ইংরেজিতে ‘ওয়ান থিং অ্যাট এ টাইম’ এই কথাটি আমরা মোটামুটি সবাই শুনেছি। যার অর্থ ‘একবারে এক কাজ’ করা। এদিকে আমরা চাই জীবনে অনেক কাজ করতে, তাহলে কেন আপনি ‘একবারে এক কাজ’ করতে যাবেন?

নিশ্চয়ই আপনি প্রোডাক্টিভ জীবন চান। প্রোডাক্টিভ হওয়ার জন্য অনলাইনে মানুষের দেয়া বিভিন্ন পরামর্শ আপনি খেয়াল করেন। একদিন আপনার চোখে পড়ল একটা আর্টিকেলে জীবন বদলে দেয়ার ১০ উপায়। আপনি ঠিক করলেন এই টিপসগুলি কাজে লাগিয়ে নিজের জীবন পরিবর্তন করে ফেলবেন। পর দিন থেকেই ওই ১০টা কাজের অভ্যাস রপ্ত করতে শুরু করলেন।


ড্যান সিলভেস্ট্রে
অনুবাদ: আমিন আল রাজী


আমরা সবাই জীবনে একবার হলেও এমন পরিকল্পনা করেছি। তাই আমরা জানি এর পরে কী হয়, ওই ১০টা কাজের কোনোটাই ভালো ভাবে করতে পারি না।

এই জন্য মাল্টিটাস্কিং অর্থাৎ এক সাথে একাধিক কাজ করতে চাওয়া খুব একটা কাজে দেয় না। দ্রুততম সময়ে কোনো কাজ শেষ করতে চাইলে আমাদের উচিত প্রতিবার কেবল একটা কাজে মনোযোগ দেয়া।

আরো পড়ুন: এটা কি আসলে “সকালের কাজ”?

  • কীভাবে এক্সপার্ট লোকেরা এত সফল হতে পারেন? তারা একটা একটা করে নতুন বিষয়ে দক্ষ হন।
  • কীভাবে উদ্যোক্তরা এতগুলি কাজ সামলাতে পারেন? তারা একটা করে নতুন অভ্যাস গড়ে তোলেন।
  • কীভাবে বিলিয়নিয়ররা এত সম্পদ গড়ে তুলতে পারেন? তারা একটা করে নতুন আয়ের উৎস তৈরি করেন।

তাহলে কম কাজ করেও বেশি কাজ শেষ করার রহস্য বোঝা গেল। কীভাবে আপনিও তা করতে পারেন সেটার ৭টি কৌশলের কথা এখন আমরা জানব।

আপনার আশেপাশে কী আছে? আপনার সামনে কী দেখা যাচ্ছে? আপনার কি কখনও একসাথে একাধিক কাজ করা উচিত? এই সবগুলি প্রশ্নের উত্তর পাবেন এই লেখায়।

 

১. এক কাজের মধ্যে থেকে অন্য কাজে যাওয়া

একটা কাজ পুরোপুরি শেষ না করে যখন অন্য কাজ করতে যান, আপনার চিন্তায় প্রথম কাজটাই ঘুরতে থাকে।

একসঙ্গে আমরা যদি একাধিক কাজ নাও করি, আমাদের মাথা থেকে পুরানো কাজের চিন্তা ঝেড়ে ফেলা দরকার। নিচের টিপসগুলি ব্যবহার করে আপনি আগের কাজ থেকে নিজের মনোযোগ সরাতে পারবেন।

  • ১৫ মিনিটের একটা বিরতি নিয়ে হাঁটাহাঁটি করে আসতে পারেন।
  • ৫ মিনিটের ফোকাসড মেডিটেশন বা একাগ্র চিত্তে ধ্যান করতে পারেন।
  • কারো সাথে হালকা আলাপ সারতে পারেন।
  • পরে কী কাজ করবেন সেটা লিখে রাখতে পারেন এবং শিডিউল করে রাখতে পারেন।
  • হালকা নাস্তা করতে পারেন, তবে অবশ্যই মোবাইল হাতে না নিয়ে।

আসল কথা হল, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে কাজটি আপনি সম্পূর্ণ ১০০% শেষ করে তবেই উঠবেন। এতে আপনাকে বার বার মনোযোগ ফিরিয়ে আনার ঝামেলায় যেতে হবে না। আপনাকে যদি অর্ধেক ফেলে রাখা কাজ আবার শুরু করতে হয়, তবে সেটাও কিন্ত মাল্টিটাস্কিং হয়ে গেল!

