ইউরোপিয়ানদের আমেরিকা আবিষ্কারের পর থেকেই প্রচুর মানুষ ইউরোপ সহ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে আমেরিকায় আসা শুরু করে। ভাগ্যের সন্ধানে আমেরিকার নতুন নতুন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করতে থাকে তারা।

শুধু কৃষিজমি বা ব্যবসার জন্যেই নয়, বরং মাটির নিচে থাকা স্বর্ণের খণ্ড, টুকরো কিংবা স্বর্ণের গুড়া খুঁজতে গিয়েও বহু মানুষ নতুন অঞ্চলে গিয়ে যৌথভাবে থাকা শুরু করেছে।

১৮৪০-এর শেষ ও ৫০-এর দশকের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করে। আর সেটা ঘটে মাটির নিচে সোনার টুকরা খুঁজে পাওয়ার আশাতে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট কোস্টের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ওয়েস্ট কোস্টে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমায় লক্ষ লক্ষ মানুষ।


ফারহান মাসউদ


যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণের ঐতিহাসিক সেই পরিভ্রমণকে বলা হয় ‘ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড রাশ’। ১৮৪৯ থেকে ১৮৫২, মাত্র ৩ বছরের মাথায় ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাডা পর্বত থেকে যত স্বর্ণ সংগ্রহ করা হয়, তার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার।

১৯ শতক জুড়ে ভাগ্যের আশায় ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়াও কলোরাডো, নেব্রাস্কা, কানসাস বা আলাস্কার মত নানা অঞ্চলে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে আমেরিকানরা।

কিন্তু আমেরিকানদের ভাগ্য বা অ্যাডভেঞ্চারের পিপাসা যে আধুনিক সময়ে এসেও ফুরিয়ে যায়নি, তার প্রমাণ পাওয়া যায় দেশটির ইতিহাসের বৃহত্তম গুপ্তধন খোঁজার অভিযানের গল্প থেকে।

গল্পের শুরু উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম পর্বতমালা রকি মাউন্টেনে। উল্লেখ্য, ১৯ শতকে এই রকি পর্বতমালার আশেপাশে থাকা বিভিন্ন রাজ্যে খনিজ স্বর্ণ পাওয়ার আশায় ছুটে এসেছিল অনেকে।

একবিংশ শতাব্দীতেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে এবারের গুপ্তধনের উৎস প্রাকৃতিক নয়। বরং একজন মানুষের লুকিয়ে রাখা গুপ্তধনের বাক্স খুঁজতেই লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছিল রকি পর্বতমালায়। বাক্সের মধ্যে অন্যান্য অনেক কিছুর পাশাপাশি ‘ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড রাশ’-এর সময়ে সংগ্রহ করা কিছু স্বর্ণের গুড়াও ছিল।

টানা ৩,০০০ মাইল বা ৪,৮০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই পাহাড়সারির এক প্রান্ত কানাডার পশ্চিম অঞ্চলে, আরেক প্রান্ত আমেরিকার দক্ষিণের রাজ্য নিউ মেক্সিকোতে। এর মধ্যেই কোথাও, দুর্গম কোনো স্থানে দীর্ঘ ১ দশক ধরে লুকিয়ে ছিল ব্রোঞ্জের তৈরি সেই গুপ্তধনের বাক্স।

বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ৭ গুণ বড় রকি পর্বতমালার আয়তন ৯,৯১,৬৯১ বর্গকিলোমিটার। বিশাল এই এলাকাজুড়ে গুপ্তধনের বাক্সের সন্ধানে চষে বেড়িয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। হতভাগ্য কয়েকজন মারাও গেছে।

বাক্সটির মালিক ছিলেন আমেরিকার নাগরিক ফরেস্ট ফেন। তখন তার বয়স ছিল ৮০ বছর। পেশাজীবনে আর্ট ডিলার এবং লেখক ফরেস্ট ফেন ২০০৯ কিংবা ২০১০ সালের মধ্যে কোনো এক সময়ে এই গুপ্তধনের বাক্স লুকিয়ে রেখে আসেন রকি মাউন্টেনে।

