মিডল ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা বদলে গেছে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে যখন কাজের ধরন পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছিল।

মিডল ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত ভূমিকা হল, ওয়ার্কপ্লেস কালচারকে ইতিবাচকভাবে তৈরি করা, কর্মীদের ক্ষমতায়ন করা, আর তাদেরকে ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলির সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করা।

মিডল ম্যানেজমেন্টকে শুধু পুরোনো “মধ্যস্থতাকারী” ভূমিকায় না রেখে, প্রতিষ্ঠানটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, যা ভিতরের উন্নতি এবং উৎপাদনশীলতায় বাধা সৃষ্টি করা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

মিডল ম্যানেজমেন্ট

মিডল ম্যানেজমেন্টের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ কর্মী আর উচ্চপর্যায়ের নির্বাহীদের মধ্যে তথ্য এবং প্রকল্পগুলির সঠিকভাবে চলা নিশ্চিত করা, এবং পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে আয় নিশ্চিত করা। যখন কর্পোরেট ব্যবসার মডেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল যুগ থেকে নলেজ ইকোনমিতে রূপান্তরিত হয়েছে, তখন মিডল ম্যানেজমেন্টের মূল কাজও বদলেছে। ২০ বছর আগে যদি আপনি একটা ছোট ব্যবসা চালাতেন, তাহলে অনেক গ্রাহক আর ব্যবসায়িক তথ্য হাতে লিখে ফাইলিং ক্যাবিনেটে রেখে দেওয়া হত।

তথ্য আদান-প্রদান ঠিক রাখতে এবং প্রতিষ্ঠান জুড়ে কী ঘটছে সে বিষয়ে ধারণা দিতে মিডল ম্যানেজমেন্ট খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু প্রযুক্তি, বিশেষ করে সিআরএম, ব্যবসার ধরন বদলে দিতে শুরু করেছে। এখন পুরো ব্যবসার তথ্য অফিসে কফি খাওয়ার সময়েও প্রতিষ্ঠানের যেকোনো জায়গা থেকে দেখা ও অ্যাক্সেস করা যায়। মিডল ম্যানেজমেন্ট এখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে।

বদলে যাওয়া ভূমিকা
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে উপরে থেকে নিচে যাওয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করে। তবে স্মার্ট এবং আরও উন্নত প্রতিষ্ঠানগুলি আধুনিক টিম ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এতে টিমগুলিকে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করে তোলে। ফলে তথ্য আর ওপরের স্তরে পাঠাতে হয় না—যা আগে প্রায়ই মিডল ম্যানেজমেন্টের কাজ ছিল—এবং তারপর সেই তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আসার জন্য অপেক্ষাও করতে হয় না।

এই সমস্যাগুলিকে আরও জটিল করে তুলছে, কারণ মিডল ম্যানেজাররা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের একমাত্র মানুষ যাদের একসাথে ওপরের দিকে (নির্বাহীদের সাথে) এবং নিচের দিকে (সরাসরি রিপোর্টিং কর্মীদের সাথে) উভয় দিকেই ম্যানেজ করতে হয়।

এটা অনেক চাপের কাজ, আর এটাই একটা বড় কারণ যে, মিডল ম্যানেজারদের সম্পৃক্ততার হার এত কম। Vantage Circle-এর মতে, ১৮% মিডল ম্যানেজার দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতায় ভুগছেন। প্রায় ৫০% তাদের কাজ বাড়িতে নিয়ে যান বা অতিরিক্ত সময় কাজ করেন। মিডল ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা আবার নতুন করে ভাবা খুব জরুরি, এবং এটাকে আরও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে পুনর্গঠন করা দরকার। উল্লেখ্য Vantage Circle একটি ভারত-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এটি ভারতের গুরুগ্রামে (গুড়গাঁও) সদর দপ্তর স্থাপন করে রয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানির জন্য কর্মচারী সংযোগ এবং রিওয়ার্ড সল্যুশন প্রদান করে।

