ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবার মোহাম্মদপুর আজিজ মহল্লার নতুন বাসায় উঠছি। শনিবার আর কোথাও বের হইনাই। এরপর রবিবার অফিস থেকে যখন ফিরতেছি, বাইকে ফিরতেছিলাম, তাড়া ছিল বাসায় যাওয়ার, রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়া। মুখ থেকে মাস্ক সরায়া ছাতিমের গন্ধ নিতেছিলাম, বছরের শেষ মে’বি।

এই বছর ছাতিম অনেক আগে শুরু হইছিল, আর শেষও হইতেছে দেরি করে। তখন খেয়াল করলাম অন্য রকম লাগতেছে। ভালই লাগতেছিল। মানে বিশ বছরের দীর্ঘ প্রেমিকার সাথে ক্লান্তিময় সম্পর্ক ছেদ করে সদ্য বিবাহিত নতুন বউ এর কাছে যাওয়ার জন্য বেশরমের মতো একটা কৌতূহলী উত্তেজনা লাগতেছিল, তবে মৃদু মৃদু, খুব বেশি না। আবার এত পুরনো মাহরামকে এক দিনের ব্যবধানে চিট করতেছি তাতেও একটা ক্ষীণ পাপ লাগতেছিল। হালকা কুয়াশার মতো বাতাসে আবার সইরা গেছিল, ছুঁইতে পারে নাই ঠিকমতো।


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন কিছু বাজার ঔষুধ নিয়া শেওড়াপাড়ার বাসায় ফিরতেছিলাম, যেসব রাস্তা ব্যবহার করতাম বাসা যাইতে—অনেক রাস্তাই ব্যবহার করতাম, এক রাস্তায় প্রতিদিন বাসায় যাইতে বোরিং লাগতো—তেমন কোনো একটা রাস্তা দিয়া যখন ফিরতেছিলাম মনে হইতেছিল এই রাস্তা দিয়া আমি হয়ত যাব আরও কোনো দিন, তবে এই রাস্তা দিয়া আমি আর বাসা যাব না। তখন মন খারাপ লাগছিল। এরপর এলাকায় ঘুরপাক খাই কিছুক্ষণ। পরিচিত দোকানদানদের সাথে বিদায় নেই।

লেখকের ছবি

যোগ বিয়োগ করলে এবার বাসা পাল্টানি বাবদ আমার মন খুব খারাপ বা ভাল কিছুই হয় নাই। আগে ভাবতাম শেওড়াপাড়া থেকে যাওয়ার সময় খুব মন খারাপ হবে। শেওড়াপাড়ায় আসি ২০০২ সালে, সেই বছর তিনবার বাসা পাল্টাই। আমাদের জন্য বেশ কঠিন বছর ছিল সেটা।

শেওড়াপাড়া আসা নিয়ে আমি প্রচুর খুশী ছিলাম, কারণ এটা ছিল আমার খালার বাসা। এখনও খালার বাসাই আছে, যদিও তারা কেউ এখানে থাকে না। তখন শেওড়াপাড়া মানে ছিল সারা দিন বিভিন্ন জায়গায় ক্রিকেট খেলা, তারপর রাতেও ঘরের ভেতরে খালাত ভাই টুটুল ভাইয়ার সাথে ক্রিকেট খেলা। আর নয়তো লুডু খেলা, ক্যারাম খেলা, কলব্রিজ খেলা, টুয়েন্টি নাইন খেলা। আমার চার বছর সিনিয়র টুটুল ভাইয়া তখন খেলাধুলার ফর্মে। আমি ছোট হিসেবে অল্প জায়গা পাইতাম। ক্রিকেটে সবার লাস্টে ব্যাটিং, বোলিং দেয়া হইত না। এক সময় ভাল বোলিং রপ্ত করে জায়গা করতে পারছিলাম। তাস খেলাতেও এন্ট্রি পাইতে কষ্ট হইছিল। ফ্যামিলিতে ভাল রকমের ট্যাবু ছিল তাস নিয়া। বলত আমরা নাকি জুয়া খেলার অভ্যাস করতেছি।

