অনেক সময় আপনার হয়ত ব্রাশ করতে ইচ্ছা করে না। অথবা আপনি ব্রাশ করার ব্যাপারটিকে অবহেলা করে বাদ দিয়ে যান। আবার অনেক সময় কাজ থেকে ফিরতে রাত হওয়ায় আপনি ব্রাশ করার কথা ভুলে যান। আর যখন দাঁতের সমস্যা দেখা দেয় তখন আপনার মনে হয় ডেন্টিস্টের কথা।
দিনে আসলে তিনবার ব্রাশ করা দরকার। কিন্তু আপনি দিনে দুইবারও করতে পারেন, একবার সকালে এবং একবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। প্রতি ছয় মাসে একবার বা বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে দাঁত চেক-আপ করানো উচিৎ। ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে দাঁতব্রাশ শুধু আপনার সুন্দর হাসি বা দাঁতের জন্যই জরুরী নয়, আপনার শারীরিক সুস্থতার জন্যও দাঁতব্রাশ খুব দরকারী একটি বিষয়।
এখানে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করার কিছু উপকারীতা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
১. কিছু নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে দাঁতব্রাশ না করার সাথে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগগুলির সম্পর্ক আছে। এই রোগগুলি হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো ভিটামিন বা পুষ্টি উপাদানের অভাব। পরীক্ষা করে দেখা গেছে নিয়মিত দাঁতব্রাশ করলে এই রোগের ঝুঁকি কমে।
২. নারীদের অপরিণত সন্তান জন্মদান রোধ করে
দাঁতব্রাশ নারীদের গর্ভাবস্থার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান জন্ম দেওয়া, গর্ভপাত হওয়া, কম ওজন সম্পন্ন সন্তান জন্ম দেওয়া ইত্যাদির ঝুঁকি কমায়। চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষণায় দেখা গেছে যাদের মাড়ির রোগ আছে সেসব নারীদের অপরিণত সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. দাঁতব্রাশ ডায়েটিং এ সহায়তা করে
ডায়েটিং-এ দাঁতব্রাশের একটি মানসিক প্রভাব হল, ব্রাশ করার পর মনে হয় খাওয়া-দাওয়া শেষ। ফলে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে পর্যন্ত আপনাকে আর কিছু না খাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করে দাঁত ব্রাশ। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু খেলে সেই ক্যালরি আর ব্যবহৃত হয় না, ফলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।
আর একটি মজার ব্যাপার হল, আপনি যদি দিনে তিনবার দুই মিনিট করে ব্রাশ করেন তাহলে তা বছরে আপনাকে ৩৫০০ ক্যালরি ঝরাতে সাহায্য করে।
৪. স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধ করে
ব্রাশ অ্যালঝেইমার’স ডিজেসের মত স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া রোগ প্রতিরোধ করে। ২০১০ সালে নিউইয়র্কের একটি ক্লিনিক্যাল স্টাডিতে দেখা গেছে ২০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মাড়ির অসুখ হয়।
৫. ব্রাশ না করা কোনোভাবেই সেক্সি ব্যাপার নয়
দাঁতব্রাশ না করার সঙ্গে পুরুষের যৌন অক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। দাঁতব্রাশ না করলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বা ব্যাড ব্রেথ হয়, আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যাড ব্রেথ থেকে ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থিত না হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০১১ তে করা একটি ব্রিটিশ গবেষণায় দেখা গেছে মারাত্মক ইরেক্টাইল ডিসফাংশন আছে এমন প্রতি পাঁচজন পুরুষের চারজনেরই মাড়ির অসুখ রয়েছে।
মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাপারে সাধারণত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে, যে ব্যাকটেরিয়া মাড়ির অসুখ ঘটায় সেটি মুখের ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া আঠালো ধরনের। ব্রাশ না করলে এই ব্যাকটেরিয়া রক্তকণিকায় প্রবেশ করে, এবং পরবর্তীতে পুরুষের জননাঙ্গের রক্তনালী সংকুচিত করে ফেলে। আর রক্তনালী সংকুচিত হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে জননাঙ্গ কঠিন হতে যে পরিমাণ রক্ত প্রয়োজন তা সেখানে বাহিত হয় না।
ইসরায়েলের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্রাশ করলে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ে। যেসব পুরুষের মাড়ির সমস্যা রয়েছে বা দাঁতের অসুখ রয়েছে তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা কম হয়।
সুতরাং সাদা এবং ঝকঝকে দাঁতের জন্য দিনে অন্তত দুইবার ব্রাশ করতে ভুলবেন না।