মেরি ফ্রান্সেস ডানহাম এর জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ মার্চ, ফ্রান্সে। তিনি ১১ অক্টোবর ২০২১ তারিখে আমেরিকায় মারা গেলেন। মেরি ষাটের দশকে স্বামী ড্যানিয়েল সি. ডানহামসহ বাংলাদেশে ছিলেন।

আমরা, আমি এবং বন্ধু রাজু আলাউদ্দিন, ১৯৯৬ সালে যখন তার ইন্টারভিউ নিতে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় যাই সে সময়কালে তিনি বাংলাদেশের জারি গান সম্পর্কে গবেষণা সন্দর্ভ তৈরি করছিলেন। যা পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

মেরি ফ্রান্সেস ডানহামের পড়াশোনা হাভার্ড কলেজে, হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট স্কুল অব এজুকেশন থেকে শিক্ষকতায় এমএ করেছেন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ করেছেন ইন্ডিক স্টাডিজে। ইংরেজি, ফেঞ্চ, ইতালী, প্রাচীন গ্রীক, ল্যাটিন জানতেন তিনি। এছাড়া বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় ধারণা ছিল তার। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘লিভিং ইন ঢাকা’, ‘দি মিউজিক অব ইন্ডিয়া’, ‘সিলেকশান ফ্রম জারি গান’, ‘ড্যান্স ইন ইন্ডিয়া’ ইত্যাদি।  সাক্ষাৎকারে তার বাংলা বলার রীতিটি অবিকৃত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।


সাক্ষাৎকার: রাজু আলাউদ্দিন ও ব্রাত্য রাইসু


রাজু আলাউদ্দিন: আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে আছেন?

মেরি ফ্রান্সেস ডানহাম: ‘দিরঘো দিন’—অনেক দিন?

রাজু: হ্যাঁ, অনেক দিন।

মেরি: ‘আগে?’—নাইনটিন সিক্সটি এরকম?

রাজু: জ্বী।

মেরি: নাইনটিন সিক্সটি টু নাইনটিন সিক্সটি সেভেন। আমি এই রাস্তায় (সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা) ছিলাম।

রাজু: প্রথম কবে এলেন বাংলাদেশে?

মেরি ফ্রান্সেস ডানহাম এবং ড্যানিয়েল সি. ডানহাম, ষাটের দশকে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডের হাফিজ ভিলায় তাদের বাড়িতে।

মেরি: ফার্স্ট টাইম, আমার স্বামীর সঙ্গে—আমার স্বামী আর্কিটেক্ট… ময়মনসিংহে একটা হোস্টেল, এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটিতে। রাজশাহীতে ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি। শিক্ষকতার কাজ করেছেন ছয় বছর আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে। এটা নাইনটিন সিক্সটি ওয়ান টু নাইনটিন সিক্সটি সেভেন।

রাজু: এরপর আপনারা চলে গেলেন?

মেরি: পরে? আমরা সব নিউইয়র্ক গিয়েছি। তখন ক্যালকাটায় দুই বছর। তখন সাইক্লোন ছিল। এখানে আমার স্বামী ফিরে এসেছেন। তিন চারবার। ও, ওয়ার টাইম, আমার স্বামী এখানে ছিলেন। মুজিবের স্পিচ—আমার স্বামী এখানে। তখন আমার স্বামী সাহস দিয়েছেন, আর সব লোক আউট। আর জুন অ্যান্ড জুলাই নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান আমরা ক্যালকাটায় ছিলাম। আমার স্বামী রিফিউজি কাজ করেছে, সল্টলেকে। অনেক রিফিউজি ছিল, আমার স্বামী সাহস দিয়েছেন।

রাজু: আপনি তখন?

মেরি: আমি নিউইয়র্কে। পরে আমরা অন্য দেশ গিয়েছি। শ্রীলংকা, আফ্রিকা, চায়না—আমার স্বামীর কাজ। কারণ উনি স্পেশালিস্ট, ট্রপিক্যাল আর্কিটেকচারে। সিটি প্ল্যানিং।

ব্রাত্য রাইসুু: এখন কী কাজ করছেন আপনি?