২০০২ এর আগে আমার শৈশব—যেটা অনেকটাই একাকীত্বের ছিল—কাটছিল মোহাম্মদপুর শের শাহ সূরী রোডের তিন তলার একটা ফ্ল্যাটে। তখন আমার বিকাল কাটত একটা চিকন লম্বা বারান্দায়, যেখানে আমি হয় টেনিস বল নিয়ে কিছু একটা করতাম অথবা পিঁপড়াদের নিয়ে খেলতাম। খেলাধুলা এত প্রিয় ছিল আমার যে এক সময় জীবনের স্বপ্ন ছিল বাপ মা এর ওপর কোনো উপায়ে একটা তেলেসমাতি হবে আর তারা আমাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করায় দিবে।

বিকেএসপি’র ব্যাপারে যখন শুনছিলাম এটা এমন একটা জায়গা যেখানে খেলাই নাকি পড়াশোনা, আমার কাছে শুনে বেহেশতের মতো মনে হইত। কিন্ত আমাকে তো বাসার নিচে নেমে খেলতে দেয়ারও অনুমতি দিত না আম্মা। রাস্তায় ছেলেরা খেলত, আমি দোকানে সদাই কিনতে যাওয়ার সময় হয়ত একটু দাঁড়ায়া দেখতাম।

এসব কিছু বদলায়ে যায় যখন খালারা রায়েরবাজারের ভাড়া বাসা ছেড়ে শেওড়াপাড়ায় বাড়ি বানায়। তাদের বাড়ির চারপাশে খালি জায়গা। ওই রকম ঘাসের মাঠ না থাকলেও অনেক ফাঁকা জায়গা ছিল। আর খালার বাড়িতে গেলে মা আমাকে ছাড় দিত, সেও তার মত আনন্দে থাকত। আমি প্রত্যেক বৃহস্পতিবার অপেক্ষা করতাম মা কখন শেওড়াপাড়া যাওয়ার কথা বলবে। বাবা আমাদের যাওয়া মোটেও পছন্দ করত না। আর আমার কাছে শেওড়াপাড়ায় কাটানো শুক্র শনি কী যে আনন্দের ছিল!

সেই উইকেন্ডের ব্যাপারটাই স্থায়ী হলে গেল যখন আমরা খালাদের বাসায় চলে আসি। বাবার চাকরি চলে যাওয়াতে টাকাপয়সার খুব ক্রাইসিস শুরু হয়। তখন খালাদের সাপোর্ট নেয়া ছাড়া আমাদের জন্য সহজ উপায় ছিল না।

আমরা উঠছিলাম চারতলায়, টপ ফ্লোর। পশ্চিম সাইডে বারান্দা দিয়া বহুদূর দেখা যাইত, যেহেতু তাজিয়া মঞ্জিল ছিল পশ্চিম শেওড়াপাড়ার পশ্চিম প্রান্তের শেষ বিল্ডিং। আলো বাতাস আসার কোনো বাধা ছিল না। বারান্দা থেকে দেখা যাইত ছেলেরা বিলের মধ্যে কচুরিপানা ঠেইলা নৌকা চালায় নিয়ে যাইতেছে। এইসব জায়গায় তখন যাইতে ইচ্ছা করত না। এখন ভাবলে অবাক লাগে কেন যাইতে চাইতাম না। এমনিতে আমি প্রকৃতি দেখতে পছন্দই করতাম। আমরা নিচে যে জায়গায় খেলতাম সেটা ছিল একটা আড়াই কাঠা সাইজের প্লট। প্লটের কিনার ঘেষে কাঠাল, আম, কামরাঙ্গা এমন গাছ ছিল। গাছগুলা খেলাতে খুব একটা বাধা দিত না, বরং লাভই হইত, কারণ আমরা শর্টক্রিজ ক্রিকেট খেলতাম আর বল উড়ায়া মারলে গাছের কারণে বাইরে কম যাইত।

