পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত পারফিউমের নাম ‘শ্যানেল নাম্বার ফাইভ’ (Chanel No. 5)। বর্তমান প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীরা এই কালজয়ী পারফিউমের ব্যাপারে না জানলেও ইতিহাসে দীর্ঘ সময় এই পারফিউমের আলাপ ছিল বিশ্বজুড়ে।
আজ থেকে ১০২ বছর আগে, ১৯২১ সালের ৫ই মে পারফিউমটি বাজারে আসে। পারফিউমটির চতুর্ভুজ আকৃতির আইকনিক বোতল এবং লেবু আর ফুলের অসাধারণ সুগন্ধের কারণে Chanel No. 5 অভিজাতশ্রেণী ও আবেদনময়ী নারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল
বিখ্যাত ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার কোকো শ্যানেল এর প্রথম পারফিউম এটি। প্রথম পারফিউমের নাম ‘নাম্বার ফাইভ’ রাখাটা বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। মনে হতে পারে, শ্যানেল এর তৈরি করা প্রথম পারফিউমগুলির মধ্যে এটি পঞ্চম।
আসলে তা নয়। শ্যানেল সবসময় ব্যক্তিগতভাবে ৫ সংখ্যাটির প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন। ৫ নম্বরের প্রতি ভালবাসা অনাথাশ্রমে কাটানো শৈশব থেকেই শুরু হয়। যেমন, অনাথাশ্রমের পথটি ছিল ৫ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কথিত আছে, যখন শ্যানেলকে তার নতুন পারফিউমের জন্য অনেকগুলি প্রোটোটাইপ দেয়া হয়, তিনি ৫ নম্বর শিশিটি বেছে নিয়েছিলেন। এবং শ্যানেল ঠিক করেন, তার নতুন পারফিউমটি বছরের পঞ্চম মাসের পঞ্চম দিনে মুক্তি দেবেন। তাই ঘটেছিল। ১৯২১ সালের ৫ মে, Chanel No. 5 প্রথম বারের মত মুক্তি পায়।
আজও শ্যানেল ফ্যাশন হাউজ তাদের প্রতিষ্ঠাতার পছন্দের নম্বরের সম্মানে শুধুমাত্র মাসের পঞ্চম দিনেই তাদের নতুন পারফিউমের কালেকশন প্রদর্শন করে।
পারফিউমের জগতে শ্যানেল 5 এত বিখ্যাত হয়ে ওঠার একটি কারণ হল, এর সাথে যুক্ত বিভিন্ন বিখ্যাত মুখ। ১৯৩৭ সালে নারীদের বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘হার্পার’স বাজার’-এ শ্যানেল নিজেই তার পারফিউমটি সাথে নিয়ে উপস্থিত হন।
আরো পড়ুন: ক্লার্ক পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ
এরপর থেকে এই সুগন্ধী অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি তাদের বিজ্ঞাপনে এবং ব্যক্তিগত সুপারিশের মাধ্যমে প্রচার করেছেন। লাইফ ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় মেরিলিন মনরোকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি শোবার সময় কী পরিধান করেন। প্রশ্নের জবাবে শুধুমাত্র এই পারফিউমের নামই উল্লেখ করেছিলেন মনরো।
এর ফলে শ্যানেল ফাইভের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। বহু বিখ্যাত সেলিব্রেটি Chanel No. 5 এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কাত্রিন দ্যনোভ, নিকোল কিডম্যান, ব্র্যাড পিট এবং বর্তমান সময়ে মারিয়োঁ কোতিয়ার।
Chanel No. 5 পারফিউমটি বিখ্যাত হলেও এটি কোকো শ্যানেলের জীবনের অন্ধকার দিকের সাথেও যুক্ত। ১৯২৪ সালে, তিনি ‘পারফুম শ্যানেল’ তৈরির জন্য দুই ইহুদি ভাই পিয়ের ও পল ওয়্যারথাইমারের সাথে একটি চুক্তি করেন। কোম্পানির উৎপাদন ব্যবস্থার পুরোটাই পরিচালনা করতেন ওয়্যারথাইমার ভাইয়েরা। চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসার শেয়ারের ৭০ শতাংশের মালিকানা ছিল ইহুদি এই দুই ভাইয়ের কাছে।
এদিকে শ্যানেল ব্যবসার লাভের মাত্র ৩০ শতাংশ নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই যখন নাৎসিরা ক্ষমতায় আসে, শ্যানেল জার্মানদেরকে ওয়্যারথাইমার ভাইদের ব্যবসা দখল করে নিয়ে তার কাছে হস্তান্তর করতে অনুরোধ জানায়।
ওয়্যারথাইমাররা পরবর্তীতে নাৎসিদের কবল থেকে বেঁচে যায় এবং যুদ্ধের পরে আবারও ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। এর বিরুদ্ধে শ্যানেল আইনি লড়াই শুরু করেন। তবে এই আইনি লড়াই চলতে থাকলে যুদ্ধের সময় শ্যানেল এর বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত অবস্থান প্রকাশ্যে চলে আসতে পারে ভেবে তিনি ক্ষান্ত দেন। এবং ওয়্যারথাইমার ভাইদের সাথে মিটমাট করে ফেলেন।
সূত্র. ইউরোনিউজ, ৫ মে ২০২৩
অনুবাদ: জুবায়েদ দ্বীপ