মেরি: এখন? প্রথম, আমার মেয়ে একটা ফুলব্রাইট স্কলার। নাইনটিন নাইনটি থ্রি টু নাইনটিন নাইনটি ফোর আমরা এখানে থেকেছি। সে সময় আমি একটা গ্র্যান্ট ফ্রম ফোর্ড ফাউন্ডেশন পেয়েছি, এই বইয়ের রিসার্চের জন্য। আগে নাইনটিন সিক্সটি—সে সময়, নাইনটির সিক্সটি ফোরে আমি জসীম উদ্‌দীন (১৯০৩-১৯৭৬) একসঙ্গে কাজ করেছি। আর জসীম উদ্‌দীন বলে প্লিজ আমার স্টাফ নোটেশন। এই বই, জসীম উদ্‌দীন এই বই বানাইছেন। লিখেছেন। স্টাফ নোটেশন আমার সব। এরকম আমার ইন্টারেস্ট শুরু।

রাজু: তার মানে আপনার মিউজিকের উপর আগে থেকেই দখল ছিল? আপনি বোধহয় একটা ইন্সট্রুমেন্ট—পিয়ানো বাজাতে পারেন?

মেরি: বরিশাল একটা স্কুল ছিল। রীটা বোসের—একটা কানাডিয়ান সিস্টার। হলি সিস্টার। একটা স্কুল, বরিশাল—ফর ক্লাসিক্যাল ইন্ডিয়ান মিউজিক। আর ওখানে আমি ইনটেনসিভ সিক্স উইক সারাদিন গান আমরা করেছি। ক্লাসিক্যাল, ভোকাল।

রাইসু: বাংলাদেশের উপর আপনাদের আগ্রহ হলো কেন?

মেরি: খুব সুন্দর গান, খুব সুন্দর। আর ড্রামা খুব সুন্দর। লিটারেচার খুব সুন্দর। আর লোক খুব ইন্টিলিজেন্ট।

রাজু: তো জারি গানের উপরে আপনার ইন্টারেস্ট শুরু হলো, কিন্তু এটা যে একটা থিসিস ওয়ার্ক হতে পারে এটা কেন আপনার মনে হলো?

মেরি: কারণ, আমরা ফিরে গিয়েছি নিউইয়র্ক নাইনটিন সিক্সটি সেভেনে। সে সময় আমি শুরু করেছি মাস্টার্স ডিগ্রি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। আর আমার মনে হয়েছে আমি আমি এটা ব্যবহার করব। আর থিসিস করেছি। এই থিসিস— জারি গান, ইতিহাস, কীরকম জারি গান শুরু, কী রকম গান করে এইসব।

রাজু: এখানে আরো অনেক রকম গান আছে। যেমন, সারীগান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি এগুলো। এগুলোর প্রতি উৎসাহিত না হয়ে আপনি থিসিস ওয়ার্কের জন্যে জারি গানই কেন বেছে নিলেন।

মেরি: বিকজ, সব লোক বাউল গান অনেক লিখেছে, ভাটিয়ালি অনেক লিখেছে, এসব অনেক লিখেছে। খালি শুধু একলোক জারি গান কেয়ার করেছেন। পরে নাইনটিন এইটি সিক্স—লুৎফর রহমান—একটা বই। আমেরিকায় অনেক বাউল গান বই আছে। আরো দরকার না। জারি গান, এইটা অনেক ইম্পোর্টেন্ট জিনিস। কিন্তু বই নাই!

রাইসু: এটা কি ইংরেজিতে লিখছেন?

মেরি: হ্যাঁ।

রাজু: আর বাংলা একাডেমি আপনাকে যেটা অফার করেছে সেটা কি বাংলা সংস্করণের জন্য?

মেরি: হ্যাঁ। কিন্তু ফোর্ড ফাউন্ডেশন টাকা দিয়েছে। আর ইউনাইটেড প্রেস, তার এডিশন—এটা বলবেন না—তার বই বেশি সুন্দর।

রাজু: সুন্দর না কোনটা, বাংলা একাডেমি?

মেরি: বাংলা একাডেমি কাজ ভালো, কিন্তু…।

রাজু: কিন্তু প্রিন্টিং কোয়ালিটি ভালো না?

মেরি: নো।

রাইসু: এটা বললে অসুবিধা কী?

