বাজারে আসা টমেটোতে আগের মতো সেই রূপ, রস, গন্ধ বা স্বাদ পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ টমেটো থাকে শুকনা, বিস্বাদ এবং চুপসানো।
সম্প্রতি এই সমস্যার কারণ বের করতে চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। এ কাজ করতে গিয়ে তারা ১০০টি টমেটোর জিনতাত্ত্বিক গঠন বিশ্লেষণ করেন। এবং টমেটোর স্বাদের পিছনে যে সব জিন সেগুলিকে চিহ্নিত করেন তারা।
সায়েন্স পত্রিকা থেকে জানা গেছে, গবেষণায় পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী সেই বিশেষ জিন ব্যবহার করে কৃষক অথবা টমেটো প্রজননবিদগণ উন্নতমানের টমেটো উৎপাদন করতে পারেন।
যে সব জটিল রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণের কারণে টমেটোর স্বাদ তৈরি হয় গত ৫০ বছর ধরে সে সব বিলীন হয়ে আসছে। টমেটোর রঙ, আকৃতি, স্থায়িত্ব বা ফল পাকার উপযুক্ত সময় ইত্যাদি বদলাতে গিয়ে টমেটোর প্রজাতিকরণ করতে হয়েছে। তা করতে গিয়ে স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে টমেটোর।
টমেটোর রঙ, আকৃতি, স্থায়িত্ব বা ফল পাকার উপযুক্ত সময় ইত্যাদি বাড়ানোর জন্য টমেটোর প্রজাতিকরণ করতে হয়েছে। তা করতে গিয়ে স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে টমেটোর।
এই সময়ে এসে প্রজননবিদদের পক্ষে টমেটোর স্বাদ বাড়ানো বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। কেননা স্বাদ বাড়ানোর পর্যাপ্ত উপাদান আর নাই। এছাড়াও ভালো স্বাদ তৈরি করে যে সব জিন তার কোড আপাতদৃষ্টিতে খুব এলোমেলো এবং খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য।
বিশ্বব্যাপী টমেটো উৎপাদনে এগিয়ে চীন, এর পরে যুক্তরাষ্ট্র। টমেটো বিজনেসে প্রথম স্থান ধরে রাখতে ও এর আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে আছে চীন। স্বাদ বাড়লে বাণিজ্য বাড়বে, তাই চীন সরকার এই প্রকল্পে আংশিক অনুদান বরাদ্দ রাখছে।
প্রকল্প সহকারী প্রধান সানওয়েন হুয়াং ওয়াল স্ট্রিট পত্রিকায় জানান, আমেরিকানদের মত অত পাস্তা সস বা কেচাপ আমরা খাই না। সাধারণত কাঁচা নয়ত ভেজেই খাই আমরা টমেটো, তাই স্বাদ আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু চীন ক্রমান্বয়ে ধনী দেশে বদলে যাচ্ছে, তাই সুস্বাদু খাবারের চাহিদাও আমাদের বাড়ছে।
বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক একটি দল তাদের সে চাহিদা অনুযায়ী স্বাদ বৃদ্ধির রাসায়নিক উপাদান কী কী পাওয়া যায় তা খুঁজতে শুরু করেছেন। তারা দেখেছেন টমেটোর স্বাদ, ঘনত্ব, প্রাচুর্য নির্ভর করে ১৩টি স্বাদ উৎপাদনকারী চিনি এবং উদ্বায়ী রাসায়নিক উপাদানের ওপর।
একটি বক্তব্যে ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির উদ্যান পালন বিজ্ঞানের অধ্যাপক হ্যারি ক্লি বলেন, “আমরা আধুনিক টমেটোতে সেই সব স্বাদ নির্ভরকারী রাসায়নিক উপাদানের অভাবজনিত কারণ শনাক্ত করতে চেয়েছি। টমেটোর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জিন থেকে অধিক চাহিদার অ্যালিলগুলি হারিয়ে গেছে বলে এমন বিস্বাদে পরিণত হচ্ছে টমেটো।”
৩৯৮ ধরনের আধুনিক, ঐতিহাসিক এবং বুনো প্রজাতির টমেটোর জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে তারা ভালো অ্যালিলের সন্ধান পেয়েছেন যার কোড টমেটোর স্বাদ নির্ভরকারী রাসায়নিক উপাদানের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন বিজ্ঞানীরা জানেন স্বাদ বাড়ানোর জিনগুলি কোথায় পাওয়া যাবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যেই নতুন প্রজাতির টমেটো আসছে বাজারে। এবং আগের চেয়ে তা বেশি সুস্বাদু হবে। তা হবে এখন অব্দি হওয়া সবচেয়ে সেরা টমেটো। টমেটোর জগতে অসাধারণ কিছু একটা ঘটতে চলেছে।