মাথা থেকে যখন আগের কাজের চিন্তা চলে যাবে, তখন আপনি পরের কাজটি করার জন্য প্রস্তুত হবেন।

 

২. প্রতি সপ্তাহের কাজ গুছিয়ে রাখা

এক কাজ

এমন হতে পারে, আপনি এক সাথে অনেকগুলি প্রজেক্টের কাজ হাতে নিয়েছেন এবং সবগুলিই একসাথে শেষ করতে চান। কিন্ত সত্যটা হল, আপনি যদি বিভিন্ন রকমের কাজ একসাথে করতে চান, একটা করে শেষ করার চেয়ে এতে অনেক বেশি সময় চলে যাবে।

এমন না যে কাজগুলি শেষ করতে পারবেন না। কিন্ত আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না, কাজের গতি কমে যাক। এজন্য আপনাকে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে:

  • আপনার অনেক কাজের মধ্যে, একটা কাজ আছে যেটা সবচেয়ে জরুরি।
  • আবার কিছু কাজ আছে যেগুলি বাকিগুলির চেয়ে জরুরি।
  • আবার এমন কিছু কাজ আছে যেগুলি আপনি অন্য কাজের চেয়ে বেশি উপভোগ করেন

তাই যদি অনেক কাজ শেষ করতে চান, আপনাকে আগে সবচেয়ে জরুরি কাজটা শেষ করতে হবে। কোন কাজ করতে আপনার বেশি ভাল লাগে সেটা বিষয় না। আসল কথা হল, যখন মাথায় উপর ডেডলাইন ঘুরতে থাকে, টেনশনের কারণে অন্য কিছুই করতে আপনার ভাল লাগবে না।

সবচেয়ে ভাল বুদ্ধি হল, আগে জরুরি কাজটা শেষ করে ফেলা। তাতে আপনার দুশ্চিন্তা কমে যাবে। এজন্য কম জরুরি কাজগুলি পিছিয়ে দিন অথবা বাদ দিয়ে দিন।

আরো পড়ুন: অ্যাকশন প্রোগ্রাম: গুছিয়ে কাজ করার অসাধারণ উপায়

যখন দুটি কাজ থাকে, যার লক্ষ্য এক, যে কাজটা আপনি দ্রুত সময়ে করতে পারবেন সেটা করুন। অন্যটা ওই মুহূর্তের জন্য বাদ দিয়ে দিন। আর যদি দুইটা কাজই প্রয়োজনীয় হয়, তবে যেই কাজের প্রভাব বেশি পড়বে, সেটা দিয়ে শুরু করুন।

আপনাকে কাজের জন্য সময়ের হিসাব রাখতে হবে। তাহলে পছন্দের কাজ করতে সময় বের করতে পারবেন। যদি কোনো কাজ শেষ করতে এক সপ্তাহ বা এর কম সময় লাগে তাহলে এটা শেষ করে ফেলাই ভাল। কিন্ত যেগুলি বড় কাজ, সেগুলি করার জন্য আপনাকে প্ল্যান করে প্রতিদিন সময় বের করতে হবে।

আমরা যখন একই পরিবেশে সব ধরনের কাজ করতে থাকি, মস্তিষ্ক কাজগুলির মধ্যে কোনো পার্থক্য বুঝতে পারে না।

যদি আপনার হাতে অনেকগুলি বড় কাজ থাকে তবে প্রতিদিন আলাদা করে সময় ঠিক করে রাখতে হবে, কাজগুলি করার জন্য।

আমি নিজে প্রতি সপ্তাহে আমার সব কাজের পরিকল্পনা করে ফেলি। এতে করে বড় কাজ করার জন্য সময় বের করা সহজ হয়।

