গেম সিরিজ শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। রকস্টার গেমস এই গেম শুরু করে। জিটিএ সিরিজের ‌`ভাইস সিটি’ ‍আসার পরে বোঝা গিয়েছিল গেম কতটা রিয়াল লাইফের মত হতে পারে।

গেমের নায়ক আর ভিলেন বা মূল ক্যারেক্টারগুলি ছাড়াও অন্যান্য অবজেক্টগুলির স্বাধীনভাবে থাকা, ডিটেইলিং অনেক বেশি থাকা, মূল মিশনগুলোর বাইরেও নানান সাব-মিশন থাকা, অনেক বড় লোকেশন ইত্যাদি ইত্যাদি মিলিয়ে জিটিএ সিরিজের গেম সবসময়ই আলাদা। গেমের ভিতরে ভার্চুয়াল জীবন যাপনের অভিজ্ঞতা সরাসরি পাওয়া যায়।


আশরাফুল আলম শাওন
অক্টোবর, ২০১৩


জিটিএ ফাইভ

অনেকবার জিটিএ সিরিজ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের নানা জায়গায় অনেকগুলি খুন-খারাবি এবং অন্য অপরাধের জন্য অনেকে এই গেমসকে দায়ী করে থাকেন। গেমের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে অনেক। সিরিজটির সর্বশেষ গেম জিটিএ ফাইভ। জিটিএ সিরিজ ‘স্যান্ডবক্স গেমস’ ধরনের একটি গেমস। এই ধরনের গেমে কী করতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে সে ব্যাপারে প্লেয়ারের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে।

প্লেয়ার তার পছন্দমত বাহন ও অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। গতানুগতিক গেমগুলির মত জিটিএ গেম সরল বা একরৈখিক না। জিটিএ-তে প্লেয়ার নিজের ইচ্ছামত মিশন বেছে নিতে পারে। এবং গেমের ভিতরের চরিত্রদের পারস্পরিক সম্পর্ক সিদ্ধান্তগুলি দিয়ে প্রভাবিত হয়। গেমের যেকোনো পর্যায়ে স্বাধীনভাবে শহরে ঘোরাঘুরি করা যায়। কিছু জায়গায় প্রবেশাধিকার দেওয়া থাকে যেখানে সহজেই যাওয়া যায়। এর ব্যতিক্রমও আছে। শহরের কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক মিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঢোকা যায় না।

ফ্রাংকলিন ও ট্রেভর

গেমের মিশনগুলি আলাদা আলাদা স্তরে সাজানো থাকে। মিশনগুলিতে প্লেয়ারকে বড় একটা শহরে একজন ক্রিমিনালের ভূমিকা নিতে হয়। মিশনগুলির মধ্য দিয়ে শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প এগিয়ে যেতে থাকে। খুন-জখমের মত নিয়মিত ব্যাপারগুলি ছাড়াও ট্যাক্সি ড্রাইভ, ফায়ারফাইটিং, প্লেন চালানো ইত্যাদির মত বাড়তি অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ থাকে গেমসে। এগুলি গেমস চলাকালীন যেকোনো সময় করা যায়। কিন্তু গেমের মূল মিশনগুলো চলার সময় করা যায় না।

ক্রিমিনাল হলেও আপনার একটা সুন্দর জীবন থাকতে পারে এটাই গ্র্যান্ড থেফট অটো ফাইভ-এর মূল ধারণা। গেমটা অনেকটাই সিনেমার মত। সিনেমার ক্ষেত্রে প্রচলিত লার্জার দ্যান লাইফ বা বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা গেমে ভালোভাবেই আছে। অনেকে তাদের কম্পিউটারে রেকর্ড করা খেলার গেমপ্লে-ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করেন। বিভিন্নজনের বিভিন্নভাবে খেলা জিটিএ ফাইভ ইউটিউবে দেখতে অনেকটা সিনেমার মতই লাগে।

জিটিএ ফাইভ

গেমের লোকেশন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার লস-সান্টোস। কিছুটা লস অ্যাঞ্জেলসের মত করে আর কিছুটা কাল্পনিকভাবে ডিজাইন করা হয়েছে লস-সান্টোসকে। লস সান্টোসের আয়তন জিটিএ-এর আগের ভার্সনগুলির তুলনায় জিটিএ ফাইভে বেশ বড়। আগের ভার্সনগুলিতে গেমের লোকেশনে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত জিটিএ ফাইভে তার চেয়ে সুযোগ-সুবিধার পরিমাণও বেড়েছে। লস-সান্টোস আগের যেকোনো সময়ের যেকোনো জিটিএ-এর চেয়ে এখন জিটিএ ফাইভে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