২০১০-এ প্রকাশিত হয় তার স্মৃতিকথামূলক বই ‘দ্যা থ্রিল অফ দ্যা চেস’।

বইয়ের একেবারে শেষে তিনি সংযুক্ত করেন নিজের রচিত ৬ স্তবকে বিভক্ত একটি সাংকেতিক কবিতা। ফরেস্ট ফেন লেখেন, কবিতায় প্রচ্ছন্নভাবে থাকা ৯টি সূত্র বা ক্লু অনুসারে কেউ খুঁজলে পেয়ে যাবে তার গুপ্তধনের বাক্স। ঘোষণা করা হয়েছিল ফরেস্ট ফেনের সংগৃহীত প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীতে বোঝাই সেই বাক্সের বাজারমূল্য ২ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

যেমন, ব্রোঞ্জের সেই বাক্সটাই দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি। অর্থাৎ বাক্সের ভেতরে থাকা মূল্যবান সম্পদের মত বাক্সটিরও ছিল প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য। মুরগির ডিমের সমান স্বর্ণখণ্ড, ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি স্প্যানিশ অলঙ্কার, চীনের মিং রাজবংশের সময় নির্মিত জেড পাথরের ভাস্কর্য কিংবা প্রাচীন স্বর্ণমুদ্রার মত বিচিত্র সব পুরাতাত্ত্বিক সম্পদে বোঝাই ছিল গুপ্তধনের বাক্সটি।

মূল্যবান এই গুপ্তধনের বাক্সের শেষ পরিণতি জানার আগে জেনে নেওয়া যাক ফরেস্ট ফেন-এর জীবন সম্পর্কে।

কে এই ফরেস্ট ফেন?
ফরেস্ট ফেন-এর জন্ম ১৯৩০ সালের ২২ আগস্ট। বেড়ে উঠেছেন টেক্সাস রাজ্যের টেম্পল শহরে। ছোট থাকতে পরিবারের সঙ্গে তিনি অনেকবার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে ঘুরতে গিয়েছেন।

৮,৯৯১ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেশিরভাগই ওয়াইয়োমিং রাজ্যে অবস্থিত। এবং এর মধ্য দিয়ে চলে গিয়েছে রকি পর্বতমালা। ছোটবেলার সেসব স্মৃতি তিনি ‘দ্যা থ্রিল অফ দ্যা চেস’ বইয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।

গ্রীষ্মকাল এলেই পরিবারের সবার সঙ্গে টেক্সাস থেকে ১,৬০০ মাইল দূরের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে সময় কাটিয়ে আসতেন। প্রায় ৪৫ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে বাসা থেকে সেখানে যেতে হত। ভাইবোনদের সঙ্গে তিনি সেখানে মাছ ধরতেন, পাহাড়ে উঠতেন আর জঙ্গলের গহীনে ঘুরে বেড়াতেন। সে সময় বনের মধ্যে পথ হারিয়ে গেলে একা একা পথ খুঁজে ফিরে আসার বিশেষ পদ্ধতির কথাও লিখেছেন তার বইয়ে।

ফরেস্ট ফেন তার বইয়ে লেখেন, সাংকেতিক কবিতাটির পাশাপাশি তার ব্যক্তিজীবনের অন্যান্য স্মৃতিকথাও গুপ্তধন খোঁজায় আগ্রহীদের কাজে লাগবে। ফলে গুপ্তধন শিকারিদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ধরেই নিয়েছিলেন গুপ্তধন লুকিয়ে রাখা হয়েছে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের কোথাও।

প্রাথমিক শিক্ষার জন্যে তিনি যে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেখানকার প্রিন্সিপাল ছিলেন ফরেস্ট ফেনের বাবা। পড়াশোনায় খুব বেশি মনযোগী ছাত্র ছিলেন না ফরেস্ট। বরং ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেন অনেক।

উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনার জন্যে তিনি আরেকটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন আর সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় পেগি জিন নামের এক তরুণীর। পেগি জিনকেই পরে বিয়ে করেন ফরেস্ট ফেন।

১৯ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালে বিমানচালক হিসেবে ফরেস্ট ফেনের প্রশিক্ষণ শেষ হলে তিনি বিয়ে করেন তার হাইস্কুলের প্রেমিকাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে পাইলট হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ফরেস্ট ফেন ইউরোপ আর এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেছেন। বিমানের পাশাপাশি হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণও নেন তিনি।

জঙ্গল থেকে উদ্ধারের পর বিমান বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ফরেস্ট ফেন

আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কোল্ড ওয়ার বা শীতল লড়াই চলাকালীন তিনি জার্মানির ওপর দিয়ে পারমাণবিক বোমাবাহী বিমান উড়িয়েছেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন যুদ্ধ করেছেন ভিয়েতনামে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলার সময় তার বিমান দুইবার ভূপাতিত হয়, এবং দুইবারই তিনি বড় ধরনের জখম ছাড়াই বেঁচে যান। শেষবার তার বিমানে গুলি লাগার পর ভিয়েতনামের গহীন জঙ্গলে প্যারাসুটের মাধ্যমে অবতরণ করেন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্যে বেশ কিছু পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন ফরেস্ট ফেন।

বিমান বাহিনীতে চাকরির সময় তিনি বিভিন্ন নিদর্শনীয় বস্তু সংগ্রহ করতেন। এবং অবসর নেওয়ার পরও শিল্পকর্ম, ভাস্কর্য কিংবা মৃৎপাত্র সহ ঐতিহাসিক নিদর্শন সংগ্রহ চালিয়ে যান এবং এক পর্যায়ে এই কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কথিত আছে, তার সংগ্রহে ফারাও তুতানখামেন-এর সমাধিতে থাকা একটি মমি করা বাজপাখি ছিল।

নিউ মেক্সিকো রাজ্যের রাজধানী সান্টা ফে’তে ১৯৭৩ সালে গড়ে তোলেন তার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা ‘ফেন গ্যালারিজ লিমিটেড’।

সেখানে বিভিন্ন ধরনের নেটিভ আমেরিকান শিল্প, পেইন্টিং, ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম বিক্রি করতেন তিনি। ইতালীয় শিল্পী আমেদেও মোদিগ্লিয়ানি থেকে শুরু করে ক্লদ মনে বা এডগার দেগাস-এর মত বিখ্যাত সব শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্মের নকল সংস্করণ বিক্রি করতেন।

আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি জন এফ. কেনেডির স্ত্রী থেকে শুরু করে স্টিভেন স্পিলবার্গের মত বিখ্যাত হলিউড তারকা সহ অনেকের কাছেই ফরেস্ট ফেন তার সংগ্রহশালার জিনিস বিক্রি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এক সূত্রের তথ্য অনুসারে ফেন গ্যালারিজ লিমিটেড থেকে বছরে তিনি প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার আয় করতেন।

১৯৮৮ সালে ফরেস্ট ফেনের কিডনিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সে সময় জীবন সম্পর্কে তার মধ্যে নতুন ধারণা জন্ম নেয়। সারাজীবনই তিনি নিজেকে অ্যাডভেঞ্চার পিপাসু একজন মানুষ হিসেবে কল্পনা করে এসেছেন। অথচ মৃত্যুর পর তাকে কয়জন মনে রাখবে, এমন প্রশ্ন তার মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করে।