ধরুন আপনি এই সপ্তাহে “ক” কাজটি অবশ্যই শেষ করতে চান। কিন্ত একই সময়ে আপনাকে “খ” কাজেরও কিছু অংশ করতে হবে।

আপনি প্রতিদিন দুটি বিষয় নিয়েই কাজ করতে পারেন। অথবা রবিবার থেকে কেবল “ক” কাজ শুরু করলেন ।

হয়ত বা বুধ বা মঙ্গলবারের মধ্যে আপনার কাজটি শেষ হয়ে গেল। এবার আপনি সপ্তাহের বাকি সময় নিশ্চিন্তে “খ” কাজের পেছনে সময় দিতে পারবেন।

কাজ শিডিউল করা থাকলে আপনি এক সময়ে একটা কাজ করার সুফল বুঝতে পারবেন। আর দ্রুত সময়ে কাজ করার জন্য এটি আপনাকে সাহায্য করবে।

 

৩. নিজের সাথে বোঝাপড়া করুন

একবারে এক কাজ

নিজের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এমনটা আমাদের প্রায়ই হয় যে কাজে মনোযোগ দিতে চাচ্ছি, কিন্ত কোনো কারণে কাজ কিছুতেই আগাচ্ছে না।

এতে হতাশা আরো বেড়ে যায় এবং নিজের ওপর আমরা সন্দেহ করা শুরু করি। মনে হতে থাকে, “হয়ত আজকের দিনটা আমার বিশ্রাম নেয়া উচিত।”

আবার মনে হয়, “হয়ত অন্য কাজ করাই এখন ঠিক হবে। কিছুক্ষণ পর যখন আবার কাজ করতে বসব তখন মনোযোগ ফিরে আসবে আর অর্ধেক সময়ে কাজ শেষ হয়ে যাবে।”

আবার এও মনে হয়, “খারাপ ভাবে কাজ করার কোনো মানে নাই। এখন কাজ করলে হয়ত সেটা এত বেশি খারাপ হবে যে আবার পুরাটা প্রথম থেকে করা লাগবে। এর চেয়ে ভালো যতক্ষণ সম্পূর্ণ প্রস্তত না হই, ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করি।”

এককথায় আপনার কাজ বাদ দিয়ে অন্য কিছু করতে ইচ্ছা করে।

মনের এই ইচ্ছা যদি থামাতে চান, সেটাও কিন্ত মাল্টিটাস্কিংই হবে! কারণ আপনি একটা কাজ করছেন কিন্ত আপনার চিন্তায় চলছে অন্য কিছু। এর চেয়ে ভাল, নিজের সাথে বোঝাপড়া করা। আমি কি এখন একটু রেস্ট নেব নাকি আগামীকাল কাজ শেষ করে অনেকক্ষণ আরাম করব? পরেরটা কি বেশি আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে না? যদি তাই হয় তাহলে প্রথমটার আকর্ষণ আপনার কাছে কমে যাবে।

আপনার হয়ত এখন একটু ঢিলামি করতে ইচ্ছা করছে। কিন্ত এর চেয়ে ভাল কি এটা না যে টানা এক বা দুই দিন ধরে কোনো কাজই করলেন না, সারাটা সময় আরামেই কাটালেন?

 

৪. ছোটখাটো বিষয়ও ভুলে গেলে হবে না

মন দিয়ে একটা কাজ করা শুধু কীভাবে কাজ করছেন তার ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে সবকিছুর ওপরেই। এমনকি ছোটখাটো যেসব অভ্যাস আপনি তৈরি করছেন তার ওপরেও।

ধরুন আপনি সাধারণত লাঞ্চ ব্রেকের সময় মোবাইলে ই-মেইল, মেসেজ চেক করেন। আপনার কাছে মনে হতে পারে এটা এমন আর কী। কিন্ত এরপরে আপনি যখন একটা কাজে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করবেন, একসাথে দুই কাজ করার অভ্যাস সেটাতে বাধা তৈরি করবে।

