নেকড়ে নিয়ে গবেষণা এ বিষয়ে নতুন কিছু বলছে

কুকুরেরা মালিকের কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে যে এই কণ্ঠ তাদের মালিকের। শুধু মালিকের না, তারা এমন আরো অনেকের কণ্ঠ চিনতে পারে, যারা তাদের পরিচিত।

মালিকের কণ্ঠস্বর অন্যদের কণ্ঠস্বর থেকে আলাদা করতে পারাটা একটা অসাধারণ ক্ষমতা। এমনকি যদি অন্য কারো কণ্ঠস্বর মালিকের কণ্ঠস্বরের সাথে মিলেও যায়, কুকুর তার মালিকের কণ্ঠস্বর আলাদা করেই চিনতে পারে।


বেনসে ন্যানে, পিএইড. ডি.


কুকুর মালিকের কণ্ঠস্বর শুনলে বিশেষ ভাবে আচরণ করে। যখন সে মালিকের কণ্ঠ শুনতে পায়, লেজ নাড়ে, কান খাড়া করে বা দৌড়ে মালিকের কাছে যায়।

এর পেছনে একটা গল্প আছে। কুকুরের আচরণ এমন হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে বিবর্তন। হাজার বছর ধরে কুকুর মানুষের সঙ্গী হয়েছে। কুকুরেরাও এতদিন ধরে মানুষদের সাথে চলা শিখে গেছে। যেসব কুকুর মানুষের সাথে চলাফেরা করতে শিখেছিল তারাই বেঁচে ছিল।

মানুষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে থাকার ফলে কুকুরের কিছু বিশেষ জ্ঞানগত দক্ষতা তৈরি হয়েছে যা অন্যান্য প্রাণীর নেই। অনেক কুকুরই কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই, অথবা খুব কম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়ম মানতে শিখে যায়। এটা সম্ভব হয়, কারণ কুকুর মানুষের আচরণ বুঝতে পারে এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চায়।

অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় কুকুরের আবেগ নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা ভাল। তারা উত্তেজনা, রাগ, ভয় পেলেও নিজেদের আগ্রাসী আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি তাদেরকে মানুষের সাথে আরও ভালভাবে থাকতে সাহায্য করে।

মালিকের কণ্ঠ চেনাটা, মানুষের সাথে কুকুরের দীর্ঘকাল থাকার কারণেই সম্ভব হয়েছে। ভিন্ন মানুষের কণ্ঠ চেনা কুকুরদের মানুষের সমাজে টিকে থাকার জন্য একটি প্রয়োজনীয় দক্ষতা হয়ে দাড়িয়েছিল। যে কুকুরেরা বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের সাথে খাপ খায়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল, শুধুমাত্র তারাই টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিল। তাই কুকুরেরা ধীরে ধীরে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কণ্ঠ চেনাও শিখতে থাকে।

আরো পড়ুনন: নেকড়েরা যেভাবে নদীর স্বভাব পাল্টে দেয় 

কিন্তু নেকড়েদের ওপর করা নতুন গবেষণার ফলাফল কুকুরদের কণ্ঠস্বর চেনার ব্যপারে ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। কুকুরের পূর্বপুরুষ হল নেকড়ে, কিন্তু তারা কখনোই কুকুরদের মত সামাজিক পরিবেশে সেভাবে থাকেনি। নেকড়েদের মধ্যে কুকুরদের মত নিয়ম পালন করার প্রবণতা দেখা যায় না, তারা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের দিক থেকেও খুব পারঙ্গম না। যার অর্থ, কুকুরের এই দক্ষতাগুলি মানুষের মাঝে থাকার ফলেই তৈরি হয়েছে।

কুকুর আর নেকড়ের মধ্যে কিছু অমিল থাকলেও, কণ্ঠ আলাদা করতে পারার ক্ষেত্রে এদের মিল আছে। কুকুরদের মত নেকড়েরাও ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কণ্ঠ চিনতে পারে। এই গবেষণায়, ২৪টি নেকড়ের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, নেকরেরা আগে কখনও শোনেনি এমন কণ্ঠ শুনলে আগ্রহ দেখায় না, স্বাভাবিক আচরণই করে।

যখনই আগে শোনা কোনো কণ্ঠ (যেমন বন্যপ্রাণী পার্কের কর্মীদের কণ্ঠ) শোনে, তখন তারা একটু ভিন্ন আচরণ শুরু করে। কান খাড়া করে এবং মাথা উঁচু করে সেই কণ্ঠের প্রতি মনোযোগ দেয়। ঠিক যেভাবে কুকুরেরা তাদের মালিকের কণ্ঠ শুনে সাড়া দেয়।

এই ক্ষমতা শুধু নেকড়েদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দেখা গেছে বিড়াল ও গরিলাদেরও মানুষের কণ্ঠ চেনার ক্ষমতা আছে। তাই, বলা যায় কুকুরের মানুষের কণ্ঠস্বর চেনার এই ক্ষমতা আসলে হাজার বছর ধরে তাদের মানুষের সাথে থাকার কারণে হয়নি।

লেখক পরিচিতি

ড. বেনসে ন্যানে অ্যান্টওয়ার্প এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। দর্শন, মনোবিজ্ঞান এবং স্নায়ুবিজ্ঞানের সমন্বিত গবেষণার জন্য তিনি ইউরোপীয় গবেষণা কাউন্সিলের (ইআরসি) কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অনুদান পেয়েছেন।

‘সাইকোলজি টুডে’ (জুলাই ৬, ২০২৩) থেকে অনুবাদ: যাইয়ার আযান