ফরেস্ট ফেন ধরেই নিয়েছিলেন সে যাত্রায় তিনি ক্যান্সারে মারা যাবেন। ফলে দুর্গম জঙ্গল আর পাহাড়ের মধ্যে অজানা কোথাও তিনি নিজের মৃতদেহ দাফন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং মৃতদেহের সঙ্গে একবাক্স গুপ্তধন রাখার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকটা মিশরের ফারাও সম্রাটদের মতই।

তার আশা ছিল কোনো পর্বতারোহী একদিন পথ চলতে চলতে হঠাৎ তার কবরের সঙ্গে থাকা গুপ্তধনের সন্ধান পাবে।

তবে দেহের অন্যান্য অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার আগেই সেবার চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠেন ফরেস্ট ফেন। এদিকে প্রৌঢ় বয়সে এভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার পরও গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার পরিকল্পনা একেবারে মাথা থেকে সরিয়ে দেননি তিনি। নিজের মৃতদেহের সঙ্গে যেই বাক্সটা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা সযত্নে নিজের কাছে রেখে দেন।

ফরেস্ট ফেনের জীবন আগের মতই চলতে থাকে।

এদিকে নিজের সংগ্রহশালায় থাকা বিভিন্ন বস্তু কতটা বৈধভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, তা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে ফরেস্ট ফেনকে বেশ কয়েকবার।

বিশেষ করে ২০০৯ সালে এফবিআই তার সংগ্রহশালায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে কিছু জিনিসপত্র জব্দ করে। ফরেস্ট ফেনের নামে কোনো অভিযোগ আনা না হলেও এই মামলার অভিযুক্ত দুজন ব্যক্তি সে বছর আত্মহত্যা করে। ফরেস্ট ফেন এফবিআইকে তাদের এই আত্মহত্যার জন্যে দায়ী করেন।

‘দ্যা থ্রিল অফ দ্যা চেস’ বইয়ের প্রচ্ছদ

হয়ত চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাও ফরেস্ট ফেনকে কিছুটা নাড়া দিয়ে থাকবে। কেননা এর পরের বছরই তিনি প্রকাশ করেন তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক বই ‘দ্যা থ্রিল অফ দ্যা চেস’। ক্যান্সার ধরা পড়ার প্রায় ২২ বছর পর এই বইয়ের মাধ্যমেই তিনি গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।

বাক্সে বন্দি মোট ৪২ পাউন্ড বা ১৯ কেজি ওজনের এই গুপ্তধনের অবস্থান প্রকাশ করেন ৯টি সূত্র বা ক্লু সংবলিত সাংকেতিক কবিতার মাধ্যমে। ‘দ্যা থ্রিল অফ দ্যা চেস’ বইয়ের একেবারে শেষে যুক্ত ছিল কবিতাটি। এবং কেউ যাতে মনে না করে শুধু বই বিক্রির জন্যে তিনি এই কাজ করছেন, সেজন্যে ফরেস্ট ফেন এই বইয়ের লভ্যাংশ গ্রহণ করবেন না বলেও ঘোষণা দেন।

কী সেই কবিতা ?
উৎসুক পাঠকদের জন্যে ফরেস্ট ফেন-এর ৬ স্তবকের কবিতার বাংলা অনুবাদ সংযুক্ত হল:

একলা আমি গিয়েছি সেখানে
সঙ্গে আমার দৌলত ঢের,
গোপনে রাখতে পারি যেখানে,
আর ইঙ্গিত দিই নয়া-প্রাচীন সম্পদের।

উষ্ণ পানি থামে যেথায়, সেখান থেকে ছোটো
পরে গিরিখাত ধরে নিচে বুঝেশুনে আগাও,
বেশি দূর না, তবে মনে হবে দূর যদি হাঁটো।
এবার ব্রাউনের ঘরের নিচে ঢুকে যাও।

পরেরটুকু ভীরুরা পারবে না হতে পার,
শেষটা আসছে ঘনিয়ে;
খাঁড়ি পাড়ি দিতে গিয়ে পাবে না তুমি দাঁড়,
শুধু ভারি বোঝা আর উঁচু ঢেউয়ে।