যখন আমাদের জীবনযাপনের অভ্যাসে সামঞ্জস্য থাকে না, আমরা একসাথে একাধিক কাজ করি। আবার এর উল্টোটাও সত্য। যখন আমরা ছোটখাটো বিষয়গুলি মনোযোগ দিয়ে করতে পারব, তখন আমাদের জন্য একটা কাজ করায় দক্ষ হওয়া সহজ হবে।

  • খাবার খেতে খেতে ই-মেইল চেক করবেন না।
  • অন্যদের সাথে কথা বলার সময় কখনো মোবাইল চেক করবেন না।
  • অবসর সময়ে কাজের কথা মনে মনে ভাববেন না।

তাই যদি একটা কাজ করায় মনোযোগ রাখতে আপনার সমস্যা হয়, এমন ছোট ছোট অভ্যাস তৈরি করা দিয়ে শুরু করতে পারেন।

 

৫. সিস্টেম মেনে করে কাজ করুন

আপনি যখন নিশ্চিত না আপনার কী করা উচিত, সেই সময় সিদ্ধান্তহীনতায় সময় নষ্ট হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আপনি হয়ত কাজের সময় অন্য কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। মানে আপনি মনে মনে একসাথে একাধিক কাজ করছেন, অর্থাৎ মাল্টিটাস্কিং করছেন!

এই অভ্যাস বাদ দেয়ার জন্য আপনাকে একটা প্রোডাক্টিভিটি সিস্টেম তৈরি করতে হবে।

  • উদ্দেশ্যহীনভাবে কাজ না করে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করুন।
  • একটা চেকলিস্ট বা ফ্লো-চার্ট তৈরি করে রাখুন, যেটা দেখে বুঝবেন প্রজেক্টের কাজ কতদূর আগালো এবং শেষ করার জন্য আর কতটুকু কাজ বাকি।
  • কাজ করা শেষ হয়ে গেলে, কী কী করলেন এবং কী কী করা বাকি সেগুলির একটা সারাংশ তৈরি করুন। এগুলি লিখে রাখলে আপনার মাথা থেকে এ বিষয়ক চিন্তা চলে যাবে। ফলে এক কাজের পর অন্য কাজ শুরু করা সহজ লাগবে।
  • বড় কাজগুলিকে ২ মিনিটের ছোট ছোট কাজ আকারে আলাদা করুন। কাজের গতি বাড়ানোর প্রয়োজন পড়লে তখন আপনার জন্য বিষয়টা সহজ হবে।

আরো পড়ুন: টাইম ব্লকিং কাজ করছে না—এই ৮টি কৌশল ব্যবহার করুন

কাজের মুডে আসতেই যদি আপনার আধা ঘণ্টা লাগে, এর মানে আপনার কাজ করার সিস্টেমে অনেক বাধা আছে। একটা ভালো সিস্টেম মেনে চললে অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবেন। এরপর আস্তে আস্তে কাজের গতি বাড়াতে পারবেন।

 

৬. একটা উদ্দেশ্যমূলক পরিবেশ তৈরি করুন

একবারে এক কাজ

আপনি কেমন পরিবেশে কাজ করতে চান? বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার সময় আপনি নিজেকে কীভাবে দেখতে চান? কিংবা অবসর সময় বা আনন্দ করার সময় আপনি নিজেকে কীভাবে দেখতে চান?

সম্ভবত এ ধরনের কোনো কাজের জন্যই আপনার চারপাশের পরিবেশে কোনো হেরফের হয় না। আপনি হয় মোবাইলের সামনে থাকেন অথবা কম্পিউটারের সামনে এই কাজগুলি করেন। এখানেই আসল সমস্যা।

আপনি যখন একই পরিবেশে সব ধরনের কাজ করেন আপনার মস্তিষ্ক কাজগুলির মধ্যে কোনো পার্থক্য বুঝতে পারে না।

  • আপনার কি ডেস্কে বসে কাজ করার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হয়?
  • অন্য প্রজেক্টের কথা না ভেবে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যায়?
  • যখন বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন তখন কি কাজের কথা ভাবেন?

