ভবিষ্যতের কোনো ঘটনায়  আপনি কীরকম অনুভব করবেন তা এখনই বোঝার চেষ্টাকে সাইকোলজিস্টরা বলেন ‘এফেক্টিভ ফোরকাস্টিং ‘বা ‘অনুভূতিমূলক পূর্বাভাস’। তারা মনে করেন, আমরা এই কাজ খুব একটা ভাল পারি না।  ‘বর্তমান’-এর ফিল্টার দিয়ে ‘ভবিষ্যৎ’ দেখতে সমস্যা হয় আমাদের। ফলে  কী আমাদের ভবিষ্যতে সুখের যোগান দিতে পারবে, সে হিসাবে প্রায়ই গড়বড় হয়ে যায়।  এ বিষয়ক গবেষণা ও আবিষ্কার নিয়ে ২০০৬ সালে নিউ ইয়র্কের আলফ্রেড এ. কা’নফ প্রকাশনী থেকে বের হয় আমেরিকান সোশ্যাল সাইকোলজিস্ট ড্যানিয়েল গিলবার্টের বই  স্টাম্বলিং অন হ্যাপিনেস’।  ১৯৯৬ সাল থেকে আমেরিকার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টে প্রফেসর হিসাবে কাজ করছেন গিলবার্ট। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস প্রদেশের ক্যামব্রিজ শহরে থাকেন তিনি। নিচে থাকছে পেঙ্গুইন র‍্যানডম হাউজ ওয়েবসাইটের প্রশ্নোত্তর সেকশনে  প্রকাশিত ‘স্টাম্বলিং অন হ্যাপিনেস’ বই সম্পর্কিত সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ।

সাইকোলজিস্ট ড্যানিয়েল গিলবার্টের সাক্ষাৎকার

অনুবাদ: আয়মান আসিব স্বাধীন


আপনার কাছে ‘অনুভূতিমূলক পূর্বাভাস’ (এফেক্টিভ ফোরকাস্টিং) এর সংজ্ঞা কী? বেশ কিছু জায়গায় আপনি বলেছেন, আপনি নাকি সুখ নিয়ে গবেষণা করেন—এ দুইটা বিষয় ঠিক কীভাবে যুক্ত?

মানুষজন যখন এমন আন্দাজ করার চেষ্টা করে, ভবিষ্যতে ঠিক কোন জিনিসগুলি তাদেরকে সুখী করে তুলতে পারবে, তখন তাদের হিসাবে ভুল হয়। এ প্রক্রিয়াকেই টিম উইলসন এবং আমি ‘এফেক্টিভ ফোরকাস্টিং’ বলেছি। “আমার মনে হয় আমি ভ্যানিলার চাইতে বরং চকলেট বেশি প্রেফার করব” অথবা “ব্যাঞ্জোবাদক হওয়ার চাইতে আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা বেশি আমার”—যিনি জীবনে কখনো এমন কিছু বলেছেন, তিনি আসলে ‘এফেক্টিভ ফোরকাস্ট’ই করেছেন। এফেক্টিভ ফোরকাস্টিং করার পর তাদেরকে কখনো কখনো কষ্ট করে বুঝে নিতে হয় যে তাদের ভুল হয়েছিল। ‘স্টাম্বলিং অন হ্যাপিনেস’ বইয়ে এটাই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে যে কেন এবং কীভাবে আমাদের মস্তিষ্কের কাঠামো এধরনের ভুল করার জন্যই গঠিত, আর এক্ষেত্রে কী কী করার আছে আমাদের।

এফেক্টিভ ফোরকাস্টিং নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন কীভাবে? এ বিষয়ে কোন জিনিসটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী করে?

দশ বা পনেরো বছর আগে যখন আমার ডিভোর্সের কাজ চলছিল, তখন হুট করেই আমার গুরু মারা গেলেন। আমার টিনএজ ছেলেটাও ভাল সমস্যায় পড়েছে তখন, আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্কও বেশ খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমার অবস্থা… খুব একটা খারাপ ছিল না আসলে। এসব ঘটনার এক বছর আগে যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন, এর মধ্য থেকে যেকোনো একটা ঘটনার মুখোমুখি হলেও আমার কী হাল হবে, আমি হয়ত বলতাম খুবই লম্বা সময়ের জন্য একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ব আমি। তেমনটা কিন্তু হয় নাই। আমি অবশ্যই খুব উচ্ছ্বসিত ছিলাম না, তবে যতটা বিচলিত হয়ে পড়ব বলে মনে করতাম তার ধারেকাছেও কিছু হয় নি। আর তখনই আমি চিন্তা করা শুরু করলাম যে, এ ধরনের দুর্ঘটনার আবেগজাত ফলাফল নিয়ে আমার আগের ধারণায় যে ভুল হত, তা কি কেবল আমারই হয় নাকি অন্যরাও একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান। এরপর আমি আর মনোবিদ টিম উইলসন একসাথে কাজ করা শুরু করি।

বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা করলাম দু’জনে মিলে। যা জানতে পারলাম তা রীতিমত হতবুদ্ধি করে দিল আমাদের। ভবিষ্যতের ঘটনাবলির প্রতি তাদের আবেগী অবস্থান কী রকম হবে, সে সম্বন্ধে নিয়মিতই মানুষ নাটকীয় সব ভুল ধারণা করে থাকে। এসব ফলাফল থেকে একটা নির্দিষ্ট ধারার অনুসন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমি, যা এখনো শেষ হয় নাই। আর ‘স্টাম্বলিং অন হ্যাপিনেস’ হল এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি তার রিপোর্ট। আমি যে প্রশ্নটা নিজের কাছে করেছিলাম, তার উত্তর খুঁজে পেতে আমার পনেরো বছর লেগেছে। সামনে যে লোকটা এই প্রশ্ন করবেন, তিনি যেন একটু তাড়াতাড়ি এর উত্তর খুঁজে পান সেজন্যেই বইটা লিখেছি আমি।

এই ফিল্ডে আপনার গবেষণা দিয়ে ঠিক কী ধরনের অর্জন আশা করছেন আপনি? আপনি কি মনে করেন এ বিষয়ে উত্তরোত্তর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তগুলি মানুষের ওপর কীরকম প্রভাব রাখবে তা নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যাবে?

আমি বরং বলব যে, আমরা এফেক্টিভ ফোরকাস্টিংয়ের ভুলগুলিকে বোঝার চেষ্টা করছি। যাতে এসব ভ্রান্তি দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করা সম্ভব হয়। কিন্তু সমস্যা হল ফোরকাস্টিং বা পূর্বাভাসজনিত ভ্রান্তি ঠিক কোনো ‘অসুস্থতা’ না যার ‘নিরাময়’ খুঁজে বের করতে হবে। অনেকে মনে করেন, আন্দাজে এসব ভুল হওয়া হয়ত আমাদের জীবনে দরকারি ভূমিকা রাখে। সবকিছু ঠিকঠাক মত হলে আমাদের কতটা ভাল লাগবে অথবা বিপদের সময় আমরা কতটা খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাব—তার মাত্রা যদি আমরা বাস্তবের চাইতে বেশি ধরে রাখি, তাহলে দুর্ঘটনা এড়িয়ে সবকিছু ঠিকমত করার জন্য আরো বেশি জোর দিব আমরা।

উদ্বেগ ও ভয় খুবই প্রয়োজনীয় দু’টি অনুভূতি, যা আমাদেরকে গরম চুলায় হাত দেওয়া, পরকীয়া করা বা আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে খোলা রাস্তায় খেলতে দেওয়া থেকে বিরত রাখে। সন্তানসন্ততি ও টাকা-পয়সা যে শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে প্রচন্ড রকমের খুশি করতে পারে না কিংবা ডিভোর্স আর রোগবালাই যে আমাদেরকে দুঃখের চোটে একেবারে বেপরোয়া করে তোলে না, সে খবর আগে থেকেই পেয়ে গেলে কী আমাদের জন্য ভাল হবে? হতে পারে… আবার নাও হতে পারে।