মেরি: এটা গভমেন্ট মানি।

রাইসু: আপনারা না বললে তো ঠিকও হবে না। ঐ বই ঐরকম থাকবে চিরদিন।

মেরি: দে ক্যান্ট কারেক্ট। বিকজ অল ইজ গভমেন্ট সেইম ইন মাই কান্ট্রি। গভমেন্ট সাপোর্টেড অর্গানাইজেশন হ্যাভ নট মাচ চেঞ্জ, আন্ডারস্ট্যান্ড? অ্যান্ড ইট ইজ নট ফেয়ার টু ক্রিটিসাইজ।

রাজু: আওয়ামী লীগ ইন পাওয়ার আফটার টুয়েন্টি ওয়ান ইয়ার। সো হোয়াট ইজ দ্য ইম্প্রেশন?

মেরি: হু নোজ? থ্রি মান্থস—জুন, জুলাই, আগস্ট—জানি না। অনলি আওয়ামী লীগার আই নো, কিবরিয়া। কিবরিয়া ওয়ান্স ইন ওয়াশিংটন ডিউরিং নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান। আমরা অনেক আমেরিকান যারা এখানে ছিলাম সব ওয়াশিংটন গিয়েছি। আমরা দোয়া করেছি প্লিজ স্টপ ইওর হেল্প টু পাকিস্তান। ইউ মাস্ট স্টপ। আর সে সময় কিবরিয়া ওয়াশিংটন ছিলেন। আর আমরা এক সঙ্গে এসব লবি করেছি। আর তার মাথা অনেক। সে সময় সে জার্নালিস্ট।

রাজু: জার্নালিস্ট?

মেরি: ইয়েস! কিবরিয়া। ইউ সি হিজ পিকচার এভরি ডে। সে সময় সে জার্নালিস্ট। সে ইয়াং ম্যান সে সময়। বাট ইউ কুড সি হি ইজ ভেরি ব্রাইট। যখন আমি দেখি তার কাজ রোজ পত্রিকায়। তার মুখ, আমি আশা করি তার আইডিয়াস ব্যবহার করতে পারে গভমেন্ট, আমার মনে হয়। আমার মনে হয় খুব ভালো লোক।

রাজু: তার পলিসিও ভালো মনে হচ্ছে আপনার?

মেরি: আমার মনে হয়, জানি না। মে বি হি ইজ চেঞ্জড্—থার্টি ইয়ারস! নো, বাট আই রিড হিজ আর্টিকেলস লাস্ট ইয়ার। আই থিংক, ভেরি গুড। ভেরি প্র্যাকটিকাল।

রাইসু: জারি গানের উপর রিসার্চ কতদিন থেকে করছেন?

মেরি: রিসার্চ? টু ইয়ারস এগো। আগে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে আমি করেছি টু কি থ্রি ইয়ার্স। যখন ফোর্ড ফাউন্ডেশন গ্র্যান্ট দিয়েছে তখন আমি… টু ইয়ার এগো। এখন নাইনটিন নাইনটি সিক্স, আগস্ট। ফ্রম নাইনটিন নাইনটি ফোর আগস্ট—একটি বই বানাইতে হবে।

রাইসু: কত জারি গান জোগার করেছেন?

মেরি: জসীম উদ্দিন, একটা ফরিদপুর বয়াতি—আমরা একসঙ্গে রেকর্ডিং করেছি। তখন লেনিন আমি গত বছর দেশে গিয়েছি আর অন্য রেকর্ড করেছি। পুলক সাহস দিয়েছেন, আরো নতুন নোটেশন করেছি। বইর ভিতরে তেরো আছে, কিন্তু আরো আছে গান।

রাইসু: কয়টা? তেরো?

মেরি: তেরো বইর ভিতরে হবে। আর মে বি বিশ আছে।

রাজু: আপনি এমনি টোটাল কতগুলো গান পেয়েছেন।

মেরি: মে বি টুয়েন্টি।

মেরি: ইয়েস।

রাজু: অনলি টুয়েন্টি, অল ওভার দ্যা কান্ট্রি?

মেরি: নো, অনলি দিস এরিয়া—ঢাকা, ময়মনসিংহ, গৌরীপুর।

জারিগান প্রতিযোগিতায় লেখক ও তিন বিচারক, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ, ১৯৯৫

রাইসু: ফরিদপুর?