জিটিএ ফোর থেকে গেমের মধ্যে কাহিনী বর্ণনার ব্যাপারটা শুরু হয়েছে। জিটিএ-এর আগের ভার্সনগুলিতে এটা ছিল না।

জিটিএ ফাইভেও গল্প বলার ব্যাপারটা থাকছে। পুরা গল্পে তিনটা ক্যারেক্টার মূল নায়ক হিসেবে আসবে। বিভিন্ন লেভেল অতিক্রম করে এক পর্যায়ে গেমার নিজের পছন্দমত যেকোনো একজনকে বাছাই করে নিয়ে খেলতে পারবে। মিশনের ধরন এবং নায়কের দক্ষতা বুঝে তিনজন থেকে যেকোনো একজনকে বেছে নেওয়া যাবে। তিনজন নায়কের কারণে জিটিএ ফাইভ-এর ভিতরে চমকে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে থাকে। এদিক দিয়ে জিটিএ ফাইভের সাথে আমেরিকান টিভি সিরিয়ালগুলির মিল আছে।

গেমের শুরুতে নায়ক হিসাবে আসে ফ্র্যাংকলিন। তরুণ গ্যাংস্টার ফ্র্যাংকলিন তার আশপাশ এবং গ্যাং-এর পাল্টাপাল্টি মারামারি থেকে পালিয়ে যেতে চায়। বন্ধুদের বেঈমানির কারণে ফ্র্যাংকলিনের কিছু অপরাধের ফল বিপরীত হতে শুরু করায় সে অনেক অসহায়। তার মূল দলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে তাকে ক্রমাগত ঝামেলার মুখে পড়তে হয়।

এরপর আসে মাইকেল। সে আগে ব্যাঙ্ক-ডাকাতি করত। এখন অবসর নিয়ে লস-সান্টোসের সুন্দর এক প্রান্তে বসবাস করছে। কিন্তু এখনো সে এই জীবনের সাথে অভ্যস্ত হতে পারেনি। উত্তেজনাবিহীন জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে প্রতি সপ্তাহে সে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যায়। তিন চরিত্রের মধ্যে মাইকেলই সবচেয়ে জটিল ধরনের এবং আকর্ষণীয় চরিত্র। তার রহস্যময় অতীত সবসময় আড়ালেই থাকে। তার ফ্র্যাংকলিনের সাথে দেখা হয়। তরুণ ফ্র্যাংকলিনকে সে বুদ্ধির কারণে পছন্দ করে। মাইকেল তাকে আরো দক্ষ ক্রিমিনাল বানাতে থাকে। এর মধ্যে দিয়ে সে ফ্র্যাংকলিনকে ক্রাইম গেমে ফিরিয়ে আনে।

তৃতীয় চরিত্র ট্রেভররকস্টার গেমস-এর মতে, ট্রেভর হচ্ছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাইকো ধরনের জিটিএ ক্যারেক্টার। ট্রেভর-এর ক্যারেক্টার অনেক বেশি ভায়োলেন্ট ধরনের। ট্রেভরের উলটাপালটা আচরণ এবং একই ধরনের গেমপ্লে স্টাইলের জন্য ট্রেভরকে অনেকটা বৈচিত্র্যহীন চরিত্র মনে হয়। পরে ট্রেভরের অতীতও জানা যায়।

জিটিএ ফাইভ

তিন নায়ক এবং তাদের মধ্য থেকে পছন্দমত বাছাইয়ের কারণে গেমের ধরনটাই বদলে গেছে। লস সান্টোসে বিভিন্ন মিশনের জন্য প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা দক্ষতা ও দুর্বলতা আছে। কোনো একজনকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে গেলে জাস্ট দুটা ক্লিকের মাধ্যমে পুরো গেম অন্য অবস্থায় চলে যাবে। যেমন ট্রেভরকে নিয়ে আপনি হয়ত বিরক্ত হয়ে অন্য দুজনকে খুঁজলেন। ফ্র্যাংকলিনকে দেখা গেল বোলিং প্র্যাকটিস করছে আর মাইকেল কোনো এক কান্ট্রি ক্লাবে বসে আছে।

আর জিটিএ ফাইভে লস সান্টোস এত বেশি বহুমাত্রিক যে এটাকে গেমের চার নাম্বার চরিত্র বলা যায়।