তবে আমার দৃঢ় ধারণা, সবকিছু বিবেচনা করে দেখলে, ভবিষ্যতের কোনো বিব্রতকর ও পীড়াদায়ক পরিস্থিতি আর ট্র‍্যাজেডি আমাদের আবেগে কীরকম প্রভাব ফেলবে তা আগে থেকে সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হলে আমাদের উপকারই হবে বেশি। ধরেন, আপনি পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন; আকাশে প্রচণ্ড বিদ্যুৎ চমক আর ঝড় হচ্ছে চারিদিকে। এখন আপনার যাত্রী জানতে চাইলেন, এ অবস্থায় গাড়ির ওয়াইপার ঘোরানো বন্ধ করে দিলে কোনো লাভ হবে কিনা। এটা কিন্তু ঠিক, ওয়াইপার বন্ধ করলে কিছু সুবিধা অবশ্যই পাওয়া যাবে। যেমন, ওয়াইপারের বিরক্তিকর ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দটা তো অন্তত আর হবে না। তবে এটাও জোর গলায় বলা যায় যে, ওয়াইপার বন্ধ করায় সুবিধার চাইতে বরং ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ গাড়ি চালানোর সময় আপনি ঠিক কোথায় যাচ্ছেন সেটা দেখে নেওয়া সাধারণত ভাল একটা আইডিয়া—আর ওয়াইপার চালু থাকার এ সুবিধাটা তো আমাদের কাছে খুবই পরিষ্কার।

যাই হোক, গাড়ি চালানোর মত করে আমরা সবাই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই আমার মাথায়ও একই যুক্তি কাজ করে। এফেক্টিভ ফোরকাস্টিংয়ের যদি কোনো গুপ্ত সুবিধা থেকেও থাকে, তার সাথে সংশ্লিষ্ট সব ঝুঁকির পরিমাণ সেসব সুবিধাকে সহজেই বাতিল করে দিবে।

আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আমার গবেষণাকাজ দিয়ে ঠিক কী অর্জন করার আশা করছি আমি। এর একটা বাস্তবিক পরিণতির কথা তো বললামই। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, ভিতরে ভিতরে আমি এমন একজন লোক যে কিনা হিউম্যান নেচার নিয়ে অনেক বেশি কৌতূহলী। আমার রিসার্চ থেকে আমি আসলে আরো গভীরভাবে বুঝতে চাই, আমরা কারা এবং আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কী। এই গবেষণা থেকে যদি ব্যবহারিক কোনো সুফল পাওয়া যায়, আমি খুশি। না পাওয়া গেলেও বিন্দুমাত্র দুঃশ্চিন্তা নাই আমার। আচ্ছা, ইউনিভার্স কীভাবে শুরু হয়েছিল তা জানতে পারা বা কোনো শূককীটের বিবর্তন বুঝতে পারার প্রায়োগিক উপকারিতা কী? আমার মনে হয় আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে যে, কোনো জ্ঞান কতটুকু মূল্যবান তা নির্ভর করে আমাদের জীবনে তাৎক্ষণিক কোনো বাস্তবিক উন্নয়ন ঘটাতে সেই জ্ঞান কতটা কাজে আসছে তার উপর। অথচ জ্ঞানই হল চূড়ান্ত উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্য হাসিলের পন্থা না।

এই গবেষণা ক্ষেত্র আগামী দশ বছরে কোথায় পৌঁছাতে পারে বলে ভাবছেন আপনি? এমন সাম্প্রতিক বা নতুন কোনো আবিষ্কার আছে কি যা আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান?

বিজ্ঞানের মজার ব্যাপার হল, কেউ জানে না সামনে তা কোথায় নিয়ে যাবে আমাদেরকে। বিজ্ঞান হল এমন এক ববস্লেজ গাড়ি যার স্টিয়ারিংয়ে কেউ বসে নেই। আমরা যদি বলতেই পারতাম যে আগামী দশকে আমরা কী আবিষ্কার করতে পারব, তাহলে অলরেডি তা আবিষ্কার করে ফেলতাম আমরা। তবে শুধু একটা ব্যাপার আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি যে, আপনি বা আমি কেউই এই গবেষণাক্ষেত্রের গতিবিধির ব্যাপারে আপনার প্রশ্নের জবাব একদম সঠিকভাবে দিতে পারব না। বিজ্ঞানের গল্প সবসময় অতীতের দিকে তাকিয়েই বলা হয়।

তবে সাম্প্রতিক আবিষ্কারের কথা বললে… খুবই প্রতিভাবান একজন সহকর্মী আছেন আমার (ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া’র টিমোথি উইলসন)। আমাদের দু’জনেরই ল্যাবরেটরি ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রছাত্রী আছেন। তার মানে প্রতি মাসেই আমরা এমন নতুন কিছু আবিষ্কার করি যা দেখে খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে যাই আমরা (অবশ্য যতটা উচ্ছ্বাস কাজ করবে বলে ভেবে রাখি, ততটা না হলেও প্রত্যাশিত পরিমাণের খুব কাছাকাছি যায়)। উদাহরণ হিসাবে কয়েকদিন আগে করা আমাদের একটা গবেষণার কথা বলা যায়।