মেরি: নো, ফরিদপুর হি কেইম হেয়ার। আই ডিন’ট গো টু ফরিদপুর। অনলি দিস সেন্ট্রাল এরিয়া। ভালো বুক, যদি সামওয়ান রাইটিং গুড বুক আফটার মাই বুক, হি মাস্ট ডু অল অফ বাংলাদেশ। বাট আই ওয়াজ নট গিভেন মানি। আই রোট ইট সিম্পলি, সিম্পল ল্যাংঙ্গুয়েজ ফর এভরিবডি।

রাজু: যাতে সবাই পড়তে পারে?

মেরি: কিন্তু সব লোক ফোক গানে ইন্টারেস্ট নাই।

রাইসু: আমেরিকায়ও নাই?

মেরি: আমেরিকায়? অ্যানথ্রোপলজিস্ট, এথনোমিউজিকোলজিস্ট, সোশলজিস্ট বাংলা কালচারে ইন্টারেস্ট লোক—এইসব লোক ইন্টারেস্ট হবে। সাধারণ পাবলিক, ওরা পপুলার মিউজিক চায়।

রাজু: কিন্তু জারি গানও তো পপুলার বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে।

মেরি: কিন্তু শহরে না।

রাজু: আচ্ছা শহরে কেন পপুলার হয় না এই গান?

মেরি: কারণ এই গান অনেক লম্বা। ওয়ান হানড্রেড লাইনস। এটা ইতিহাস জিনিস। লোক এখন ‘টাইম নাই’।

রাইসু: ক্যাসেট যে পাওয়া যায় সেগুলি কিনেন নাই?

মেরি: হ্যাঁ, অনেক। গুলশান, স্টেডিয়াম ওখানে পাওয়া যাবে।

রাজু: আপনি যখন এইসব দোকান থেকে জারি গান কিনতে যান…

মেরি: হ্যাঁ কিনেছি কিনেছি… বালো।

রাজু: কিনতে গেলে দোকানদাররা একটু অবাক হয় কিনা?

মেরি: অবাক? আমি অবাক! কারণ দেখি, আমি জিগাশ দি শপকিপার। আমি বলি, পিপল বাইয়িং? সে বলে হ্যাঁ, ওয়ান থাউজেন্ড মেবি। বিক্রি করেছে ওয়ান ইয়ার। আর বলে মেবি টু হান্ড্রেড নানা রকম জারি গান। টু হান্ড্রেড নানা রকম গল্প। অ্যান্ড সাম থ্রি ভলিউমস। ওয়ান স্টোরি থ্রি ভলিউমস।

রাজু: আচ্ছা এই জারি গানের সঙ্গে পৃথিবীর আর কোন কোন দেশের গানের সিমিলারিটি আছে?

মেরি: একটু মর্সিয়া-হিন্দি উর্দু মর্সিয়া। নর্থ ইন্ডিয়ান মর্সিয়া। একটু। সিমিলারেশন আছে, একটুু। কিন্তু বাংলা গান সব, ফোক বাংলা গান—ভেরি স্পেশাল। ইটস ইউনিক।

রাজু: হোয়াই ইট ইজ ইউনিক?

মেরি: আই থিংক, কারণ মিডল ইস্ট মিকশ্চার। মিডল ইস্ট মিকশ্চার আছে নর্থ ইন্ডিয়া, বাট স্পেশালি ইস্ট বেঙ্গল। আমার মনে হয়। স্পেশালি ভাটিয়ালি—অর্নামেন্ট ইন দ্য মেলোডি। আমার মনে হয়, মিডল ইস্ট।

রাজু: মিডল ইস্ট থেকে আসা?

মেরি: হ্যাঁ।

রাজু: ষাটের দশকে প্রথমে যখন ঢাকায় এলেন সেই সময়ে ঢাকার যে চেহারা বা সামাজিক যে অবস্থা এগুলো সম্পর্কে কিছু বলবেন?

মেরি: ‘সামাজিক’ লোক? হ্যাঁ, অনেক বালো। অনেক গান ছিল। ড্যান্সিং—আমি বুলবুল একাডেমী গিয়েছি।

রাজু: আপনি শিখেছেন নাচ?