যদি বিজ্ঞ হও আর খুঁজে পাও শিখা,
অভিযানের টানতে ইতি, নিচের দিকে দ্রুত তাকাও,
অবাক না হয়ে, না করে অপেক্ষা,
বাক্সটা নিয়ে হাতে শান্তিতে চলে যাও।

সবাই যাতে খুঁজে বেড়ায় তাই
সম্পদ আমার কেন যাচ্ছি রেখে?
ঠিকই জানি এর উত্তরটাই
হয়েছি পরিশ্রান্ত আর দুর্বল দেখে।

তাই শোনো সবাই দিয়ে মন,
সার্থক হবে তোমার শ্রম ও যাতনা।
যদি হও সাহসী আর চিনতে পারো গহীন বন
দিলাম তোমায় এ সম্পদের মালিকানা।

.
অনুবাদে মূল কবিতার বিরামচিহ্ন একইরকম রাখা হয়েছে, ছন্দের প্যাটার্ন বা ‘রাইম স্কিম’-এর সাথে মিল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছে কবিতার মূল বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রাখার।

তবে ফরেস্ট ফেন জানিয়েছিলেন, গুপ্তধন পিপাসুদের এই কবিতার অর্থ বের করার জন্যে নিজেদেরই ব্যাখ্যা খুঁজে নিতে হবে।

ফলে মূল ইংরেজি কবিতার বিভিন্ন শব্দের নতুন নতুন অর্থ আর ব্যাখ্যা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। মূলত কবিতার কোন অংশ বাস্তবের কোন স্থানের সাথে মিলে যায়, সেটাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন গুপ্তধনে উৎসাহীরা।

বইয়ে যেভাবে মুদ্রিত ছিল ফরেস্ট ফেন-এর সাংকেতিক কবিতা

যেমন, ‘উষ্ণ পানি’ কোথায় থামে কিংবা ‘ব্রাউনের ঘর’ দিয়ে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে, তা নিয়ে বহু মতভেদ আছে। আর এসব বিষয় নিয়ে রেডিট, ফেসবুক বা কোরার মত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিস্তর আলোচনা আর তর্ক-বিতর্ক হয়েছে।

এভাবে লেখকের উদ্দেশ্য আর পাঠকদের খুঁজে বের করা ব্যাখ্যা মিলিয়ে কবিতাটির প্রচুর অর্থ তৈরি হয়েছে। কবিতায় দ্ব্যর্থবোধক বা দুর্বোধ্য নানান শব্দের বিভিন্ন রকমের ব্যাখ্যা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন অনেকে।

ফরেস্ট ফেনের ভাষায়, “যদি কোনো ব্যক্তি কবিতাটি বার বার পড়ে এবং কবিতার প্রথম কয়েকটি সূত্রের পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হয়, তবে সে হয়ত গুপ্তধন খুঁজে পাবে। এটা সহজ নাও হতে পারে, কিন্তু একেবারেই অসম্ভব না।”

গুপ্তধন খোঁজাখুঁজি
সাধারণ মানুষ যেন গুপ্তধনের লোভে গহীন অরণ্যে ঘুরে বেড়ায়, এমনটা ফরেস্ট ফেন সবসময়ই চাইতেন। ২০১০ সালে তার বই প্রকাশের পর থেকেই শত শত মানুষ এই গুপ্তধন খোঁজা শুরু করে।

সংখ্যাটা দ্রুতই হাজারের কোঠায় গিয়ে পৌঁছায়। তবে ৩০ কোটি মানুষের বিশাল দেশ আমেরিকায় হাজারের ঘরে থাকা যেকোনো মানুষের সংখ্যা খুব বেশি না। ২০১১ এবং ১২ সালে নতুন করে আরো অনেকে এই গুপ্তধনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আমেরিকার প্রায় প্রতিটা রাজ্য থেকেই মানুষ রকি মাউন্টেনের বিভিন্ন প্রান্তে গুপ্তধন খোঁজা শুরু করে।