সেখান থেকে জানা গেল যে, অতীতে ঘটে যাওয়া প্রায় যেকোনো কিছুর চাইতে বরং ভবিষ্যতে ঘটতে যাওয়া ঘটনাকেই বেশি দাম দেয় মানুষ। ধরেন, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত একজন মহিলা ৬ মাস ধরে যন্ত্রণা ও কষ্টের মাঝে ছিলেন। এরকম কারো চাইতে বরং যে ভিক্টিম ‘আগামী’ ৬ মাস কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাবেন— তাকেই কিন্তু বেশি পরিমাণে ইন্স্যুরেন্সের টাকা দেওয়ার রায় দিবেন জুরিবোর্ডের সদস্যরা। একইভাবে, ধরেন আপনি কোনো বন্ধুর ভ্যাকেশন হোমে ছুটি কাটানোর জন্য তাকে এক বোতল ওয়াইন গিফট করতে চান। গিফটটা ছুটি কাটানোর আগেও দিতে পারেন, পরেও দিতে পারেন। কিন্তু তার ভ্যাকেশন হোমে ছুটি কাটানোর আগে যে ওয়াইন দিবেন, ছুটি কাটানোর পরে দেওয়া ওয়াইনের তুলনায় সেটার দাম হবে বেশি। আবার, করা হয়ে গেছে এমন কাজের চাইতে ভবিষ্যতে যে কাজ করতে হবে তার জন্য বেশি পারিশ্রমিক চায় মানুষ। এরকম আরো উদাহরণ আছে। এটা বেশ শক্তিশালী ও অস্বাভাবিক এক ধরনের ‘টেম্পোরাল অ্যাসিমেট্রি’। এরকম হবার কারণ কী তা এখনো কেউ ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেন নি। তবে এ ব্যাপারে আমাদের বেশকিছু হাইপোথিসিস আছে। সেগুলি ঘেঁটে দেখছি আমরা। চোখ-কান খোলা রেখে তাই অপেক্ষা করতে থাকেন।

আপনাদের গবেষণাপত্রের ধরণ শুধু বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ভরযোগ্যই না, একরকম মজাও পাওয়া যায় সেগুলি থেকে—বেশ ভাল এক সেন্স অফ হিউমার নিয়ে বিষয়গুলি অ্যাপ্রোচ করা হয়েছে। আপনাদের এসব পরীক্ষার ডিজাইন তৈরি করেন কীভাবে? ‘গিলবার্ট পদ্ধতি’ বা এ জাতীয় বিশেষ কোনো তরিকা আছে নাকি এর জন্য?

বিজ্ঞান আপনাকে এক মুহূর্তের ভাললাগা বা আবিষ্কারের আনন্দ দেওয়ার আগে কয়েক হাজার ঘন্টা খাটিয়ে নেয়। কাজেই কোনো আইডিয়া নিয়ে গবেষণা করার আগে তাকে মন দিয়ে ভালবাসতে হবে। কোনো জিনিসের কথা শুধু চিন্তা করলেই যদি একটা তৃপ্তির সুড়সুড়ি না পাই, দমবন্ধ না লাগে আমার—তাহলে ওই বিষয়ে কোনো গবেষণা করি না আমি। এটাই আমার গবেষণার পদ্ধতিগত প্রথম নিয়ম। যখন এমন কিছু খুঁজে পাই যা নিয়ে আমার সত্যিই গবেষণা করার আগ্রহ আছে, তখন মাথা খাটিয়ে এক ইন্টারেস্টিং পরীক্ষার আয়োজন করি আমি, যেখানে একই সাথে বিশ্লেষণী কঠোরতা ও বুদ্ধিদীপ্ত রেটোরিক আছে। এর জন্য অবশ্য পদ্ধতিগত দ্বিতীয় নিয়মটি অনুসরণ করতে হয় আমার। আর তা হল টিম উইলসনকে খবর দেওয়া।

আচ্ছা, এবার তাহলে ট্রিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেনটা করেই ফেলি : ঠিক কী করলে সুখ খুঁজে পাব আমি?

এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আশা দেখিয়ে প্রায় দুই হাজার বছর ধরে বই লিখে আসছে মানুষ। তাতে শুধু অসুখী লোকজন এবং মরা গাছের সংখ্যা বাড়া ছাড়া আর কিছু হয় নাই। আমার বইটা একদিক থেকে আলাদা কারণ এখানে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টাও করা হয় নি। ‘স্টাম্বলিং অন হ্যাপিনেস’ কোনো নির্দেশনামূলক লেখা না যেখানে “সুখী হবার চারটি সহজ ও একটি কঠিন উপায়” বর্ণনা করা আছে। সেলফ-হেল্প ঘরানার বই না এটা। এ বই পড়লে যে আপনি আরো সুন্দর চুলের স্টাইলসহ নতুন কোনো দালাই লামা হয়ে যাবেন তা না। বরং আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তিতে মানুষের মস্তিষ্ক ঠিক কীভাবে ও কতটা সফলতার সাথে তার ভবিষ্যত সম্ভাবনাগুলির কথা চিন্তা করতে পারে তা নিয়ে আমার বই কিছু বলার চেষ্টা করেছে। একই সাথে, এসব সম্ভাবনা থেকে কোনগুলি তাকে সবচেয়ে সুখী করতে পারবে তা সঠিকভাবে অনুমান করার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

বইটার মূল উদ্দেশ্য হল আমাদের দুর্বলতা দেখানো, ভবিষ্যতে কোন জিনিসটা আমাদেরকে সুখী করতে পারবে তা অনুমান করায় আমরা কতটা অদক্ষ সেটা বোঝানো।… আধুনিক মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা হিসাব করার ক্ষমতাকে চিরাচরিত বলে ধরে নিয়েছে। অথচ এই ক্ষমতা কিন্তু আমাদের প্রজাতি একেবারে সম্প্রতি পেয়েছে, মাত্র তিন মিলিয়ন বছরের মত হলো। কাজেই আমাদের ব্রেইনের যে অংশ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তা প্রকৃতির একদম নতুন উদ্ভাবনগুলির মাঝে একটা। এত নতুন একটা ক্ষমতা ব্যবহার করে ভবিষ্যত গণনা করতে গেলে কিছু আনাড়ি ভুল হওয়াটা তো স্বাভাবিক। তবে এসব ভুলের তিনটা প্রাথমিক ধরন আছে। আর এ বইয়ে সেগুলি নিয়েই কথা বলা হয়েছে। বইটা শেষ হয় সুখের উৎস সম্বন্ধে পূর্বাভাস পাওয়ার একটা বিকল্প পদ্ধতি দিয়ে। কিন্তু আয়রনি হল, গবেষণা থেকে জানা গেছে, এই বিকল্প পন্থা অনেক বেশি নিখুঁত পূর্বাভাস দিলেও বেশিরভাগ মানুষ পদ্ধতিটা ব্যবহার করতে চান না।

যমজদের উদাহরণ দিয়ে আপনি দেখিয়েছেন, কীভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে সুখের অভিজ্ঞতা একেবারে ভিন্ন ভিন্ন—কিন্তু আবার গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, সুখের ব্যাপারে সব মানুষের ভ্রান্তধারণাগুলি একই। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত এক প্যারাডক্স মনে হয় না?

বইয়ে যেমনটা বলেছি, সুখের সংজ্ঞা দেওয়া বা সুখ পরিমাপ করা বেশ দুরূহ ব্যাপার। এই কাজ করতে গেলে যেসব সমস্যা, বিপদ-আপদ আর প্যারাডক্সের মুখোমুখি হতে হবে সেগুলি নিয়ে পাঠকদেরকে ধারণা দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু সমস্যা তো রীতিমত মাথা খারাপ করে দেওয়ার মত। ওগুলি সহজে ব্যাখ্যা করার জন্য সায়েন্স ফিকশন গল্প থেকে শুরু করে তাসের যাদু দিয়েও বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমি। শেষ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্তে এসেছি যে, একদম নির্ভুলভাবে সুখ সংজ্ঞায়িত করা বা মাপা সম্ভব না হলেও অতটুকু অন্তত করা যায় যার সাহায্যে আপনি বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে পারবেন। ফলে অনেক কিছু জানার সুযোগ পাচ্ছেন আপনি। সবাই যে খালি বলে, অনুভূতি পরিমাপ করা সম্ভব না, এ ধারণা একদমই ভুল।