মেরি: হ্যাঁ, আমি হাতীর মতন আর ছোট মেয়ে। কিন্তু সে সময় পাকিস্তান সময়। এভরি থ্রি উইকস, পাকিস্তান গভমেন্ট বলে গান শেষ! নাচ শেষ! সব শেষ! তখন আস্তে আস্তে টেগোর গান আমরা করেছি। টেগোর মিউজিক প্লে করেছি। তখন তিন সপ্তাহ পরে পাকিস্তান গভমেন্ট বলে শেষ! বন্ধ! এ রকম।

রাজু: আপনার স্বামী তো আছে, না?

মেরি: এখন? নিউইয়র্ক।

রাজু: নিউইয়র্ক আছেন?

মেরি: সে এখানে ছিলেন নভেম্বর-ডিসেম্বর।

রাজু: উনি ঐখানে কি এখনও কাজ করেন?

মেরি: হ্যাঁ, সে শিক্ষক—কাজ করে নিউইয়র্ক সিটি। আর্কিটেকচার। কিন্তু সেমি রিটায়ার্ড।

রাজু: এখানে তো আসেন মাঝে মাঝে?

মেরি: হ্যাঁ, চার পাঁচ ছয় বার। যখন সাইক্লোন আমার স্বামী ইউএস এইড সঙ্গে এসেছেন।

রাজু: শেষ কবে এলেন?

মেরি: নাইনটিন নাইনটি সিক্স, ফেব্রুয়ারি। সে এখানে আমার সাহস দিয়েছেন।

রাজু: আপনার মেয়ে?

মেরি: আমার মেয়ে? সেও আর্কিটেক্ট। নটরডেমে একটা নতুন দালান—এটা আমার মেয়ের ডিজাইন। যদি আপনি যাবেন, আপনি দেখবেন একটা নতুন দালান। উনি আর্কিটেকচার কাজ করে নিউইয়র্কে। আর বাচ্চা হবে।

রাজু: কার, মেয়ের?

মেরি: মেয়ের। তার স্বামী এখানে ছিলেন। তার স্বামী একটা জাজ পিয়ানিস্ট। জাজ পিয়ানো করে আর গান বানায়। কম্পোজ অ্যান্ড হি টিচেস জাজ স্টোরি। আমার নতুন নোটেশন সে কম্পিউটার রাইটিং।

রাজু: কম্পিউটারে কম্পোজ করছে? জারি গানের সঙ্গে অনেকেই জড়িয়ে যাচ্ছেন আপনাদের পরিবারের। আপনি, আপনার মেয়ের জামাই।

মেরি: জামাই, যখন আমার জামাই এখানে, আমার মেয়ের সঙ্গে তবলা শিখেছে। তিন মাস। সারাদিন সে তবলা তবলা তবলা!

রাজু: বাজাতে পারে এখন?

মেরি: বাজাতে পারে।

রাজু: বাঙালি সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিয়েছেন তার মধ্যে? আপনি তো বাংলাদেশে অনেক দিন যাবৎ আছেন। আপনার কাছে অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করে। বিদেশীর চোখে—আপনারা কীভাবে দেখছেন বাংলাদেশ। সিক্সটিজের থেকে সামাজিক চেঞ্জ দেখলেন তো অনেক।

মেরি: ও, আই ওয়াজ গোয়িং টু সে। ওয়ান বিগ চেঞ্জ। তখন মহিলা, ইভেন রিচ মহিলা, বাড়িতে থাকে। আর শাড়ি, চুরি এই কথা বলতে পারে। এখন মহিলা এজুকেশন অনেক বেশি। আমার জন্য অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং। ওরা বাইরে যায়, এনজিও কাজ করে। বই লেখে, পোয়েট্রি লেখে। আর তার কনভারসেশন অনেক ইন্টারেস্টিং এখন। বিগ চেঞ্জ।

রাজু: আপনি কোনো এনজিওর সাথে জড়িত?

মেরি: এটা নতুন নাম। আমার সময় ‘মিশন’। তখন ইউএস এইড টকিং ইউএস মিশন, ইউএন মিশন, কেয়ার মিশন, সেভ দ্যা চিলড্রেন মিশন। এখন নাম ‘এনজিও’।

রাজু: কেমন মনে হয়?

মেরি: সিলি। ‘মিশন’ ভালো ওয়ার্ড।

রাজু: ইউ ক্যান নট অ্যাকসেপ্ট দিস ‘এনজিও’? দিস কনোটেশন?