আপনাকে একটা উদ্দেশ্যমূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে কাজ করতে চান, সেই কাজের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

  • সম্ভব হলে একটা রুম বা রুমের কর্নার কেবল কাজ করার জন্য রাখুন। অন্য রুম বিনোদন, আড্ডা এসব কাজের জন্য ব্যবহার করুন।
  • প্রতিটা আলাদা প্রজেক্টের জন্য আলাদা ভার্চুয়াল ডেস্কটপ তৈরি করুন।
  • আপনি যেখানে কাজ করেন বিরতি নেয়ার জন্য সে জায়গা বাদে অন্য জায়গা ব্যবহার করুন। আবার প্রত্যেকটা প্রজেক্টের জন্য আলাদাভাবে নিজের মতো করে পরিবর্তন আনতে পারেন।
  • গানের একটা নির্দিষ্ট প্লে-লিস্ট বাজাতে পারেন।
  • অফিসে একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করলেন, বাসায় আবার আরেকটা প্রজেক্ট নিয়ে।
  • প্রতিটা রুম আলাদা কাজের জন্য ঠিক করে রাখতে পারেন।
  • কাজ অনুযায়ী আপনার কাজের পরিবেশ গোছাতে পারেন।
  • প্রতিটা কাজের জন্য আলাদা টু-ডু লিস্ট তৈরি করতে পারেন।
  • পুরো দিনের সময় আলাদা ব্লকে ভাগ করতে পারেন।
  • সপ্তাহের একদিন এক কাজের জন্য রাখলেন (সোমবারে প্রশাসনিক কাজ, মঙ্গলবারে একটা প্রজেক্টের কাজ, বুধবারে দলের সবার সাথে কাজ।)

 

৭. চারপাশের পরিবেশকে কাজের উপযোগী করে তোলা

আপনার অজান্তেই মস্তিষ্ক প্রতি মুহূর্তে তার চারপাশে কী হচ্ছে বিশ্লেষণ করতে থাকে। কিন্ত যখন আপনি কাজে মনোযোগ দিতে চান, বিষয়টা আপনার জন্য খারাপ হতে পারে। এটা আপনি দুইভাবে সামলাতে পারেন:

  • মানসিক শক্তি প্রয়োগ করে চারপাশের মনোযোগ বিঘ্নকারী বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন।
  • কাজের জিনিস ছাড়া মনোযোগ নষ্ট করতে পারে, এমন সবকিছু সরিয়ে রাখতে পারেন।
    আপনার মনোযোগ নষ্ট করার মত কিছু না থাকলে মনোযোগ আনা সহজ হয়ে যায়।
    আপনার আশে পাশে কী আছে?

যখন চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করেন, আশেপাশে এমন কিছু রাখবেন না যা আপনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারে। এই বিষয়গুলি এড়িয়ে চলবেন:

  • ফোন হাতের কাছে রাখবেন না, তাহলে মনের অজান্তেই হাতে নিয়ে ফেলবেন। ফোন দূরে সরিয়ে রাখুন।
  • বিছানার কাছে বসে কাজ করলে কিছুক্ষণ পর পর আপনার বিশ্রাম করার ইচ্ছা হতে পারে। তাই বিশ্রামের জায়গা ও কাজের জায়গা আলাদা করে রাখুন।
  • জাংক ফুড, ফাস্ট ফুড বা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার হাতের কাছে থাকলে কিছুক্ষণ পর পর কাজে বিরতি নিতে মন চাইবে। আর আপনার মনোযোগ নষ্ট হবে। তাই এগুলিও দূরে সরিয়ে রাখুন।

অন্যদিকে কাজ করার সুবিধার জন্য যে বিষয়গুলি অবশ্যই করবেন:

  • কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এক জায়গায় রাখুন।
  • কম্পিউটারের পাশে সব সময় একটা পানির বোতল রাখুন, যাতে পানি খেতে ভুলে না যান।
  • আশেপাশের শব্দে মনোযোগ নষ্ট হলে হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন।

সামনে কী দেখা যাচ্ছে?