আপনি যখন আপনার সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করেন, “আমি এই কাজটা করলে তোমার কেমন লাগে?” তখনই তো আপনি আসলে তার অনুভূতির মাত্রা বোঝার চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানীরা অবশ্য আরো সূক্ষ্ম ও জটিল প্রক্রিয়ায় এই কাজ করেন। কিন্তু মূলভাব একই। মানুষ সাধারণত জানে কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্তে সে কতটা সুখে আছে, কেউ জিজ্ঞেস করলে তাই সহজে বলে দিতে পারে সে। আপনি যদি তার উত্তর পরিমাপ করতে পারেন, তাহলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সুখ নিয়ে অনুসন্ধানও করতে পারবেন (আমরা এই দু’ধরনের কাজই করে থাকি)।

আজকালকার বেশিরভাগ লোকের মত আমিও হতাশাবাদী। আমি মনে করি, একটা পরিস্থিতিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকলে তা ঘটবেই। এই যে এত এত মানুষ এভাবে দীর্ঘকালীন উদ্বেগে ভুগেন, তাদেরকে নিয়ে আপনার বই কী বলে?

আমরা হয়ত এমন মনে করি যে জীবনের প্রতি মুহূর্তে পারফেক্টলি সুখী থাকতে পারলে সবচেয়ে ভাল হত। কিন্তু যেসব প্রাণি কোনো যন্ত্রণা, উদ্বেগ, ভীতি বা কষ্ট অনুভব করে না, তাদের একটা আলাদা নাম আছে— বিলুপ্ত। নেগেটিভ চিন্তা ও অনুভূতি আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ মানুষ যখন চিন্তা করে দেখে কোনো জিনিস কতটা তীব্রভাবে তাদের বিপক্ষে যেতে পারে, তখন তারা এমন সব কাজ করার চেষ্টা করে যাতে জিনিসটা তীব্রভাবে তাদের পক্ষে যায়।

আমাদের ছেলেমেয়ে কিংবা কর্মচারীদেরকে আমরা কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য শোচনীয় ফল ভোগ করার ভয় দেখিয়ে যেমন সতর্ক করে দেই, তেমনি শোচনীয় পরিণতির কথা কল্পনা করে নিজেদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করি আমরা। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে উদ্বেগ বেশি হয়ে গেলে মানুষকে তা দুর্বল করে দিতে পারে। সেটা একেবারে এক্সট্রিম কেস। কিন্তু বেশিরভাগ লোকের জন্যই উদ্বেগ অনেক কাজে আসে।… কেউ যদি আপনাকে এরকম কোনো ওষুধ দেয় যেটা খাওয়ার পর আপনি সারাজীবনের জন্য সুখী থাকতে পারবেন, তাহলে আপনার প্রতি আমার পরামর্শ হবে সাথে সাথে দৌঁড় দিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাওয়া। আবেগ একটা কম্পাস, যা আমাদেরকে বলে দেয় কখন কী করতে হবে। কিন্তু যে কম্পাসের কাঁটা শুধু উত্তর দিকে মুখ করে থাকে, সেই কম্পাসের কোনো দাম নাই।

এমন কী কী জিনিস আছে যেগুলি আমাদেরকে সুখী করতে পারবে বলে আমরা মনে করি, কিন্তু আসলে তা হয় না? কেন আমাদের এখনো মনে হয় যে এই জিনিসগুলিই আমাদের সুখী হবার মূলে?

সমাজের সদস্য যারা, তাদেরকে সুখের উৎসের ব্যাপারে ভুল ধারণা দেওয়ার পেছনে সমাজের একটা কায়েমি স্বার্থ আছে। আমার বইয়ে যেসব আইডিয়া নিয়ে কিছু দূর পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে এটা একটা। চলমান ও সক্রিয় থাকার জন্য সমাজের অনেক কিছু নিশ্চিত করা লাগে। যেমন: মানুষদেরকে একে অন্যের পণ্য ও সেবা কিনতে হয়, বাচ্চা জন্ম দিয়ে তাদেরকে লালনপালন করতে হয়; এরকম আরো অনেক কিছু। আমরা নিশ্চয়ই এসব কাজ সমাজের ভালর জন্য করব না, কারণ মানুষের বৈশিষ্ট্য হল শুধু নিজের ভালর জন্যই কাজ করতে আগ্রহী হওয়া। এজন্য একেকটা সমাজ দরকারি কিছু মিথ তৈরি করে— “টাকা-পয়সা আপনাকে সুখ এনে দিবে” বা “আপনার সন্তানসন্ততি আপনাকে সুখী করে তুলবে”। এসব মিথ সমাজের সদস্যদেরকে সেই কাজগুলি করতে প্রণোদিত করে যেগুলি আদতে সমাজের জন্য প্রয়োজনীয়। গবেষণার ফলাফল বলছে, এ দুইটার একটাও মানুষকে বিশেষ সুখী করতে পারে না। সুখের ওপর টাকা-পয়সার প্রভাব নিতান্তই গৌণ; এ প্রভাব সহজেই ফুরিয়ে যায়। আর বাবা-মা’রাও সাধারণত বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর চাইতে টিভি দেখতে বা ঘরের কাজ করতেই পছন্দ করেন বেশি (সরি, বাচ্চারা, কিন্তু তথ্য-উপাত্ত সেরকমই বলে!)।