কোনো কোনো বছর খেলার জায়গায় খালারা শখ করে সবজি করত। মাচাতে লাউ, কুমড়া, শিম বা টমেটো এমন শীতকালের সবজি। সবজি করা হইলে আমাদের খেলা রিস্কি হয়ে যাইত, প্রায়ই সবজি গাছ আহত করে ফেলতাম আমরা। তারপর কিছুদিন পর খালা-খালুকে শান্ত করা গেলে আবার খেলা শুরু হইত।

খেলা না হইলেও আমি বিকালবেলা নিচে আসতাম সবজি বাগান আর নিজে নিজে জন্মানো ছোট ছোট গাছগুলা দেখতে। তখন পাঠ্যবইয়ে কৃষি শিক্ষা খুব টানত। লাউফুলে ভোমরা বসতে দেখলে বইয়ের পরাগায়ণ অধ্যায় মনে পড়ত। খেলা না হইলে এভাবে আমার বিকাল কাটত। তারপর সূর্য ডুবার সময়ে মনের মধ্যে খালি খালি লাগতে থাকলে ছাদে যাইতাম। ছাদের প্রধান আকর্ষণ ছিল অনেক দূরে একটা বাসা যেটার বাড়িআলার দুই মেয়ে অধিকাংশ বিকালবেলাতে ছাদে নয়ত তাদের বারান্দায় আসত। এই দুই বোনকে নিয়ে আশেপাশে অনেক ছেলেপিলের আগ্রহ ছিল। বেশি সুন্দর ছিল বড়জন। ছোটটা কম সুন্দর, তবে ছাদে বেশি সেই আসত। তাদের বাসা এত দূরে ছিল আমার স্পষ্ট বুঝতে কষ্ট হইত ছোটটা আসছে নাকি বড়টা। কিন্ত তাও তাকায়া থাকতাম। তাদের চুল নাড়াইতে দেখলে মনে করতাম আমার অ্যাটেনশন নেয়ার জন্য নাড়াইতেছে। তারপর সেই খুশিতে বাসায় যেয়ে গান শুনতাম। তখন মাইলস এর গান অনেক শুনা হইত। একটা সিডি প্লেয়ার ছিল, দুই ফুট সাইজের। ঘুমানোর সময়েও ওটা মাথার কাছে থাকত। ছাদে ওঠা এই বোনদ্বয়কে কল্পনায় নিয়ে কত গান শুনছি, যদিও জীবনে কথা হয় নাই তাদের কারো সাথে।

বারান্দা থেকে যে বিল দেখা যেত সেই বিলের পানি মাঝেমধ্যে বৃষ্টিতে ভাইসা বাসার সামনে চলে আসত। একবার এক সন্ধ্যায় বাবা বাসায় ফেরার সময় রাস্তায় ছটফট করতে থাকা একটা দেশি কই মাছ হাত দিয়া ধইরা আনছিল। মাছভাজি আমরা সবাই মিলে ভাগ করে খাইছিলাম, মজা হইছিল অনেক।

আমাদের প্রথম কয়েক বছর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল মাটির, সেখানকার মাটি লাল ছিল। এক সময় সিমেন্টের রাস্তা করা হইল। ঢালাই পোক্ত করার জন্য যে বার বার পানি দিয়ে ভিজায় রাখতে হয়, লোকেরা এ জন্য বিল থেকে ভিজা কচুরিপানা আইনা রাস্তায় ফালায় দিছিল। হাঁটার সময় কচুরিপানার ডাটা পুট পুট ফুটত।

এমন গ্রাম-গ্রাম ভাইব পাইছিলাম শেওড়াপাড়ায় প্রথম ১০ বছর। শেওড়াপাড়ার নামটাও তো গ্রামের মতই। আমি কিছু কমপ্লেক্সও খাইছিলাম। বন্ধুরা থাকে ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর—আমি থাকি শেওড়াপাড়া। এই নাম কেন রাখা হইছে জানা হয় নাই, সেখানে কোনো শেওড়াগাছের কথা কাউরে বলতে শুনি নাই কোনোদিন।

