ডিসেম্বর ২০২০-এ পাওয়া হিসাব অনুযায়ী ওয়ারেন বাফেট (জন্ম. ১৯৩০) পৃথিবীর অন্যতম ধনীদের মধ্যে ৪ নম্বরে অবস্থান করছেন। তার সম্পদের মোট পরিমাণ ৮৫.৬ বিলিয়ন ডলার। তাকে পৃথিবীর সবচাইতে সফল বিনিয়োগকারীদের একজন ধরা হয়।
তার সাফল্য থেকে এই সিদ্ধান্ত টানাই স্বাভাবিক যে কীভাবে নিজের সময় খরচ করতে হয় তা তিনি খুবই ভালো বোঝেন। আর্থিক ভাবে বলতে পারেন, তিনি নিজের সময়কে অন্য যে কারো চেয়ে ভাল ভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
নিচের যে গল্পটি আপনি শুনতে যাচ্ছেন তা বাফেটের এক কর্মচারী স্কট ডিনসমোর নামক এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন।
আসুন ৩-ধাপের সহজ উৎপাদনশীলতার এই কৌশলটি জেনে নিই, যা ওয়ারেন বাফেট তার কর্মীদের কী করতে হবে আর কী বাদ দিতে হবে তা নির্ধারণে সহায়তা করতে ব্যবহার করেন।
মাইক ফ্লিন্টের গল্প
মাইক ফ্লিন্ট ১০ বছর ওয়ারেন বাফেটের ব্যক্তিগত বিমানের পাইলট ছিলেন। ফ্লিন্ট বলেন, একবার তিনি তার বস ওয়ারেন বাফেটের সাথে তার কেরিয়ারে সাফল্য লাভের উপায় নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন বাফেট তাকে নিচের ৩-ধাপের প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে যেতে বলেছিলেন।
ধাপ ১: বাফেট প্রথমে ফ্লিন্টকে তার ক্যারিয়ারের শীর্ষ ২৫টি লক্ষ্য লিখতে বলেন। ফ্লিন্ট কিছুটা সময় নিয়ে সেগুলি লিখলেন।
ধাপ ২: এরপর বাফেট ফ্লিন্টকে তার তালিকাটি পর্যালোচনা করে সেখান থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি লক্ষ্য বাছাই করে গোল দাগ দিতে বলেন। ফ্লিন্ট আবার কিছুটা সময় নিয়ে তালিকাটি পর্যালোচনা করে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি লক্ষ্য বাছাই করেন।
ধাপ ৩: এখন ফ্লিন্টের হাতে দুটি তালিকা। তিনি দ্বিতীয় ধাপে যে ৫টি লক্ষ্য বাছাই করেছিলেন সেগুলিই এখন তার প্রথম তালিকা। আর বাকি ২০টি দ্বিতীয় তালিকা।
ফ্লিন্ট নিশ্চিত করেন যে তিনি আগে প্রথম তালিকার কাজগুলি শেষ করবেন। এসময় ওয়ারেন বাফেট তাকে দ্বিতীয় তালিকা বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি যে লক্ষ্যগুলিতে গোল দাগ দেন নি সেগুলির কী হবে?”
উত্তরে ফ্লিন্ট বললেন, “প্রথমেই আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি লক্ষ্য পূরণ করব। এরপর বাকি ২০টি লক্ষ্য পূরণে কাজ করব। সেগুলিও যেহেতু আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু আমি মাঝে মাঝে সেগুলির জন্য কাজ করব। সেগুলি হয়তো অত জরুরি না কিন্তু তথাপি সেগুলির জন্য আমি বেশ জোরালো প্রচেষ্টা চালাবো।”
এর জবাবে ওয়ারেন বাফেট বললেন, “নাহ। আপনি ভুল করছেন, মাইক। আপনি যে লক্ষ্যগুলিতে গোল দাগ দেন নি সেগুলিকে আপনার যে কোনো মূল্যে এড়িয়ে চলতে হবে। যাই ঘটুক না কেন প্রধান ৫টি লক্ষ্য পূরণ না করা পর্যন্ত আপনি বাকি ২০টি লক্ষ্যের দিকে কোনো মনোযোগ দেবেন না।”
বাদ দিতে পারার শক্তি
অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিতে পারার ক্ষমতা জীবনকে সহজ করার, ভাল অভ্যাসগুলিকে আরও সক্রিয় করে তোলার এবং নিজের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার সেরা উপায়গুলির একটি।
স্পষ্টতই অপব্যয়ী জিনিস এবং সিদ্ধান্ত থেকে মুক্ত থাকা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু যে জিনিসগুলি আপনি পছন্দ করেন সেগুলি বাদ দেয়া বেশ কঠিন। যে জিনিসগুলিকে সহজেই যৌক্তিক মনে হবে কিন্তু লাভ কম সেগুলির পেছনে আপনার সময় ব্যবহার বাদ দেয়া কঠিন। সাফল্যের পথে আপনার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার সর্বাধিক সম্ভাবনা রয়েছে সেই কাজগুলিরই যেগুলিকে আপনি পছন্দ করেন, অথচ সত্যিকার অর্থে সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
প্রতিটি আচরণেরই মূল্য দিতে হয়। এমনকি নিরপেক্ষ আচরণগুলিও আসলে নিরপেক্ষ নয়। তারা সময়, শক্তি এবং স্থান নেয় যা হয়তো আপনি আরো উন্নত আচরণ বা আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ব্যয় করতে পারতেন। আমরা প্রায়শই পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে ভাবনার মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকি।
এজন্য ওয়ারেন বাফেটের কৌশলটি দুর্দান্ত। আপনার তালিকার ৬ থেকে ২৫ নাম্বার পর্যন্ত বিষয়গুলি হয়তো আপনার পছন্দের। এগুলি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণও হতে পারে। সেগুলির পেছেন আপনার সময় ব্যয় করাও যৌক্তিক মনে হতে পারে। তবে আপনি যখন সেগুলিকে আপনার শীর্ষ ৫টি লক্ষ্যের সাথে তুলনা করবেন, তখন সেগুলিকে আপনার সাফল্যের জন্যে বাধা মনে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির পেছনে সময় ব্যয় করার কারণেই আপনার হাতে আধা সমাপ্ত ২০টি প্রকল্প আছে কিন্তু কোনো সমাপ্ত প্রকল্প নেই।
সুতরাং নির্মম ভাবে বাদ দিন। নিজেকে ফোকাস করতে বাধ্য করুন। একটি কাজ হয় পুরোপুরি সম্পন্ন করুন আর নয়তো বাদ দিন। সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বিভ্রান্তি হল যা আপনি ভালোবাসেন কিন্তু তা আপনাকে পাল্টা ভালোবাসে না।