যাই হোক, এটা আপনার প্রশ্নের একটা উত্তর। তবে এর আরো উত্তর আছে। বইয়ে একটা গবেষণার কথা বলেছি যেখান থেকে জানা যায়, অতীতে একজন মানুষ কতটা সুখী ছিল সেই স্মৃতি প্রায়ই সে গুলিয়ে ফেলে। যেমন ডেমোক্র‍্যাটরা একবার এরকম মনে করলেন যে, বুশ  ইলেকশন জিতলে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়বেন তারা। কিন্তু বুশ জেতার পর তার ধারেকাছেও কিছু হয় নাই তাদের (আমি জানি, কারণ আমি নিজে পরীক্ষা করে দেখেছি তারা মানসিকভাবে কতটা বিধ্বস্ত হয়েছিলেন)। অথচ এর কয়েক মাস পর তারা আবার মনে করা শুরু করলেন, তাদের আন্দাজ ঠিকই ছিল—নিজেদের মানসিক দুর্দশার ব্যাপারে তারা যেমনটা ভেবে রেখেছিলেন ঠিক তেমনটাই নাকি হয়েছিল। জানা গেল, মানুষের স্মৃতিজনিত বিভ্রান্তির খুবই সাধারণ প্যাটার্ন এটা। যদি মনেই না থাকে, তাহলে নিজেদের ভুল ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা শিক্ষা নিব কীভাবে?

আপনার বইটা পড়ার আগে মনে করতাম, জীবনের প্রধান আকর্ষণ হল বৈচিত্র‍্য। কিন্তু প্রতিবার ডোনাট শপে গিয়ে শুধু গ্লেজড ডোনাট খাওয়াই কি ঠিক হবে? গ্লেজড আমার প্রিয় ডোনাট হলেও— কেবল একই রকম ডোনাট খেতে গিয়ে আরো ভাল কিছু থেকে যদি বঞ্চিত হই?

…যতটুকু উচিত তার চাইতে বেশিই বৈচিত্র‍্য খুঁজতে যায় মানুষ— গবেষণা তাই বলছে। আমাদের মনে হতে পারে, প্রতিবার ডোনাট শপে গিয়ে হয়ত আলাদা আলাদা টাইপের ডোনাট খেয়ে দেখা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হল, ডোনাট শপে গিয়ে বারবার নিজের পছন্দের ডোনাট খেতে পারলেই বরং মানুষ সুখী থাকে বেশি, যদি প্রতিবার যাওয়ার মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিরতি থাকে। এই বিরতির সময়টা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। খুব কম সময়ের মধ্যে চারটা ডোনাট খাওয়া হলে একেকবার একেকরকম ডোনাট নিলেই আপনার ভাল লাগবে বেশি। এক্ষেত্রে বৈচিত্র‍্য আসলেই আপনার অভিজ্ঞতাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। কিন্তু আবার চার দিনে চারটা ডোনাট খাওয়ার বেলায় বৈচিত্র‍্য আপনার উপভোগের মাত্রা কমিয়ে আনবে। সময়কালের ব্যাপারে বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করা মানুষের ব্রেইনের জন্য প্রচণ্ড সমস্যাজনক। তাই কয়েক মাস বা কয়েক মিনিট—বিরতি যতটুকুই হোক, ডোনাট খেতে গিয়ে আমরা অযথাই ভ্যারাইটি খুঁজি।

আপনার বইয়ে এত শেকসপিয়ারের উদ্ধৃতি কেন? আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন যে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করার চাইতে বরং শিল্প থেকেই আমরা নিজেদের সম্বন্ধে আরো বেশি জানতে পারব?