আপনার সামনে যা আছে তা যেমন আপনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারে আবার আপনাকে ফোকাস করতে সাহায্য করতে পারে। আর যদি মনোযোগ নষ্ট করার কথা বলি তাহলে সবার আগে আসে মোবাইল ফোনের কথা। কাজ করার সময় ফোন অন্য রুমে রেখে আসতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। বা চোখের আড়ালে কোনো ব্যাগ বা ড্রয়ারেও রেখে দিতে পারেন।

এমন আরো কয়েকটা কাজ করতে পারেন:

  • টু-ডু লিস্ট অর্থাৎ কী করতে হবে সেই কাজের লিস্ট তৈরি করে ডায়রিতে ফেলে রাখবেন না। লিস্ট এমন জায়গায় রাখুন, যেমন কম্পিউটারের পাশে, যাতে আপনার সব সময় চোখে পড়ে।
  • যদি কাজ করার পর জিমে ব্যায়াম করতে যেতে চান, জিমে যাওয়ার ব্যাগ গুছিয়ে চোখের সামনে রেখে দিন। আপনার জিমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
  • সবসময় একটা টাইমার বা ঘড়ি চোখের সামনে রাখুন। তাহলে আপনার সময় মেনে কাজ করার দক্ষতা বাড়বে। নতুবা কোনো অপ্রয়োজনীয় চিন্তায় ডুবে গিয়ে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

কখনও কি একসাথে একাধিক কাজ করা উচিত?

মনে রাখা দরকার, মাঝে মাঝে একসাথে একাধিক কাজ করা ভাল। ধরুন আপনি যদি ঘরবাড়ি ঝাড়ু দেয়া বা পরিষ্কার করার মত কাজ করার সাথে হেডফোনে গান বা পডকাস্ট  শোনেন এটা আপনার কাজে দেবে। এমন কাজ আপনাকে বেছে নিতে হবে যেখানে কেবল একটাতে আপনার মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন।

এছাড়া আপনার দিনের সবচেয়ে জরুরি কাজ যখন কোনো কারণে দেরি হয়ে যায়, তখন আপনি অন্য কাজে হাত দিতে পারেন। ধরুন সেই কাজ শুরু করতে এখনো তিন ঘণ্টা বাকি। এই সময়টা আপনি নষ্ট না করে অন্য কাজ শুরু করুন। আবার যখন আপনার মূল কাজের সময় হবে, সেটাতে মনোযোগ দিলেন।

আরো পড়ুন: প্রেজেন্টিজম: আপনি কি কলিগদের দেখানোর জন্য বেশি কাজ করেন

এইভাবে অভ্যাস তৈরি করার ফলে আপনি আপনার কাজে দক্ষ হয়ে উঠবেন। এখান থেকে আপনি যে বড় সুবিধাগুলি পাবেন তা হলো:

  • আপনি এত বেশি কাজ করতে পারবেন যে মনে হবে আপনার কোনো সুপারপাওয়ার আছে।
  • যেহেতু সবচেয়ে জরুরি কাজে আপনার ১০০% দিচ্ছেন আপনার মনের মধ্যে সন্তষ্টি আসবে (সম্ভবত আপনার কাজও তাড়াতাড়ি শেষ হবে)।
  • আপনার হাতে বাকি সব প্রজেক্টে কাজ করার জন্য বেশি সময় থাকবে।
  • সপ্তাহ শেষে আপনি অনেক অবসর পাবেন।
  • আপনি যেহেতু কেবল বর্তমান নিয়ে ভাবছেন, অবসর সময় অনেক বেশি উপভোগ করতে পারবেন। অবসরের পর কাজ শুরু করার সময়ও বেশ চাঙ্গা থাকবেন।

একসাথে অনেক কাজ করতে চান বা না চান, যখন একটা কাজে মনোযোগ দেয়ার অভ্যাস রপ্ত করতে পারবেন, সব কাজই একসময় অনেক দ্রুত শেষ করতে পারবেন।

সূত্র. ড্যান সিলভেস্ট্রে ডটকম