নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ বা তার বেশি বয়সের মানুষদের অন্ত্রে থাকা জীবাণু এমন এক ধরনের বাইল আসিড বা পিত্ত রস তৈরি করে, যা তাদেরকে সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
শতবর্ষী মানুষদের বয়সজনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। সংক্রামক রোগ থেকেও তাদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নতুন এক গবেষণা থেকে এমনটাই জানা গেছে।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষদের শরীরে স্বতন্ত্র জীবাণুতন্ত্র থাকে। যা তাদেরকে একাধিক ওষুধ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সহ নানা ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল nature– এ গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসার নতুন উপায় উদ্ভাবনেও সহায়ক হতে পারে।
জাপানের কেইও ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিন-এর ইউকো সাতো, কোজি আতারাশি, নোবুশি হিরোসে, কেনিয়া হোন্দা এবং এমআইটি ও হার্ভার্ডের ব্রড ইনস্টিটিউটের ড্যামিয়ান প্লিচটা ও রামনিক জেভিয়ার সহ একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল এই গবেষণাটি করেন।
আরো পড়ুন: প্রতিটি শহরের আছে নিজস্ব মাইক্রোবায়োম বা জীবাণুতন্ত্র
শতবছর বয়সী ১৬০ জন জাপানির মল থেকে সংগৃহীত জীবাণু নিয়ে তারা গবেষণাটি করেন। অংশগ্রহকারীদের গড় বয়স ছিল ১০৭। গবেষকেরা দেখতে পান, ৮৫ থেকে ৮৯ বছর বয়সী এবং ২১ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের তুলনায় শতবছর বয়সী মানুষদের অন্ত্রে সেকেন্ডারি বাইল অ্যাসিড উৎপাদনকারী জীবাণুর সংখ্যা অনেক বেশি পরিমাণে আছে। এই সেকেন্ডারি বাইল অ্যাসিড মূলত, মলাশয়ে থাকা জীবাণুরা উৎপাদন করে। এই অ্যাসিড অন্ত্রকে রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
এরপর গবেষকগণ শতবছর বয়সী মানুষদের মলাশয়ে উৎপন্ন এই সেকেন্ডারি বাইল অ্যাসিড সাধারণ কিছু সংক্রামক রোগের ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রয়োগ করে দেখেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, isoalloLCA নামের সেকেন্ডারি বাইল অ্যাসিডের একটি মলিকিউল তীব্র ডায়রিয়া ও অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টিকারী ক্লস্ট্রিডিয়োয়াইডিস ডিফিসিল (Clostridioides difficile) নামের অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করছে। একইভাবে ক্লস্ট্রিডিয়োয়াইডিস ডিফিসিল ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত ইঁদুরকে isoalloLCA মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হলে ইদুরটি সুস্থ হয়ে ওঠে।
গবেষক দল আরো দেখতে পান যে, isoalloLCA আরো অনেক ধরনের রোগজীবাণু প্রতিরোধ বা ধ্বংস করছে। যা থেকে ধারণা করা যায়, এটি হয়ত একটি সুস্থ অন্ত্রের মধ্যে থাকা নানরকম মাইক্রোবিয়াল গোষ্ঠীর মধ্যকার সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতেও সক্ষম।
ব্রড-এর কম্পিউটেশনাল বিজ্ঞানী ও গবেষণার সহ-প্রথম লেখক প্লিচতা বলেন, “ব্যাকটেরিয়ার ভেতরে ঘটা বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও মানবদেহের মধ্যে বাস্তুসংস্থানগত মিথষ্ক্রিয়া থেকেই স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় অন্ত্রের এই জীবাণুগুলির সম্ভাবনার প্রমাণ পাওয়া যায়।”
আরো পড়ুন: আপনার দেহে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলবেন কীভাবে
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আরো বড় ও দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার মাধ্যমে দীর্ঘায়ু এবং বাইল অ্যাসিডের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা উন্মোচন করা যেতে পারে। আর ইতিমধ্যে, এই গবেষণায় চিহ্নিত ব্যাকটেরিয়াগুলি অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে বাইল অ্যাসিডকে কীভাবে কাজে লাগায় তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে।
ব্রডের কোর ইনস্টিটিউট সদস্য ও গবেষণার কো-করেসপন্ডিং বা সহ-সংশ্লিষ্ট লেখক জেভিয়ার বলেন, “অন্ত্রের জীবাণুতন্ত্রই সুস্থ্য বার্ধক্যের চাবিকাঠি এই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে মূলত একটি অসাধারণ গবেষক দল, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, কম্পিউটেশনাল বিশ্লেষণ এবং পরীক্ষামূলক মাইক্রোবায়োলজির সমন্বয়ে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের এই গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভবিষ্যতে অন্ত্রের জীবাণুদের উৎপাদিত এনজাইম এবং বিপাকীয় উপাদানগুলি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে থেরাপিউটিক্স বা রোগচিকিৎসাবিদ্যার শুরুর পয়েন্টগুলি চিহ্নিত করা যাবে। অর্থাৎ, রোগের চিকিৎসা কোথা থেকে শুরু করতে হবে তা শনাক্ত হবে।”
এমআইটি সেন্টার ফর মাইক্রোবায়োম ইনফরম্যাটিক্স অ্যান্ড থেরাপিউটিক্স (সিএমআইটি) এই গবেষণার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
সূত্র. ব্রড ইন্সটিটিউট
অনুবাদ. মাহবুবুল আলম তারেক