কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস অ্যাকসেস করার ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবহার অনেকটা কিউআর কোড এবং ইলেকট্রনিক পাসসহ অন্যান্য আধুনিক সুরক্ষা পদ্ধতির মতই নিরাপদ মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ আঙুলের ছাপ নকল করা খুবই সম্ভব।

বিজ্ঞানী মারিয়া মিত্রোভিচ ড্যানকুলোভ এর মতে পৃথিবীর কোনো হ্যাকারের পক্ষেই এই বাটারফ্লাই সিকিউরিটি লেবেল আনলক করা সম্ভব না।

বেলগ্রেডের ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্স-এ সার্বিয়ান বিজ্ঞানীদের একটি দল প্রজাপতির ডানার ছোট ছোট টুকরো থেকে তৈরি নতুন ধরনের অথেনটিকেশন লেবেল নিয়ে কাজ করছে। যার নকল করা অসম্ভব। এই প্রযুক্তিই একদিন সব রকম জালিয়াতির অবসান ঘটাতে পারে।

এই প্রকল্পের একজন বিজ্ঞানী মারিয়া মিত্রোভিচ ড্যানকুলোভ এর মতে “বর্তমানে এমন কোনো নিরাপত্তা লেবেল নেই, যা নকল করা যায় না।” তবে তিনি বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর কোনো হ্যাকারের পক্ষেই এই বাটারফ্লাই সিকিউরিটি লেবেল আনলক করা সম্ভব না।

প্রজাপতির ডানা কী দিয়ে তৈরি?
বিজ্ঞানীদের দল প্রজাপতির ডানা থেকে এই লেবেল তৈরি করেন, যা ছাদের টাইলসের মত সাজানো কয়েক হাজার ক্ষুদ্র কাইটিন স্কেল বা আঁশে আবৃত। এই স্কেল বা আঁশ মূলত সেই ‘ধুলা’, যা প্রজাপতি বা মথ স্পর্শ করার পর আপনার আঙুলে লেগে থাকে।

শক্তিশালী ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে এই আঁশগুলি জুম-ইন করার মাধ্যমে ড্যানকুলোভের সহকর্মী দেজা প্যানটেলিক কিছু একটা বুঝতে পেরেছিলেন। আর তা হল, প্রতিটি ক্ষুদ্র স্কেলে একটি জালের মত কাঠামোর সাথে এক ধরনের ঝাঁঝরি বা জালিকা রয়েছে, যা আঙুলের ছাপের মতই অনন্য। যেগুলির নকল অসম্ভব।

এই আবিষ্কারের পর পরই সার্বিয়ান পদার্থবিদের দল এই ধারণাটিকে একটি প্রোটোটাইপ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিণত করেছেন, যার নাম তারা দিয়েছেন ‘টেসলাগ্রাম’।

মহান সার্বিয়ান-আমেরিকান আবিষ্কারক নিকোলা টেসলার নামানুসারে তারা এই নামকরণ করেন। ড্যানকুলোভ বলেন, ধারণাটি হল, একটি বস্তুর সাথে প্রজাপতির এই আঁশ সংযুক্ত করা, তারপর একটি ডেটাবেজে সেই আঁশের সঠিক ভিজ্যুয়াল বিবরণ সংরক্ষণ করে রাখা।

ড্যানকুলোভ বলেন, ‌“ধরুন, একটি যাদুঘর কোনো গ্যালারিতে মূল্যবান একটি শিল্পকর্ম ধার দিতে চায়। যখন সেই শিল্পকর্ম ফেরত দেওয়া হয়, তখন আসল শিল্পকর্মটিই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা, তা যাচাই করার জন্য যাদুঘরে বিশেষজ্ঞ রাখতে হয়। যাদের অনেক টাকা বেতন দিতে হয়। কিন্তু শিল্পকর্মের কোথাও প্রজাপতির আঁশ লাগানো থাকলে জাদুঘর নিজেই একটি ‘রিডার’ ব্যবহার করে পরীক্ষা করতে পারবে যে, প্রজাপতির আঁশটি আর্টওয়ার্কের ডেটাবেজে সংরক্ষিত ভিজ্যুয়াল বিবরণের সাথে মেলে কিনা।”

নকল করা অসম্ভব, এমন বাটারফ্লাই ‘বারকোড’
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই প্রজাপতি ‘বারকোডগুলি’ এতটাই ক্ষুদ্র এবং ভঙ্গুর যে তাদের সাথে দুই নাম্বারি করার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান ক্ষতি হয়ে যাবে। এছাড়া, আঁশগুলি ত্রিমাত্রিক হওয়ায় সেগুলির অনুলিপি তৈরি কার্যত অসম্ভব।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রযুক্তি কার্যকর করার জন্য যেকোনো প্রজাপতি থেকেই অনন্য আঁশ পাওয়া যেতে পারে। যার মধ্যে এমন প্রজাতিও রয়েছে, যেগুলিকে পতঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন ‘হোয়াইট ক্যাবেজ বাটারফ্লাই’, যা সার্বিয়াতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

আরএফইআরএল (RFERL) এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রজাপতিগুলিকে খাদ্য ও পানি দিয়ে যতদিন তাদের স্বাভাবিক আয়ু আছে, ততদিনই বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। তারা সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যায়। তারপর একটি গোপন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আঁশ সংগ্রহ করা শুরু হয় এবং ক্ষুদ্র আঁশ একটি অ্যালকোহল দ্রবণে রক্ষিত হয়।

বিজ্ঞানীরা প্রক্রিয়াটিকে আরও উন্নত করার জন্য কাজ করছেন এখন। এই প্রযুক্তি অবশেষে বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে, যার মধ্যে আছে টেসলাগ্রামের মাধ্যমে ওষুধ চিহ্নিত করা। যাতে গ্রাহক নিজেই কোনো ওষুধ আসল না নকল তা যাচাই করতে পারেন।