গুপ্তধনের এই উন্মাদনার পালে হাওয়া আসে ২০১৩ সালে। সে বছর ‘টুডে শো’ নামের আমেরিকায় জনপ্রিয় এক টক শো’তে ফরেস্ট ফেনকে দেখানো হয়। ফলে হঠাৎ করেই বহু মানুষ ‘ফেন ট্রেজার’ খোঁজায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।

সাধারণ মানুষের কাছে তখন ‘ফেন ট্রেজার’ নামেই পরিচিতি পায় এই গুপ্তধন।

যাহোক, ফরেস্ট ফেন নিজেই প্রতিদিন গুপ্তধনের ব্যাপারে আগ্রহীদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ চিঠি আর ই-মেইল পেতে থাকেন। এই জনপ্রিয়তা থেকেই এরপরের কয়েক বছর ধরে একনাগাড়ে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে ফরেস্ট ফেনের ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ শুরু হয়। নির্মিত হয় একাধিক ডকুমেন্টারি।

‘গোল্ডেন ফেন’ সহ বিভিন্ন নামে ফরেস্ট ফেন সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এক ধরনের কাল্ট পরিচিতি তৈরি হয় তার। বহু মানুষ ফরেস্ট ফেন ও তার গুপ্তধনের ব্যাপারে ব্লগ এবং ফ্যান পেজ তৈরি করা শুরু করে।

‘ফেনবোরি’ নামের একটি বার্ষিক উৎসবও চালু হয় তার কীর্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, গবেষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা গৃহিণী থেকে শুরু করে বেকার পর্যন্ত নানান পেশার মানুষ ফেন ট্রেজার খোঁজা শুরু করেন। কেউ সাময়িকভাবে, দুয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্যে, কেউ আবার চাকরি-ব্যবসা ছেড়েছুড়ে গুপ্তধন খুঁজতে বেরিয়ে যান যতদিন না পাওয়া যায়, ততদিনের জন্যে। অনেকে নিজের মূল্যবান সব সম্পত্তি বিক্রি করে পেশাজীবন বাদ দিয়ে ফেন ট্রেজারের সন্ধানে ঘর ছাড়েন।

মোটকথা, বহু মানুষের মধ্যেই ফেন ট্রেজারের উন্মাদনা ভর করে। ঠিক কত মানুষ এই গুপ্তধন খুঁজতে বেরিয়েছে, সেই সংখ্যা হিসাব করা কঠিন। তবে এক ভাষ্যমতে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ গুপ্তধনের সন্ধানে ঘর ছেড়েছিল।

এসব মানুষের মধ্যে অনেকেই এর আগে কখনো গহীন অরণ্যের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করেনি। ফলে লোকালয় থেকে বহু দূরে ঘন জঙ্গলের মাঝে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে অনেক গুপ্তধন অনুসন্ধানী মানুষেরাই নিজেদের সার্থক মনে করেছেন। গুপ্তধন খুঁজে না পেলেও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা অনেকের মনেই দাগ কেটে রেখে গেছে আজীবনের জন্যে।

মুদ্রার আরেক পিঠ
ফরেস্ট ফেন কিংবা তার লুকানো গুপ্তধন খুঁজতে বেরুনো মানুষদের অভিজ্ঞতা যে সবসময়ই ভাল ছিল, এমন না।

বিভিন্ন সময়ে ফরেস্ট ফেন-এর কাছে হুমকি-ধামকি জানিয়ে মেসেজ বা ফোনকল আসত। গুপ্তধনের আসল ঠিকানা জানার জন্যে তার বাড়ির আশেপাশে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। এমনকি, বাড়িতে হামলাও হয় কয়েকবার।

