ঝিলমিল জলরাশির উপরের আকাশে ২৬৮ মিটার উচ্চতায় ভাসমান অদ্ভূত এক ভবনের নকশা করে চমকে দিলেন বিখ্যাত জাপানি স্থপতি সউ ফুজিমোতো।
চীনের শেনঝেন প্রদেশের কিয়ানহাইওয়ান জেলায় কিয়ানহাই উপসাগরের তীরে এই অদ্ভুত ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। মোট ৯৯টি টাওয়ারের সমন্বয়ে একটি গুচ্ছ ভবন হবে এটি। সউ ফুজিমোতোর প্রতিষ্ঠান ভবনটিকে বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের যুগে ভবিষ্যৎ সমাজের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
কিয়ানহাইয়ের নিউ সিটি সেন্টার ল্যান্ডমার্ক প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে এই টাওয়ারের ডিজাইন করা হয়। কিয়ানহাই জেলায় বর্তমানে যে দ্রুত ও ব্যাপক নগরায়ন হচ্ছে তার উদযাপনে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল।
“২১ শতকে একটি নতুন ‘টাওয়ার’ কী অর্থ বহন করে? মনোযোগ আকর্ষণ করার পাশাপাশি একটি টাওয়ার কীভাবে বিবর্তিত হতে পারে, যেমন আকর্ষণ আইফেল টাওয়ার করে?”—এই জিজ্ঞাসার উপর ভিত্তি করেই নিজের প্রস্তাবটি হাজির করেন এই বিশ্বখ্যাত জাপানি স্থপতি।
এই কাল্পনিক স্থাপনায় স্টিল, কংক্রিট এবং কার্বন ফাইবার ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। যা আকাশচুম্বী শহরগুলির ভবিষ্যতের ওপর নতুন আলো ফেলছে, যেখানে শহরগুলি আয়তনে না বেড়ে শুধু উচ্চতায় বাড়বে। ভবনটিতে ত্রিমাত্রিক প্রদর্শনী স্থানের মতো একটি আকাশ দেখার প্ল্যাটফর্মও রাখা হয়েছে, যা একটি রেস্তোরা এবং ক্যাফে হিসাবেও কাজ করবে।
উপর থেকে দেখতে ভাসমান মনে হওয়া ৯৯টি টাওয়ারের বেশিরভাগই ভবনটির মূল শরীরের সাথে সংযুক্ত থাকবে যার মাথাটা হবে প্রশস্ত এবং চ্যাপ্টা আকৃতির। ডিজাইন টিমের পর্যবেক্ষণ মতে, “ভবনটির আকৃতি একটি কন্টেইনার বা ফুলের মতো, একগুচ্ছ দ্বীপ, সম্ভবত একটি মেঘের স্প্রে, এমনকি ভবিষ্যতের একটি আকাশচারী শহর।”
ভবনটির মাঝখানের অংশ এই শহুরে মনুমেন্টের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, যা ওপর থেকে ঝোলানো বলে মনে হবে। যার চারধারে থাকা টেনশন ক্যাবলগুলি লোড স্থানান্তরে সহায়তা করবে, যেগুলি দেখতে বরফের তীক্ষ্ণ ফালির মতো, বা একটি ঝলকানো জলপ্রপাতের মতো যা নিচে উপসাগরে গিয়ে পড়ছে। ফুজিমোতো বলেন, “এর মাথায় একটি শক্তিশালী আনুভূমিক সমতল ক্ষেত্র থাকবে, যা ধাপে ধাপে নিচের দিকে যেতে যেতে অদৃশ্য হয়ে যাবে।”
ভবিষ্যতের এই স্থাপত্যের ভেতরটা উচ্চ মানের তাপ নিরোধক কাচ দিয়ে সুরক্ষিত থাকবে, অন্যদিকে ছিদ্রযুক্ত ফ্যাস্যাড বাতাসের চাপ কমাবে। কাচ ঘন ফ্যাস্যাড পকেটগুলির সাথে মিলিত হবে যা আলো ফিল্টার করবে এবং রোদের তাপ কমাবে। রোদের তাপ কমাতে ভবনটির ছাদে সবুজ গাছগাছালি লাগানোর ব্যবস্থা রাখা হবে। সেখানে একটি জলাধারও থাকবে যাতে গাছগুলিতে জলসেচ দেওয়ার জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হবে। কাঠামোটির সাথে একটি উল্লম্ব উইন্ড টারবাইন একীভূত করা হবে যা থেকে উৎপাদিত হবে বিদ্যুৎ।
সউ ফুজিমোতো আর্কিটেক্টস জানায়, “বিচারকরা স্থির করেছিলেন কোনো প্রথম পুরস্কার দেওয়া হবে না এবং শীর্ষ র্যাংক দ্বিতীয় পুরষ্কারে যাবে, যা আমরা জিতেছি।”
১৯৭১ সালে জাপানের হোক্কাইদোতে জন্মগ্রহণ করা সউ ফুজিমোতো ১৯৯৪ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। তার ৬ বছর পরে ২০০০ সালে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠান সউ ফুজিমোতো আর্কিটেক্টস প্রতিষ্ঠা করেন। রুচিকর হালকা কাঠামো এবং বায়ু চলাচলযোগ্য দেয়াল নির্মাণের জন্য বিখ্যাত ফুজিমোতো অনেক বাড়ির নকশা করেছেন। তাকে ২০১৩ সালে লন্ডনে অস্থায়ী সর্পেনটাইন গ্যালারি প্যাভিলিয়নের নকশার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল।
২০০৮ সালে তিনি Sou Fujimoto: Primitive Future শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। এতে তার প্রকল্পগুলির সার সংক্ষেপ তুলে ধরে হয়েছে।
বইটিতে তার “আদিম ভবিষ্যৎ” (primitive future) ধারণার বিশ্লেষণ এবং কীভাবে তিনি তার কাজে এই ধারণা কাজে লাগান তা ব্যখ্যা করা হয়েছে।
২০০০ সালে সউ ফুজিমোতো আর্কিটেক্টস প্রতিষ্ঠার পরে ফুজিমোতো জাপান এবং ইউরোপজুড়ে ভবনের ডিজাইন করা শুরু করেন। “কোনো ভবনের কার্যকারিতা স্থির হয় মূলত মানুষের আচরণ দিয়ে” তার এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই সউ ফুজিমোতোর অনেকগুলি স্থাপনা তৈরি হয়েছে।
২০১৯ সালে প্যারিসকে “পুনর্নির্মাণ” করার জন্য যে ২৩ জন স্থপতিকে নির্বাচন করা হয়েছে ফুজিমোতো তাদের একজন। এই প্রকল্পে তার অবদানের মধ্যে রয়েছে প্যারিসের ১৭ তম স্থানীয় সরকার উপবিভাগের একটি প্লটের পুনর্ডিজাইন।
সউ ফুজিমোতো আর্কিটেক্টস টিম জানিয়েছে, তাদের এই ডিজাইন প্রকল্প ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হওয়া স্বত্বেও এটি বাস্তবায়ন করা হবে না।