অর্ধেক পোকা, অর্ধেক মেশিন—উদ্ধার করতে আসছে রোবোরোচ!
গবেষকরা বলছেন, বিপজ্জনক জায়গাগুলিতে পৌঁছানোর জন্য এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে রিমোট-কন্ট্রোল সাইবর্গ-পোকা ব্যবহার করা যেতে পারে।
রুবেন একটি তেলাপোকা। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একে ধরা হয়েছিল এবং সাইবর্গে পরিণত করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত রুবেন পালাতে সক্ষম হয়। এবং তার রোবোটিক ক্ষমতা ভালর জন্যেই ব্যবহৃত হয়েছে।
এটি রোবোরোচ নামের একটি কানাডিয়ান টিভি সিরিজের গল্প। বাচ্চাদের জন্য নির্মিত এ সিরিজটি ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে দুই সিজন ধরে চলে।
দৃশ্যত এ ঘটনা এখন বাস্তব-জীবনের ঘটতে যাচ্ছে। জাপানের RIKEN ইনস্টিটিউটের গবেষকদের একটি দল সত্যিকার রোবোরোচ তৈরি করেছে। সিরিজটি আদৌ এই গবেষণাকে অনুপ্রাণিত করেছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে রুবেনের মত এই রোবো-বাগগুলিকে স্বাধীন ইচ্ছার সাথে কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়নি।
সাইবর্গ পোকাগুলিকে বাস্তবিক কাজে ব্যবহার করার জন্য দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ যোগ্য করে বানাতে হবে। গবেষকদের মতে, এটি শুনতে যতটা সহজ, তার থেকে কাজটা করাটা অনেক কঠিন ছিল।
ধারাবাহিক চেষ্টার পর অবশেষে, তারা একটি বিশেষ উপায় বের করতে পেরেছেন। রিচার্জেবল ব্যাটারি এবং এর সাথে সংযুক্ত সোলার সেল তেলাপোকাটির পিঠের ওপর একটি ছোট ব্যাকপ্যাকের মত করে বসিয়ে দেন তারা। এবং সোলার সেলটির মাধ্যমে একটি ওয়ারলেস কন্ট্রোল মডিউলের সাথে সংযোগ তৈরি করেন। ফলে তারা সহজেই তেলাপোকাটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
“মূল বিষয় হচ্ছে ব্যাটারিটা যথেষ্ট চার্জ করে রাখা, কেননা হঠাৎ করেই নিয়ন্ত্রণ হারানো কিছু সাইবর্গ তেলাপোকার দল চারিদিকে ঘুরে বেড়াক, সেটা নিশ্চয়ই কেউ চায় না”, RIKEN থেকে এমনটিই বলা হয়। এবং তারা সম্ভবত ভুল কিছু বলছেন না।
গবেষণার জন্য মাদাগাস্কান তেলাপোকা ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণাটি ফ্লেক্সিবল ইলেকট্রনিক্স নামের একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। তেলাপোকাগুলি প্রায় ৬ সেমি লম্বা। এদের শরীরে প্রশস্ত পৃষ্ঠ রয়েছে। দূর থেকে তাদের পা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এই পৃষ্ঠে সংযুক্ত করা যায়। এভাবে তেলাপোকাগুলিকে প্রয়োজন অনুসারে বাম বা ডান দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, এ সমস্ত যান্ত্রিকতা বহন করা সত্ত্বেও, সাইবর্গ তেলাপোকা অবাধে চলাফেরা করতে পারে। এটি সম্ভব হয়েছে এর ডিজাইনে ব্যবহৃত আলট্রাথিন ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য নমনীয় উপকরণগুলির কারণে।
এই ডিজাইনে সব থেকে দৃঢ় অংশটি তেলাপোকার বুকের অংশে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্থিরভাবে স্থাপন করে রাখা যেতে পারে।
“তেলাপোকার স্বাভাবিক চলাফেরার সময় বুক ও পেটের ওঠানামা ও আকৃতির পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করে, বুকে তুলনামূলক শক্ত ও নমনীয় উপাদানগুলির একটি হাইব্রিড ইলেকট্রনিক সিস্টেম এবং পেটে অতিরিক্ত নরম ডিভাইস স্থাপন করাকে সাইবর্গ তেলাপোকার জন্য কার্যকর নকশা বলে মনে হচ্ছে,” এ গবেষণার প্রধান গবেষক কেনজিরো ফুকুদা বলেন।
যেহেতু চলাচলের সময় পেটের আকৃতির পরিবর্তন শুধুমাত্র তেলাপোকার একারই হয় না, তাই এই একই নকশাকে অন্যান্য পোকার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া যেতে পারে। যেমন সিকাডাস-এর মত উড়ন্ত দ্রুতগামী কোনো পোকার ক্ষেত্রে।
এর মধ্যে টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা মাকড়সার দেহকে যান্ত্রিক গ্রিপার হিসেবে পুনর্নির্মাণ করেছেন। এখানে মাকড়সাটি ছিল মৃত। গবেষণার ওই ক্ষেত্রের নাম তারা দিয়েছিলেন ‘নেক্রোবোটিক্স’। কিন্তু এই পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে জীবন্ত পোকামাকড়।