বিশ বছর কাটানোর পরেও শেওড়াপাড়ার কাছে আমার অস্তিত্ব কমই ছিল। এলাকার বলতে গেলে কোনো মানুষের মনে আমি রেখাপাত করি নাই। ছোটবেলায় যাদের সাথে খেলতাম অনেকে দূরে চলে গেছে, যারা আছে তাদের সাথেও হাই হ্যালো ছাড়া কোনো কথা নাই। তাই চলে আসার দিনে কারো মুখ দেখে মনে হয় নাই আমার জন্য মন খারাপ করতেছে। শেওড়াপাড়ায় আসার পর আমার বাবা মা চাইছিল না এখানকার অধিবাসী গরিব অশিক্ষিত মানুষের সন্তানদের সাথে তাদের ভাল স্কুলে পড়া ছেলেটা মিশে। আমিও বাবা হইলে নিজের সন্তানকে এখানে ইচ্ছামত বিচরণ করতে দিতে রাজি হইতাম না হয়ত। বাসার আশেপাশে ছোট বড় বিভিন্ন বখাটে পোলাপানের প্রকোপ ছিল সেই সময়ে। আমি এলাকার ভেতরে গুড বয়ের মত মাথা নিচু কইরা রাস্তা দিয়া হাইটা গেছি। বড় হওয়ার পরেও ছোটবেলার সেই ইমেজ পাল্টাতে ইচ্ছা করে নাই।

সকালে স্কুলে যাইতে শেওড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে যাইতে হইত প্রথমে, বাসা থেকে হাইটা গেলে সাত মিনিট। বাসস্ট্যান্ডে যখন যাইতাম শত শত গার্মেন্টস শ্রমিকও তাদের ফ্যাক্টরিতে কাজে যাইত। তারা রিকশায় ওঠা মানুষগুলারে গালাগালি করত যে তাদের হাঁটার রাস্তায় রিকশা চলতেছে। মেইন রোডের দুইপাশে প্রচুর ফ্যাক্টরি ছিল তখন। এখন আশুলিয়াতে গেলে যেমন দেখা যায় তেমন, বেশির ভাগই নারী শ্রমিক থাকত। কখনও এমন হইত আমার আশেপাশে সবাই নারী, আমি একাই ব্যাটামানুষ। চারপাশে যেন সব গোপী আর আমি যেন কৃষ্ণ।

যখন ঢাকার ভেতর থেকে গার্মেন্টস কমানো হইল, শেওড়াপাড়া আস্তে আস্তে মধ্যবিত্তের জায়গা হওয়া শুরু করল। তবে আমাদের বাসার এলাকা ছিল “নামা” বা নিচু। এই দিকে পানি জমত, রাস্তাও সরু ছিল। তাই এই তল্লাটে নিম্নবিত্তরাই শেষ পর্যন্ত বেশি ছিল। আমাদের ঘরের কাজের বুয়া, কলমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, টাইলস মিস্ত্রি, সবজিআলা, মাছআলা, ময়লাআলা সবাই ছিল আমাদের প্রতিবেশি। এদের সাথে আম্মা ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে পারছিল। এক সময় আমিও তাদের সাথে মেশা শুরু করি কাজের স্বার্থে। মাভিন মানে আমার স্ত্রী মনে হয় শুরুতে একটু অবাকই হইছিল এমন দেখে। আমার এই কমিউনাল বিষয়টা ভাল লাগছিল। এই যে একই এলাকার ভেতরে বিভিন্ন পেশার মানুষ নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন করতেছে, এটা হয়ত সব ক্ষেত্রে লাভজনক না, তবে নতুন ধরনের সম্পর্ক হওয়া, নতুন গল্প তৈরি হওয়া এগুলা খুব ভাল। আফসোস শেওড়াপাড়া জীবনে আমি এতদিন থাকছি, কিন্ত আগন্তকের মত থাকছি। এলাকার বা কমিউনিটির জন্য কোনো কাজ করতে পারি নাই বা চেষ্টাও করি নাই করার।