বিশেষ করে ২০১৮ সালে এক ব্যক্তি ফরেস্ট ফেন-এর বাসায় অনুপ্রবেশ করে। ফেন-এর কন্যা লোকটির দিকে বন্দুক তাক করে পুলিশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে।

গুপ্তধন শিকারিদের মধ্যেও কয়েকজন ফেন ট্রেজার খোঁজার সময় মারা যায়। এরমধ্যে প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। র‍্যান্ডি বেলিউ নামের ৫৪ বছর বয়সী এক লোক নিউ মেক্সিকো রাজ্যের ব্যাককান্ট্রি নামের এক এলাকার জলাশয়ে ভেলায় চড়ে গুপ্তধন খুঁজতে বের হন। এরপর থেকে কয়েকমাস নিখোঁজ থাকার পরে জুলাই মাসে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

র‍্যান্ডির মৃতদেহ পাওয়ার পরে তার সাবেক স্ত্রী ঘোষণা দেন গুপ্তধনের কাহিনী পুরোটাই ফরেস্ট ফেনের ধাপ্পাবাজি। বাস্তবে এমন কোনো গুপ্তধন নেই।

অবশ্য এ ধরনের দাবি ২০১০ সাল থেকেই করে আসা হচ্ছে। শুরু থেকেই বহু মানুষ দাবি করেছেন, ফরেস্ট ফেন শুধুমাত্র জনপ্রিয় হওয়ার জন্যে স্টান্টবাজি করছেন।

তবে ফেন ট্রেজার-এ অবিশ্বাসীদের তুলনায় বিশ্বাসীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকবার ফরেস্ট ফেনকে অনুরোধ করেছেন গুপ্তধনের এই উন্মাদনার ইতি টানতে। বিশেষ করে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর পর আরো কয়েকজন গুপ্তধন খুঁজতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফরেস্ট ফেনের সমালোচনা শুরু করেন। কলোরাডো, ইউটা বা ইলিনয়-এর মত বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসব মানুষের লাশ পাওয়া যায়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমালোচকদের কথায় গুরুত্ব দেননি ফরেস্ট ফেন। আগের মতই চলতে থাকে গুপ্তধন খোঁজার অভিযান।

গুপ্তধনের সন্ধান ও ফরেস্ট ফেনের মৃত্যু
২০২০ সালের ৬ জুন বহুল আলোচিত ফেন ট্রেজার খুঁজে পায় জ্যাক স্টুয়েফ নামক ৩২ বছর বয়সী মেডিকেলে পড়াশোনা করা এক ছাত্র। সাথে সাথে জ্যাক বাক্সটির ডালা খুলে একটি ছবি তোলেন, যেটা পরবর্তীতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।

গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার পর জ্যাক আলোচনা করে ফরেস্ট ফেনের সঙ্গে এবং দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন ফেন ট্রেজারের আসল জায়গার কথা কাউকে জানানো হবে না। অর্থাৎ, ঠিক কোথায় গুপ্তধন লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, সেটা প্রকাশ করা হবে না।

বিভিন্ন কারণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন। তবে গুপ্তধন শিকারিদের মধ্যে যারা বছরের পর বছর ধরে এর পেছনে নিজেদের সময় ও শ্রম দিয়েছেন, তারা এই সিদ্ধান্তে হতাশ হন।

যেই ধাঁধার সমাধান করতে এত পরিশ্রম করতে হয়েছে, সেই ধাঁধার সমাধান কীভাবে করলেন জ্যাক, তা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ আর সংশয় দানা বাঁধতে থাকে। কেউ দাবি করতে থাকেন চাতুরি করে ফরেস্ট ফেনের কাছ থেকে গুপ্তধনের অবস্থান জেনে নিয়েছেন জ্যাক। কেউ আবার বলতে থাকেন ফরেস্ট ফেন অন্যায়ভাবে জ্যাককে সাহায্য করেছেন গুপ্তধন খুঁজতে।

