সাফল্য আসে ধাপে ধাপে যা অধিকাংশ মানুষই বোঝে না
লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার কারণ হিসাবে মানুষ নানা অজুহাত তৈরি করে। কিন্তু সহজ সত্যটি হলো: জীবনে যা চান তা অর্জনে যদি ব্যর্থ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সম্ভবত লক্ষ্য অর্জনে সুকৌশলী না।
ভাল খবর হলো, আপনি যেসব কারণে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেন না তার বেশিরভাগই খুব সহজে সমাধান করা যায়।
মানুষকে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো থেকে বিরত রাখে এমন কিছু কমন বিষয় নিয়ে আমি এখানে আলোচনা করব। এবং কীভাবে আপনি সেই বাধাগুলি সরিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন, সে সম্পর্কেও কিছু পরামর্শ দেব।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকা
শুরুতেই যদি সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ না করেন তাহলে আপনি কখনোই সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না।
লক্ষ্য যদি অস্পষ্ট হয়, যেমন, ‘ধনী হওয়া’ বা ‘সফল হওয়া’, তাহলে আপনার সফল হতে অনেক বেশি সময় লাগবে। যা অনেকটা জিপিএসে ‘ফ্লোরিডা’য় প্রবেশ করে মায়ামির একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় যাওয়ার চেষ্টা করার মতো হবে। এতে হয়তো আপনি আপনার লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারবেন, কিন্তু তা খুব দ্রুত বা দক্ষতার সাথে নয়।
টিমোথি সাইকস
লক্ষ্য অর্জনের জন্য আসলে প্রথম সঠিক পদক্ষেপটি হলো, লক্ষ্য কী সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট হওয়া। যেমন, ‘একটি বাড়ি কেনা’ এই লক্ষ্যের পরিবর্তে, অমুক এলাকায় ডাউন পেমেন্টে বাড়ি কেনার জন্য ‘আগামি দুই বছরে ২০ লাখ টাকা সঞ্চয় করা’’র মতো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করলে আপনি সেখানে পৌঁছানোর জন্য নির্দিষ্ট মাইলফলক সহ একটি কার্যকর পরিকল্পনা করতে পারবেন।
রুটিন না থাকা
রুটিন অনুযায়ী কাজ করা বিরক্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু এতে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
সফল ব্যক্তিদের একটি নিয়মিত রুটিন থাকে, যার শুরু হয় তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা দিয়ে। তারা সকালের এই সময়টি ব্যবহার করে তুচ্ছ কাজগুলি পথ থেকে সরিয়ে দেন এবং সাধারণত সামনের দিনটির জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেন।
তাদের সকালের কাঠামো এমনভাবে তৈরি হয় যাতে তারা স্পষ্টতা এবং মনোযোগ সহকারে কর্মদিবসের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন এবং এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করতে হয়।
আপনি যদি প্রতিদিন শুধু ডানা মেলে উড়তে থাকেন, তাহলে আপনার ক্যারিয়ারের ফলাফলও একইভাবে বিক্ষিপ্ত হবে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য, একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন সেট করুন, তাহলে সহজেই মাইলফলক অর্জন করতে পারবেন। ধীরে ধীরে কিন্তু সুদৃঢ়ভাবে সামনে এগিয়ে যেতে থাকুন।
মেন্টর না থাকা
পুরোনো রোড ম্যাপ ব্যবহার এবং রাস্তা নিজে নিজে নেভিগেট করার বদলে একটি জিপিএস যেভাবে আপনাকে আরো দ্রুত এবং সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে, ঠিক সেভাবেই সঠিক দিক-নির্দেশনা আপনাকে দ্রুত আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।
আরো পড়ুন: ইমপোস্টার সিনড্রোম বা নিজেকে অযোগ্য ভাবার অনুভূতি
একজন মেন্টর বা পরামর্শদাতার শক্তিতে যদি আপনি বিশ্বাস না করেন তবে জেনে রাখুন, মার্ক জাকারবার্গ, অপরাহ উইনফ্রে এবং বিল গেটসসহ বিশ্বের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিরা নিজেদের সাফল্যের জন্য তাদের পরামর্শদাতাদেরকেই কৃতিত্ব দেন। পরামর্শদাতারাই তাদেরকে তাদের সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রটি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। একজন পরামর্শদাতা খুঁজে বের করার মাধ্যমে আপনিও নিজেকে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি দ্রুত ফরওয়ার্ড বাটন দিচ্ছেন। একজন পরামর্শদাতার কাছ থেকে আপনি নির্দেশনা, দিকনির্দেশনা, পরামর্শ এবং আরও অনেক কিছু পেতে পারেন। দ্রুত সাফল্য অর্জন করতে চান? তাহলে আজই একজন মেন্টর ঠিক করুন।
জবাবদিহিতা না থাকা
লাইনে ওঠা এক জিনিস, কিন্তু লাইনে থাকতে পারা আরেক জিনিস। নিজেকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখার জন্য আপনার কি কোনো চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স আছে?
এমনকি সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী মানুষদেরও মাঝে মাঝে নিজের মধ্যে অনুপ্রেরণা ধরে রাখতে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে একজন পার্টনার আপনাকে সাহায্য করতে পারে, যিনি আপনার সাথে নিয়মিত চেক-ইন করবেন, আপনি আপনার লক্ষ্যের দিকে ঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন কিনা তার ওপর নজর রাখবেন। সহকর্মী, বন্ধু বা পরিবারের সদস্য সহ যে কেউই আপনার একজন ভাল জবাবদিহিতা পার্টনার হতে পারে। তাকে কেবল নির্ভরযোগ্য কেউ হতে হবে। যিনি ঠিকঠাক ভাবেই আপনার ওপর নজর রাখতে পারবেন এবং আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনে সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন কিনা সে ব্যাপারে আপনাকে দায়বদ্ধ থাকতে সাহায্য করবেন।
ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়া
বড় কোনো লক্ষ্য অর্জন করা একটি খাড়া এবং উঁচু পাহাড়ে ওঠার মতোই; যাই হোক না কেন, আপনি পথে কয়েকবার হোঁচট খেতে বাধ্য। যদিও আপনার সক্রিয়ভাবে ভুল এড়ানোর চেষ্টা করা উচিত, তথাপি আপনাকে মেনে নিতে হবে যে, পথে কিছু না কিছু সম্ভবত ঘটবেই।
আরো পড়ুন: নেতৃত্বের যে ১৪টি মূলনীতি মেনে সফল অ্যামাজন
ভুলগুলিকে আপনাকে ধ্বংস করতে দেওয়ার পরিবর্তে, তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করুন। যে ভুলকে এক পর্যায়ে বিধ্বংসী মনে হচ্ছে, তা থেকে যদি আপনি প্রথমবারেই শিক্ষা নিতে সক্ষম হন, তবে তা আপনাকে আরও বড় ভুল থেকে বাঁচাতে পারে!
অনুবাদ: মাহবুবুল আলম তারেক