মেরি: ইটস ফানি। হ্যাঁ, হোয়াই পুট ইউ দ্যা ওয়ার্ড গভর্মেন্ট নন গভর্মেন্ট? হু কেয়ারস?

রাজু: এনজিও সম্বন্ধে আমাদের এখানে তো লোকজনের ধারণা ভালো না।

মেরি: আই ডোন্ট নো দেম। আমি এনজিওর লোক খুব কম চিনি। ওয়ান লেডিস চিনি। ফ্যানটাসটিক। শেফালি খাতুন।

রাজু: এনজিওতে কাজ করে?

মেরি: তার নিজের এনজিও। অনেক কাজ করে। সে আমেরিকায় গিয়েছে, সে পিকিং বেইজিং গিয়েছে। এক জিনিস নতুন সে করে। সে মনে করে গার্মেন্ট লেডিস এজুকেশন নাই। তার বাসা নাই। যখন নাইট টাইম, বাসা যাবে, রান্না করবে আর অনেক ক্লান্ত আর গুম করে। এজুকেশন টাইম নাই। ভাড়া দিয়া যদি হোস্টেল করে, খাবার হবে, সিকিউরিটি হবে। এ ইয়াং গ্রুপস—একটু সময় হবে, কুকিং দরকার না, লন্ড্রি দরকার না। এসব। সময় হবে। আর রাত্রে একটু ক্লাস। আর বেসিক এবিসি। বেসিক ম্যাথ, আর হেলথ ইন্সট্রাকশন, ব্যাংকিং ইন্সট্রাকশন, ফ্যামিলি প্ল্যানিং ইন্সট্রাকশন—এইসব হোস্টেল প্যাকেজ দিয়ে একটা হোস্টেল শুরু, নিয়ার কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ। দিস শেফালি লেডি, সে ভাড়া নিয়েছে টু হোল ফ্লোর। নাউ ইটস ফোরথ ইয়ার। এক মেয়ে ওয়ান থাউজেন্ড মেকিং অ্যান্ড সিক্স হান্ড্রেড গিভিং। এই রকম আরো মহিলা আছে ওখানে।

রাজু: হ্যাঁ, এই আইডিয়াটা ভালো। গার্মেন্টসের এই মেয়েদের জন্য যদি শেল্টারটা তৈরি করে দিতে পারে তাহলে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি আরো ডেভেলাপ করবে।

মেরি: কিন্তু সিকিউরিটি দরকার।

রাজু: জারি গান ছাড়া বাংলা সংস্কৃতির আর কোনো দিক আছে কি যেটার প্রতি আপনি ইন্টারেস্টেড?

মেরি: আমার বাংলা বালো না। প্রথম আমার ইন্টারেস্ট বাংলা প্র্যাকটিস, আরো শিখতে হবে। এটা প্রথম জিনিস।

রাজু: তারপরও আপনি যা বলছেন ভালো বলছেন।

মেরি: হ্যাঁ, তখন আমি আহমদ ছফা তার বই পুষ্প…

রাজু: পুষ্প, বৃক্ষ বিহঙ্গ পুরাণ?

মেরি ফ্রান্সেস ডানহাম
মেরি ফ্রান্সেস ডানহাম ও আহমদ ছফা

মেরি: হ্যাঁ, কিন্তু তার অন্য বই, আরো লোকের বই আমি পড়তে চাই। কিন্তু, পারি না। ডিকশনারি সব সময়, আস্তে আস্তে আস্তে। ইটস টু মাচ। সো, প্রথম বাংলা শিখতে হবে। বালো শিখতে হবে। তখন আমি বেশি পড়তে পারি। লিটারেচার আমার ইন্টারেস্ট।

রাজু: আমাদের যে সব ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে সে সবের মারফতে তো কিছু জানেন বাংলা লিটারেচার সম্পর্কে, আমাদের এখানকার?

মেরি: আহমদ ছফা পড়েছি। অনলি হিজ। অ্যান্ড হি গেভ মি ‘সুলতান’। এভরিবডি গিভ মি দেয়ার বুকস, মোস্টলি স্কলারলি আর্টিকেলস, একাডেমিক আর্টিকেলস। বিকজ আই হ্যাভ নো টাইম অনলি ফর ফিনিশ দিস বুক।

রাইসু: ছফার বই ইংরেজিতে পড়েছেন?