আমি প্রতি অধ্যায় একটা করে শেকসপিয়ারের উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করেছি। এর কারণ দুইটা। প্রথমত, ইতিহাসজুড়ে এমন অনেক চমৎকার অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন যারা আমাদের চিন্তাভঙ্গি সম্পর্কে তুখোড় সব অনুমান করে গেছেন। আধুনিক বিজ্ঞান আমাদেরকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে যাতে আমরা বাছাই করতে পারি, সেই অনুমানগুলির মাঝে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল ছিল। সঠিক অনুমানের ক্ষেত্রে শেকসপিয়ারের রেকর্ড ভাল। তাই তার হাতেই প্রতি চ্যাপ্টার শুরু করার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলাম। আর দ্বিতীয় কারণ হল, আমি খুবই সাধারণ রুচির মানুষ, যে কিনা সনেট পড়ার চাইতে অ্যাকশন মুভি দেখতে বা প্যাটের চাইতে টেটার টটস খেতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আমাকে প্রতিদিন একজন হার্ভার্ড প্রফেসরের ভান করে থাকতে হয়। আমার শুধু খুঁতখুঁত লাগে আর ভাবি, এই ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য আমাকে হয়ত একজন সুশীল নাক-উঁচা ব্যক্তি সাজতে হবে, যিনি ক্রাস্ট ছাড়া মিনি স্যান্ডউইচ খেতে খেতে শেকসপিয়ার পড়েন। কিন্তু আমি তো আসলে এরকম না। তবে আপনি যদি এই তথ্য ফাঁস না করেন, তাহলে ওইসব উদ্ধৃতি দিয়ে সবাইকে বোকা বানানো যাবে।

এখন কি তাহলে চারিদিকের বহু সম্ভাবনার কারণে আমাদের জীবন এতটাই জটিল হয়ে গেছে যে আমরা আদিম এক অজ্ঞতা হারিয়ে ফেলেছি, যে অজ্ঞতার কারণে অনেক জিনিস আমাদের অজানাই থাকত, ফলে সুখে থাকতে পারতাম আমরা? তাহলে কি কিছু জিনিস শেষ পর্যন্ত না জানলেই বরং সুখী থাকা যাবে? তাই যদি হয়, তাহলে গভীর বনের কোনো কুঠুরিতে গিয়ে বসবাস শুরু করলে লাভ হবে কি?

না, না, না। প্রতিটা প্রজন্ম এই ভ্রমের মধ্যে থাকে যে অতীতে হয়ত সবকিছু সহজ, সরল আর অনেক ভাল ছিল। পুরাদমে ভুল ধারণা। ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানেই আমরা সবচাইতে ভাল আছি। আমরা যে একে অন্যের মাথায় লাঠি দিয়ে ঠুকাঠুকি করি, তা আমাদের আদিম অজ্ঞতার কারণেই। এই অজ্ঞতা আমাদেরকে মোনালিসা আঁকতে বা স্পেস শাটল বানাতে কোনো সাহায্য করে না। আমাদের সুবিশাল ও উন্নত এক মস্তিষ্ক আছে যা ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখতে পায়। অন্য কোনো প্রাণি তা পারে না। এমনকি আমাদের প্রজাতিও মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর আগ পর্যন্ত তা পারত না। হ্যাঁ, আমাদের ভবিষ্যতের দৃষ্টি তেমন স্পষ্ট না, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে হয়ত একেবারে অন্ধকার। তবে এই দূরদৃষ্টি আমাদের যেকোনো সিদ্ধান্তের দীর্ঘকালীন পরিণতি সম্বন্ধে আভাস দিতে পারে। ফলে আমরা প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা নিয়ে খারাপ ফলাফল এড়িয়ে ভাল গন্তব্যগুলিকে তুলে ধরতে পারি।“যে আদিম অজ্ঞতার কারণে আমরা সুখে থাকতে পারতাম” সেই অজ্ঞতাই স্থূল স্বাস্থ্য আর গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ার কারণ। মাইলস ডেভিসের মত প্রতিভা বা ম্যাগনা কার্টার মত চুক্তি এই অজ্ঞতা থেকে আসত না কখনো। আগামী কয়েক হাজার বছরে মানবজাতি যদি উন্নয়নে ফুলেফেঁপে উঠে, তাহলে তা যুক্তি ও জ্ঞান অর্জন দিয়েই সম্ভব হবে। যে জগত কখনো ছিলই না সে জগতে ফিরে যাওয়ার ফ্যান্টাসিতে বুঁদ হয়ে থাকলে তা আর কখনো হবে না।