রচুর খাটতে হয় আপনাকে। হয়ত আপনার শেষ পারফরম্যান্স রিভিউতে এমনটা বলেও দেওয়া হয়েছিল যে, আপনার স্ট্র‍্যাটেজিক থিংকিং-এ ঘাটতি আছে।

৮. নিজেকে অফিসের বাকি সবার চাইতে স্মার্ট ও বুদ্ধিমান ভাবেন আপনি, কারণ আপনার কাছে মনে হয় তারা অনেক কিছু “বুঝেই উঠতে পারে না” যেগুলি আপনি অনেক সহজে বুঝে ফেলেন। তাদেরকে প্রতিটা কাজ হাত ধরে শিখিয়ে দিতে চান আপনি, যদিও এই কাজ করতে বিরক্ত লাগে আপনার।

মাইক্রো ম্যানেজার
২০১৬ সালে মাইক্রোম্যানেজারদের নিয়ে ‘Medium’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কার্টুন। যেখানে মাইক্রোম্যানেজার তার কর্মী বা সহকর্মীকে বলছেন, ম্যাইক্রোম্যানেজার শব্দ দুটির মধ্যে কোনো হাইফেন হবে না, পুরোটা একসঙ্গে লিখতে হবে।

৯. কাউকে কোনো কিছুর দায়িত্ব দিলেও দেখা যায়, “কী” করতে হবে সেটা তাকে না বলে বরং কাজটা ঠিক “কীভাবে” করতে হবে সেটা বুঝিয়ে দিতেই বেশি সময় নেন আপনি।

১০. মিটিংয়ের আগেও আরেকটা ছোট মিটিংয়ের আয়োজন করেন আপনি। যাতে আপনার কলিগরা সবাই আসন্ন মিটিং নিয়ে প্রস্তুত আছেন কিনা সেটা ভালমত জেনে নেওয়া যায়।

১১. প্রতিটা কাজের নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও প্রগ্রেস রিপোর্ট কাগজে-কলমে তৈরি রাখতে হয় আপনার জন্য।

আরো পড়ুন: তুলনার হাত থেকে মুক্তির উপায়

১২. প্রায় প্রতিটি সহকর্মীর ফোন নম্বর এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আপনার কাছে রয়েছে। কাজের বাইরেও তাদেরকে ইনবক্স করে কাজের খোঁজ নেওয়া আপনার অভ্যাস।

১৩. প্রতি সপ্তাহে এবং প্রতি মাসে কলিগদের প্রগ্রেস রিপোর্ট নিয়ে জমা দিতে হয় আপনার কাছে।

১৪. মিটিং শেষ হবার পর সেখানে গৃহীত সব সিদ্ধান্ত খুঁটিয়ে দেখার জন্য ‘পোস্ট-মর্টেম’ মিটিংয়ের আয়োজন করেন আপনি। নিজের ও অন্যের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয় আপনাকে।

১৫. আপনার কর্মীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে আপনার কাছে আসে না বললেই চলে। কারণ নতুন আইডিয়া শেয়ার করার একচেটিয়া অধিকার শুধু আপনার কাছে।

১৬. আপনার পক্ষ থেকে অন্য কাউকে কখনোই মিটিং অ্যাটেন্ড করতে দেন না আপনি।

১৭. আপনার কলিগরা সবাই কখন কী করছেন সেটা আপনার জানা থাকা লাগে। তাই অন্যদের অফিশিয়াল ক্যালেন্ডার ও শিডিউলও সংগ্রহে থাকে আপনার।

১৮. আপনার অধীনে থাকা কর্মীদের চাকরি ছেড়ে যাওয়ার হার বেশি৷ অফিসের কাজে তাদের এনগেজমেন্ট স্কোরের অবস্থাও বেশ খারাপ। এছাড়া যেসব কলিগ খুব ভাল কাজ করেন, তারা সুযোগ পেলেই অন্য চাকরিতে চলে যান।

এখন, হিসাব করে দেখুন। আপনার নাম্বার যদি ১০ বা তার বেশি হয়, তাহলে আপনি অবশ্যই একজন মাইক্রোম্যানেজার। তার মানে নিজ কলিগদের উপর যথেষ্ট আস্থা নাই আপনার। এ সমস্যার সমাধানে এখনই কাজ শুরু না করলে শীঘ্রই আপনার প্রফেশনাল জীবন স্ট্রেসফুল হয়ে উঠবে। ঊর্ধ্বতন পদে প্রোমোশন পাওয়ার সুযোগও কমে আসবে আপনার।

আর আপনার নাম্বার ৫ থেকে ৯ এর মধ্যে হলে, এমন হতে পারে যে আপনি একজন সাময়িক মাইক্রোম্যানেজারে পরিণত হয়েছেন। অথবা ধীরে ধীরে একজন পূর্ণাঙ্গ মাইক্রোম্যানেজার হয়ে উঠতে পারেন। হয়ত আপনার টিমে নতুন মেম্বারের সংখ্যা বেড়ে গেছে, তাই সবকিছু সামাল দিতে গিয়ে এসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হচ্ছে আপনাকে।

কাজেই এখন থেকেই উদ্যোগ নিয়ে নিজের এ বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন। একটা একটা করে স্বভাব পাল্টাতে থাকুন, দেখবেন কাজ হওয়া শুরু করেছে।

অন্যদিকে, আপনার নাম্বার ১ থেকে ৪ এর ভেতর হলে নিজেকে অভিনন্দন জানান। আপনার মাইক্রোম্যানেজিংয়ের প্রবণতা খুব বেশি না। তারপরও টিম মেম্বারদের কাছ থেকে আপনার কাজের ধরন সম্বন্ধে ফিডব্যাক চাইতে পারেন। পরিচিত অন্যান্য ম্যানেজারের কাছে নিজের সমস্যাগুলি শেয়ার করুন। এই ২-৩ টা অভ্যাস বাদ দিতে পারলেও আপনার পেশাজীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অনুবাদ: স্বাধীন আহমেদ