অনেক কাল আগে, মি. ক্লার্ক তার স্ত্রী এবং ৯ সন্তান সহ স্কটল্যান্ডে বসবাস করতেন।
ক্লার্ক পরিবারের স্বপ্ন ছিল চাকরি-বাকরি করে টাকা পয়সা জমিয়ে সবাই মিলে আমেরিকায় গিয়ে থাকা শুরু করবেন। এক সময় তারা ঠিকই সে পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হলেন। এরপর দিন তারিখ ঠিক করে ১৯১২ সালের এপ্রিল মাসে সবার জন্যে আমেরিকার ভিসা নিশ্চিত করলেন মি. ক্লার্ক। নতুন একটা জাহাজে রিজার্ভেশনও ফাইনাল করলেন তিনি।
পরিবারের সকলে চরম উত্তেজনা আর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কবে আমেরিকা যেতে পারবেন তারা। কবে সব নতুন করে শুরু করবেন।
সব ঠিকঠাক ছিল। ছোট সমস্যা দেখা দিলো একটা। যে দিন তারা জাহাজে উঠবেন তার ঠিক ৭ দিন আগে একটা অঘটন ঘটলো। কুকুরের কামড় খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলেটি।
ডাক্তাররা ওষুধ দিলো, কামড়ের জায়গা সেলাই করে দিলো। বাড়তি সাবধানতা হিসাবে তখনকার নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির দরজায় হলুদ চাদর ঝুলিয়ে দিতে বাধ্য হলো ক্লার্ক ফ্যামিলি। কুকুরের কামড় থেকে জলাতঙ্ক ছড়ায়। তাই কুকুরের কামড় খাওয়া রোগীসহ পুরা পরিবারকে ১৪ দিনের জন্যে গৃহআবদ্ধ রাখা হলো।
যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার কিছুই সম্ভব হলো না। ক্লার্ক পরিবারের আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ হয়ে গেল। হতাশ মি. ক্লার্ক জানলেন তাদের ঠিক করা জাহাজ আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। নিজের ভাগ্যকে দুষলেন তিনি আর ছোট ছেলের নিয়তিকে গঞ্জনা দিতে লাগলেন সবাই। হতাশ ব্যর্থ নিমজ্জিত ক্লার্ক পরিবার।
এর মধ্যে ঘটনার ঠিক ৭ দিন পরে সারা স্কটল্যান্ডে ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লো।—’টাইটানিক ডুবে গেছে!’
যে জাহাজকে বলা হতো আনসিংকেবল, মানে যা কোনো দিনই ডুবতে পারে না বলে ধারণা করা হয়েছিল, সেই টাইটানিক ডুবে গেছে! ২২০৮ জন যাত্রী ও জাহাজের লোকজনের মধ্যে ১৪৯৬ জন মারা গেছেন। ক্লার্ক সাহেব ও তার পরিবারের সকলের থাকার কথা ছিল সেই জাহাজে। ছেলেকে কুকুরে না কামড়ালে আমেরিকার পথে জাহাজেই থাকতেন তারা। হয়তো সবার সলিল সমাধি ঘটতো।
প্রাণে বাঁচার আনন্দে মি. ক্লার্ক তার ছোট ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি বলতে থাকলেন, ভাগ্যবান ছেলের কারণেই সবাই প্রাণে বাঁচতে পেরেছেন তারা। ছোট দুর্ঘটনা তাদেরকে বিশাল বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।