জিটিএ ফোরে লিবার্টি সিটি যতটা নিউ-ইয়র্কের ছায়া ছিল, ফাইভে লস সান্টোস লস-অ্যাঞ্জেলসের সেরকম ছায়া। তবে এখানে আয়তনে আরো বড়। আর লস সান্টোসকে ঘিরে থাকছে আরো ছোট ছোট শহর। জিটিএ সিরিজের রেডিও স্টেশনগুলি সবসময়ই দারুণ হয়ে থাকে। জিটিএ ফাইভে মডার্ন হিটস আর ক্লাসিক্যাল দুটাই থাকছে রেডিওতে। আর গেমে লোকেশন এত বড় যে, দূরে যাওয়ার সাথে সাথে এক স্টেশনের সিগন্যাল হারিয়ে যাবে এবং আরেক স্টেশনের সিগন্যাল পাওয়া যাবে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাচানো বড় বড় হাইওয়েগুলিও এই গেমে পাওয়া যাবে। আর লস-অ্যাঞ্জেলসের রাস্তার ব্যস্ততা ও অতিরিক্ত যানবাহনের অভিজ্ঞতা এই গেম থেকেই পাওয়া সম্ভব। এখানে গাড়িগুলি যতটা সম্ভব বাস্তবের কাছাকাছি। আর গাড়ি ছাড়া বাস, ১৮ হুইলারস, টু-ট্রাক, মোটরসাইকেল, ফোর হুইলারস, বাই-প্লেন, জেট-স্কি, বাই সাইকেল ইত্যাদি ইত্যাদি থাকছেই।

জিটিএ ফাইভে অনেক নতুন কিছু আছে যা আগে জিটিএ-এর কোনো গেমে ছিল না। যেমন গলফ খেলা, ফরেন ফিল্ম দেখা, হাইকিং, স্ট্রিপ ক্লাব, স্টক মার্কেট, আর্মস স্মাগলিং ইত্যাদি ইত্যাদি। শিকার করা যাবে এই গেমে। দেখা যাবে লস সান্টোসে প্রচুর ক্রাইম হচ্ছে, ইচ্ছা হলে আপনি নিজেকে জড়াতে পারেন অথবা না। ‘ভিনেউডে’ অনেক সেলিব্রিটি পাওয়া যাবে, যাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে। তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা যাবে।

এই গেমে এতসব ক্রিয়েটিভিটি ছাড়াও ভিতরের মেকানিক্স অনেক বদলে গেছে। দৌড়ানো, গুলি করা, ড্রাইভিং এইগুলি আগের যেকোনো জিটিএ-এর চেয়ে নতুন। তবে গুলি করার স্টাইলের সাথে গত বছর রিলিজ পাওয়া ‘ম্যাক্স পেইন থ্রি’-এর অনেক মিল আছে। কিন্তু জিটিএ ফাইভে আগের ভার্সনগুলির নায়কদের মত সুপার হিরো হওয়ার সুযোগ নাই। অনেক গুলি শরীরে লাগার পরও টিকে থাকা এ ক্ষেত্রে ঘটছে না। আর তাই, অনেক কৌশলী হয়ে খেলতে হবে এখানে।

তিনজন নায়ক নিয়েই পুরো গেম খেলতে হবে। কোনো কোনো মিশন অবশ্য কোনো একজনের জন্যই নির্দিষ্ট। কোনো কোনো মিশন দুইজনকে দিয়ে শেষ করতে হয়। সলো মিশনগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা যে সেগুলি নায়ক বদলানোর সাথে সম্পর্কিত হয়ে যায়। যেমন যে কেউ ইচ্ছা করলেই ট্রেভরের কোনো ল্যাবরেটরি আক্রমণ করা থেকে মাইকেলের তার মেয়েকে পর্ণস্টারদের নৌকা থেকে বাঁচানোর ঘটনায় চলে যেতে পারবে।

জিটিএ ফাইভ

রিয়ালিস্টিক হওয়ার জন্য জিটিএ-এর এই ভার্সনেও বার থাকছে। সব মিলিয়ে জিটিএ ফাইভে এত বেশি অপশন যে খেলতে গেলে “প্রথমে কী করা যায়” এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।

জিটিএ ফাইভ খেলতে মিনিমাম কোর টু ডুয়ো ই৪৬০০ ২.৪ গিগা হার্জ প্রসেসর লাগবে। দুই গিগাবাইট র‍্যাম দরকার হবে। অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এক্সপি ৩২ হতে হবে। ডাইরেক্ট এক্স ১০ থাকতে হবে। আর হার্ড ডিস্কে ৩২ গিগাবাইট খালি জায়গা লাগবে।

উপরের কনফিগারেশন হলেই জিটিএ ফাইভ খেলা যাবে। কিন্তু গেমটি বানানো হয়েছে নতুন কনফিগারেশনের কম্পিউটারের জন্য। কোর আই ফাইভ ২৫০০ টি ২.৩ গিগা হার্জ প্রসেসর । ছয় গিগাবাইট র‍্যাম। অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এক্সপি ৬৪; ডাইরেক্ট এক্স ১১।


জিটিএ ফাইভে ট্রেইন হাইজ্যাকিং-এর গেমপ্লে – ইউটিউব ভিডিও