ফল হিসেবে জামের যে কত উপকারিতা আছে, তা গুনে শেষ করা যাবে না। তবে জাম খাওয়ার সময় কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল না রাখলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্যে হিতে বিপরীত হতে পারে।

গরম আসলেই আমরা অনেকে অপেক্ষা করতে থাকি কবে জাম খাওয়া যাবে। জাম ফলটি বিশ্বজুড়ে জাভা প্লাম, কালোজাম, জামুন, জাম্বোলান, জাম্বুল সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। ফলটি কেবল পুষ্টিগুণেই সমৃদ্ধ নয়, বরং বাচ্চাদের কাছেও এই ফল অনেক প্রিয়।

ছোটবেলায় জাম খেয়ে মুখ রঙিন করার স্মৃতি আমাদের সবারই আছে। যেমন সুঘ্রাণ তেমনি পুষ্টি সমৃদ্ধ এই ফল। এর পুষ্টিগুণের কারণে জামকে সুপারফুডও বলা হয়।

যদিও আমার মা জাম খাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে কিছু অদ্ভুত নির্দেশনা দিতেন। সেই থেকে আমার প্রশ্ন, আসলেই কি জাম খাওয়ার সময় এত নিয়ম মানতে হয় নাকি এগুলি আমার মধ্যবয়স্ক মায়ের মনের কল্পনা মাত্র।

আরো পড়ুন: জলপাইয়ের ২০টি উপকারিতা

তবে এসব নিয়ম জানার আগে আমরা জাম খাওয়ার দারুণ কিছু উপকারিতার কথা জেনে নেই।

জাম হচ্ছে এমন একটি খাবার, যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা আছে, তাদের জন্য জাম খুবই কাজের।

হার্টকেও শক্তিশালী ও রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে জাম। হজমশক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা বহুল পরিচিত।

জামের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের অনেক উপকার করে।

দারুণ রসালো এই ফলটি পুষ্টির দারুণ উৎস হলেও, অনেক সময় জাম খাওয়ার সঠিক নির্দেশনা জানা না থাকলে শরীরে এর নেতিবাচক ফলাফল দেখা দিতে পারে। তাই কখন জাম খেতে হয় এবং কীভাবে খেতে হয় সেটা জেনে রাখা ভাল।

১. জাম খাওয়ার পর পানি খাবেন না

আমার মা সব সময় বলতেন, জাম খাওয়ার পর একটু দেরি করে পানি খেতে। কারণ জাম খাওয়ার সাথে সাথে পানি খেলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে আছে ডায়রিয়া বা বদহজমের মত সমস্যা।

বলা হয়ে থাকে, জাম খাওয়ার পর অন্তত ৩০-৪০ মিনিট পরে পানি খেতে।

২. খালি পেটে জাম খাবেন না

খালি পেটে জাম খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। জাম টক ও কষযুক্ত হয়। তাই সকালে উঠে যদি খালি পেটে জাম খান, অ্যাসিডিটি হতে পারে এর কারণে।

এছাড়া পেটে যন্ত্রণা ও পেটব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জাম যেহেতু হজমে সাহায্য করে, কোনো শক্ত খাবার খাওয়ার পরেই জাম খাওয়া ভাল।

জামের সাথে যে ৫টি খাবার কখনোই খাবেন না
জামের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের অনেক উপকার করে। দারুণ রসালো এই ফলটি পুষ্টির দারুণ উৎস হলেও, অনেক সময় জাম খাওয়ার সঠিক নির্দেশনা জানা না থাকলে না জানা থাকলে শরীরে এর নেতিবাচক ফলাফল দেখা দিতে পারে।

৩. হলুদ থেকে দূরে থাকুন

‘নিউট্রিফাই বাই পুনম ডায়েট অ্যান্ড ওয়েলনেস ক্লিনিক অ্যান্ড অ্যাকাডেমি’ এর পরিচালক পুনম দুনেজা পরামর্শ দেন, জাম খাওয়ার পর যেন কোনো ভাবেই হলুদ দেয়া কোনো কিছু না খাওয়া হয়।

কারণ জাম এবং হলুদ খাবার দুটি একে অন্যের সাথে যায় না। এই দুটি খাবার একসাথে খেলে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। পেটে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হতে পারে।

আরো পড়ুন: আপনি আর্সেনিক যুক্ত ভাত খাচ্ছেন না তো?

এজন্য জাম খাওয়ার পর হলুদ দেয়া কোনো খাবার খেতে অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করা ভাল।

৪. দুধ খাওয়া যাবে না

জাম খাওয়ার পর কোনো ভাবেই দুধ বা দুধজাতীয় কোনো খাবার খাওয়া যাবে না। দুনেজা বলেন, “জাম খাওয়ার পরই যদি দুধ জাতীয় কিছু খান তাহলে গ্যাস, বদহজম ও পেটব্যথার নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।

৫. আচার খাওয়া যাবে না

অনেকেই আছেন বিভিন্ন খাবারের সাথে আচার খেতে পছন্দ করেন। তবে জাম খাওয়ার সময় এই কাজটি করা ঠিক হবে না। কারণ আচার জামের সাথে মিশে গিয়ে পেটে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

তাহলে জাম খাওয়ার সুফল পেতে হলে, ফলটি ঠিক কখন ফলটি খাওয়া উচিৎ হবে?

জাম খাওয়ার সঠিক সময়ের কথা বললে, বলা যায় দিনের যেকোনো সময়েই জাম খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই খালি পেটে খাওয়া যাবে না।

ভরা পেটে জাম খাওয়া ভাল। এতে করে হজম প্রক্রিয়া দ্রুত হবে, অর্থাৎ শরীরের খাদ্য গ্রহণ করার পরিমাণও বাড়বে।

আর জামের বীজ সংগ্রহ করে রাখতে ভুলবেন না কিন্ত। ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে জামের বীজের গুড়া’র বেশ উপকারিতা আছে।

সূত্র. হেলথশটস
অনুবাদ. আমিন আল রাজী