মেরি: হি ডিড ট্রান্সলেশন, বাট আই ওয়ার্ক টু চেঞ্জিং।

রাজু: এডিটিং?

মেরি: এডিটিং।

রাইসু: এই বই বাইরে যেতে পারে?

মেরি: হ্যাঁ আমি অনেক আশা করি। আমরা আস্কিং পেঙ্গুইন।

রাজু: ডু ইউ থিংক ইটস এ ভেরি সিগনিফিক্যান্ট ওয়ার্ক?

মেরি: সিগনিফিক্যান্ট ইজ টু … ইট ইজ সিগনিফিক্যান্ট। কারণ ইটস এনভায়রনমেন্টাল, অ্যান্ড ইটস এ গুড এক্সাম্পল অব বেঙ্গলি রাইটিং। ইটস থিংকিং ইজ ভেরি প্রিসাইজ। অ্যান্ড চার্মিং। সিগনিফিক্যান্ট, কারণ শর্ট। সিগনিফিক্যান্ট বুক ইজ… ইউ হিয়ার শেঠ্স? ইটস লাইক ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’। ইটস কলড্ ‘স্যুটেবল বয়’। দিস ইজ সিগনিফিক্যান্ট। রাশদি সিগনিফিক্যান্ট। বিকজ দিস আর ভেরি…

রাইসু: মোটা?

মেরি: মোটা অ্যান্ড ভেরি, ভেরি পলিশ্ড্।

রাজু: ইটের মতো আর কি।

রাইসু: সিগনিফিক্যান্ট হতে হলে মোটা হতে হবে?

মেরি: না না ইট ইজ ভেরি ওয়েল রিটেন। শেঠ্স বুক ইজ ভেরি ওয়েল রিটেন। এক্সিলেন্ট রাইটিং অ্যান্ড এক্সিলেন্ট এজুকেশন—আই মিন ইটস ইনক্রিডেবল। হি নোজ এভরিথিং। ফ্রম সংস্কৃত টু ম্যানস লাইফ। অ্যান্ড অলসো রাশদি ইজ ফ্যানটাসটিক। সালমান রাশদি। হিজ নলেজ ইজ সো ভাস্ট। হি নো এভরিথিং ইন ইন্ডিয়া। এনশিয়ান্ট, মডার্ন—এভরিথিং। অ্যান্ড ওয়েস্টার্ন অ্যান্ড ইস্টার্ন।… বৃষ্টি আসবে।

রাজু: কেমন লাগে বৃষ্টিদিন আপনার?

মেরি: বালো। বৃষ্টিদিন বালো। কিন্তু আমার বাইসাইকেল… আমি পছন্দ করি না যখন বৃষ্টিতে বাইসাইকেল…

রাজু: এটা আপনার বাইসাইকেল?

মেরি: হ্যাঁ, হ্যাঁ সবসময় আমি এটা চালাই। আর নিউইয়র্কেও সেইম ওয়ান। শহরে গাড়ি বালো না।

রাইসু: এই জন্য সাইকেল চালান আপনারা?

মেরি: হ্যাঁ, হ্যাঁ।

রাইসু: গাড়ি ভালো লাগে না?

মেরি: না। গাড়ি ইজ টেরিবল।

রাইসু: গাড়ি চড়েন না?

মেরি: নেভার, অলমোস্ট নেভার। শহরে গাড়ি বালো না।

রাজু: ঢাকা শহর তো তা হলে আপনার অপছন্দ হওয়ার কথা। ডু ইউ লাইক ঢাকা সিটি নাউ?

মেরি: ইয়েস।

রাজু: ডু ইউ লাইক?

মেরি: ইয়েস।

রাজু: স্টিল?

মেরি: ইয়েস। ইটস আ রিয়েল সিটি।

রাজু: ইটস আ রিয়েল পলুটেড সিটি।

মেরি: বাট আরো জিনিস আছে—ইট’স থিয়েটার, ইট’স মিউজিক, ইট’স পিপল লাইক ইউ।

সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা ২৯/৮/১৯৯৬
(দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা থেকে পুনর্মুদ্রিত)
Link: Mary Frances Dunham