আমাদের বিল্ডিং থেকে চার পাঁচ প্লট দূরে একটা বড় জায়গা খালি পইড়া থাকত। জমির মালিক সম্ভবত পুলিশ ছিল, সে এখানে থাকত না। ভাড়া দিতে কিছু রুম বানায় রাখছিল। গ্রামের স্কুল ঘরের মত, লম্বা একটানা অনেকগুলা রুম। সেই রুমগুলা কেউ যত্ন নিত না। কয়েকটায় মানুষ থাকত। কয়েকটা পরিত্যক্ত। দিনের বেলাতেও গেলে মনে হইত ভাল মানুষের জায়গা না এটা। পরে দেলোয়ারের বাপ নামের একজনরে কেয়ারটেকার নিয়োগ দেয়া হয়। সে লোক এই বিশাল পতিত জমিতে অনেক কিছু আবাদ শুরু করে। সব সিজনেই সবজি করত সে। আমরা প্রায় শিম, কপি, ধুন্ধল, শাক, কচু কিনছি তার থেকে। সে ধইঞ্চা গাছও করছিল একবার। চারিদিকে বিল্ডিং মাঝখানে ধইঞ্চা ক্ষেত দেখতে অন্যরকম লাগত। সেই জমিতে শেষ পর্যন্ত পুরনো দুইটা জিনিস টিইকা থাকে, একটা পানিহীন কুয়া আর একটা অশ্বথ গাছ।

চারতলার বারান্দা থেকে অনেক লম্বা কিন্ত কম ডালপালা ছড়ানো অশ্বথ গাছের পুরোটা দেখা যাইত। গাছটারে দিনে এক রকম লাগত, রাতে আরেক রকম। এই দৃশ্য আমি হারাইছি বহু আগে। একটার পর একটা নতুন বিল্ডিং যখন উঠল, আমাদের বিল্ডিং পশ্চিম পাশের শেষ বিল্ডিং আর থাকল না। এসব হওয়ার আগে সে বারান্দা থেকে বৈশাখের ঝড় দেখতাম আমি। আমি তখন কালবৈশাখীর প্রেমে পাগল। প্রত্যেক বছর ঝড়ের সিজন আসলে মনে ভীষণ উত্তেজনা জাগত।

আমিন আল রাজী’র আরো লেখা: পানগুছি পাড়ের মোরেলগঞ্জে

চারপাশ খোলা বইলা প্রায়ই ঝড়ে আমাদের বাসার জানালা ভাঙত। কালবৈশাখী তো চোখের পলকে আসে। বিছানা থেকে ওঠার আগেই যে কত জানালার কাচ চুরমার হয়ে গেছে বাতাসের বাড়িতে।

এক সময় আমরা সতর্ক হওয়া শিখলাম। একটু ঝড়ের আলামত পাইলে বাসার লোকজন পাগলের মত জানালা দরজা বন্ধ করতে ছুটতাম। অ্যাড্রেনালিন রাশ চলে আসত। দরজা জানালা বন্ধ করা হইলে আমি বারান্দায় যায়া ঝড় দেখতাম। বজ্রপাতের ভয়ে দরজার ছিটকানি না লাগায়া, এক হাতে দরজা হাতল ধরে রাখতাম যাতে বাতাসে বাড়ি না খায়। কোনো দিন সুইসাইডাল মুড থাকলে ছিটকানি দিতাম তারপর আম্মার ভয় অগ্রাহ্য কইরা সিগারেট ধরাইতাম। সেই ঝড় দেখতে যায়া আমি ভয়ঙ্কর সুন্দর কথাটার অর্থ নিজের থেকে বাইর করতে পারি। বন্ধুদের ফোন দিয়ে বলতাম, ঝড় দেখ দোস্ত। কিন্ত আমার শেওড়াপাড়ার বাসার বারান্দা থেকে দেখা সেই দৃশ্য কি তারা দেখতে পাইত! আমি তো কখনও তাদের নিয়ে যেয়ে দেখাইতে পারি নাই।

জানুয়ারি, ২০২৩