মিশন, ভিশন আর জবাবদিহিতার অনুভূতি তৈরি করা
গ্রেট মিডল ম্যানেজাররা তাদের ট্যালেন্ট কাজে লাগিয়ে নতুন ও অজানা উপায়ে এই ধরনের ফলাফল আনতে পারেন। তারা প্রতিটি কর্মীকে কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন এবং তাদেরকে একটি আকর্ষণীয় মিশন আর ভিশনের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন।

তারা স্পষ্ট জবাবদিহিতার একটা কালচার তৈরি করতে পারেন। তারা এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন, যা বিশ্বাস তৈরি করে, খোলামেলা কথা বলার সুযোগ দেয়, আর পুরোপুরি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। তাদেরকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া যেতে পারে, যা প্রডাক্টিভিটির ওপর ভিত্তি করে হবে, পলিটিক্সের ওপর নয়।

গ্যালাপের গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্ডাস্ট্রি, সাইজ বা অবস্থান যাই হোক না কেন, প্রাতিষ্ঠানিক নেতারা প্রায়ই বুঝতে পারেন না কেন এক ডিপার্টমেন্ট থেকে আরেক ডিপার্টমেন্টে পারফরম্যান্সের এত ফারাক হয়। এর কারণ প্রায়ই এই যে, কর্মীদের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিতে একরূপতার অভাবে পারফরম্যান্স মেট্রিক্সগুলি ওঠানামা করে। এই “অস্থিরতা” নেতাদের হতাশ করে, কারণ এটা অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এটা কর্মীদেরও হতাশ করে, কারণ এটা সংস্কৃতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।

মিডল ম্যানেজমেন্ট এই “অস্থিরতা” কাটিয়ে উঠতে পারে, যখন তাদের কাজ হবে মানুষকে উন্নত করে কালচার তৈরি করা—সহজ কথায়, কর্মীদের সম্পৃক্ত রাখা। যখন কোনো কোম্পানি পুরো প্রতিষ্ঠান জুড়ে কর্মীদের সম্পৃক্ততার মাত্রা বাড়ায়, তখন সবকিছুই ভাল হতে শুরু করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সামনের সারির কর্মীদের সম্পৃক্ততা অনেক ভাল পারফরম্যান্স ফলাফল নিয়ে আসে, যার মধ্যে লাভ আর উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাওয়া, কম টার্নওভার, কম অনুপস্থিতি আর চুরি, এবং কম নিরাপত্তা সমস্যা অন্তর্ভুক্ত।

মিডল ম্যানেজমেন্ট: প্রতিষ্ঠানিক কালচার গঠনের একটি জরুরি অংশ
মিডল ম্যানেজমেন্টকে পুরোনো “মধ্যস্থতাকারী” ভূমিকায় সীমাবদ্ধ না রেখে, প্রতিষ্ঠানিক কালচার গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে কাজ করতে দেওয়া যেতে পারে। বৃদ্ধির পথে আর উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বাধাগুলি বেশিরভাগ সময়ে ভেতর থেকেই আসে—বাজারের অভাব, বাজারের ভারসাম্য, প্রযুক্তি, অপরাজেয় প্রতিযোগী, সরকারি নিয়ম-কানুন বা অর্থনৈতিক মন্দা নয়। যদি আমরা ভেতরের এই বাধাগুলি দূর করতে চাই, তবে আমাদের মানুষের ওপর ফোকাস করতে হবে।

আরো পড়ুন: যেভাবে একটা বড় প্রজেক্টকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দ্রুত শেষ করবেন

মিডল ম্যানেজমেন্ট এই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে। প্রতিষ্ঠানিক পরিবর্তন মানে মানুষ এবং তাদের বদলে যাওয়া ভূমিকা, দায়িত্ব এবং কাজ ও উদ্দেশ্যের সাথে তাদের আবেগের সম্পর্কের পরিবর্তন। মিডল ম্যানেজারের উদ্দেশ্যকে নতুন করে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আমরা কোম্পানির কালচারকে আরও ভালভাবে পরিবর্তন করতে পারি এবং আমরা যে ব্যবসায়িক ফলাফল চাই তা পেতে পারি।

সূত্র. উইফোরাম ডটঅর্গ