এভাবে তাদেরকে প্রতারক ও জোচ্চোরের মত বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করা শুরু হয়। তাদেরকে হুমকিও দেওয়া শুরু করেন অনেকে।

যারা এতদিন গুপ্তধন খোঁজার জন্যে ফরেস্ট এর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছিলেন, তারাও বেঁকে বসেন। ফরেস্ট ফেনের সঙ্গে তারা ভিন্ন সুরে কথা বলা শুরু করেন।

এ সবকিছুই ফরেস্ট ফেন-এর মনোবল ভেঙে দেয়। ১০ বছর ধরে যে বিষয়টা ঘিরে তিনি মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ছিলেন, সেটার কারণেই তখন লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন।

মোটকথা, ফরেস্ট ফেনের পরিবার ও কাছের বন্ধুদের মতে, গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার পর থেকে ফরেস্ট ফেনের দিনকাল ভাল যাচ্ছিল না। বিভিন্ন কারণে তিনি মনমরা হয়ে থাকতেন।

যে কারণেই হোক, ফেন ট্রেজার খুঁজে পাওয়ার মাত্র ৩ মাসের মধ্যে, সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে মারা যান ফরেস্ট ফেন।

গুপ্তধনের নিলাম ও চলমান অভিযান
জ্যাক স্টুয়েফ জানান, মেডিকেলে পড়াশোনা করার জন্যে তাকে বেশ মোটা অঙ্কের ঋণ নিতে হয়েছিল। ‘স্টুডেন্ট লোন’ নামের এই ঋণ আমেরিকার উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ প্রচলিত ব্যাপার। জ্যাক তাই এসব গুপ্তধন নিলামে বিক্রি করে ঋণ শোধ করার সিদ্ধান্ত নেন।

২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে এই নিলামের আয়োজন করা হয়।

গুপ্তধনের বাক্সে অন্যান্য অনেক কিছুর পাশাপাশি আমেরিকা, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের ২৬৫টি স্বর্ণমুদ্রা ছিল। এছাড়াও ছোটবড় মিলিয়ে ১০০’র কাছাকাছি স্বর্ণখণ্ড ছিল। ৩ হাজার বছরের পুরনো মায়া সভ্যতার সময়কার স্বর্ণের নেকলেস, নাকফুল, সোনার তৈরি ব্যাঙের ভাস্কর্য, স্বর্ণের তৈরি আয়না সহ অনেক কিছুই ছিল বাক্সে। ছিল চীনা সভ্যতার বিভিন্ন সময়ের ভাস্কর্য, অলঙ্কার ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

যাহোক, ২০২২ সালের সেই নিলামে গুপ্তধনের বাক্স থেকে ৪৫৫টি আইটেম বিক্রি করা হয়, যার মোট বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১.২ মিলিয়ন ডলার। অবিক্রিত ২১টি আইটেম-এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আইটেম অন্যগুলির চেয়ে বেশি মূল্যবান। সেগুলির দাম যোগ করা হলে গুপ্তধনের মোট মূল্য ২ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে ধারণা করা হয়।

এদিকে বহুল আলোচিত এই গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া গেলেও ঠিক কোথায় সেটা পাওয়া গেছে, তা নিয়ে এখনও গুপ্তধন আগ্রহীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলছে। অনেকে এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছেন গুপ্তধন ঠিক যেখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, সেই স্থানটি।

কেউ রকি পর্বতমালার গহীন জঙ্গলে, কেউ আবার নিজের ঘরে বসেই কবিতা থেকে ক্লু খোঁজার চেষ্টা করছেন। গুগল ম্যাপ ও ইন্টারনেটের সাহায্যে গুপ্তধনের সঠিক অবস্থান খুঁজে বের করার চেষ্টায় আছেন তারা।

অর্থাৎ, আমেরিকার বৃহত্তম এই গুপ্তধন খোঁজার অভিযান এখনও শেষ হয়ে যায়নি।